Aurangzeb

সম্পাদক সমীপেষু: জিজিয়া বিভ্রান্তি

ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলমান নাগরিকদের ‘জান-মান-ইজ্জত’ রক্ষার জন্য তাঁদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থই হল ‘জিজিয়া কর’।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২২ ০৪:৩৯
Share:

‘খলনায়ক?’ (রবিবাসরীয়, ২২-৫) শীর্ষক প্রবন্ধের অনুষঙ্গ জিজিয়া কর প্রসঙ্গে এই পত্র। ঔরঙ্গজেবের হিন্দু-বিদ্বেষ দেখাতে গিয়ে অনেকেই অনেকখানি কালি খরচ করে ফেলেন এই করের প্রসঙ্গে। ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলমান নাগরিকদের ‘জান-মান-ইজ্জত’ রক্ষার জন্য তাঁদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থই হল ‘জিজিয়া কর’। অমুসলমান প্রত্যেককেই কিন্তু এই কর দিতে হত না। অশক্ত, বৃদ্ধ, পাদরি, পূজারি, বেকার, বিকলাঙ্গ ও মহিলাদের এই কর দিতে হত না। প্রসঙ্গত, ইসলামি শাসনব্যবস্থায় এমন কিছু কর ছিল, যা শুধুমাত্র মুসলমানদেরই দিতে হত। জিজিয়ার সর্বোচ্চ পরিমাণ ছিল বছরে ৪৮ দিরহাম ও সর্বনিম্ন বছরে ১২ দিরহাম। আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করেই এই কর ধার্য হত। যে হেতু এই করের বিনিময়ে সরকার কর প্রদানকারীর প্রাণরক্ষায় দায়বদ্ধ ছিল, তাই এই কর প্রদানকারীকে সরকার যুদ্ধে যোগদান করতে বাধ্য করতে পারত না। অথচ, প্রত্যেক মুসলমান নাগরিক যুদ্ধে যোগদান করতে বাধ্য ছিলেন। যদি দেখা যেত, সরকার কর প্রদানকারীর ধন-প্রাণ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে, তা হলে সেই কর সংশ্লিষ্ট নাগরিক বা তাঁর পরিবারকে ফিরিয়ে দেওয়া হত। যদি ঔরঙ্গজেবের হিন্দু-বিদ্বেষই হত কর আদায়ের কারণ, তা হলে করের হারে তারতম্য ঘটত না।

Advertisement

জিজিয়া করটি প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি হিন্দুদের প্রদেয় প্রায় ৭০টি কর তুলে দিয়েছিলেন। স্যর যদুনাথ সরকার তাঁর হিস্ট্রি অব ঔরঙ্গজেব গ্রন্থে এ রকম ৬৫টি কর তুলে দেওয়ার কথা লিখেছেন। এ কথা সত্যি যে, ঔরঙ্গজেবের আমলে বেশ কিছু মন্দির ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু হিন্দু মন্দির ধ্বংসই তাঁর অভিপ্রায় হলে আরও অনেক মন্দির তাঁর নাগালে থাকলেও অক্ষত থাকত না। ঔরঙ্গজেবের উদারনীতি প্রসঙ্গে প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছেন, “তাঁর আমলে হিন্দুদিগের বড় বড় পদ, মর্যাদা ও জায়গীর দেওয়া হয়েছে। এমনকি সম্পূর্ণ মুসলমান প্রদেশ আফগানিস্তানের উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন একজন হিন্দু। জয় সিংহ, যশোবন্ত সিংহ, রসিকজান প্রমুখ সাতাশ জন হিন্দু তাঁর আমলে উচ্চপদে আসীন হন। সেনাদলেও ছিল হিন্দুদের আধিক্য।” ঔরঙ্গজেব হিন্দু পণ্ডিতদেরও জায়গির দান করতেন। তিনি যাঁদের জায়গির দান করেছেন তাঁদের মধ্যে বারাণসী জেলার গিরিধর, মহেশপুরের যদু মিশ্র ও পণ্ডিত বিল্বধর মিশ্রের নাম ইতিহাসসিদ্ধ।

