এমএস ধোনি।
আজকের ভারত তো সেনা বাহিনী, বা সেনা ‘স্পিরিট’ খুব ভালবাসে। সেই আবহে ভারতের ‘টেরিটোরিয়াল আর্মি’-র সাম্মানিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির একটা কথা মনে করিয়ে দিলে মন্দ হবে না। কথাটা যুদ্ধটুদ্ধ, দেশ জয় বা মুলুক দখল সংক্রান্ত গর্জন বা আস্ফালন নয়। বরং একটু ম্যানেজমেন্ট-জ্ঞান গোছের। ‘‘জীবনে যত বেশি বার সিদ্ধান্ত নেবে, ঠিক সিদ্ধান্তের সংখ্যা বাড়বে ততই। বেশি সিদ্ধান্ত মানে তাই ভুলের সংখ্যা আখেরে কমে যাওয়া।’’ ধোনি ছাড়া আর কার মুখেই বা মানাত এই উক্তি! ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন থাকাকালীন যত বার তাঁকে মাঠে বা টিভির পর্দায় দেখেছেন ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ, সঙ্গে এও দেখেছেন— কী রকম সময়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে লোকটা। সাদা বলের খেলায় ‘বয়স্ক সিনিয়র’দের আর দলে চান না, জানিয়েছেন। অপ্রিয়, কিন্তু খুব সত্যি। বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ ওভারের বলটা তথাকথিত অনভিজ্ঞ বোলারের হাতে তুলে দিয়ে বলেছেন, ‘‘ওদের কত রান চাই তা নিয়ে ভেবো না, নিজের বোলিং নিয়ে ভাবো। মার খেলেও ভেবো না, পরের বলটায় মন দাও।’’ কে বলে ধোনির মূল্যায়ন শুধু রেকর্ড বইয়ে?
শ্রীময়ী পাত্র
কলকাতা-৮৪
সম্পত্তির ভাগ
‘পৈতৃক সম্পত্তি মেয়েদেরও’ (১২-৮) শীর্ষক খবরটি দেখে মনে হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্ট ছেলে ও মেয়েকে পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান অধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সেই অধিকার ১৯৫৬ সালের হিন্দু উত্তরাধিকার আইনেই দেওয়া হয়েছিল। আইনে পরিণত হওয়ার আগে হিন্দু আইন দু’টি শাখা মেনে চলত। একটি শাখা দয়াভাগা, অপরটি, মিতাক্ষরা। দয়াভাগা শাখা অনুযায়ী, বাবার সম্পত্তি তাঁর মৃত্যুর পরে ছেলে পান। তার পরে পান তাঁর পৌত্র। বংশানুক্রমিক ভাবে সম্পত্তির উত্তরাধিকার চলতে থাকে। কিন্তু মিতাক্ষরা শাখা অনুযায়ী, ছেলের জন্মের পরে তার বাবা ও ঠাকুরদা বেঁচে থাকলেও সেই সম্পত্তিতে সেই সন্তানের অধিকার জন্মায়। ফলে ‘কোপারসেনারি’ ব্যবস্থায় বাবা, ছেলে ও পৌত্রের সম্পত্তিতে একসঙ্গে সমান অংশ থাকে। এক সময় কেবল ছেলেরাই এ ভাবে সম্পত্তির অধিকার পেতেন। ২০০৫ সালে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের ৬ নম্বর ধারার সংশোধন করা হয়। সংশোধিত আইনে মিতাক্ষরা শাখার অধীনে থাকা একটি হিন্দু যৌথ পরিবারে ‘কোপারসেনার’-এর মেয়ে জন্মের সময় ছেলের সমান অধিকার পাবেন। ওই সম্পত্তি থেকে কোনও দায় তৈরি হলে তিনি সেই দায়েরও ভাগীদার হবেন। তবে ২০০৪ সালের ২০ ডিসেম্বরের আগে যাঁদের সম্পত্তি ভাগ হয়েছে বা যে সব সম্পত্তির কেউ অধিকার পেয়েছেন, তাঁদের অধিকারে এই উপধারার বক্তব্যের প্রভাব পড়বে না।
উপধারা ১-এর বলে কোনও হিন্দু মহিলা কোনও সম্পত্তি হাতে পেলে সেই সম্পত্তি বিক্রি করার ক্ষেত্রে কোনও আইনি বাধা থাকবে না। এই সংশোধিত ধারার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আগে জানায়, যে কোপারসেনারের সন্তান হিসেবে মেয়েরা সম্পত্তি দাবি করছেন, সেই কোপারসেনারকে ওই ধারা সংশোধনের সময় জীবিত থাকতে হবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তার সাম্প্রতিক রায়ে জানিয়েছে, পুরুষ কোপারসেনারের মৃত্যু সংশোধনীর আগে হলেও যদি তাঁর মেয়ে সংশোধনীর সময়ে জীবিত থাকেন, তা হলেই তিনি ওই অধিকার পাবেন। সেই হিসেবে এই রায়ে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের ৬ নম্বর ধারার সংশোধনীকে ‘রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট’ দেওয়া হয়েছে।
কোপারসেনারি ব্যবস্থার বাইরে থাকা সম্পত্তিতে সাধারণ উত্তরাধিকারী হিসেবে ছেলে ও মেয়ের সমান অংশ রয়েছে। তার উপরে এই রায়ের কোনও প্রভাব পড়বে না।
অতীশ দীপঙ্কর রায়
কলকাতা-৪০
চশমায় শুধু বাষ্প
‘বাক্য ব্রহ্ম’ (৯-৮) সম্পাদকীয়ের থেকে আমি সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করি। বাক্যের ক্ষমতা আগেও ছিল সীমাবদ্ধ। যত দিন যাচ্ছে, তার পরিসর ক্রমশ কমছে। যে কোনও কার্যোদ্ধারে বলপ্রয়োগ চাই। প্রেমের ক্ষেত্রে বাক্যের অপব্যয় কম। শুরুই হয় চোখের সঙ্কেত দিয়ে। করোনাকালে সেইখানে সংশয় তৈরি হয়েছে। বাক্য যেখানে তল পায় না, সেখানেই চোখের ভূমিকা। অধরোষ্ঠের সূক্ষ্ম বিভঙ্গ, তীব্র আবেদন, যার সামান্যতম অভিঘাতে কারও ভিতরে একটা পাহাড় অবলীলায় ভেঙে পড়তে পারে। কিংবা নিমেষে মরুভূমি হয়ে যেতে পারে টলটলে সমুদ্র। সে সব আজ অতীত। হাত, মুখ, মাথা— সব ঢাকাঢুকি দেওয়া। চশমা পরলে আরও সমস্যা, মাস্ক পরলে চোখ আর চশমার কাচের মধ্যে বাষ্প তৈরি হয়ে দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। রূপ নেহারিবে কী করে?
