‘স্বামীজির লেখা পড়ে দেশের জন্য আমার ভালবাসা বেড়ে গেছে’ শীর্ষক প্রবন্ধে (রবিবাসরীয়, ৩১-১) সুমনা সাহা বর্তমান প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে তুলে ধরেছেন। ভারতের ইতিহাসে স্বামীজির গভীর প্রভাব সর্বজনবিদিত। বালগঙ্গাধর টিলক, শ্রীঅরবিন্দ, মহাত্মা গাঁধী ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে শঙ্করীপ্রসাদ বসু বলেছেন, এই চার জন ভারতীয় ইতিহাসকে উত্তোলিত করেছিলেন। এঁদের উপর স্বামীজির প্রভাব ছিল যথেষ্ট। স্বামীজির দেহান্তের পরে যখন দক্ষিণ ভারতে প্রচার চলছে যে, পাশ্চাত্যে গিয়ে এই সন্ন্যাসী নিষিদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করেছেন, তখন টিলকের মতো মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ দরাজ হৃদয়ে বলছেন, স্বামীজি হলেন দ্বিতীয় শঙ্করাচার্য। বেলুড় মঠে এসে গাঁধী স্বামীজির সাক্ষাৎ পাননি, কিন্তু টিলক পেয়েছিলেন দু’বার। প্রথম বার স্বামীজি গিয়েছিলেন টিলকের পুণে-আবাসে। দ্বিতীয় বার টিলক এসেছিলেন বেলুড়ে।
শ্রীঅরবিন্দ বলেছেন, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের প্রভাব ছিল বলেই জাতীয় আন্দোলন সম্ভবপর হয়েছিল। হরিজন আন্দোলনের উপর স্বামীজির প্রভাবের কথা গাঁধীর সকল জীবনীকার স্বীকার করেছেন। বেলুড় মঠে এসে গাঁধী বলেছিলেন, স্বামীজির গ্ৰন্থ পাঠ করে তাঁর দেশপ্রেম বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন, ১৯০৩ সালে স্বামীজির রাজযোগ পড়েছিলেন। ১৯২৩ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর জেল ডায়েরিতে লিখছেন, “আজ বিবেকানন্দের রাজযোগ পড়া শেষ করলাম।” সুভাষচন্দ্র কৈশোর থেকে স্বামীজির প্রভাবে জীবন গঠন করেছেন। তিনি মনে করতেন, “আমি স্বামী বিবেকানন্দকেই বহন করছি।” বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশপ্রেম ও ঐক্য গড়ে তুলতে হলে তাঁদের মতো স্বামীজির আদর্শ মেনে চলতে হবে।
সন্দীপ সিংহ, হরিপাল, হুগলি
উপেক্ষিতা
ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্রের ‘তাঁর মায়ের নাম মোহনদাস’ (রবিবাসরীয়, ৩১-১) লেখাটি পড়ে মনে হল, মনু বা মৃদুলা বেন গাঁধী যেন প্রকৃতই কাব্যে উপেক্ষিতা। গাঁধীর শেষ জীবনে তাঁর ‘ওয়াকিং স্টিক’ ছিলেন আভা ও মনু গাঁধী। ছ’বছরের (১৯৪২-৪৮) জন্য মোহনদাস ছিলেন মনুর ‘মাতা’, সঙ্গী, অভিভাবক। মনুও ছিলেন মোহনদাসের কন্যা, সহচরী, বান্ধবী। গাঁধীর বহু বিতর্কিত ব্রহ্মচর্য পরীক্ষার অন্যতম সহকারী ছিলেন মনু। তাই এই সম্পর্ক ছিল নিবিড়, জটিল এবং লেখকের কথায় ‘দুর্লভ’। তা সত্ত্বেও মনু ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮-এর পর যেন নির্বাসনে চলে গেলেন! সে কি স্বেচ্ছায়, না কালের অবহেলায়? মনু গাঁধীর ডায়েরির অনুবাদক ও সম্পাদক ত্রিদীপ সুহরুদ-এর ৫০ পৃষ্ঠা ভূমিকা পড়লে তার আঁচ পাওয়া যাবে। গাঁধীজি সম্পর্কে নানা জায়গায় বক্তৃতা দিয়েছেন, কিন্তু গাঁধীচর্চার পাদপ্রদীপ থেকে দূরে ছিলেন। প্রায় সব জীবনীতেই তিনি উল্লেখমাত্র। তাঁর ডায়েরি ও গৌতম ভদ্রের প্রবন্ধ কৌতূহল উস্কে দিল।
তবে লেখাটিতে কিছু তথ্য বিভ্রান্তি লক্ষ করলাম। কস্তুরবা প্রয়াত হন ২২ ফেব্রুয়ারি, ১২ ফেব্রুয়ারি নয়। আর মনু প্রয়াত হয়েছেন ১৯৬২ নয়, গাঁধী শতবর্ষে ১৯৬৯ সালে, ৪২ বছর বয়সে। সঙ্গের ছবিতে লেখা ‘দুই নাতনি, মনু ও আভার সঙ্গে গাঁধীজি’। আভা চট্টোপাধ্যায় ছিলেন গাঁধীর এক ভাইপো, নারাণদাস গাঁধীর পুত্র
কানু গাঁধীর স্ত্রী।
অভিষেক রায়, কলকাতা-৯২
সে দিনের স্মৃতি
গৌতম ভদ্রের লেখার প্রেক্ষিতে অন্নদাশঙ্কর রায়ের যুক্তবঙ্গের স্মৃতি গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি— “তত দিনে আমি কলকাতা থেকে বদলি হয়ে মুর্শিদাবাদের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। সেখানেও তাঁর নিধনের রাতে মিষ্টান্ন বিতরণ হয়েছিল। শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি যে কথাটা ঠিক। ভারতের নানাস্থানে একই কালে মিষ্টান্ন বিতরণও তেমনি সত্য, যেমন সত্য সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে স্বতঃস্ফূর্ত শোক প্রকাশ। গান্ধীজী কারো চক্ষে মহাত্মা কারো চক্ষে দুরাত্মা, কারো মতে সর্বশ্রেষ্ঠ জীবিত হিন্দু, কারো মতে হিন্দুর সর্বনাশ যারা ঘটিয়েছে তিনিই তাদের সর্ব নিকৃষ্ট। তাঁকে হত্যা না করলে নাকি তিনি হিন্দুকে তার সর্বনাশের চরম সীমায় নিয়ে যেতেন। তাঁর অহিংসাই নাকি হিন্দু ভারতকে নির্বীর্য করেছে।”
