—প্রতীকী চিত্র।
‘পুজোর অনুদান বেড়ে ৭০ হাজার’ (২৩-৮) খবরে লেখা হয়েছে, পুজোর জন্য ক্লাবগুলিকে সরকারি অনুদান ২৫ হাজার থেকে শুরু হয়েছিল। তা ঠিক নয়। ২০১৮ সালে ক্লাবগুলিকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া শুরু হয়। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ২৫ হাজার টাকা। ২০২০ সালে অনুদানের পরিমাণ আরও বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার টাকা। ২০২১ সালেও ওই একই অর্থ, অর্থাৎ ৫০ হাজার করে দেওয়া হয়। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ হাজার টাকা। আর এ বছর (২০২৩) দেওয়া হবে ৭০ হাজার করে। মোট ক্লাবের সংখ্যা ২৮,০০০ থেকে আজ তা বেড়ে চল্লিশ হাজারের বেশি। আর ৬ বছরে মোট খরচ? কম-বেশি ১০০০ কোটি। কারণ, এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিলে ছাড়, শারদ সম্মান থেকে কার্নিভাল। সব খরচ ধরলে খরচের বহর বাড়বে বই কমবে না।
গত ৩ অক্টোবর ২০১৩, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ‘যুবশ্রী’ (বেকার ভাতা) প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু বেকার ভাতা কি চালু আছে? আজ হাজার-হাজার শিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী রাস্তায়। নয়া কোনও প্রকল্প এই ১২ বছরে গড়ে ওঠেনি এ রাজ্যে, যেখানে শিক্ষিত বেকাররা একটা চাকরি জোটাতে পারেন। সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা ডিএ রাজ্য সরকার দিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে খেলা-মেলার জন্য টাকার জোগান দেওয়া থেকে বিভিন্ন ভাতা দিতে এই ভাবে সরকারি অর্থ ব্যয় করাটা কতটা সমুচিত, তা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই।
মলয় মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১১০
প্রতারণা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় ৪৩ হাজার দুর্গাপুজো কমিটির প্রতিটিকে ৭০,০০০ টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। সে হিসাবে এ বারে অনুদান বাবদ খরচ হবে তিনশো এক কোটি টাকা। শুধু তা-ই নয়, পাঁচ-সাত দিন পুজোতে যে বিদ্যুৎ খরচ হবে, তার উপর এক-চতুর্থাংশ ছাড়ও ঘোষণা করেছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। গত বারের মতো এ বারও দমকল, পুরসভা, পঞ্চায়েত ও বিজ্ঞাপনের কর মকুব করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এ তো গেল রাজ্য সরকারের ভোট পাওয়ার জন্য দান-খয়রাতি। এই অনুদান পেয়ে অনেকেই হয়তো খুশি হবেন, পুজোতে মাতবেন। কিন্তু এর পরবর্তী অবস্থার কথা কেউ কি ভাবছেন!
এই বিশাল পরিমাণ টাকা আনন্দ-ফুর্তির জন্য খরচ না করে সেই টাকা জনকল্যাণের কাজে খরচ করা যেত। যেমন— সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা, অথবা বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, অথবা নতুন কলকারখানা তৈরি করা। শিক্ষার মান উন্নয়নেও বাড়তি অর্থ খরচ করা যেতে পারত। কিন্তু রাজ্যের শাসক তা না করে জনগণের করের টাকা নয়ছয় করে জনবিরোধী কাজ করছে।
শাসক সব সময়ই প্রশ্নহীন জনগণ চায়। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, রাজ্যবাসীর করের টাকা ধর্মীয় পুজোতে সরকার দান করতে পারে কি? প্রশাসনের শীর্ষ মহল কি জানে না ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কথাটার মানে? প্রশ্ন উঠবে, সরকার কি কোনও বিজ্ঞান সংগঠনকে আর্থিক সহায়তার কথা ঘোষণা করেছে? না, করেনি। কোনও রাজনৈতিক ভোটসর্বস্ব দলই তা করবে না। পরিবর্তে বিজ্ঞান সংগঠনের বিরোধিতা করবে, নয়তো চুপ থাকবে।
আমাদের দেশের সরকার, তা সে কেন্দ্রই বলুন আর রাজ্যই বলুন, উভয়েই মানুষের সঙ্গে প্রতারণার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে এবং সমাজে অন্ধবিশ্বাস ও অপবিজ্ঞানের প্রসার ঘটাতে চাইছে। জনবিরোধী শাসক সাধারণ মানুষের বঞ্চনাজনিত ক্ষোভ ও প্রতিবাদকে দমিয়ে রাখতে তাদের অদৃষ্টবাদী চিন্তায়, ধর্মীয় ভাবনায় আচ্ছন্ন করে রাখতে চাইছে। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের আরও এক বার মনে করিয়ে দিতে চাই, ধর্মকে সম্পূর্ণরূপে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়া উচিত। ধর্ম ব্যক্তির বিষয়, ধর্মীয় বিষয়ের দ্বারা রাজনীতি পরিচালিত হওয়া উচিত নয়।
