লীলা মজুমদারের জন্মদিনে অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়ের ‘মনের মধ্যে স্বপ্নের দেশ’ (২৬-২) লেখাটি পড়লাম। বিস্মিত হতে হল। সেই সঙ্গে বেদনা ও ক্ষোভও যে অনুভব করেছি, তা গোপন করতে চাই না। লীলা মজুমদার যে সাহিত্যাকাশে বিপুলাকার— এই কথাটি তাঁর সম্বন্ধে অবহিত ব্যক্তি মাত্রেই জানেন। জন্মদিবসে প্রকাশিত লেখাটি যেন নতুন করে বোঝাতে চায়, তিনি এক জন মার্ক্সিস্ট বলেই তাঁর রচনায় এসেছে দরিদ্রের কথা, এসেছে নির্যাতিত চরিত্রেরা। তাঁর মার্ক্সবাদী বন্ধু কারা ছিলেন, তারও উল্লেখ আছে বক্তব্যের সমর্থনে। জানি না, লীলা মজুমদার হঠাৎ কী অপরাধ করে ফেললেন যে, তাঁকে একটি বিশেষ মণ্ডলের ছাঁচে ফেলে বিচার করতে হল। তাঁর রচনা ও সম্পাদনার মধ্যে থেকেই তাঁর সাহিত্যিক সত্তার পর্যালোচনা হল না কেন? ধরা যাক, নব্য প্রজন্মের কোনও পাঠক, যিনি উল্লিখিত রচনা থেকে লীলা মজুমদার বিষয়ে জ্ঞান লাভ করছেন, তাঁর কাছে এই সাহিত্যিক প্রথমেই ধরা পড়ছেন এক বিশেষ রাজনৈতিক আদর্শের ধ্বজাবাহী হিসেবে।
রাজনীতি ন্যায়সঙ্গত ও প্রয়োজনীয়। কিন্তু বিনা কারণে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে প্রতিটি মানুষকে ফেলে বিচার-বিশ্লেষণ করা অন্যায় ও নিন্দনীয়। দরিদ্র ও নিপীড়িতের প্রতি সহানুভূতি এক মানবিক গুণ। মার্ক্স না পড়লেও তা বিদ্যমান হয়। আবার পড়লেও যে সাহিত্যিকের তৃতীয় নয়ন গজায়, এমন নয়।
আবার মার্ক্সবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত স্মরণীয় সাহিত্যিক ও কবিগণ বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রেখেছেন। কথা হল, লীলা মজুমদারের মতো এক জন স্বতঃস্ফূর্ত সাহিত্যিককে কোনও মতবাদের নির্দিষ্ট গণ্ডিতে বদ্ধ করার উদ্দেশ্য কী? অসামান্য গল্পের সৃজনে পারঙ্গম, হাস্য ও করুণ রসের পরিবেশনে সিদ্ধহস্ত, নিত্য দেখা চরিত্রগুলির মধ্যে থেকে বৈশিষ্ট্য সন্ধানের দক্ষতা এবং তাঁর রচনায় হৃদয়বেত্তার প্রতিফলন তাঁকে জনপ্রিয় শুধু নয়, চিরস্মরণীয় করেছে। এমনকি, তিনি শিশুসাহিত্যিক, এই তকমাও তাঁকে সঠিক মর্যাদা দেয় না। তাঁর ছোটদের জন্য লিখিত গল্প-উপন্যাস পরিণত বয়সে পাঠ করে মর্মস্পর্শী অনুভবের সন্ধান মেলে, যা সার্থক রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সব ভুতুড়ে বইয়ের সেই পিঠে খেতে আসা গোটা গোটা বাচ্চারা হৃদয়ে-মনে যে অপূর্ব আবেদন তৈরি করে, তা কি কেবল কোনও রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ থেকেই আসে?