মানুষের জ্ঞানগম্যির দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে আগামী দিনে নতুন রূপে ভাইরাস-ব্যাকটিরিয়ার আক্রমণ হবে। হয়তো এমন দিন আসছে, যখন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মহাকাশচারীর মতো পোশাক পরেই যাবতীয় কাজকর্ম সারতে হবে। রূপ-রস-গন্ধহীন পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই কঠিন শাস্তি। বাক্য ব্রহ্ম পারবে সেই বিপর্যয় ঠেকাতে?
বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর, হুগলি
বৈচিত্রে ঐক্য
তরুণ কুমার পণ্ডিত তাঁর চিঠিতে (‘ভারতের আত্মা’, ১১-৮) লিখেছেন, ভারতীয় সংবিধানের যে অধ্যায়ে মৌলিক অধিকারের কথা লেখা আছে, তার উপরে রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের চিত্র অঙ্কিত আছে। তাতে প্রমাণিত হয় যে, শ্রীরামচন্দ্রই ভারতের আত্মা। এই বক্তব্য খণ্ডিত তথ্যমাত্র। সংবিধানের মূল হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে আরও অনেক চিত্র অঙ্কিত আছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অনুরোধে সমগ্র সংবিধানটির হস্তলিখিত অনুলিপি করে দেওয়ার দায়িত্ব নেন বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার প্রেমবিহারী নারায়ণ রায়জাদা। শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু অলঙ্করণের দায়িত্ব নেন। তিনি কলাভবনের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এই কাজটি করেন।
এই চিত্রমালার মাধ্যমে উঠে এসেছে ভারতের প্রাচীন যুগ, পৌরাণিক কাহিনি, শিল্পকলা, প্রাচীন ও মধ্যযুগের শাসক এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সচিত্র ইতিহাস। সিন্ধু সভ্যতা (মহেঞ্জোদারোর শিলমোহর), বৈদিক যুগ (গুরুকুল বিদ্যালয়), পৌরাণিক কাহিনি (রামায়ণ ও মহাভারত), গৌতম বুদ্ধ, মহাবীরের ছবি যেমন চিত্রিত হয়েছে, তেমনই রয়েছে মহাবলিপুরমের স্থাপত্য, সম্রাট আকবর, ছত্রপতি শিবাজি, গুরু গোবিন্দ সিংহ, টিপু সুলতান ও ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাই, গাঁধী, সুভাষচন্দ্র প্রমুখের ছবি। প্রতিটি পৃষ্ঠা অজন্তা ও বাঘ গুহার চিত্রশৈলীতে অলঙ্করণ করা হয়েছে। অতএব সংবিধানের মূল পাণ্ডুলিপি শুধুমাত্র রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের চিত্রশোভিত নয়। দেশের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের মহান সুরটি সেখানে প্ৰতিফলিত হয়েছে।
শান্তনু দত্ত চৌধুরী
কলকাতা-২৭
আকাশমণি
‘দ্রুত বাড়ে, তাই কদর বাড়ছে আকাশমণির’ (৩-৮) পড়লাম। দ্রুত বাড়ে বলেই বনাঞ্চলের চিরাচরিত গাছগুলিকে বাদ দিয়ে অন্য গাছ লাগানো কি ঠিক হবে? অনেক সময়েই দেখা যায়, এই দ্রুত বেড়ে-ওঠা আকাশমণি গাছগুলি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে। এরা ভূগর্ভের জল অতি দ্রুত হারে তুলে নেওয়ায় ভূগর্ভের জলের ঘাটতি দেখা যায়।
তা ছাড়া এই গাছের পাতাতে এক ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা মাটিতে পড়ার পর ঘাস ও অন্য ছোট গুল্ম এবং লতাজাতীয় গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। বাস্তুতন্ত্রের অনেক ক্ষতি হয়, অনেক রকম গাছ হারিয়ে যায়। এই বিষয়টি ভাল করে ভেবে দেখা উচিত বন দফতরের।
সাদিকুল ইসলাম
সাগরদিঘি, মুর্শিদাবাদ
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।