বর্তমানে রাজ্য সরকারের বেশ কিছু জনমুখী প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, ১০০ দিনের কাজ, যুবশ্রী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, প্রতিবন্ধী ভাতা, কৃষক বন্ধু, বিভিন্ন ছাত্রবৃত্তির টাকা প্রভৃতি গ্রহীতাদের অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। তাতে অনেক মানুষের যে সুবিধে হচ্ছে, কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু অনেক সময়েই গ্রামের মানুষ ঠিক বুঝতে পারেন না যে, তাঁদের পাসবইতে কোন প্রকল্পের টাকা জমা পড়ল। কারণ, সেই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে কিছু লেখা থাকে না। থাকে কোনও কোড কিংবা ইংরেজি সংক্ষিপ্তসার। গ্রাহকরা টাকার অঙ্কটা দেখে অনুমান করে নেন যে, উক্ত প্রকল্পের টাকা জমা পড়েছে। কিন্তু, কেউ হয়তো প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পেলেন, একই সঙ্গে তাঁর কৃষক বন্ধু প্রকল্পের টাকাও অ্যাকাউন্টে জমা পড়ল। পাসবইতে আলাদা করে এগুলি লেখা থাকে না বলে তাঁদের অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হয়। ফলে, এতে গোপনীয়তা থাকে না।
গ্রাহকের পাসবইতে কোন কোন প্রকল্পের অন্তর্গত কত টাকা ঢুকল, তা পরিষ্কার করে লেখা থাকলে যে কেউ ব্যাপারটা সহজে বুঝতে পারবেন এবং তাঁদের অন্য কাউকে জিজ্ঞাসাও করতে হবে না। তাই জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
মুস্তাক আলি মণ্ডল
আমতা, হাওড়া
জালিয়াতি
‘জালিয়াতি এক পুরনো রোগ’ (রবিবাসরীয়, ৪-৭) নিবন্ধটি পড়ে মনে পড়ল বহু দিন আগে পড়া বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসের কথা। সিংহভাগ সম্পত্তি নিজের দখলে আনার লক্ষ্যে কুচক্রী হরলাল তৈরি করেছিল নকল সই করা জাল দলিল। প্রকৃত দলিল চুরি করে সেই জায়গায় নকল উইলটি রেখে দেওয়া থেকে বৈষয়িক স্বার্থসিদ্ধির নেশায় সে প্রতারিত করেছিল বিধবা রোহিণীকে। নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে তাকে নিজের স্বার্থবৃত্তে আনার চেষ্টাও সে করেছিল নিপুণ দক্ষতায়। কিন্তু জালিয়াতির সব চেষ্টা বিফলে যেতে বেআব্রু হয় হরলালের সব দুরভিসন্ধি।
অতি সম্প্রতি সংবাদপত্রে ঠাঁই পাওয়া জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ভুয়ো পরিচয়ে অর্থপ্রাপ্তি ও জাল ভ্যাকসিন প্রতারণার খণ্ডচিত্রে বৃহত্তর প্রেক্ষিতে ঘটতে থাকা নানা ধরনের জাল-জোচ্চুরির সিন্ধুদর্শন হল অবধারিত ভাবেই। নিবন্ধকার যথার্থ বলেছেন, “প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি জালিয়াতদের জুগিয়েছে প্রতারণার অনেক বাঁকা পথ। সে সব কাজে লাগিয়ে সেই ট্র্যাডিশন অব্যাহত একুশ শতকেও।”
বর্তমানে বহুস্তরীয় নকলনবিশের কার্যকলাপ দেখলে শিউরে উঠতে হয়। প্রযুক্তিকে অসৎ উপায়ে ব্যবহার করে সদ্যোজাত শিশুর জন্মতারিখ পাল্টে জাল বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি থেকে স্কুলস্তরে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের সুবিধা ভোগের আশায় বিবাহিত মেয়েদের নকল বিয়ের কার্ড দাখিল করা যেন অতি স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ল বছর দুই আগে সর্বভারতীয় নিট পরীক্ষায় ভুয়ো পরীক্ষার্থীর অনুপ্রবেশের ঘটনা। সম্প্রতি কলকাতার উপকণ্ঠে সাপুরজি আবাসনে জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছিল ভুয়ো ভাড়াটে পরিচয়েই। ইয়াস-পরবর্তী সংবাদপত্রে উঠে এল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ত্রাণ সংগ্রহেও গরু, ছাগলের প্রকৃত সংখ্যা গোপন রেখে দেওয়ার মতো সুচতুর কাণ্ডকারখানা।