সাহিত্য বা সাহিত্যিক কেউ রাজনীতির কাছে ঋণী নয়। আপন হৃদয়, শিক্ষা, চেতনা দিয়ে রচিত সাহিত্যসম্ভার নিয়েই লীলা মজুমদার আমাদের চিরপ্রণম্য। তিনি বামপন্থার সমর্থক, বা অন্য কোনও মতবাদের, তার আলোচনা বাহুল্যমাত্র।
তিলোত্তমা মজুমদার, কলকাতা-৮৪
টাটকা বাতাস
অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়কে ‘মনের মধ্যে স্বপ্নের দেশ’ প্রবন্ধের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। লীলা মজুমদারকে নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নেই। সবচেয়ে কঠিন কাজ, সহজ করে লেখা, সেটাই তিনি করেছেন। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র মাকু, পদিপিসি খুব চেনা মনে হয়। তাঁর ‘যাত্রামঙ্গল’, ‘পাখি’, ‘দজ্জাল বউ’, ‘বুনোহাঁস’, ‘গুপির গুপ্তখাতা’, ‘হলদে পাখির পালক’ গল্পগুলো ছোটদের কাছে এক রত্নভান্ডার। শুধু ছোটরা নয়, আজকের এই জটিল যান্ত্রিক জীবনে বড়দের কাছেও লীলা মজুমদারের লেখা টাটকা বাতাস। এই রকমই সহজ করে বহু কঠিন বিষয়কে গল্পের মোড়কে উপস্থাপন করেছিলেন আর এক জন স্বনামধন্য লেখিকা— আশাপূর্ণা দেবী।
এঁদের গল্প পড়ে যেমন অনাবিল আনন্দ পাওয়া যায়, আজকাল আর সেই রকম লেখা দেখতে পাওয়া যায় না। এখনকার ছোটদের গল্পে এত আধুনিক, যান্ত্রিক, স্মার্ট বিষয় নিয়ে লেখা হয় যে, মনোযোগ রাখতে পারা যায় না। আর আনন্দ পাওয়া যায় কি না, সে প্রশ্নের উত্তর উহ্য থাক।
লীলা মজুমদারের লেখা চিরকালীন, এই লেখার স্বাদ যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের আর অন্য কিছুতে মন ভরবে না।
সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া
ছোটবেলার পুজো
2 সরস্বতী পুজোয় নিজের অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেছেন পত্রলেখক সৈয়দ আনসার উল আলাম (‘স্মৃতি’, ২৪-২)। আমিও এ প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানাতে চাই। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন পড়তাম, তখন সরস্বতী পুজো বলতে শুধু বুঝতাম ‘আজ বই খুলতে নেই’, ফলে সে দিন বাড়িতে পড়া বন্ধ। যে হেতু আমার গ্রাম ও পাড়ায় মুসলিম বেশি ছিল, তাই মণ্ডপ করে পুজো হত না। তবে দেখতাম, আমাদের পাড়ার মুসলিম বাড়ির যে দিদিরা হাই স্কুলে পড়ে, তারা সব শাড়ি পরে সে দিন স্কুলে যায়। পরে যখন পঞ্চম শ্রেণিতে গলসি বাজারের হাই স্কুলে গেলাম, তখন দেখলাম বিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজো মানে এক এলাহি ব্যাপার। আমাদের সংস্কৃতের শিক্ষক পুজো করতেন। দেখলাম, পুজোর সময় ছেলেরা হাত জোড় করে দেবীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আর স্যর মন্ত্র পড়ছেন। আমিও দাঁড়িয়ে পড়লাম। স্যর আমার হাতে কিছু বেলপাতা দিলেন, আমি অন্যদের অনুসরণ করে যেতে লাগলাম। কলেজে পড়ার সময় ছাত্রাবাসে থাকতাম। সেখানে সরস্বতীর পুজোর দিন যেন পরতেই হবে পাঞ্জাবি, পাজামা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবাসে যে মুসলিম দাদাটি ছিল পাঁচওয়াক্ত নমাজি, সে-ই দেখলাম তদারকিতে সবচেয়ে ব্যস্ত।
ফিরোজ আলি কাঞ্চন, গলসি, বর্ধমান
সংবাদ কেন