প্রসন্নকুমার কোলে, শ্রীরামপুর, হুগলি
মেয়ে পুরোহিত
‘বিয়ের মরসুম’ (আনন্দ প্লাস, ৪-২) শীর্ষক খবরে উঠে এল টলিউডের অভিনেতা ওম সাহানি এবং মিমি দত্তের বৈদিক রীতিতে বিবাহ বন্ধনের সমাচার। অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন নন্দিনী ভৌমিক। পৌরোহিত্যে নারীর প্রবেশ আজও ব্যতিক্রমী। দেবীর আরাধনাতেও মহিলা পুরোহিতের করুণ অনুপস্থিতি লক্ষ করার মতো। পিতৃতান্ত্রিক লিঙ্গ রাজনীতির সুচতুর নির্মাণের যে ধারা বহমান, সেখানে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া (বিবাহ পরিচালনা এবং লক্ষ্মী বা সরস্বতী পুজো) পুং-পেশার একাধিপত্যে নারীর প্রবেশ নিষিদ্ধ। গোঁড়ামি ও মধ্যযুগীয় শ্রম বিভাজনের অচলায়তনে ধাক্কা দিতে গৌরী ধর্মপাল, নন্দিনী ভৌমিক, অনিতা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ এগিয়ে আসেন। সংস্কৃত ভাষায় গভীর ব্যুৎপত্তির অধিকারী হয়ে তাঁরা এই পেশায় যোগ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
সুপ্রতিম প্রামাণিক, আমোদপুর, বীরভূম
বিপন্ন নিম
বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েক বছর যাবৎ নিমগাছের মারণরোগ শুরু হয়েছে। গাছের পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ার পর পূর্ণবয়স্ক গাছগুলোও মরে যাচ্ছে। বিশেষত, সোনামুখী, বড়জোড়া এবং পাত্রসায়রের প্রায় সর্বত্রই এই গাছের মারণরোগ দেখা যাচ্ছে। গত বছর প্রায় কোনও গাছেই ফুল বা ফল ধরেনি। স্বাভাবিক ভাবেই, এ বছর নতুন চারার অভাব দেখা যাচ্ছে। এই ভাবে চললে এক দিন অতি উপকারী নিমগাছ এই অঞ্চল থেকে সরে যাবে।
জয়দেব দত্ত, সোনামুখী, বাঁকুড়া
কনভেনশন
‘একুশের ডাক, মানুষের দাবি’ (৯-২) শীর্ষক প্রতিবেদনটি বিভ্রান্তিকর। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি এই দাবিসনদের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি, মৌলালির যুব কেন্দ্রে এক নাগরিক কনভেনশন-এর মাধ্যমে, যার আহ্বায়ক ছিলেন কুমার রাণা, কৌশিক সেন, তনিকা সরকার, অমিত ভাদুড়ি, গৌতম ভদ্র, ডা. স্থবির দাশগুপ্ত, মেরুনা মুর্মু, দীপঙ্কর ভট্টাচার্য প্রমুখ। প্রসঙ্গত, দীপঙ্কর ভট্টাচার্য লিবারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু এই যৌথ নাগরিক উদ্যোগে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল নাগরিক হিসেবে। এই উদ্যোগকে লিবারেশন-এর দলীয় উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করা বিভ্রান্তিকর।
কার্তিক পাল, পলিটবুরো সদস্য, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন
প্রতিবেদকের উত্তর: ‘বিভ্রান্তি’ সৃষ্টির উদ্দেশ্য প্রতিবেদনটির ছিল না। তাও ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয়ে থাকলে তার জন্য দুঃখিত। তবে কিছু তথ্য উল্লেখ করছি। সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের রাজ্য দফতরে গত ২৮ জানুয়ারি দলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য যে সাংবাদিক সম্মেলন করে বাংলায় ১২টি বিধানসভা আসন চিহ্নিত করে তাঁদের লড়াইয়ের কথা ঘোষণা করেন, সেখানেই মৌলালি যুব কেন্দ্রে ৮ ফেব্রুয়ারি নাগরিক কনভেনশন করার কথা বলা হয়। ২৯ জানুয়ারি আনন্দবাজার পত্রিকায় সেই সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখন কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। পেশাগত ও ব্যক্তিগত পরিচয়ের সুবাদে লিবারেশনের নেতৃত্ব তার পরেও ওই কনভেনশনের কথা জানিয়ে গিয়েছেন। বর্তমান পত্রটির প্রেরকও লিবারেশনের পলিটবুরো সদস্য।