ভারতে রেল সাধারণ মানুষের ভরসা। সুতরাং সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য রেলকে ভর্তুকি দিতেই হবে। পাশাপাশি, রেল পরিষেবাও মসৃণ ভাবে চালু রাখতে হবে। দুই দিক সমান ভাবে বজায় থাকলে রেলের পরিষেবা ও স্বাচ্ছন্দ্য যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনই তা লাভজনকও হবে। সর্বোপরি, সার্বিক ভাবে গণপরিবহণ ব্যবস্থা অনেক বেশি উন্নত হবে। এখনও অনেক মানুষ সময়ে ট্রেনের পরিষেবা পান না। তার প্রধান কারণ ট্রেনের স্বল্পতা। সংরক্ষিত সিটের সংখ্যা কম হওয়ায় মানুষ ট্রেন ছেড়ে সড়কপথে যাতায়াত করছে। বাতানুকূল কামরার সংখ্যাও খুবই কম। খাবারের মান নিয়ে তো অভিযোগের শেষ নেই। সময়ানুবর্তিতাতেও অনেক পিছিয়ে। এ সব উন্নত করতে গেলে যদি বেসরকারি বিনিয়োগ হয়, তা হলে আপত্তির কী আছে? এমন তো নয় যে সরকারি পরিষেবাতে কোনও বেসরকারি বিনিয়োগ নেই। ব্যাঙ্ক, বিমা, বিদ্যুৎ, রাস্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য— সবেতেই যখন এত কাল বেসরকারি বিনিয়োগ হয়ে এসেছে, তখন রেল কী দোষ করল? জনগণ যদি ভাল পরিষেবা পায়, তা হলে তার মূল্য দিতে পিছপা হবে না। তবে মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারকে নিজের হাতেই রাখতে হবে। না হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ— প্রভৃতির মতো রেলের ভাড়াও লাগামছাড়া হয়ে যাবে। বিরোধীদের এই নিয়ে অবশ্যই সরকারের কাছে দাবি রাখা দরকার।
কৌশিক সরকার
রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া
লোকালেও চাই
সমস্ত ক্ষেত্রেই সরকারি পরিষেবার পাশাপাশি বেসরকারি পরিষেবা থাকা প্রয়োজন। এতে প্রতিযোগিতা বাড়ে, সরকারের উপর চাপও অনেকাংশে কমে। অবস্থাপন্ন ব্যক্তিরা বেসরকারি পরিষেবার দিকে ঝুঁকলে, সরকারি ভর্তুকিপ্রাপ্ত সুলভ পরিষেবা আরও বেশি গরিবদের জন্য নির্দিষ্ট হতে পারে।
দূরপাল্লার ট্রেনের ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, শহরতলির লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রেও এমন পদক্ষেপ করলে বহু মানুষের উপকার হতে পারে। এই ট্রেনগুলোতে বাদুড়ঝোলা ভিড়ে যাতায়াত করতে হয়। বৃদ্ধ, অসুস্থ, প্রতিবন্ধী এবং শারীরিক ভাবে যাঁরা ততটা সক্ষম নন, তাঁদের পক্ষে এই ট্রেনযাত্রা রীতিমতো বিভীষিকা। বাধ্য হয়ে তাঁদের আলাদা গাড়ি ভাড়া করে যাতায়াত করতে হয়, যা যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ। একটু বেশি অর্থের বিনিময়েও যদি তাঁরা রেল পরিষেবা পেতে পারেন, তাতে সুবিধাই হবে।
সুশীলা মালাকার সরদার
বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগনা
স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত
রেলকে বেসরকারিকরণের পথে নিয়ে যেতে পদক্ষেপ করেছে মোদী সরকার। বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া ১৫১টি ট্রেনের মধ্যে এ রাজ্যের ১৫টি ট্রেন রয়েছে। ওই ট্রেনগুলি যাতে যথেষ্ট যাত্রী পায় ও দ্রুত গতিতে ছুটতে পারে, তার জন্য দেশ জুড়ে অন্তত একশো ধীর গতির ট্রেন বসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই খবরে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছি। জনগণের টাকায় তৈরি পরিকাঠামো ‘সংস্কার’-এর নামে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া এক চূড়ান্ত স্ববিরোধিতার উদাহরণ। বিএসএনএল, ব্যাঙ্ক, বিমা, বিমানবন্দর, অস্ত্র নির্মাণ কারখানা, কয়লা ব্লক থেকে রেল— একে একে সবই কর্পোরেট পুঁজির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সরকার ব্যবসা না-ই করতে পারে, কিন্তু পরিষেবা দেওয়া থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইবে কেন?
রাজশেখর দাস
কলকাতা-১২২
রেল ও টাটা
আজ থেকে ৩০-৩৫ বছর আগে টাটা থেকে ছেড়ে হাওড়ায় পৌঁছবে, এমন কোনও এক্সপ্রেস ট্রেন ছিল না। তখন বহু মানুষকে কাজের প্রয়োজনে টাটা-হাওড়া যাতায়াত করতে হত। টাটা কোম্পানির সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষের যে চুক্তি হয়েছিল, তার বয়ান ছিল এই রকম— লাভ হলে রেলের, আর লোকসান হলে সেটা টাটা পুষিয়ে দেবে। চালু হল স্টিল এক্সপ্রেস, ফেরার জন্য ইস্পাত। এখনও চলছে এই দুই ট্রেন। অবশ্য ট্রেন চালিয়ে রেলের কোনও লোকসান হয়নি।
এখন রেলের সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির চুক্তি হচ্ছে। শর্তগুলো বিপজ্জনক। এই সব ট্রেনে কোনও ছাড় চলবে না। রেল কর্মচারীরাও তাঁদের পাস ব্যবহার করতে পারবেন না। সিনিয়র সিটিজ়েনদের ছাড় দেওয়া হবে না। রোগী বহনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। ফলে ভাড়া প্রতি ক্ষেত্রে দ্বিগুণেরও বেশি হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলি রেলের কামরা, রেল লাইন, স্টেশন, প্ল্যাটফর্ম, রেলের স্টাফ— সব ব্যবহার করবে। বিনিময়ে রেলকে সামান্য অর্থ দেবে। ভারতে রেলকে জনগণের সাধ্যের বাইরে সরিয়ে দেওয়া হলে কাজটা অমানবিক হবে।
সঞ্জয় চৌধুরী
খড়্গপুর
বাতিল ট্রেন
‘‘বেসরকারি সংস্থার হাতে বঙ্গের ১৫টি রুট’’ (৩-৭) এবং ‘‘মালগাড়ির রাস্তা সাফ করতে বাতিল হচ্ছে কিছু ট্রেন’’ (২৫-৬) সংবাদে অশনি সঙ্কেত দেখছেন রাজ্যবাসী। জনপ্রিয় ও লাভদায়ক ট্রেনগুলি শুধুমাত্র মালগাড়ির গতি মসৃণ করতে বন্ধ করা হচ্ছে— এই যুক্তি বোধগম্য হল না। আমার জেলা বীরভূমে আসা-যাওয়া করা অনেক ট্রেনও কালো তালিকাভুক্ত হয়ে গেল। বহু পুরনো হাওড়া-রাজগীর প্যাসেঞ্জার, বারাণসী-শিয়ালদহ এক্সপ্রেস, বর্ধমান-রামপুরহাট এক্সপ্রেস এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ভর্তুকিহীন রেলযাত্রা এ বার দামি হবে, সন্দেহ নেই।
সুপ্রতিম প্রামাণিক
আমোদপুর, বীরভূম
অভ্যাস
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ (‘কিছু একটা তো করতে হবে’, ৮-৭) বিলক্ষণ ভাল লেখা। লেখার প্রতি ছত্রে যুক্তি অনুশীলনের ছাপ। কিন্তু অনুশীলন ও অভ্যাস এক জিনিস নয়। প্রায়শই অভ্যাস অনুশীলনকে বিপর্যস্ত করতে পারে, এবং করে। যেমন শ্রীচট্টোপাধ্যায় চিন ও ভারতের সাম্প্রতিক কু-সম্পর্ক নিয়ে একেবারে অভ্যাসের টানে লিখে ফেললেন, ‘তার পুরোটাই পুকুরঘাটের ঝগড়া নয়।’ পুরো লেখাটাতে তিনি নিজের যুক্তির দার্ঢ্য বিষয়ে সচেতন। কিন্তু তিনি, আমাদের সকলের মতোই, বহু প্রজন্মের অভ্যাসে ‘পুরুষমানুষ’। সেই অভ্যাসেই তিনি ‘পুকুরঘাটের ঝগড়া’ উপমাটি ব্যবহার করতে গিয়ে ভুলে গেলেন যে, এই শব্দবন্ধের মধ্য দিয়ে অযৌক্তিক কলহ জিনিসটাকে একান্ত ভাবেই মেয়েদের ব্যাপার বলে দাগিয়ে রাখা হয়েছে। অযুক্তি আঁকড়ে মহাযুদ্ধ বাধিয়ে ফেললেও পুরুষের গায়ে ‘মহামূর্খ’ ছাপ লাগে না।
অর্থাৎ, অনুশীলনের ফলে যুক্তিগুলো খুবই দৃঢ় মনে হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু অভ্যাসের বৃত্ত তাঁর যুক্তিবান সত্তাকে খণ্ডিত করে রাখছে। সমস্যাটা বোধ হয় কিছুটা এই যে, অনুশীলন জিনিসটাকে আমরা কেবল অর্জন করার জন্যই ব্যবহার করি, পরিত্যাগ করার জন্য নয়। বস্তুত, এটাও যেন সমাজে ক্ষমতার বিন্যাস অপরিবর্তিত রাখার অভ্যাস। অনুশীলনের মধ্য দিয়ে একলব্য ধনুর্বিদ্যা আয়ত্ত করেন, আর অভ্যাসের নেশায় গুরুর অন্যায় আজ্ঞা পালন করে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ বিসর্জন দেন। অভ্যাস বা বদভ্যাস— বিসর্জন দেওয়ার অনুশীলন তাঁর থাকলে মহাভারতের কাহিনি অন্য রকম হতে পারত। তবে, আমাদের মহাভারতের অনুকম্পায় বেঁচে থাকার দরকার নেই। তাই অর্জনের অনুশীলনের সঙ্গে বিসর্জনের অনুশীলনও অভ্যাসের মধ্যে আনতে হবে।
কুমার রাণা
কলকাতা-১৬৩
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
রূপালী গঙ্গোপাধ্যায়ের (‘অপরাধী থাকে আয়নায়’, পৃ ৪, ১২-৭) পরিচিতিটি ভুল দেওয়া হয়েছে। উনি বর্তমানে সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি-র সঙ্গে যুক্ত। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।