‘সাহবাজের কাঁধেই স্কুলের সরস্বতীর ভার’ (১৬-২) সংবাদটি পড়ে নিশ্চিত হলাম, আমরা পিছনে হাঁটছি। এমন একটি সাধারণ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের প্রয়োজন হবে কেন? আজ থেকে ৫০ বছর পূর্বে যখন আমি গড়বেতা থানার অন্তর্গত মঙ্গলাপোতা গ্রামের হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ি, সরস্বতী পুজোর দিন সহপাঠী দেবযানী এসে বলে, স্যর ডাকছেন, এখনই চল। তোকে আলপনা দিতে হবে। তখন স্কুলে আমিই একমাত্র মুসলিম ছাত্রী। অন্যদের সঙ্গে কোনও বিভাজন ছিল না। সরস্বতী পুজোয় হিন্দু-মুসলিম সব ছাত্রছাত্রী হাত লাগাতাম। প্রতিমার পাশে বসে ফল কাটতাম, দাদা আগের রাতে প্রতিমা সাজাতে যেত। তখন মণ্ডপ সাজানোর জন্য বাড়ি থেকে ভাল শাড়ি নিয়ে যেতে হত। কত বার দাদা মায়ের শাড়ি নিয়ে গিয়েছে। আমরা পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছি। এ নিয়ে কারও আপত্তি ছিল না। বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক ছিল।
রোশেনারা খান, গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর
ভাষাসন্ত্রাস
আমি নিয়মিত শব্দছক সমাধান করি। ১৫ ফেব্রুয়ারি পাশাপাশি ৩৭ সূত্রে বলা হয়েছে, ‘নিষ্ঠুর বা নীচ ব্যক্তি’। পর দিন সমাধানে বলা হয়েছে, ‘চামার’। আমি এই জাতিবিদ্বেষী ভাষা প্রচারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যিনিই এই শব্দছকটির রচনা করে থাকুন, তাঁর বর্তমান দেশ-কাল সম্পর্কে আর একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
এ কথা ঠিক যে, এই ধরনের বিদ্বেষমূলক ভাষা আমাদের চার পাশে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়েই এখন সচেতন হওয়ার ডাক বিশেষ ভাবে প্রচার করা হয়ে থাকে। এই ধরনের ভাষাসন্ত্রাস অনভিপ্রেত শুধু নয়, প্রতিবাদযোগ্য বলে মনে করি।
বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা-৩
সম্পাদক সমীপেষু: অসামান্য লীলা
লীলা মজুমদারের জন্মদিনে অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়ের ‘মনের মধ্যে স্বপ্নের দেশ’ (২৬-২) লেখাটি পড়লাম। বিস্মিত হতে হল। সেই সঙ্গে বেদনা ও ক্ষোভও যে অনুভব করেছি, তা গোপন করতে চাই না। লীলা মজুমদার যে সাহিত্যাকাশে বিপুলাকার— এই কথাটি তাঁর সম্বন্ধে অবহিত ব্যক্তি মাত্রেই জানেন। জন্মদিবসে প্রকাশিত লেখাটি যেন নতুন করে বোঝাতে চায়, তিনি এক জন মার্ক্সিস্ট বলেই তাঁর রচনায় এসেছে দরিদ্রের কথা, এসেছে নির্যাতিত চরিত্রেরা। তাঁর মার্ক্সবাদী বন্ধু কারা ছিলেন, তারও উল্লেখ আছে বক্তব্যের সমর্থনে। জানি না, লীলা মজুমদার হঠাৎ কী অপরাধ করে ফেললেন যে, তাঁকে একটি বিশেষ মণ্ডলের ছাঁচে ফেলে বিচার করতে হল। তাঁর রচনা ও সম্পাদনার মধ্যে থেকেই তাঁর সাহিত্যিক সত্তার পর্যালোচনা হল না কেন? ধরা যাক, নব্য প্রজন্মের কোনও পাঠক, যিনি উল্লিখিত রচনা থেকে লীলা মজুমদার বিষয়ে জ্ঞান লাভ করছেন, তাঁর কাছে এই সাহিত্যিক প্রথমেই ধরা পড়ছেন এক বিশেষ রাজনৈতিক আদর্শের ধ্বজাবাহী হিসেবে।
রাজনীতি ন্যায়সঙ্গত ও প্রয়োজনীয়। কিন্তু বিনা কারণে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে প্রতিটি মানুষকে ফেলে বিচার-বিশ্লেষণ করা অন্যায় ও নিন্দনীয়। দরিদ্র ও নিপীড়িতের প্রতি সহানুভূতি এক মানবিক গুণ। মার্ক্স না পড়লেও তা বিদ্যমান হয়। আবার পড়লেও যে সাহিত্যিকের তৃতীয় নয়ন গজায়, এমন নয়।
আবার মার্ক্সবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত স্মরণীয় সাহিত্যিক ও কবিগণ বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রেখেছেন। কথা হল, লীলা মজুমদারের মতো এক জন স্বতঃস্ফূর্ত সাহিত্যিককে কোনও মতবাদের নির্দিষ্ট গণ্ডিতে বদ্ধ করার উদ্দেশ্য কী? অসামান্য গল্পের সৃজনে পারঙ্গম, হাস্য ও করুণ রসের পরিবেশনে সিদ্ধহস্ত, নিত্য দেখা চরিত্রগুলির মধ্যে থেকে বৈশিষ্ট্য সন্ধানের দক্ষতা এবং তাঁর রচনায় হৃদয়বেত্তার প্রতিফলন তাঁকে জনপ্রিয় শুধু নয়, চিরস্মরণীয় করেছে। এমনকি, তিনি শিশুসাহিত্যিক, এই তকমাও তাঁকে সঠিক মর্যাদা দেয় না। তাঁর ছোটদের জন্য লিখিত গল্প-উপন্যাস পরিণত বয়সে পাঠ করে মর্মস্পর্শী অনুভবের সন্ধান মেলে, যা সার্থক রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সব ভুতুড়ে বইয়ের সেই পিঠে খেতে আসা গোটা গোটা বাচ্চারা হৃদয়ে-মনে যে অপূর্ব আবেদন তৈরি করে, তা কি কেবল কোনও রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ থেকেই আসে?
সাহিত্য বা সাহিত্যিক কেউ রাজনীতির কাছে ঋণী নয়। আপন হৃদয়, শিক্ষা, চেতনা দিয়ে রচিত সাহিত্যসম্ভার নিয়েই লীলা মজুমদার আমাদের চিরপ্রণম্য। তিনি বামপন্থার সমর্থক, বা অন্য কোনও মতবাদের, তার আলোচনা বাহুল্যমাত্র।
তিলোত্তমা মজুমদার, কলকাতা-৮৪
টাটকা বাতাস
অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়কে ‘মনের মধ্যে স্বপ্নের দেশ’ প্রবন্ধের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। লীলা মজুমদারকে নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নেই। সবচেয়ে কঠিন কাজ, সহজ করে লেখা, সেটাই তিনি করেছেন। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র মাকু, পদিপিসি খুব চেনা মনে হয়। তাঁর ‘যাত্রামঙ্গল’, ‘পাখি’, ‘দজ্জাল বউ’, ‘বুনোহাঁস’, ‘গুপির গুপ্তখাতা’, ‘হলদে পাখির পালক’ গল্পগুলো ছোটদের কাছে এক রত্নভান্ডার। শুধু ছোটরা নয়, আজকের এই জটিল যান্ত্রিক জীবনে বড়দের কাছেও লীলা মজুমদারের লেখা টাটকা বাতাস। এই রকমই সহজ করে বহু কঠিন বিষয়কে গল্পের মোড়কে উপস্থাপন করেছিলেন আর এক জন স্বনামধন্য লেখিকা— আশাপূর্ণা দেবী।
এঁদের গল্প পড়ে যেমন অনাবিল আনন্দ পাওয়া যায়, আজকাল আর সেই রকম লেখা দেখতে পাওয়া যায় না। এখনকার ছোটদের গল্পে এত আধুনিক, যান্ত্রিক, স্মার্ট বিষয় নিয়ে লেখা হয় যে, মনোযোগ রাখতে পারা যায় না। আর আনন্দ পাওয়া যায় কি না, সে প্রশ্নের উত্তর উহ্য থাক।
লীলা মজুমদারের লেখা চিরকালীন, এই লেখার স্বাদ যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের আর অন্য কিছুতে মন ভরবে না।
সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া
ছোটবেলার পুজো
2 সরস্বতী পুজোয় নিজের অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেছেন পত্রলেখক সৈয়দ আনসার উল আলাম (‘স্মৃতি’, ২৪-২)। আমিও এ প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানাতে চাই। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন পড়তাম, তখন সরস্বতী পুজো বলতে শুধু বুঝতাম ‘আজ বই খুলতে নেই’, ফলে সে দিন বাড়িতে পড়া বন্ধ। যে হেতু আমার গ্রাম ও পাড়ায় মুসলিম বেশি ছিল, তাই মণ্ডপ করে পুজো হত না। তবে দেখতাম, আমাদের পাড়ার মুসলিম বাড়ির যে দিদিরা হাই স্কুলে পড়ে, তারা সব শাড়ি পরে সে দিন স্কুলে যায়। পরে যখন পঞ্চম শ্রেণিতে গলসি বাজারের হাই স্কুলে গেলাম, তখন দেখলাম বিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজো মানে এক এলাহি ব্যাপার। আমাদের সংস্কৃতের শিক্ষক পুজো করতেন। দেখলাম, পুজোর সময় ছেলেরা হাত জোড় করে দেবীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আর স্যর মন্ত্র পড়ছেন। আমিও দাঁড়িয়ে পড়লাম। স্যর আমার হাতে কিছু বেলপাতা দিলেন, আমি অন্যদের অনুসরণ করে যেতে লাগলাম। কলেজে পড়ার সময় ছাত্রাবাসে থাকতাম। সেখানে সরস্বতীর পুজোর দিন যেন পরতেই হবে পাঞ্জাবি, পাজামা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবাসে যে মুসলিম দাদাটি ছিল পাঁচওয়াক্ত নমাজি, সে-ই দেখলাম তদারকিতে সবচেয়ে ব্যস্ত।
ফিরোজ আলি কাঞ্চন, গলসি, বর্ধমান
সংবাদ কেন
‘সাহবাজের কাঁধেই স্কুলের সরস্বতীর ভার’ (১৬-২) সংবাদটি পড়ে নিশ্চিত হলাম, আমরা পিছনে হাঁটছি। এমন একটি সাধারণ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের প্রয়োজন হবে কেন? আজ থেকে ৫০ বছর পূর্বে যখন আমি গড়বেতা থানার অন্তর্গত মঙ্গলাপোতা গ্রামের হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ি, সরস্বতী পুজোর দিন সহপাঠী দেবযানী এসে বলে, স্যর ডাকছেন, এখনই চল। তোকে আলপনা দিতে হবে। তখন স্কুলে আমিই একমাত্র মুসলিম ছাত্রী। অন্যদের সঙ্গে কোনও বিভাজন ছিল না। সরস্বতী পুজোয় হিন্দু-মুসলিম সব ছাত্রছাত্রী হাত লাগাতাম। প্রতিমার পাশে বসে ফল কাটতাম, দাদা আগের রাতে প্রতিমা সাজাতে যেত। তখন মণ্ডপ সাজানোর জন্য বাড়ি থেকে ভাল শাড়ি নিয়ে যেতে হত। কত বার দাদা মায়ের শাড়ি নিয়ে গিয়েছে। আমরা পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছি। এ নিয়ে কারও আপত্তি ছিল না। বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক ছিল।
রোশেনারা খান, গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর
ভাষাসন্ত্রাস
আমি নিয়মিত শব্দছক সমাধান করি। ১৫ ফেব্রুয়ারি পাশাপাশি ৩৭ সূত্রে বলা হয়েছে, ‘নিষ্ঠুর বা নীচ ব্যক্তি’। পর দিন সমাধানে বলা হয়েছে, ‘চামার’। আমি এই জাতিবিদ্বেষী ভাষা প্রচারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যিনিই এই শব্দছকটির রচনা করে থাকুন, তাঁর বর্তমান দেশ-কাল সম্পর্কে আর একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
এ কথা ঠিক যে, এই ধরনের বিদ্বেষমূলক ভাষা আমাদের চার পাশে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়েই এখন সচেতন হওয়ার ডাক বিশেষ ভাবে প্রচার করা হয়ে থাকে। এই ধরনের ভাষাসন্ত্রাস অনভিপ্রেত শুধু নয়, প্রতিবাদযোগ্য বলে মনে করি।
বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা-৩