‘নিকাশি নালায় আটকে পা...’ (১৫-৯) প্রতিবেদনটি আধুনিক শহর নিউ টাউনের সরকারি পরিষেবায় ঘাটতির একটি চরমতম নিদর্শন। নিউ টাউন বললেই একটা ঝাঁ চকচকে শহরের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, বিনোদন পার্ক, বিদ্যুতের আলো, সবই একেবারে সাজানো গোছানো। সৌন্দর্যায়নে যেন কোনও খামতি নেই। তাই প্রবীণরা প্রথমেই এই শহরকে তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ের অন্যতম জায়গা হিসাবে বেছে নেন। কিন্তু এ সবের মাঝে যখন এক জন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে রাস্তার জমা জলে দুটো কংক্রিটের ঢাকনার মাঝে পা ঢুকে যাওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখা যায়, তখন সত্যিই নিউ টাউনের আসল সরকারি পরিষেবার চিত্রটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এখন এই রকম দুর্ঘটনার পর কি প্রশাসন এ সবের নিরসনে বা স্থায়ী সমস্যার সমাধানে কোনও ভাবে সচেষ্ট হবে? কেননা অতীতে দেখা গিয়েছে, রাস্তাঘাটে এ রকম অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কিছু দিনের জন্য প্রশাসন বেশ সক্রিয় হলেও, তার পর সব কিছু আগের মতোই হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, নিউ টাউনের রাস্তাঘাটে জনসাধারণের যে সব পরিষেবা অত্যন্ত জরুরি, সেগুলির স্থায়ী সমাধানে আন্তরিক ভাবে সচেষ্ট হন। তার ফলে এক দিকে যেমন রাস্তাঘাটের বহু দুর্ঘটনা থেকে মানুষের প্রাণ রক্ষা পাবে, অন্য দিকে সরকারেরও ভাবমূর্তি সাধারণের কাছে সমুজ্জ্বল হবে।
অমরনাথ করণ
কলকাতা-১৩৫
স্বার্থপরতা
পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার অনিবার্য প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচ্য সম্পাদকীয়ের (‘ঐতিহাসিক দায়’, ২৭-৯) শেষ ভাগে লেখা হয়েছে—“সুতরাং, উন্নত দেশগুলিকে অগ্রসর হইতে হইবে, অবিলম্বে; পরিবেশের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে।” কিন্তু ধনী ও উন্নত দেশগুলোর কায়েমি মনোভাব এ বিষয়ে মূলত এমনই চূড়ান্ত স্বার্থকুটিল যে, এই জরুরি বিশ্বব্যাপী সমস্যার প্রকৃত সমাধান এ ভাবে হওয়াটা এত মসৃণ নয় বলে মনে করি। আসলে, বিশ্বের অন্যতম দূষণকারী ধনী দেশগুলো (আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স ইত্যাদি) তাদের অগাধ অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণের অভীপ্সায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বিপুল পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে চলেছে। বর্তমানে এর পাশাপাশি আরও এক ভয়াবহ সমস্যা গরিব, অনুন্নত দেশগুলোর সাধারণ মানুষের জীবনরক্ষার প্রশ্নে নিদারুণ ভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। অর্থাৎ, অতিমারির ফলে সবাই যখন এক ভীষণ বিপদের মুখে— দেখা যাচ্ছে, এ নিয়েও আন্তর্জাতিক স্তরে উক্ত ধনী বা সম্পন্ন দেশগুলোর খুব একটা উল্লেখযোগ্য তৎপরতা বা হেলদোল নেই।
সাম্প্রতিক কালে, বিশ্ব জুড়ে কোভিড-১৯ প্রতিষেধককে কেন্দ্র করে ধনী দেশগুলোর ভ্যাকসিন সংক্রান্ত বিষয়টি তার আরও একটা নির্লজ্জ সংযোজন। সমীক্ষা বলছে, বিশ্বব্যাপী পরিচালিত ৪০০ কোটির বেশি পরিমাণ ভ্যাকসিন ডোজ়গুলির ৮০ শতাংশেরও বেশি ধনী বা উন্নত দেশগুলোতে চলে গিয়েছে। মোদ্দা কথা, প্রাণরক্ষার সামগ্রিক স্বার্থে জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধানের লক্ষ্যে সব দেশের যেমন এক সঙ্গে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পথে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন, গরিব দেশগুলোতে ভ্যাকসিন বণ্টনের অগ্রাধিকারের বিষয়কেও সমভাবে কার্যকর করাটা তেমনই জরুরি। অথচ, বাস্তবে দু’ক্ষেত্রেই কদাকার ছবিটা দৃশ্যমান। অর্থাৎ, ক্ষমতাশালী ধনী দেশগুলো লজ্জাকর ভাবে এটাই প্রমাণ দিল— গরিব দেশগুলোকে প্রতি বছর জলবায়ুর প্রভাবকে যুঝতে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘১০ হাজার কোটি ডলারের দান না দেওয়া’; অন্য দিকে, অতিমারির ভ্যাকসিন গরিব দেশগুলোতে ন্যায্য ভাবে বা ঠিক নিয়মে না পাঠিয়ে, ৮০ শতাংশেরও বেশি আগেভাগে নিজেদের মধ্যে বেমালুম কব্জা করা!
আদতে ধনী ও উন্নত দেশগুলোর আগ্রাসী চরিত্র বা আচরণ গরিব দেশগুলোর প্রতি যদি সব ক্ষেত্রেই এমনই অভিসন্ধিমূলক হয়, তবে তারা কবে এমন অমোঘ বিষয়কে ‘ঐতিহাসিক দায়’ বলে স্বীকার করে নেবে?
পৃথ্বীশ মজুমদার
কোন্নগর, হুগলি
পুজোর দিনগুলো
দুর্গাপুজোয় হিন্দু আর মুসলমান আমরা হাতে হাত ধরে কী সুন্দর দিন কাটাতাম। সময়কাল— গত শতকের ষাটের দশকের পুরো এক দশক। পিরোজপুর শহরে হাতেগোনা কয়েকটি বনেদি পরিবার নিজেদের উদ্যোগেই বিশাল আকারে আয়োজন করতেন দুর্গাপুজোর। মন্দিরে মন্দিরে পুজোর আয়োজনের পাশাপাশি হিন্দু স্কুল, সরকারি স্কুল আর টাউন স্কুলেও দুর্গাপুজোর সে কী বিশাল আয়োজন হত! হিন্দু আর মুসলমানরা সবাই হাতে হাত ধরে মণ্ডপে যেতাম।
সজল আর প্রদীপ ছিল আমার প্রিয় বন্ধু। তখন আমাদের বয়স তেরো কি চোদ্দো, পুজো মণ্ডপে বসে যেত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আড্ডা। কুঞ্জুবাবুর বাড়িতে আলাদা ভাবে দুর্গাপুজোর আয়োজনে ছিল বিশাল রমরমা অবস্থা। ঢাকি বাজাত ঢাক আর মাইকে জগন্ময় মিত্র, পান্নালাল ভট্টাচার্য, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের গান বাজানো হত সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী আর দশমী— এই পাঁচ দিন ধরে হিন্দু পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি মুসলমান ঘরের লোকজনও পুজো মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে ভিড় করত। সবার হাতে হাতে দেওয়া হত মিঠাই। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে বাবার হাত ধরে পুজোর মণ্ডপে যাওয়ার দিনগুলির কথা মনে হলে ইচ্ছে হয় সেই দিনগুলি ফিরে পেতে! কী আনন্দেই না আমরা দুই ধর্মের লোকেরা মিলে দিন কাটাতাম। পুজোর আগেই বন্ধু সজল এতবার বাসায় পাঞ্জাবি দিয়ে যেত। পর দিন সজলের বাবা উপেন এতবার কাকার সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞেস করতেন, খোকন, পাঞ্জাবি পেয়েছিস— তুই সুন্দর, তাই লাল রঙের পাঞ্জাবি দিয়েছি।
কোথায় হারিয়ে গেল পিরোজপুরের দুর্গাপুজোর সোনালি দিনগুলি? পিরোজপুরে কেন সঙ্কুচিত হয়ে এল দুর্গাপুজো? সরকারি বিদ্যালয়ে, আদর্শ স্কুলে, টাউন স্কুলে, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে, কিয়ামুদ্দিন স্কুলে আর করিমুননেছা স্কুলে হয় না কেন দুর্গাপুজোর আয়োজন? শারদোৎসবের এ দৈন্যদশা কেন?
লিয়াকত হোসেন খোকন
রূপনগর, বাংলাদেশ
পুজোর খরচ
‘বাড়ির দুর্গা পুজোর খরচ ১৩ টাকা ১১আনা। এই লক্ষের যুগে ভাবছেন, এ আবার হয় না কি! হ্যাঁ হয়! সংবাদ প্রভাকর সূত্রে জানা যায়, ১২৬৫ বঙ্গাব্দে বাড়ির দুর্গাপুজোর খরচ ছিল এমনটাই। এ বার দেখে নেওয়া যাক হাওড়া ও হুগলির দুই বাড়ির খরচের হিসাব।
হুগলির চুঁচুড়ার সুবর্ণবণিক সম্প্রদায়ের দত্ত পরিবার ছিল সুপরিচিত। দত্ত পরিবারের সেই সময়কার পুজোর খরচ ছিল এই রকম— প্রতিমা: ১ টাকা, চাল: ৪ টাকা, গুড়: ৮ আনা, মধু: ৬ পয়সা, সন্দেশ বাতাসা: ১২ আনা, কাপড়: ১০ আনা, ছাগল: ১২ আনা, বাজার খরচ: ৮ আনা, তেল: ১ টাকা, সরকারি খরচ: ২ টাকা ৬ আনা। মোট খরচ: ১৩ টাকা ১১ আনা। ভাবা যায়!
এ বার দেখুন হাওড়া আমতার রসপুর রায় বাড়ির পুজোর খরচ। রসপুর গ্ৰামের বাসিন্দা ছিলেন যশচন্দ্র রায়। তাঁর বাড়ির পুজো শুরু শেরশাহের আমলে। ১২৬৫ বঙ্গাব্দে রায় বাড়ির ফর্দ— প্রতিমা: ১ টাকা, চাল: ৪ টাকা, গুড়: ৮ আনা, মধু: ৬ পয়সা, সন্দেশ বাতাসা: ১১ আনা, কাপড়: ১০ আনা, বাজার খরচ: ৮ আনা, তেল: ১ টাকা, সরকারি খরচ: ২ টাকা ৬ আনা, পুজোর মোট খরচ— ১৩ টাকা।
লক্ষণীয় বিষয়, দুই বাড়ির পুজোর খরচ এক। তবে রায় বাড়ির পুজোয় ‘ছাগল’-এর খরচ জানা যায়নি।
দীপংকর মান্না
আমতা, হাওড়া