প্রতাপ চন্দ্র দাস, নবদ্বীপ, নদিয়া
বিদ্যুতের বিল
‘পুজোর অনুদান বেড়ে ৭০ হাজার’ শীর্ষক খবরে পড়লাম, সিইএসসি এবং রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুজোর সময় বিদ্যুতের যা বিল হবে, তার চার ভাগের এক ভাগ দিতে হবে পুজো কমিটিগুলোকে। এমন জনমুখী সিদ্ধান্তের জন্য অভিনন্দন। তবে একই সঙ্গে অনুরোধ জানাই, এমন সিদ্ধান্তের জন্য তাঁরা যেন কোনও আর্থিক ক্ষতি স্বীকার না করেন। পুজোর কিছু পরেই শীতকাল আসছে, সে সময় স্বাভাবিক ভাবেই বিদ্যুতের বিল তুলনায় কম হওয়ার কথা। সে সময় কোনও এক রকমের সারচার্জ দেখিয়ে পুজোর ওই ঘাটতির টাকাটুকু জনতার থেকে বিদ্যুতের বিল মারফত আবার তুলে নেওয়া যেতে পারে। সার্বিক ভাবে সেই বিলের পরিমাণ গ্রীষ্মের চেয়ে কম হওয়ার কারণে এটুকু চাতুরি কেউ খেয়াল করবেন না বলেই মনে হয়।
ভাস্কর রায়, কলকাতা-৭৭
উৎকোচ নয়
খবরে দেখলাম, মুখ্যমন্ত্রী এ বছর পুজোর অনুদান দশ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা করেছেন। এবং যথারীতি ‘গেল গেল’ রব উঠেছে। বিরোধীরা একজোট হয়ে বলছেন— এ সব ভোটের জন্য করা হচ্ছে, উৎকোচ দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু যাঁরা গ্রামবাংলার বিভিন্ন পুজো কমিটির সঙ্গে জড়িত আছেন, তাঁরা এ কথা বলেন না। যেখানে কলকারখানা অফিস-কাছারি কিছুই নেই, চাঁদার কোনও রকম উৎস নেই, বা বিজ্ঞাপন নেই, সেখানে এই অনুদান যে কতটা ভরসা জুগিয়েছে, তা আমরা ভুক্তভোগীরা উপলব্ধি করেছি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রামনগর থানার ধুকড়িঝাড়া ব্রিজ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সঙ্গে দীর্ঘ ৪২ বছর যুক্ত থাকার সুবাদে বলতে পারি, গত কয়েক বছর ধরে সরকারের এই অনুদান আমাদের প্রভূত সাহায্য করেছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দরিদ্রনারায়ণ সেবা, দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণ এবং মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কার প্রদান, এমন সমাজসেবামূলক কাজ এই অনুদান ছাড়া সম্ভব হত না। জনগণের আর্থিক সহায়তা এবং এই সরকারি অনুদানের উপর নির্ভর করে আমরা একটি দুর্গা দালান নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি, যা এখনও অসমাপ্ত। আশা রাখি আর কিছু দিনের মধ্যে তা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। তাই দৃঢ় ভাবে বলতে পারি, এই অনুদানের সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই, আর আমরা এটাকে উৎকোচ হিসাবেও দেখি না।
শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায়, ধুকড়িঝাড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
ভাগাভাগি
বড় বাজেটের পুজোকে অনুদানের বদলে সরকারের তহবিলে ওদের বাহুল্য কমিয়ে অর্থ দান করতে বলা উচিত, যাতে ওই অর্থেই ছোট পুজোগুলোকে অনুদান দেওয়া যায়। এতে সরকারি কোষাগারের ভারও লাঘব হয়। বড় বাজেটের পুজোগুলো সরকারি অনুদানের তোয়াক্কা করে না। বরং ওদের এক-একটা পুজোর খরচে কুড়ি-পঁচিশটা স্কুলের সারা বছরের মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করা যায়। এ বিষয়ে পুজো কমিটিগুলি কী ভাবছে, জানার আগ্রহ রইল।
দিলীপ চট্টোপাধ্যায়, শিবপুর রোড, হাওড়া
প্রশ্ন
রাজ্য সরকারকে প্রশ্ন, কর্মচারীদের করের টাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা যায়, ফুটবল ক্লাবকে চা খাওয়ায় ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা যায়, ইমাম-পুরোহিত ভাতা দেওয়া যায়, তবু অর্থাভাব দর্শিয়ে ডিএ থেকে দিনের পর দিন বঞ্চিত করা যায় কী করে?
বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, টালিগঞ্জ, কলকাতা