Jawaharlal Nehru

সম্পাদক সমীপেষু: নেহরুর সৌজন্য

ইতিমধ্যে হিন্দু মহাসভার সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। তিনি আরএসএস-এর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। নেহরুর কঠোর সমালোচনা করে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৪ ০৬:০০
Share:

—ফাইল চিত্র।

স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্যের ‘নিন্দা করা কর্তব্য’ (১৩-৪) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি। এটা ঠিক যে, গত কয়েক বছর ধরে হিন্দুত্ববাদী নেতারা নেহরুকে ছোট করতে নেতাজির নাম বিভিন্ন প্রসঙ্গে টেনে আনছেন। অথচ, নেহরুর রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ ছিল প্রখর। রাজনৈতিক ভাবে বিরোধীদের কী ভাবে সম্মান করতে হয়, তিনি জানতেন। রক্ষণশীল হিন্দু হিসেবে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বরাবরই নেহরুর কঠোর সমালোচক ছিলেন। চল্লিশের দশকের শেষের দিকে আম্বেডকর-নেহরু হিন্দু কোড বিলের মাধ্যমে হিন্দু মহিলাদের ক্ষমতায়নের দাবি করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, নারী-পুরুষের সমানাধিকার। বিবাহবিচ্ছেদ না দিয়েই কোনও পুরুষ পুনরায় বিয়ে করলে, ওই বিলে সেই পুরুষের শাস্তি বিধানের কথা বলা হয়েছিল। সেই সঙ্গে মহিলারা সম্পত্তির উত্তরাধিকারে সমানাধিকার দাবি করতে পারতেন। ওই বিলকে সমর্থন করতে পারেননি শ্যামাপ্রসাদ এবং হিন্দু মহাসভা। প্রতিবাদ জানাতে আম্বেডকর ও নেহরুর কুশপুতুল দাহ করা হয়েছিল। শ্যামাপ্রসাদ সে দিন বলেছিলেন, হিন্দু সংস্কৃতির ধারায় আঘাত হানবে হিন্দু কোড।

Advertisement

ইতিমধ্যে হিন্দু মহাসভার সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। তিনি আরএসএস-এর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। নেহরুর কঠোর সমালোচনা করে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। তার পরেও তাঁর প্রতি নেহরুর সৌজন্যবোধের ঘাটতি ছিল না। নেহরু শ্যামাপ্রসাদকে মহাবোধি সোসাইটির সভাপতি করে দেন। কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধের দুই শিষ্য সারিপুত্ত এবং মৌদগল্যায়নের অস্থি হস্তান্তর করলেন শ্যামাপ্রসাদের হাতে। প্রায় ১০০ বছর আগের সেই অস্থির পাত্রগুলি রাখা ছিল সাঁচী স্তূপে। তাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মায়ানমারের মতো দেশে সেই অস্থি নিয়ে যাওয়ার জন্য নেহরু দায়িত্ব দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদকেই। কাজেই রাজনৈতিক বিরোধীদের কী ভাবে সম্মান দিতে হয়, তা নেহরুর কাছ থেকে শেখা উচিত ছিল। তা হলে আজ কথায় কথায় কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের কথা উঠত না।

রতন চক্রবর্তী, উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

Advertisement

সুভাষ ও সঙ্ঘ

‘নিন্দা করা কর্তব্য’ প্রসঙ্গে বলি, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিজেপির পূর্বসূরিদের কোনও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি নেই। বরং প্রকারান্তরে তাঁরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবাহকের ভূমিকা পালন করে এসেছেন। স্বাধীন ভারতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আজ তাঁরা সংবিধান থেকে ইতিহাস, সব কিছু পাল্টে দিয়ে নিজেদের ‘হিন্দুত্ববাদী’ ছকে গড়ে তুলতে চাইছেন। সর্দার পটেলের সুউচ্চ মূর্তি নির্মাণ করে তাক লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। দেশভাগের জন্য গান্ধীজিকে দায়ী করে-আসা সাভারকরের উত্তরসূরিরা স্বচ্ছ ভারতের প্রতীক হিসাবে বাপুজির চশমাকে লোগো করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দুধর্ম দর্শন নিজেদের ‘হিন্দুত্ববাদী’ ছাঁচে ঢেলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় চলছে আদ্যন্ত অসাম্প্রদায়িক সুভাষচন্দ্র বসুকে হিন্দুত্ববাদী দর্শনের প্রবক্তা বলে তুলে ধরার হীন প্রচেষ্টা। ইতিপূর্বে সুভাষের ভাবনাতেই সঙ্ঘ চলছে বলে জানিয়েছিলেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত (সুভাষের ভাবনাতেই সঙ্ঘ চলছে: ভাগবত; ২৪-১)। এ-ও দাবি করেছিলেন যে, সুভাষচন্দ্রের চিন্তাধারার সঙ্গে সঙ্ঘের চিন্তাধারার কোনও পার্থক্য নেই।

১৯২০-এর দশকে ইটালি, জার্মানির ফ্যাসিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ দেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯২৫ সালের বিজয়া দশমীর দিন একটি আধা সামরিক সংগঠন হিসাবে আরএসএস-এর আত্মপ্রকাশ। সঙ্ঘের স্বদেশি অনুপ্রেরণায় ছিল সাভারকর ও বিদেশি ভাবনায় মুসোলিনি শাসনের প্রত্যক্ষ প্রভাব। মতাদর্শগত শিক্ষক মাধব গোলওয়ালকর হিটলারের মতো আর্য জাতির শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। ইটালি ও জার্মানির কনস্যুলেট সরাসরি যোগাযোগ রাখত আরএসএস-এর সঙ্গে। স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে আরএসএস ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের পক্ষ অবলম্বন করেছিল। পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ শাসকেরা আরএসএস এবং মুসলিম লীগকে প্রচ্ছন্ন মদত দিয়ে এসেছিল। ১৯৩০-এর সত্যাগ্রহ আন্দোলন, বা ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে দেশবাসী যখন উদ্বেলিত, আরএসএস তখন সার্কুলার জারি করে তার সদস্যদের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করে।

