ছবি: সংগৃহীত
শমিতা সেনের ‘ফিরব বললেই ফেরা যায়?’ (১৬-৯) লেখাটি পড়লাম। নরেন্দ্র মোদী যদি দশ দিন সময় নিয়ে লকডাউন ঘোষণা করতেন, তবে ইচ্ছুক পরিযায়ী শ্রমিকরা প্রায় সবাই ধীরেসুস্থে ট্রেনে চেপে ঘরে ফিরতে পারতেন। মোদীজি এক দিন সকালে উঠে কোনও রকম চিন্তাভাবনা না করে লকডাউন ঘোষণা করলেন। এর ফল ভুগতে হল অগণিত পরিযায়ী শ্রমিককে।
প্রশ্ন হল, পরিযায়ী শ্রমিকরা নাহয় ঘরে ফিরে এলেন। কিন্তু তাঁরা ঘরে থাকবেন তো? ঘরে তো কিছুই নেই। অর্থ উপার্জনের কোনও উপায় ছিল না বলেই তো গৃহত্যাগ করেছিলেন তাঁরা। ফিরে এসে পেটে গামছা বেঁধে থাকা তো আর সম্ভব নয়। এখানে কাজ বলতে মাটি কাটা। তা-ও মাসে মেরেকেটে ১৫ দিন। এতে কি এত জনের পেট চলবে? তাই, পরিযায়ী শ্রমিকরা পুরনো কর্মক্ষেত্রে ফিরতে ইচ্ছুক।
পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশ, এই দু’টি রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা সর্বাধিক। যে পরিযায়ী শ্রমিক পুরনো কর্মক্ষেত্রে দিনে ৫০০-৭০০ টাকা উপার্জন করেন, তাঁর পক্ষে দিনে ১০০-১৫০ টাকা আয় কী করে পোষাবে? এখনই বহু শ্রমিক বাস ভাড়া করে ভিন্রাজ্যের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাচ্ছেন। যানবাহন চললে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাঁরা আরও বেশি সংখ্যায় ফের আগের কর্মক্ষেত্রে ফিরবেনই, রোগের ঝুঁকি নিয়েও। তাঁদের আটকানো সম্ভব নয়।
সঞ্জয় চৌধুরী
ইন্দা, খড়্গপুর
অকেজো আইন
শমিতা সেনের লেখায় ১৯৭৯ সালের পরিযায়ী শ্রমিক আইনের উল্লেখ আছে। আমার প্রশ্ন, ৪০ বছর কেটে গেল, এই আইন বাস্তবে কার্যকর করা গেল না কেন? ২০ কোটি সৎ, পরিশ্রমী নাগরিক কেন আইনের সুরক্ষা ও বিচার পেলেন না? রাজনৈতিক নেতা, আমলা, সাংবাদিক, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, মানবাধিকার কর্মী, আইনজগতের বিশিষ্ট ব্যক্তি, কেউ আর আজ এই বিষয়টা নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি নন। ইতিহাস কেউ বিশ্লেষণ করতে চান না। আমার মতে, আইন তৈরি হলেও কাজে প্রয়োগ না হওয়ার কারণ আমাদের সামন্ততান্ত্রিক সমাজ আর ‘ভিআইপি কালচার’।
অশোক ঘোষ
কলকাতা-১০৭
শুধু ভোটার?
‘লজ্জা’ শীর্ষক সম্পাদকীয়টি পড়লাম। এ দেশের মেহনতি মানুষের কথা কোনও সরকার দায়িত্ব নিয়ে ভাবে না। লকডাউনে এত পরিযায়ী শ্রমিক মারা গেলেন, তার জন্য কোনও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ নেই। তাঁদের উন্নয়নের ভাবনা নেই। সুস্থ ভাবে বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা নেই। শুধু ভোট পাওয়ার জন্য এঁদের দরকার হয়। নেতাদের কি ক্ষমতা ধরে রাখা ছাড়া কোনও দায় নেই?