ইতিহাসবিদ আলেকজ়ান্ডার হ্যামিল্টন ঔরঙ্গজেবের আমলে দীর্ঘ কাল ভারতে ছিলেন। তিনি লিখেছেন, ইসলাম এখানকার রাষ্ট্রধৰ্ম, তবে প্রজাদের শতকরা ৯০ জনই হিন্দু এবং তাঁদের পূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কাজকর্ম পরিচালনায় যোগ্যতাই বিবেচনা করতেন ঔরঙ্গজেব, ধর্ম নয়। এই বিষয়ে নানা সাক্ষ্য মেলে।

Advertisement

প্রদীপনারায়ণ রায়, শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ,

হারানো লজ্জা

স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘লজ্জা বিষয়ে দু’একটি কথা’ (১৯-৫) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু বলার জন্য এই পত্রের অবতারণা। মিথ্যা বলদর্পীর কি এ বোধ থাকে যে, অনৈতিক সমাজে মাথা হেঁট-করা লজ্জাই নৈতিকতার একমাত্র ভূষণ? থাকলে তবেই সে বোঝে যে সবার যা, তা আমারও। সবার যা হাল, তাতে কি দর্প করার কিছু আছে? কিছু করেছি না কি, যে দর্প দেখাব?

সত্যিই তো, লজ্জাটুকুই যা দুর্বলের বল। নির্যাতিতা ধর্ষিতার লজ্জাই যেমন তাকে দুর্বার করে শক্তিমান ধর্ষকের মোকাবিলায় জীবনটাকে বাজি ধরে। গান্ধীও তো এমন করেই নির্যাতনকারী ব্রিটিশের লজ্জাকেই বুকে বেঁধে, সাহসে বুক বেঁধে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন নিরস্ত্র, নিঃস্ব দেশবাসীকে। সব হয়রানি, অপমানের লজ্জাই বুঝি ভিক্ষা প্রত্যাখ্যানের শক্তি জোগায়। সেই লজ্জাটুকুও যদি খোয়া যায়, তবে আর রইল কি পোড়া সমাজের। গণতন্ত্রেরও সম্পদ তো এই লজ্জাটুকুই। এই লজ্জাবোধই তাকে অপরের লজ্জায় লজ্জিত করে। অপরের দুঃখ-যন্ত্রণার ভাগীদার করে। লজ্জাকে লালন করা দরকার তার নিত্যকার যাপনের মধ্যে। ঘটা করে তার প্রকাশ করতে লাগে না। লেখক সত্যি কথাই বলেছেন যে, আজকের গণতন্ত্র নিতান্তই লোক-দেখানো। বাইরের ব্যাপার। অন্তরের সঙ্গে তার যোগ নেই।

যাঁরা নিজেদের ক্ষমতাবান ভাবেন, এমন ভাব করেন যেন ভুবনের ভার তাঁদেরই হাতে, আর সেই অছিলায় নিজেদের কোলে ঝোল টানেন, জনজীবন কিন্তু তাঁদের পদচিহ্ন ধরে রাখে না। যাঁরা এই বেহায়াদের শাগরেদগিরি করেন, তাঁরা তুচ্ছ। তাঁদের যোগ্যতাই বা কি কেবল চাটুকারিতা ছাড়া? তাঁরা যখন যেমন, তখন তেমন থাকেন। গণতন্ত্রের নির্লজ্জ অবনমন যে বাস্তবিকই ভয়ঙ্কর, সেটা বোঝাটাই হল জরুরি। তার সুযোগেই নির্লজ্জের শক্তি লাভ। এ দুর্দিনে প্রকৃত শক্তিমানের সম্যক লজ্জাবোধের উপরেই নাগরিকের ভরসা।

