—ফাইল চিত্র।
দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘এ বার তবে কী...’ (২৮-১২) শীর্ষক প্রবন্ধটির পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, রাজনীতি যেন বর্তমানে একটি বড় সম্ভাবনার শিল্প। এবং এই শিল্পের কারিগররা হলেন বিরোধী জোট রাজনীতির কলাকুশলী। কলাকুশলীদের মধ্যে নিঃসন্দেহে কংগ্রেসের অবস্থান অগ্রগণ্য। সর্বভারতীয় দল হলেও, কংগ্রেসের অস্তিত্ব এখন কয়েকটা মাত্র রাজ্যে সীমাবদ্ধ। সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে কংগ্রেস আর অন্য বিরোধী দলগুলির উপর কর্তৃত্ব খাটাবার মতো অবস্থায় নেই। যে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন হল, তার মধ্যে নির্বাচনের আগে কংগ্রেস দু’টি বড় রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল। নির্বাচনের ফল বেরোলে দেখা গেল, সেই দু’টি রাজ্যেরই ক্ষমতা সেই দল হারিয়েছে, পাশাপাশি অন্য একটি রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছে। নিট ফল, দু’টি হারিয়ে একটি মাত্র প্রাপ্তি।
এই ফলে স্বভাবতই কংগ্রেসের অবস্থান ‘ইন্ডিয়া’ নামক বিরোধীদের জোটের মধ্যে দর কষাকষির ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়ল। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু বিরোধী দল, যাদের অস্তিত্ব একটা বা দুটো রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ, নিজেদের মতো করে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করল। এর ফলে জোটের অন্য কিছু দলের নেতারা আবার মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। দু’একটি দল চাইল, এই ডিসেম্বরের মধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করে নিতে, কিন্তু কংগ্রেস দেখল, এর ফলে কিছু রাজ্যে তাদের আসন মিলবে অত্যন্ত কম। তাই এই ফর্মুলা কংগ্রেসের রাজ্য শাখাগুলির না মানার সম্ভাবনাই বেশি। তাই কংগ্রেস বলল, তারা রাজ্য শাখার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তা ঠিক করবে, যা ১৫ জানুয়ারির আগে সম্ভব নয়। টালবাহানা চলতেই থাকল।
এই সব দেখেশুনে জনগণের মনে হয়তো এই প্রশ্নটাই জাগছে যে, নির্বাচনের আগেই যে সব জোটসঙ্গী একতা বজায় রাখতে পারছেন না, ক্ষমতায় এলে তাঁরা সরকারটাকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন তো? কেন্দ্রীয় সরকারের ভিত নড়বড়ে হলে চলবে না, একটা দৃঢ় ভিতের উপর সেই সরকারকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। দেশে আগেও কয়েকটা জোট সরকার এসেছে, কিন্তু স্থায়ী হয়নি। এ বিষয়ে ভারতের জনগণের অভিজ্ঞতা ভাল নয়।
সন্তোষ কুমার দে, ড্রেনেজ ক্যানাল রোড, হাওড়া
শান্তির আশা
দেবাশিস ভট্টাচার্যের প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাই, গত ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়া’ জোটের চতুর্থ বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই জোটের মুখ হিসাবে মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু তিনি কয়েকটি প্রশ্ন সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন।
প্রথমত, প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড় থেকে রাহুল গান্ধীকে প্রথমেই সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা কি বিজেপির রাজনৈতিক লক্ষ্যকেই পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করছে না? দ্বিতীয়ত, মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম প্রস্তাব করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে এবং দলটির মধ্যে যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করলেন, সেটাই তো বিজেপির রাজনীতি তথা রণনীতির একটা অঙ্গ।