রীতা পাল
কলকাতা-২৪
কুমিরের কান্না
আমি এক বন্ধ কারখানার শ্রমিক। মালিকপক্ষের পারিবারিক গন্ডগোলের জেরে ১৯৯৭ সালে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কারখানাটি বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর সামান্য কিছু টাকা পাই। কিন্তু আজ পর্যন্ত বকেয়া ১৪ মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর টাকা পাইনি। অনেক শ্রমিক-সহকর্মী না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছেন।
বামফ্রন্টের সময় বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের জন্য ১৫০০ টাকা ভাতা দেওয়ার একটি আইন ছিল। বর্তমান রাজ্য সরকার ওই ভাতা বন্ধ করে দিয়ে পেনশন এনেছে। আমি পেনশন পাই মাত্র ৮৫২ টাকা, যদিও প্রচার হচ্ছে ১০০০ টাকা পেনশন দেওয়া হয়। বেকার হয়ে যাওয়ার পর হাওড়া স্টেশনে সংবাদপত্র ফেরি শুরু করি। তাতেও বেশ কয়েক বার আরপিএফ-এর রোষে পড়ি। ১২০০-১৪০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে।
আমার রেশন কার্ড রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা ২-এর অন্তর্ভুক্ত। দাম দিয়ে চাল, গম কিনতে হয়। অথচ, তিনতলা বাড়ির মালিক, এসি আছে, এমন লোকও বিনা পয়সায় রেশন থেকে চাল-গম-ডাল পাচ্ছেন, তার প্রত্যক্ষদর্শী আমি। আমাদের জন্য বরাদ্দ শুধুই কুম্ভীরাশ্রু। অবিলম্বে বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের জন্য বর্তমান দিনের শ্রমজীবীদের মূল্যসূচক অনুযায়ী ভাতা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এঁদের সবাইকে বিপিএল কার্ডের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
জীবনমোহন দাস
কোন্নগর, হুগলি
নিঃসঙ্গ
‘কেউ মনে রাখেনি আসানসোলের হান্টারওয়ালিকে’ (রবিবাসরীয়, ৩০-৮) শীর্ষক নিবন্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিপ্লবী ও শ্রমিক নেত্রী বিমলপ্রতিভা দেবীর কথা তুলে ধরার জন্য সুশান্ত বণিককে ধন্যবাদ। অধ্যাপিকা মঞ্জু চট্টোপাধ্যায়, গোড়ার যুগের শ্রমিক নেত্রীদের নিয়ে তাঁর গবেষণায় বিমলপ্রতিভার স্বাধীনতা-উত্তর জীবনপর্ব সম্পর্কে শুধু এটুকুই জানাতে পেরেছিলেন যে, ‘‘শুনেছি বিমলপ্রতিভা দারুণ অর্থাভাবে, প্রায় অনাহারে, কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।’’ বর্তমান পত্রলেখকও স্থানীয় সূত্রে বিমলপ্রতিভার শেষ জীবনের সংবাদ সংগ্রহের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। জেনে ভাল লাগল, বিমলপ্রতিভা দেবীর নামে তৎকালীন পুর কর্তৃপক্ষ তাঁর শতবার্ষিকীতে দু’টি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছিলেন, এবং একটি রাস্তার নামকরণ করেছিলেন। মানুষটির স্মৃতি আজ অবলুপ্তির পথে, সাহিত্য সাধনার ক্ষেত্রে অবদানও বিস্মৃত।
তবে বিমলপ্রতিভার জীবনের প্রথম পর্ব সম্পর্কে সুশান্তবাবু যা লিখেছেন, তার তুলনায় তিনি অনেক বেশি সমাদৃতা ছিলেন। ১৯২৮ সালের কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে তিনি মহিলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান ছিলেন। পরবর্তী কালে তিনি সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠেন এবং ১৯৩৯ সালে সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক দল প্রতিষ্ঠা করলে তিনি তার বিশিষ্ট নেত্রী হন। জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও বিপ্লবী আন্দোলন, উভয়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। এই সময় থেকেই তিনি শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। একাধিক বার কারাবরণও করেন। এক কথায়, সে যুগের নেত্রীদের মধ্যে তিনি অন্যতমা ছিলেন। তাঁর স্বামী স্বাধীনতা সংগ্রামী চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এবং দীর্ঘ দিন বঙ্গীয় প্রাদেশিক ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ছিলেন। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তাই বিমলপ্রতিভা কোনও বাধা পাননি। কিন্তু ক্রমশই বিপজ্জনক বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে তাঁর জড়িয়ে পড়া রক্ষণশীল শ্বশুরবাড়ির কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। জেল থেকে মুক্তির পর তিনি যেমন সাংসারিক জীবনে পিতৃকুল বা শ্বশুরকুল কোথাও মানিয়ে নিতে পারেননি, তেমনই কোনও সংগঠিত রাজনৈতিক দলেও যুক্ত থাকতে পারেননি।
বিশিষ্ট বামপন্থী শ্রমিক নেতা রবীন সেনের আত্মজীবনী থেকে জানা যায় যে, মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সদ্যগঠিত ট্রটস্কিবাদী বলশেভিক লেনিনিস্ট দলের সঙ্গে কিছু কাল যুক্ত হয়ে তিনি আসানসোলের কয়লাখনি, বার্নপুরের ইস্পাত কারখানা ও অন্যান্য শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে কাজ শুরু করেন। কিছু কালের মধ্যেই এই দলের কার্যত অবলুপ্তি ঘটে এবং অধিকাংশ কর্মীই অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। বিমলপ্রতিভা ক্রমশই একা হয়ে পড়েন। সম্ভবত আপসহীনতা তাঁকে ব্যক্তিজীবনের মতো রাজনৈতিক জীবনেও নিঃসঙ্গ করে তুলেছিল।
নির্বাণ বসু
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
উপন্যাস
বিমলপ্রতিভা হিজলি জেলে বন্দি থাকাকালীন একটি উপন্যাস লেখেন— নতুন দিনের আলো। ব্রিটিশ সরকার এটি বাজেয়াপ্ত করে ও এর প্রকাশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরে ১৩৬৫ সালে শিশির পাবলিশিং হাউজ় থেকে এটি প্রকাশিত হয়।
অদীপ ঘোষ
কলকাতা-৭৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।