শিবপ্রসাদ দাস, আন্দুল মৌরি, হাওড়া

ফের দলবদল

বিজেপির বঙ্গ জয়ের স্বপ্নকে তুচ্ছ করে শেষ পর্যন্ত অর্জুন সিংহও সওদাগরি-নৌকা ভেড়ালেন তৃণমূলের বন্দরে। বাবুল সুপ্রিয়, জয়প্রকাশ মজুমদার, অর্জুনের পর আর কে কে তৃণমূলে যাবেন দল ছেড়ে, সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিজেপির নেতারা। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠে আসছে, একই সঙ্গে ভারতীয় ইতিহাসে সফলতম এবং পোড়খাওয়া রাজনৈতিক দলের এই দুরবস্থা কেন? অঙ্কে কি কোথাও ভুলত্রুটি রয়েছে, না কি তৃণমূল কংগ্রেস তথা ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক চালে এখনও বিজেপির নাজেহাল দশাই চলছে‌! সেই কাটাছেঁড়া বিজেপির উপর মহলের নেতৃত্ব করে চলুক, আমরা অন্য রকম আলোচনায় আসি। যে কোনও আদর্শ এবং তার রূপায়ণের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতেই রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি। যদিও অ্যাজেন্ডা সদা পরিবর্তনশীল। নেতা-নেত্রীর দল পরিবর্তন আদর্শভিত্তিক নয়, তার ভিত্তি স্বার্থসিদ্ধি।

ভালবাসা না থাকলে বেঁধে রাখা যায় না। আর এই ভালবাসাটা উপরের চাকচিক্যের মোহে যদি হয়ে থাকে, সেটা স্বল্পস্থায়ী হয়। গুণের প্রতি, সংগঠনের আদর্শের প্রতি ভালবাসা না থাকলে সম্পর্ক হয় ভঙ্গুর, যেটা ‘আয়ারাম-গয়ারাম’ নেতা-নেত্রীদের দ্বারা বার বার প্রমাণিত হয়েছে।

বিজেপির প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্ব যথা— অটলবিহারী বাজপেয়ী, সুষমা স্বরাজ, নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী, অমিত শাহ প্রমুখ বিজেপির জন্মের পর থেকে কি কখনও বিপরীত আদর্শের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গিয়েছেন? চূড়ান্ত রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থাতে ওঁরা কি কোনও দিন পড়েননি? রাজনৈতিক অত্যাচার তাঁদের উপর কি কখনও হয়নি? দলীয় আদর্শের প্রতি কতটা প্রত্যয় থাকলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো বলা যায়, “আজকে আমাদের সাংসদের সংখ্যা দেখে আপনারা হাসাহাসি করছেন, এক দিন এমন পরিস্থিতি আপনাদেরও তৈরি হবে?” প্রশ্নগুলো করতে হচ্ছে, কারণ এখনকার দলবদলু নেতা-নেত্রীরা এই ধরনের অজুহাত হামেশাই দেখিয়ে থাকেন।

আদর্শ ব্যক্তিজীবনের ধর্ম। বলা হয়, ধর্মের জন্য সব ত্যাগ করা যায়; কিন্তু কোনও কিছুর জন্য ধর্মকে ত্যাগ করা যায় না। অথচ শোনা যাচ্ছে, বর্তমান বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নাকি পূর্বে তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠনের নেতা ছিলেন! অর্জুন সিংহ আর শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে তা হলে পার্থক্যটা কোথায়?

বরুণ মণ্ডল, রানাঘাট, নদিয়া

বছর পার

মালদহ ডিভিশনের ফরাক্কা-আজিমগঞ্জ শাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন সাঁকোপাড়া হল্টে কাটিহার-হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপ তুলে দেওয়ার পর এক বছর অতিক্রান্ত। এত দিন ধরে রেল দফতরে অনেক আবেদন-নিবেদন করেও কোনও সুরাহা হয়নি।

হাকিম শেখ, ফরাক্কা, মুর্শিদাবাদ

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement