প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
প্রেমাংশু চৌধুরীর “‘ধনী’ দেশ, গরিব মানুষ” (১৭-৮) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। স্বাধীনতা দিবসের দিন লাল কেল্লায় দাঁড়িয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীর উদ্দেশে যে সব স্বপ্ন ফেরি করলেন তার অন্যতম হল, ২০২৪ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে চলেছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক মূল্যায়নকারী সংস্থার পূর্বাভাস, ২০২৯-এর মধ্যে ভারত তৃতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ হবে। বর্তমানে আমরা পঞ্চম স্থানে আছি। আমাদের আগে আছে আমেরিকা, চিন, জার্মানি, জাপান। আমাদের জিডিপি এখন ৩.৭ লক্ষ কোটি ডলার। অথচ মাথাপিছু আয়ের নিরিখে বিশ্বের ১৮১টা দেশের মধ্যে আমাদের স্থান ১৪১। আমরা যাদের টপকে পঞ্চম স্থানে এলাম, সেই ব্রিটেনের মাথাপিছু আয় ৪৭,৩৭৪ ডলার আর আমাদের ২,২০০ ডলার। প্রবন্ধকার সঠিক ভাবেই উল্লেখ করেছেন, ছোট পরিবারের মোট আয় কম হলেও মাথাপিছু আয় বেশি আর বড় পরিবারের মোট আয় বেশি হলেও মাথাপিছু আয় কম।
‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক’-এ ১২১টি দেশের মধ্যে আমাদের স্থান ১০৭। অর্থাৎ, বিশ্বের অন্যতম ‘ধনী’ দেশে জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশের কাছে পুষ্টির মতো মৌলিক অধিকারটিও অধরা। আমাদের দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় সম্পদের কেন্দ্রীকরণ। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, মাত্র এক শতাংশ ধনকুবেরের হাতে দেশের মোট সম্পদের ৪০ শতাংশ কুক্ষিগত রয়েছে। অর্থনীতির পরিভাষায় আমাদের দেশের অর্থনীতি ‘ট্রিকল ডাউন’ পন্থা— অর্থাৎ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল চুইয়ে চুইয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছবে— এই পদ্ধতিতে চলছে। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো সে দেশের নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য যে রকম আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা দিয়ে থাকে, তার ছিটেফোঁটাও আমাদের দেশের প্রান্তিক মানুষরা পান না। সুতরাং, সম্পদের সুষম বণ্টন যদি না করা যায়, তবে দেশ হয়তো ‘ধনী’ হবে, সাধারণ মানুষ কিন্তু সেই গরিবই থেকে যাবেন।
শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
চাষির আয়
প্রেমাংশু চৌধুরী নরেনবাবুর ভরা সংসার ও পাশের বাড়ির বিজয়বাবুর অণু পরিবারের আয়ের গল্প দিয়ে দেশের আর্থিক চিত্রটি সহজ ভাবে তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবি, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে জিতে আসবেন, এবং তাঁর তৃতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। স্বপ্ন দেখাটা দোষের নয়, স্বপ্ন সফল হওয়াটাই চ্যালেঞ্জ। আমাদের দেশের উন্নতি হোক, এটা কে না চায়। তবে এটা বাস্তবে পরিণত হওয়া কতটা সম্ভব?
ভারতের জনসংখ্যার সিংহভাগ এখনও কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাঁদের অধিকাংশেরই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। কৃষিকাজে কৃষকের ফসলের উৎপাদন খরচ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে। সেই অনুযায়ী ফসলের লাভজনক দাম পাওয়া দূরের কথা, মূলধন উঠছে না। কৃষক বার বার ক্ষতির মুখে পড়ছেন। কখনও তিনি জমিচ্যুত হচ্ছেন। কৃষিমজুররা কাজ ঠিকমতো পাচ্ছেন না। তাঁরা পরিযায়ী হয়ে মজুরের কাজে ভিন রাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হন। মাথাপিছু দৈনিক গড় আয় যৎসামান্য। মূল্যবৃদ্ধিও চরম আকার নিচ্ছে। এবং যত দিন যাচ্ছে, মানুষের রুজি-রোজগার কমছে, দারিদ্র বাড়ছে। এর পরও স্বপ্নের ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে স্বপ্ন দেখার গল্প শুনতে ভাল লাগবে? জার্মানি, জাপানকে পিছনে ফেলে ভারত তৃতীয় স্থানে চলে যাবে, এই গল্প শুনে গরিবের কোনও লাভ নেই। তাঁরা চান সপরিবারে তিন বেলা পেট ভরে খেতে। তার জন্য চাই কাজ। কোনও দান, খয়রাতির দরকার নেই।
বিদ্যুৎ সীটজগদল্লা, বাঁকুড়া
প্রতারিত
প্রেমাংশু চৌধুরীর প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে দু’এক কথা। জানা নেই— বিশ্বে এমন ক’টা দেশ আছে যেখানকার শাসকশ্রেণি তাঁদের জনগণের সঙ্গে নিরন্তর ছলনা ও প্রতারণা করেও, তার থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পেরেছেন। প্রবন্ধকার হিসাব কষে বুঝিয়ে দিয়েছেন, মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ভারত এখন একেবারে পিছনের সারিতে। দেশটা কাগজে-কলমে ‘ধনী’ হয়ে উঠলেও আসলে এখনও অনেকটাই গরিব। এ-নিয়ে দেশবাসীর অনেকের মধ্যে দুঃখ-অভিমান আছে সত্য, কিন্তু এই আবহেও মানুষের প্রধান চাওয়া বোধ হয় একটাই— একটু শান্তিতে দিনযাপন। কিন্তু স্বাধীনতার এতগুলো বছর পার হয়ে এসে আজ যখন আমরা দেখতে পাই, দেশের শাসক জনগণকে অবজ্ঞা করে, তাঁদের আড়ালে রেখে নিজেদের ক্ষমতা ও শক্তিবৃদ্ধির খেলায় মেতেছেন, তখন মাথা নিচু হয়।
দেশের বহু শিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদ কর্পোরেটের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, এবং দেশের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে— জনসংখ্যার ১ শতাংশ ধনকুবের দেশের ৪০ শতাংশের বেশি সম্পদের মালিক হয়ে উঠেছে। সর্বোপরি আমরা দেখছি, শাসকশ্রেণি নিজেদের ক্ষমতা আজীবন জিইয়ে রাখার উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে বড় বড় খবরের কাগজ এবং চ্যানেলের মালিকে পরিণত হচ্ছেন। এতে সত্যিই ন্যুব্জ হয়ে যায় দেশের গর্বিত মানুষগুলোর মাথা। তখন মনে হয়, আমরা সর্বার্থেই গরিব। গর্ব করার মতো সত্যিই আর কিছু নেই আমাদের।
সবুজ সান্যালধাড়সা, হাওড়া
বৈষম্যের বহর
প্রেমাংশু চৌধুরীর প্রবন্ধের মূল বক্তব্যের সঙ্গে যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ সহমত পোষণ করবেন বলেই বিশ্বাস। এই প্রসঙ্গে নরেনবাবু ও বিজয়বাবুর উদাহরণটি সদর্থক। দেশের সম্পদবৃদ্ধি মানেই যে সাধারণ মানুষের সমৃদ্ধি নয়, যদি অর্থনীতি সম্বন্ধে জ্ঞান না-ও থাকে তবুও সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে তা অনুভব করতে পারছেন। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ও স্থায়ী রোজগার না থাকার কারণে অধিকাংশ মানুষই কোনও মতে দিন গুজরান করছেন। অথচ দেশের কর্ণধারেরা সাধারণ মানুষকে মিথ্যা স্বপ্ন বিলি করছেন এবং অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা ধনীকে আরও ধনী করছে।
বেশভূষায় সুসজ্জিত হয়ে বিশেষ বিশেষ দিনে দেশবাসীকে ‘আমার পরিবারজন’ হিসাবে সম্বোধন করে ভাষণ গরিব মানুষের পরিবারে কোনও সুখ নিয়ে আসে না। আগামী হাজার বছরের উন্নতি দেখার জন্য কোনও মানুষই পৃথিবীতে থাকবেন না, এ কথা প্রধানমন্ত্রী অবগত আছেন। আরও অবগত আছেন যে, দেশবাসীর মাথাপিছু আয় না বাড়লে, সমাজে যে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে, তা আগামী দিনে সামাজিক ভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। দেশে মাথাপিছু আয় আশানুরূপ বাড়ছে না, আবার আয়কর দাতার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে, এর অর্থ বেশির ভাগ মানুষই ভাল নেই। দেশের এক শতাংশ ধনকুবের ভোগ করছেন চল্লিশ শতাংশ সম্পদ। এর সঙ্গে অদ্ভুত মিল পাওয়া যায়, সমস্ত দলের নির্বাচনী বন্ড থেকে প্রাপ্ত মোট টাকার প্রায় তিনগুণ একাই পাচ্ছে বিজেপি। এই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা পড়লে সুবিধা হত সাধারণ মানুষেরই।
অশোক দাশরিষড়া, হুগলি
ফুটপাতে গর্ত
গড়িয়াহাটে ফুটপাতের দশা ভয়ঙ্কর। ফুটপাতের অর্ধেকটা জুড়ে হকাররা বসেন। বাকি অংশ একে তো অসমান, তার উপর বিভিন্ন জায়গায় গর্ত হয়ে আছে। পুজোর মুখে প্রচুর মানুষ এখানে কেনাকাটা করেন। ঠিকমতো দেখে পা না ফেললে যে কোনও সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
সোহিনী মিত্র, কলকাতা-৩৩