‘পরধর্ম ভয়াবহ’ (১৪-১) শীর্ষক সম্পাদকীয় বিশেষ ভাবনার দাবি রাখে। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন অরাজনৈতিক, তথাপি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু থেকে মহাত্মা গাঁধী এবং আজও অণ্ণা হজারে বিবেকানন্দের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত। ইন্দিরা গাঁধী থেকে নরেন্দ্র মোদী বেলুড় মঠে এসেছেন। নরেন্দ্র মোদীর বিরোধী যাঁরা, তাঁরাও এসেছেন এবং মহারাজদের আশিস লাভ করেছেন। এ বিষয়ে শরৎ এবং আমজাদের মতোই, মমতা এবং মোদীর মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি। মমতা যখন এসেছেন, মোদীপন্থীরা মিশনের বিরোধিতা করেছেন।
এমনকি তেলুগু দীপক নামের মাওবাদী উগ্রবাদীও, স্বামী বিবেকানন্দের লেখায় অনুপ্রেরণা লাভ করেছেন। আসলে, বিবেকানন্দের চিন্তাধারা মতাদর্শ তথা ব্যবস্থা (system) হল নিরপেক্ষ। আর একটা কথা। স্বামীজির ‘ভাব’সমৃদ্ধ অনুপ্রেরণায় আপাত ‘অতিরঞ্জন’ ভূরি পরিমাণ। কেবল উৎসাহ সৃষ্টির কারণে কিংবা প্রীতির প্রদর্শনে সুবীরানন্দ মহারাজ দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘সেরা’ শিরোপা দিলে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন অশুদ্ধ হয় না। ‘মহাভারত’-এ অসংখ্য ‘অবিচার’-এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তার দ্বারা এক দিকে মূল সুর ক্ষুণ্ণ হয় না, অন্য দিকে হাজার সমালোচনায় মহাকাব্য কালের নিরিখে স্বধর্মে বিরাজ করে।
রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দের বলিষ্ঠ উদারবাদকে নিয়েই চলেছে। আমরা কেবল বিপদে পড়লে মিশনের প্রতি সাময়িক অসহিষ্ণু হই, এবং বাকি সময় মিশনকে জল-হাওয়ার মতো অনায়াসে ভুলে থাকি। আমরা নিজের নিজের মতে এবং ‘ধর্ম’-এ ভয়াবহ ভাবে প্রতিষ্ঠিত। যুগে যুগে লোকে নিজেদের ভাবনার সঙ্গে মানানসই না হলেই, রামকৃষ্ণ মিশনকে ভুল বুঝেছে।
প্রণতি চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৯৭
নেহাত সৌজন্য
মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক নেহাতই সৌজন্যের খাতিরে নরেন্দ্র মোদীকে দেশের অন্যতম সেরা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। মনে রাখতে হবে, সর্বশ্রেষ্ঠ বলেননি, বলেছেন, অন্যতম সেরা। এতে স্বধর্মচ্যুতির কী হল, বোঝা গেল না। কোনও অতিথির প্রতি সৌজন্য প্রকাশ ভারতীয় সনাতন আদর্শের অঙ্গ বলেই মনে করি। ভুলে গেলে চলবে না— নরেন্দ্র মোদী জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। ‘পরধর্ম ভয়াবহ’ সম্পাদকীয়ের একেবারে শেষ লাইনে বলা হয়েছে, ‘‘...সুবীরানন্দজি সম্পূর্ণ বিপরীত এবং বিপজ্জনক একটি বার্তা দিলেন।’’ এতটা কঠোর মন্তব্য আনন্দবাজারের পক্ষে বেমানান বলেই মনে হয়।
অঞ্জন কুমার ভট্টাচার্য
বল্লভপুর, মেদিনীপুর
ইতিহাস
গত শতকের একটি ঘটনা। স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যুর মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে তাঁর প্রিয় শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতাকে অমৃতবাজার পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে বলতে হয়েছিল, ‘‘আজ থেকে মিশনের সহিত আমার
সকল সম্পর্ক ছিন্ন হইল। আমার সকল কর্মের দায়িত্ব এখন থেকে একান্ত ভাবেই আমার নিজের।’’
(১৯ জুলাই ১৯০২)।
এটা ইতিহাস যে, মিশন কর্তৃপক্ষ নিবেদিতার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ক্রমাগত জড়িয়ে পড়া পছন্দ করছিলেন না। নিবেদিতা তখন স্বাধীনতা আন্দোলনে যুবকদের সংগঠিত করার জন্য বাংলার নানা প্রান্তে ছুটে যাচ্ছিলেন। মিশন তখন তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিল, মিশন যে হেতু অরাজনৈতিক সংগঠন, তাই মিশনের সঙ্গে সংশ্রব রাখতে হলে তাঁর এ সব কাজ করা চলবে না। বলা বাহুল্য, নিবেদিতা মিশনের সঙ্গে সংশ্রব ত্যাগ করে স্বাধীনতার কাজেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রশস্তির প্রশ্নে মিশন আজ যা করল, তাতে হয় তাদের ভুল স্বীকার করতে হয়, না হলে নিবেদিতার মতো মহান ভারত-হিতৈষীর প্রতি সে দিন যা করা হয়েছিল তা অন্যায় বলে আজ স্বীকার করতে হয়। যে কোনও একটিকে বেছে নিতে হবে মিশনকে।
সমর মিত্র
কলকাতা-১৩
ঠিক করেছেন
প্রধানমন্ত্রী বেলুড় মঠে ছাত্রদের সামনে আসল সত্যটা তুলে ধরেছেন। যে রাজনীতিবিদরা দীর্ঘ দিন ধরে দেশহিতের কথা না ভেবে সঙ্কীর্ণ স্বার্থে সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করেছেন, তাঁদের যথাযথ জবাব দিয়েছেন। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, বেলুড় মঠে রাজনীতি কেন! উত্তরে বলি, স্বামী বিবেকানন্দ এক দিকে যেমন বিদেশে হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছিলেন, তেমনই নিজেকেও হিন্দু বলতে গর্ব বোধ করতেন। এই রকম একটি পবিত্র মিশনে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার মতো পবিত্র কথা বলবেন, এটাই স্বাভাবিক। আমরা স্বামী বিবেকানন্দকে শ্রদ্ধা করব, তাঁর তৈরি বেলুড় মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অবদানের কথা স্বীকার করব, অথচ রামকৃষ্ণ-অনুগামী প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথা সহ্য করব না, এটা চলতে পারে না। রামকৃষ্ণ মিশন ও বেলুড় মঠের মর্যাদাহানিকর কোনও কথা মোদীজি বলেননি। বরঞ্চ এই রকম ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান থেকে অসহায় মানুষদের সহায়তা দানের কথা বলে মিশনের গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। আজ যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি নোংরা রাজনীতির পঙ্কে নিমজ্জিত হয় এবং ছাত্রদের মধ্যে থেকে সিএএ বিরোধী, কাশ্মীর-বিরোধী ও দেশবিরোধী স্লোগান ওঠে, তা হলে বেলুড় মঠ থেকে কেন মানবকল্যাণের কথা উঠবে না? যাঁরা এ নিয়ে জল ঘোলা করছেন, মানুষ সেই সব তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদের মানবতার নামে ভণ্ডামি করার চালাকি ধরে ফেলেছেন। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে যখন তিন লক্ষের উপরে হিন্দু পণ্ডিতদের বিতাড়িত করা হয়, বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধদের উপর আক্রমণ হয়, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে এলে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয় তখন এই বুদ্ধিজীবীরা মুখে কুলুপ এঁটে মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার ভান করে থাকেন।
তরুণ কুমার পণ্ডিত
কাঞ্চন তার, মালদহ
ওটা ব্যঙ্গ ছিল
‘ঘৃণার হুঙ্কারই কি নতুন ভারত’ (৯-১) খবরে প্রতিবেদক গৌতম চক্রবর্তী একটি ফেসবুক মন্তব্যের উল্লেখ করেছেন, যেটি দীপিকা পাড়ুকোনকে নিয়ে করা: ‘‘...কেউ বা বলছেন, উনি আসলে মুসলমান, নাম দীপিকা ফতিমা পাড়ুকোন ইত্যাদি...’’। এর পরেই সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর একটি মন্তব্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
এই মন্তব্যটি আমার বন্ধু মিনহাজ আলমের করা। প্রতিবাদের এই কঠিন সময়েও সে তার রসবোধ হারায়নি। যে সকল ‘ভদ্রজন’ জেএনইউতে ‘দুষ্কৃতী’দের হামলা সমর্থন করে দীপিকাকে রীতিমতো ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে শুরু করেন, সেই ‘ভক্ত’দের উদ্দেশে সে একটি ব্যঙ্গাত্মক উক্তি করে, যাকে ভদ্রজনে ইংরেজিতে 'Sarcasm' বলে থাকেন। তার দোষ একটাই, বাঙালির রসবোধ যে হঠাৎ তলানিতে এসে ঠেকেছে, সে খবর তার জানা ছিল না।
ফলে তার মন্তব্য স্ক্রিনশটের মাধ্যমে ফেসবুকে বহুল হারে ‘শেয়ার’ হয় এবং সেই মন্তব্যের আক্ষরিক অর্থের দরুন তাকে সারা দিন ফেসবুকের ইনবক্সে ‘প্রতিবাদী’দের গালাগালি হজম করে কাটাতে হয়। কেউ বুঝতেও চাইলেন না, সে আসলে এই যুদ্ধে তাঁদেরই সহযোদ্ধা।
স্বর্ণেন্দু ঘোষ
কলকাতা-১৪
ভ্রম সংশোধন
‘কিরণ-মাখা রঙ্গমঞ্চের ক্লান্ত নায়ক দ্বিজেন্দ্রলাল’ (পত্রিকা, ১৮-১) লেখাটিতে ‘ঢপখেয়াল’ হবে ‘টপখেয়াল’ এবং ‘লোটাস বা লোটাস-খেকো’ হবে ‘লোটোস বা লোটাস-খেকো’। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।