প্রবন্ধকার লিখেছেন, কংগ্রেস এখন বেশি করে জোট ধরে রাখতে চাইবে। প্রথম কারণ, বিরোধী জোটের মধ্যে আসন বণ্টনের যে হাওয়া উঠেছে, তাতে কংগ্রেসকে কমবেশি ৩০০ আসন ছাড়া হবে, যার মধ্যে প্রায় ২৫০টি আসনে বিজেপির সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই। প্রসঙ্গত, গত ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক লড়াইয়ে কংগ্রেসের জয় ৫ শতাংশের কম। উপরন্তু, বর্তমানে কংগ্রেস-সহ ২৮টি বিরোধী দলের মোট আসন সংখ্যা ১৩৫-এর মতো। কংগ্রেসের প্রাপ্ত ৫২টি আসনের মধ্যে বেশির ভাগই এসেছে কেরল, তামিলনাড়ু এবং পঞ্জাব থেকে। সরকার গড়তে প্রয়োজন ন্যূনতম ২৭২টি আসন, অর্থাৎ বর্তমান আসন সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। উপরন্তু, কংগ্রেস বাদে অপর বিরোধী দলগুলির বেশির ভাগই আঞ্চলিক। তাদের পক্ষে নিজেদের আসন সংখ্যা বাড়ানোর সম্ভাবনাও খুব বেশি নয়। একমাত্র উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির আসন সংখ্যা কিছু বাড়তে পারে। কংগ্রেস অবশ্যই চাইবে কমপক্ষে ৩৮০-৪০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে। এতগুলি আসন কংগ্রেসকে দেওয়া না হলে বিরোধী জোটের পক্ষে জেতা কঠিন।
এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে এ রাজ্যে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস জোট হচ্ছে না। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ বার তৃণমূল কংগ্রেসের হাতছাড়া হতে চলেছে বেশ কিছু ভোট, যার ফলে কংগ্রেস লাভবান হবে। সুতরাং যদি কংগ্রেস-সিপিএম জোটবদ্ধ হয়, এবং এদের সঙ্গে আইএসএফ যোগ দেয়, তবে হয়তো তৃণমূল কংগ্রেসের আসন দু’-একটা কমলেও কমতে পারে। এ সব অনুমানমাত্র। শুধু আশা করব, এ রাজ্যে নির্বাচন যেন অন্যান্য রাজ্যের মতো সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়।
অমিত কুমার চৌধুরী, কলকাতা-৭৫
সুরক্ষার দায়
গৌরীশঙ্কর দাসের ‘প্রাপ্য, না দয়ার দান?’ (৪-১) চিঠিটির জন্য ধন্যবাদ। মজুরির বিষয়টি নিয়ে তিনি যথার্থই বলেছেন যে, পঞ্চদশ শ্রম কমিশনের সুপারিশ মানলে মজুরি হওয়া উচিত বর্তমান বাজারদরে সপরিবারে সুষ্ঠু ভাবে বেঁচে থাকার উপযুক্ত রসদ। প্রায় সর্বত্রই সাধারণ স্তরের কর্মীদের ক্ষেত্রে অন্তত বেতন তার ধারেকাছেও যায় না। সেখানে বেতন বৃদ্ধি মানে আগের বেতনের কয়েক শতাংশ বাড়িয়ে দিলেই হল। জীবনযাত্রার মানের প্রশ্ন সেখানে ওঠেই না। ব্যাঙ্কেরই এই অবস্থা। অন্যদের তো কথাই নেই। অন্যত্র অনেক ক্ষেত্রে আবার যা চুক্তি হয়, তাও মানতে হয় না। যেমন— জুট শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তির খবর বেরিয়েছে, তাঁদের ৫০০ টাকা বেতন বেড়েছে। প্রতি বারই তেমন হয়। তবে সেটি আগের বারের ডিএ-র বকেয়া টাকাই নতুন করে দিতে বলা, এই যা। এই হল বেতন বৃদ্ধি। এ বার আসি পেনশনের কথায়। ব্যাঙ্ককর্মীদের আজ যাঁরা দীর্ঘ দিন অবসরপ্রাপ্ত, এক দিন তাঁরা কী ভাবে কাজ সামলেছেন, কাজ ফুরিয়ে গেলে কে আর তা মনে রাখে? সে দিন যাঁরা দায়িত্ব সামলেছেন, আজ অবসরের দিনে তাঁদের পেনশন ৩০ বছর আগে যা পেতেন, তা-ই আছে। বেড়েছে শুধু ডিএ-টুকু। সাধারণ শ্রমিকদের কথা কহতব্য নয়। মাস গেলে পান ন্যূনতম ১০০০ টাকা। বেশি হলে আর কত, ১২০০-১৩০০ টাকা। এই হল তাঁদের পেনশন। এই টাকায় চলে? তাঁদেরই হকের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে তিনি পেনশন পান। তাঁর জমা আয় বাজারে খাটিয়ে সরকার যে অনেক টাকা কামায়, তা কোথায় যায়? কোনও হিসাব নেই। তা হলে এঁদের অবসরকালীন সুরক্ষার দায় কে নেবে?
শিবপ্রসাদ দাস, আন্দুল মৌরি, হাওড়া
শুধুই আনুগত্য
ঈশানী দত্ত রায়ের ‘কারও কিছু যায় আসে না’ (২৫-১২) প্রবন্ধের উদাহরণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আজ দুর্নীতি গ্রাস করছে গোটা ব্যবস্থাকে। মান্যতা পেয়ে যাচ্ছে সমাজে। অনেকে ভাবছেন এটাই স্বাভাবিক। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন দুর্নীতির ভুলকে স্বীকার করা। তার পর তার মোকাবিলার পথ অন্বেষণ। তার বদলে বলা হচ্ছে— সব চক্রান্ত, সব ঠিকঠাকই চলছে। রেশন ও নানান ভাতা দিয়ে জনগণের সব দায় যেন সরকার বহন করছে। মানুষকে হাত পেতে নিতে শিখিয়ে তার চেতনাকে যেন ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। চাপা পড়ে যাচ্ছে কর্মসংস্থান, শিল্প, সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কথা। এক দিকে যখন বিরোধীরা সরকারের ব্যর্থতা, গণপ্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি আঘাত, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কোচন— মানুষের কাছে তুলে ধরতে শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ, অন্য দিকে তখন শাসকের বিরুদ্ধে সামান্য ক্ষোভের প্রকাশ হলেই নেমে আসছে নিষ্পেষণ, নানা রূপে। শাসক চাইছেন শুধু আনুগত্য।
এই সময়টা ইতিহাসে শুধু আত্মসমর্পণের দলিল হয়ে থাকবে?
তাপস সিংহ রায়, কলকাতা-৫৭