‘রাজধানীতে দম্ভের সৌধ’ (৪-৬) নিবন্ধে জহর সরকার বর্ণনা করেছেন, কী ভাবে সেন্ট্রাল ভিস্টার জন্য রেল ভবন, কৃষি ভবন, বায়ু ভবন, বিজ্ঞান ভবন, অগণিত ছায়াতরু, সর্বোপরি ন্যাশনাল আর্কাইভস ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। প্রশ্ন হল, গণতন্ত্রের দেশে নির্বাচিত সরকারের শীর্ষ নেতা নিজেকে সম্রাট মনে করে যে আত্মম্ভরিতার সৌধ গড়ে তুলছেন, এটা কি তার উপযুক্ত সময়? অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে বহু রোগী অক্সিজেন না পেয়ে মারা গিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশ, বিহারে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়েছে, শত শত মৃতদেহ গঙ্গায় ভাসছে, কত শিশু অনাথ হয়ে গিয়েছে। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকদের মতো সামনের সারির যোদ্ধাদের কত জনের অকালে প্রাণ গেল। এমন সময়ে মানুষকে না বাঁচিয়ে, সেন্ট্রাল ভিস্টা বানানোর তুঘলকি সিদ্ধান্ত অমানবিক। রাইসিনা হিলস থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত রাস্তা, ছায়াতরু, দু’পাশের প্রসিদ্ধ বাড়িগুলি যথেষ্টই সুন্দর। মূল্যবান বাড়িগুলি, আর্কাইভ ইত্যাদি ধ্বংস করে সেন্ট্রাল ভিস্টা বানানোর যুক্তির কোনও সারবত্তা নেই। তা হলে রইল বাকি আত্মপ্রচার, যে ভাবে উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী নিজের মর্মর মূর্তি বানিয়েছিলেন। আজ সে সব মূর্তির কোনও দাম নেই।
কালের নিয়মে স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্রের পতন ঘটবে। ইংরেজ শাসকের মূর্তিগুলি, যা তখনকার রাজধানী কলকাতায় স্থাপিত হয়েছিল, তা এখন আর নেই। কিছু ব্যারাকপুরের লাটবাগানে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। ব্রিটিশদের প্রতিষ্ঠিত কলকাতার মনুমেন্টকে এখন মানুষ শহিদ মিনার বলে জানেন। অতিমারির প্রেক্ষিতে মোদীর সেন্ট্রাল ভিস্টা বানানো ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবেই আখ্যাত হবে।
শিখা সেনগুপ্ত
কলকাতা-৫১
অমরত্বের আশায়
সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্প নরেন্দ্র মোদীর বিধ্বংসী মানসিকতাকে নগ্ন করে দিয়েছে। এর রূপায়ণের জন্য ভেঙে দেওয়া হবে গৌরবময় জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীকগুলি। ভাঙা হবে প্রাসাদতুল্য নেহরু ভবন। হয়তো ভেঙে ফেলা হবে জাতীয় জাদুঘরও, যেখানে সুরক্ষিত আছে অমূল্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। সেগুলিকে স্থানান্তরিত করা হবে করণিক-আধিকারিকদের জন্য নির্মিত কক্ষে, যেখানে প্রয়োজনীয় আলো-আর্দ্রতা বজায় রাখা দুরূহ। ধ্বংসযজ্ঞে বলি দেওয়া হবে শত শত বিশাল বৃক্ষ। বিদেশি আক্রমণকারীরাও আমাদের দেশের এত ব্যাপক ক্ষতি করেনি। যখন বিশ্বনেতারা অতিমারির মোকাবিলায় ব্যতিব্যস্ত, তখন মোদী ২০ হাজার কোটি টাকা (আসলে তার কয়েক গুণ বেশি) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করার মহাযজ্ঞ করছেন। এই নিষ্ঠুরতার নিন্দা করার জন্য কোনও ভাষাই যথেষ্ট নয়। এই প্রকল্প কেবল ইতিহাসে অমর হওয়ার বিকৃত বাসনামাত্র। এবং এর জন্য ভারতবাসীকে বিপুল আর্থিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য চোকাতে হবে।
তৈয়েব মণ্ডল
ইমেল মারফত
স্মরণীয়
জহর সরকারের নিবন্ধ থেকে জানা গেল যে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনটি ১২ একর জমির উপর অবস্থিত, পাঁচটি বাংলো জুড়ে। নিশ্চয়ই সেটি যথোপযুক্ত বিবেচিত না হওয়াতে সেন্ট্রাল ভিস্টায় নির্মিত হচ্ছে নতুন বাসভবন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর তুলনা নিরর্থক। তা-ও বলতে হয়, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাস করতেন, এখনও করেন, কলকাতার এক ফ্ল্যাটে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নিজের বাড়িতে। লেখক মন্তব্য করেছেন, “এই মূল্যায়ন সাধারণত বাদশার মৃত্যুর পরে হয়ে থাকে।” মৃত্যুর পরে মূল্যায়নের দায়িত্ব ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে রাখলে বিপদের সম্ভাবনা— কে জানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী মূল্যায়ন করবে। ভাল হলেও, তিনি তো তা দেখতে পাবেন না। এই মনোবৃত্তিতে উদ্বুদ্ধ হয়েই বোধ হয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিজেকে স্মরণীয় করে রাখার ব্যবস্থা করছেন।
সঞ্জিত ঘটক
কলকাতা-১০৩
হৃদয়হীন
‘রাজধানীতে দম্ভের সৌধ’ পড়ে মনে হল, দেশের বুদ্ধিজীবীরা কি সেন্ট্রাল ভিস্টা নির্মাণের প্রতিবাদে মুখ খুলবেন? আজ রাজনীতিতে মহাত্মা গাঁধী-নেতাজি-দেশবন্ধুর মতো মহাপ্রাণ ব্যক্তিত্বের অভাব বলেই কি এই নৈতিকতার সঙ্কট? রাজনীতি হৃদয়বৃত্তির কারবার, বর্তমানে তা প্রায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে।
তপন বর্মণ
রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
ভাষার প্রতাপ
‘আমলাতন্ত্রের চেনা ভাষা’ ব্যবহারের জন্য এক শীর্ষ আমলাকে অভিযুক্ত করেছেন প্রাক্তন শীর্ষ আমলা জহর সরকার (‘এ বার না হয় মুখ্যমন্ত্রীকেই শো-কজ় করুন’, ২-৬)। এই ভাষা তো ‘লৌহ কঠিন’ ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার উত্তরাধিকার। স্বাধীন দেশের প্রশাসনে এই ভাষার খোলনলচে পাল্টানোর কথা কেউ ভেবেছেন বলে জানা নেই। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এঁদেরই বলতেন ‘রাজপুরুষ’। আমলাতন্ত্রের ভাষা আর শাসকশ্রেণির ভাষায় ফারাক প্রায় নেই, কারণ দু’টি গোষ্ঠীর স্বার্থ অভিন্ন। এই ভাষা রাজা-প্রজার তফাত বুঝিয়ে দেয়। এর প্রবাহ একমুখী— প্রজার উদ্দেশে রাজার বাণী— যেমনটি হয় ‘মন কি বাত’-এ। এর প্রবল প্রতাপে জনগণকে চোখ রাঙানো যায়, জেলে পোরা যায়। সবই জনস্বার্থে। যেমন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে শো-কজ়ও করা হয়েছে জনস্বার্থে।
বন্দনা দত্ত
চুঁচুড়া, হুগলি
অসার ভর্তুকি
‘সারে ভর্তুকি, চাষির লাভ?’ (২-৬) নিবন্ধে স্বাতী ভট্টাচার্য যথার্থই বলেছেন, সরকারি ভর্তুকি আখেরে প্রকৃত চাষির কোনও কাজে আসে না। বেশির ভাগটাই যায় তাঁদের ভাগে, যাঁরা প্রচারে চাষি কিন্তু কাজে জোতদার। বহুপ্রচারিত কৃষক আন্দোলনের বেশির ভাগই পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সম্পন্ন চাষি, যাঁরা প্রান্তিক চাষির পোষণভাতার ভাগ নিচ্ছেন। চাষির নামে যে অনুদান বা ভর্তুকি সরকার দেয়, তার সিংহভাগ দই নেপোতে মেরেছে। স্বাধীনতার পর নানা দলের সরকার জেনেশুনে ধারাবাহিক ভাবে পুকুরচুরি সয়ে গিয়েছে, কারণ চাষির স্বার্থে হাত দিলেই ভোটবাক্সে হাত পড়ার সম্ভাবনা! সম্ভবত স্বাধীনতার পর এই প্রথম সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে কৃষি আইন প্রণয়ন করেছে। সময় এসেছে, রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে গিয়ে কৃষির এবং কৃষকের উন্নতি নিয়ে ভাবার। কৃষক যদি ভর্তুকি আর খয়রাতির দিকেই তাকিয়ে থাকেন, তা হলে কৃষিকাজের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়।
দেবাশিস চক্রবর্তী
মাহেশ, হুগলি
বাঁশ-কঞ্চি
রাজনৈতিক দলের স্লোগান ‘খেলা হবে’ সরকারি কর্মসূচিতে ঠাঁই করে নিল। রাজ্য ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতর জেলা প্রশাসনের কাছে খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত স্বীকৃত ক্লাবগুলির তালিকা চাইল ফুটবল বিতরণ করার জন্য। কিন্তু কেবল ফুটবল নয়, দরকার পড়ে বিশেষ ইভেন্টের জন্য নির্দিষ্ট সরঞ্জাম— হার্ডলস, জ্যাভলিন, ডিসকাস, লং জাম্প বোর্ড, হাই জাম্প পিট। বাঁশ-কঞ্চি দিয়ে হার্ডল বানিয়ে ছেলেমেয়েরা অনুশীলন করে। কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে লং জাম্প-হাই জাম্প পিট বানায়। মাটিতে খড় বিছিয়ে চোট-আঘাত এড়ানোর ব্যবস্থা করে নেয়। এরা খেতখামারে কাজ করে, আনাজ-মাছ বেচেও খেলার অনুশীলন চালায়। অনেকে নির্মাণ কাজে জোগাড়ের কাজ করেও স্বপ্ন দেখে রাজ্য বা জাতীয় স্তরে পদক জিতবে, সম্মান বাড়াবে। এদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা
কলকাতা-১৫৪