অপর দিকে, আদ্যন্ত দেশপ্রেমিক সুভাষচন্দ্রের ভাবনায় সাম্প্রদায়িকতার কোনও স্থান ছিল না। তাঁর সময়ে আরএসএস হিন্দু সাম্প্রদায়িক মঞ্চের প্রথম সারিতে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়, তখন সে জায়গায় ছিল ‘হিন্দু মহাসভা’। সুভাষ এদের তীব্র সমালোচক ছিলেন। ৪ মে, ১৯৪০ ফরোয়ার্ড ব্লক সাপ্তাহিকীতে নেতাজি হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগকে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। “হিন্দু মুসলমানের স্বার্থ পরস্পরের পরিপন্থী, এ কথা যারা বলেন, তাঁরা খাঁটি কথা বলেন না। খাদ্যাভাব, বেকারত্ব, জাতীয় শিল্পের অবক্ষয়, মৃত্যুর হার বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যহীনতা, শিক্ষার অভাব এগুলিই মূল সমস্যা। এই সকল বিষয়ে হিন্দু মুসলমানের স্বার্থ অভিন্ন।” (সুভাষ রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড)। তাঁর এই পর্যবেক্ষণ আজও প্রাসঙ্গিক।

সুভাষ অক্ষশক্তির সাহায্য প্রার্থনা করে সমালোচিত হয়েছিলেন ঠিকই, তবে তা ছিল দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মোচনের জন্য। আজ়াদ হিন্দ বাহিনীতে শাহনওয়াজ খান, আবিদ হাসান, হবিবুর রহমান প্রমুখ ছিলেন নেতাজির বিশ্বস্ত সঙ্গী। আজ়াদ হিন্দ ফৌজে নেতাজি ধর্মনিরপেক্ষ পরমতসহিষ্ণু নীতির সফল প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন। তাঁর বাহিনীর দুই ব্রিগেডের নামকরণ গান্ধী ও নেহরু রেখে তিনি ঔদার্যের পরিচয় দিয়েছিলেন।

যে শাসনে ফ্রিজে নিষিদ্ধ মাংস রাখার অজুহাতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে পিটিয়ে মারা হয়, গণধর্ষণের আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়ে যায়, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থাকে সরকারি ভাবে পিছিয়ে দেওয়ার (অপ)চেষ্টা হয়, তা কখনও নেতাজি বা স্বামীজির ভাবনার অনুসারী হতে পারে না। তাই বাঙালি আবেগকে ছোঁয়ার উদ্দেশ্যে তাঁদের টেনে আনার চেষ্টা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু।

সরিৎশেখর দাস, কলকাতা-১২২

গরমের ছুটি

‘ছুটির ফাঁদে’ (৮-৪) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে বলি, বিশ্ব উষ্ণায়নের যুগে গরম তীব্রতর ও দীর্ঘতর হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাড়তি গরমের ছুটি দেওয়া সদর্থক সমাধান হতে পারে না। সমাধানের কথা ভাবা অতি জরুরি। প্রথমত, পরিকাঠামোর উন্নয়ন দরকার। যে সব স্কুলের ক্লাসরুমে অ্যাসবেস্টস, টালি, টিনের ছাউনি আছে, সে সব স্কুলে স্থায়ী ছাদের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতি ক্লাসরুমে ছাত্র অনুপাতে পর্যাপ্ত ফ্যান দিতে হবে। লো ভোল্টেজ আর লোডশেডিং-এর সমস্যা এড়াতে স্কুলগুলিকে ব্যাটারি, সোলার প্যানেল বা জেনারেটরের ব্যবস্থা করে দেওয়া দরকার। দ্বিতীয়ত, ক্লাসরুমে ভেজা খসখস, ভেজা পর্দা, কুঁজো বা মাটির কলসির জল ব্যবহার, ওআরএস বা নুন-লেবুর জলের জোগান প্রভৃতি ব্যবস্থা করা যায়। গরমজনিত অসুস্থতা রুখতে প্রশিক্ষণ, ও প্রাথমিক কিছু ওষুধের জোগান দিতে হবে। তৃতীয়ত, ‘মর্নিং স্কুল’ ভাল বিকল্প। বর্তমানে, অনেক জায়গায় প্রাথমিকে সরকারি নির্দেশে সকালের দিকে স্কুল হয়। তবে, দূরাগতদের যাতায়াত সমস্যা বিচার্য।

চতুর্থত, বেসরকারি স্কুলে লম্বা গরমের ছুটিতে অনলাইন ক্লাস হয়। সরকারি স্কুলে দ্বাদশের বদলে প্রাথমিক থেকে অভিভাবকদের হাতে কেবলমাত্র ‘কাস্টমাইজ়ড মোবাইল’ (শুধুমাত্র পড়াশোনার কাজে ব্যবহারযোগ্য) দেওয়া হোক, সঙ্গে ডেটা প্যাক। সর্বোপরি, দীর্ঘ গরমের ছুটির ক্ষতি পুষিয়ে দিতে শনিবারে পূর্ণ দিবস বা পুজোর ছুটির মাঝে ‘ক্ষতিপূরণ ক্লাস’-এর বন্দোবস্ত করা যেতে পারে।

প্রণব মাটিয়া, পাথরপ্রতিমা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement