চিন্ময় গুহের ‘কলকাতার হাসপাতালে পেয়েছিলেন ডিএসসি ডিগ্রি’ (রবিবাসরীয়, ২৩-৭) পড়ে কার্ল গুস্তাভ ইয়ুং (১৮৭৫-১৯৬১) সম্পর্কে কিছু অজানা কথা জানতে পারলাম। এর সঙ্গে কয়েকটি কথা সংযোজন করতে চাই।
১৯৩৮ সাল ভারতে জায়মান মনোবিজ্ঞান জ্ঞানশৃঙ্খলের ইতিহাসে ছিল এক তাৎপর্যপূর্ণ সময়। কারণ, এ দেশে পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞান বিভাগের বয়স তখন সবেমাত্র বাইশ বছর। বিজাতীয় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ডিসকোর্সটি নিজেই তখন গঠনের পথে। মাত্র পনেরো বছর হল, ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে বিষয়টি স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা পেয়েছে। এমন একটি নবীন বিষয়ের আলোচনা সভায় পরাধীন ভারতে ডাক পড়ল তাঁর মতো প্রবাদপ্রতিম সুইস মনস্তাত্ত্বিকের। সে বছর ওই সভায় বক্তৃতা প্রদানের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন আরও দু’জন প্রখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক— ইংল্যান্ডের চার্লস স্পিয়ারম্যান (১৮৬৩-১৯৪৫) এবং আমেরিকার ম্যাক্স ফ্রিডরিশ মেয়ার (১৮৭৩-১৯৬৭)। প্রসঙ্গত, তাঁরা সেই অনুরোধ রাখতে এতটা পথ পাড়ি দিতে যে সম্মত হয়েছিলেন, তার একটা বড় কারণ হতে পারে ভারতীয় সভ্যতা ও মনস্তত্ত্বের প্রতি তাঁদের বিশেষ আগ্রহ, প্রবন্ধকার যেমনটা দেখিয়েছেন ইয়ুং-এর ক্ষেত্রে।
অথচ বাস্তবে দেখা গেল, বিজ্ঞান কংগ্রেসে মনোবিজ্ঞান বিভাগের উদ্বোধনী বক্তৃতা দিতে গিয়ে সভাপতি গিরীন্দ্রশেখর বসু বা ফ্রয়েড-ভাবে ভাবিত অন্যান্য মনস্তাত্ত্বিক ইয়ুং-এর নামটি মুখে নিলেন না। আসলে তত দিনে ফ্রয়েডের সঙ্গে ইয়ুং-এর তাত্ত্বিক বিরোধ প্রকট হয়ে উঠেছে। যে ইয়ুংকে ফ্রয়েড এক কালে ‘সাইকোঅ্যানালিটিক মুভমেন্ট’-এ তাঁর উত্তরসূরি ভেবেছিলেন, সেই ইয়ুং-ই ফ্রয়েডের বিপক্ষ-গোষ্ঠী হয়ে উঠবেন, এই ঘটনা ভারতের ফ্রয়েড-পন্থীরা ভাল চোখে দেখেননি। তবে, ভারতীয় মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে ইয়ুং-এর একটা নিজে থেকে ভেবে নেওয়া গতে বাঁধা ধারণা ছিল। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি-র ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত ইয়ুং-এর পত্রাবলির (১৯৫৩) দ্বিতীয় খণ্ডে দেখা যায় যে, ভারতীয় মনন তাঁর কাছে ঠেকেছিল এক অধিবিদ্যাজাত অনুমান-ভিত্তিক পদ্ধতি হিসাবে। তিনি ভারতীয় মনোবিজ্ঞানের একটা ‘নারীসুলভ’ আদিকল্প নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন ‘পুরুষালি’ পশ্চিমের বিপরীতে। এই যে এত নৈতিকতা, অন্তর্দর্শনের কথা ইয়ুং বলছেন, প্রবন্ধকার লিখেছেন, সেটা দিয়েই আসলে প্রাচ্যের নারীত্বের নির্মাণ ঘটালেন ইয়ুং, কলোনিয়াল ডিসকোর্স-এ যেমনটা হয়ে থাকে আর কি।
শিপ্রা সরকার, ইতিহাস বিভাগ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়
বাঘরোল
সম্প্রতি দেশে এবং বিদেশে বিশ্ব বাঘ দিবস (২৯ জুলাই) বেশ গুরুত্বের সঙ্গে উদ্যাপিত হল। বাঘ একটি বিপন্ন প্রাণী। বিশ্ব জুড়ে একে বাঁচিয়ে রাখতে বহু উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। নিঃসন্দেহে শুভ উদ্যোগ। আমাদের দেশেও গৃহীত হয়েছে নানা পরিকল্পনা। এর জন্য ব্যয় করা হয়েছে ও হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। গৃহীত হয়েছে ব্যাঘ্র প্রকল্প, তৈরি হয়েছে অভয়ারণ্য। বাঘ যে-হেতু হিংস্র প্রাণী এবং শিকারের মাধ্যমে আহারের সংস্থান করে, সেই কারণে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে আওতাভুক্ত করতে হয় বিপুল এলাকার বনভূমি। চালাতে হয় পরিকল্পিত নজরদারি এবং বিরাট বনভূমির রক্ষণাবেক্ষণ। অতএব এর পিছনে বরাদ্দ করতে হয় বিপুল অর্থ।
বাঘের পিছনে এই মনোযোগ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। কিন্তু দুঃখদায়ক হল আর একটি বিপন্ন প্রাণী সম্পর্কে সরকারি উদাসীনতা। প্রাণীটি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য-প্রাণী বাঘরোল। ইংরেজিতে এর নাম ফিশিং ক্যাট। এলাকাভেদে এর নানা রকম আঞ্চলিক নাম আছে। যেমন— গোবাঘা, মেছো বিড়াল, মেছো বাঘ, ভামবাঘা ইত্যাদি। পৃথিবীর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর প্রভৃতি জেলায় এদের সর্বাধিক দেখা মেলে। নানা কারণে এদের সংখ্যা খুব কমে গিয়েছে। এটি ঘোরতর বিপন্ন এবং আইইউসিএন-এর লাল তালিকাভুক্ত। ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুসারে, এটি শিডিউল ওয়ান প্রাণী, যার অর্থ একে টিকিয়ে রাখতে দরকার বিশেষ সংরক্ষণ। এ-হেন প্রাণীটির প্রতি কেন্দ্র, রাজ্য— উভয়ের মনোযোগ নামমাত্র। এই গ্রামীণ গুরুত্বপূর্ণ বিপন্ন প্রাণীটির অস্তিত্ব সুনিশ্চিত করতে সরকার বাঘের মতোই একেও সমতুল্য গুরুত্ব দিক। গ্রামীণ এলাকায় কিছু কিছু জঙ্গল ও জলাভূমি অধিগ্রহণ করা হোক বাঘরোলকে রক্ষা করতে, বিশেষত হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হুগলির ক্ষেত্রে। এই জেলাগুলিতে এখনও কিছু জলাভূমি আছে। জঙ্গল ও জলাভূমি কমে যাওয়াটাই বাঘরোলের সংখ্যা হ্রাসের প্রধান কারণ। জলাভূমি রক্ষা করতে না পারলে বাঘরোলকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। সড়ক-দুর্ঘটনায় বাঘরোলের মৃত্যু রুখতে রাস্তার দু’ধারে মাঝে-মধ্যে লাগানো হোক সতর্কতামূলক বোর্ড। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বাঘরোলের ভূমিকা কোনও অংশে কম নয়।
প্রদীপরঞ্জন রীত, আমতা, হাওড়া
মানুষই দায়ী
‘শেষের শুরু?’ (২৬-৭) শীর্ষক সম্পাদকীয় উপযুক্ত বিষয়ে আলোকপাত করেছে। এর শুরুতেই বলা হয়েছে, গরমে পুড়ছে ইউরোপ, বহু জায়গাতেই তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি। বিশ্ব উষ্ণায়নের হাত থেকে কেউ রেহাই পাবে না। ৫ জুন ঘটা করে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়, কিন্তু মানুষ কতটা সচেতন হচ্ছেন? এই জন্যই কবি বলেছেন, দিবসগুলো পালিত হয়, শপথগুলো নয়। এই সঙ্কট আজকের নয়। বিজ্ঞানী বা গবেষকরা অনেক আগে থেকেই এই ব্যাপারে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন। কিন্তু মানুষ সেটা মানলে তো। ১৯৯৭-এ কিয়োটো প্রোটোকল, ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি— পরিবেশ সংক্রান্ত আন্দোলনও তো কম হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের সর্বাধিক ধনী দেশগুলির মধ্যে দশ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাসের ৫০ শতাংশ নিঃসরণ করে থাকে, যা বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধানতম কারণ। গরিব দেশগুলো নিঃসরণ করে মাত্র ১২ শতাংশ। অথচ, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির ধাক্কা সর্বাধিক লাগে এই দেশগুলোতেই। যে ভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাপমাত্রার বৃদ্ধি ঘটছে, তাতে একে আটকাতে না পারলে সমূহ বিপদ। ভাবতে খারাপ লাগে, সুন্দর এই পৃথিবীর ধ্বংসের জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষই দায়ী হবে।
অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ
ভ্রান্ত ধারণা
অরুণোদয় ভট্টাচার্যের চিঠি ‘অতিরিক্ত কর’ (২৪-৭) থেকে জানলাম, অনেক পেনশনভোগীকে আয়কর বিভাগ অতিরিক্ত কর দিতে বাধ্য করে তাদের খুশিমতো হিসাব করে। আয়কর বিভাগ পেনশন অ্যাকাউন্টে জমা টাকার উপরে ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজ়িটের সুদ ও ‘অ্যাক্রুড ইন্টারেস্ট’ যত টাকা হয় (যা ফর্ম ২৬এএস-এ দেখানো থাকে) তা যোগ করে কর নির্ধারণ করে। বর্তমানে মেয়াদি জমার উপরে দশ টাকা বা দশ টাকার কম সুদ দিলে ব্যাঙ্ক এক টাকা কর (১০%) আয়কর বিভাগকে জমা দেয়, যা করদাতাদের ফর্ম ২৬এএস-এ দেখানো থাকে। আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার আগে করদাতাদের বাকি কর হিসাব করে ই-ট্যাক্সের মাধ্যমে ‘সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট ট্যাক্স’ দিতে হয়। নইলে ভবিষ্যতে জরিমানা দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। যত দেরি হবে, জরিমানা তত বাড়তে থাকবে। আমার মনে হয় অনেক পেনশনভোগীদের এটা ভ্রান্ত ধারণা যে, আয়কর বিভাগ উদ্ভট হিসাব করে বেশি কর দিতে বাধ্য করে। খুব সম্ভবত পেনশনভোগীরা মেয়াদি জমার সুদ আর ‘অ্যাক্রুড ইন্টারেস্ট’ পেনশনের সঙ্গে যোগ না করেই কর নির্ধারণ করেন।
সুমিত নাগ, শিবসাগর, অসম