এ ছাড়াও আছে পেশাদারি শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে বহুতল প্রতিষ্ঠানের চটকদার বিজ্ঞাপন থেকে চাকরির নামে প্রতারণার অজস্র উদাহরণ। কর্পোরেট ধাঁচে অফিস খুলে বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতো কারবার চলতে থাকে সবার সামনেই। ভুয়ো সরকারি সিলমোহর লাগানো নীলবাতির নকল ব্যবহারও যে কত সহজলভ্য, তা আজ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।
বর্তমানে তাই ‘পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি’ শব্দবন্ধটিও অচল হওয়ার পথে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির বিস্তার ও গভীরতার ব্যাপ্তি খুঁজতে বসে তদন্ত কমিটি, হয় টাস্ক ফোর্সও। কিন্তু তাদের তদন্তেও এত সময় লেগে যায় যে, জনমানসে নিরাশা ভর করে। সব শেষে অপরাধীদের বড়জোর দু’-এক বছরের কারাদণ্ড হয়! কিন্তু সেখানে গিয়েই অসুখের ভান করে বহাল তবিয়তে হাসপাতালে থাকার আয়োজনের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো।
সুপ্রতিম প্রামাণিক
আমোদপুর, বীরভূম
চিকিৎসার নামে
খবরে প্রকাশ, বাঁকুড়া জেলার গোয়ালতোড় এলাকার কয়েকটি নার্সিংহোম স্থানীয় মানুষদের আর্থিক লোভ দেখিয়ে, অথবা সামান্য গা-ব্যথা বা মাথা-ব্যথায় গাড়ি পাঠিয়ে তুলে এনে চিকিৎসার নামে ১০-১২ দিন ভর্তি রেখেছে। এবং ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকার বিল করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা রোগীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে।
এই ধরনের কারচুপির ঘটনা আগেও শহর ও শহরতলিতে ঘটেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর তাতে নড়েচড়ে বসেনি বা উপযুক্ত পদক্ষেপও করেনি। এ বারের ঘটনায় আশা করা যায় তারা যথেষ্ট তৎপর হবে। প্রয়োজনে, সিআইডি স্তরে তদন্ত করিয়ে অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনমাফিক উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সংবাদপত্র ও সমাজমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ এবং জেলায় জেলায় মাইকে প্রচারও করা উচিত, যাতে লোভে পড়ে মানুষ আর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের টাকা চিকিৎসার নামে নষ্ট না করে।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
কেন উদাসীন
‘বিধি উড়িয়ে ফের পুজোর ভিড় কালীঘাটে’ (১৮-৭) সংবাদটি রীতিমতো উদ্বেগজনক। সংক্রমণে রাশ টানার জন্য জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে যখন কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে, প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় বা কোভিড-নেগেটিভ রিপোর্ট না থাকায় হোটেলে ঠাঁই দেওয়া হচ্ছে না, এমনকি মাঝরাস্তা থেকে পর্যটকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে (‘কড়াকড়ি, সৈকত থেকে ফিরছেন পর্যটকেরা’, ১৮-৭) তখন কালীঘাটের মতো বিখ্যাত মন্দিরে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা বিস্ময়কর। সুরক্ষা-বিধি পালনে রাজ্য প্রশাসনের কঠোর নির্দেশ সত্ত্বেও মন্দির-সংলগ্ন থানার নিষ্ক্রিয়তার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কোভিডের তৃতীয় ঢেউ সামাল দিতে গেলে প্রতিষেধকের পাশাপাশি সুরক্ষা-বিধি পালনের গুরুত্বের কথা সম্ভবত কারও আর অজানা নেই। তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির মানুষ অন্যকে বিপদের মুখে ফেলে মাস্কবিহীন অবস্থায় যথেচ্ছ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যার ছবি হামেশাই সংবাদমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। কেবলমাত্র সচেতনতার পাঠ দিয়ে এই বিপজ্জনক প্রবণতা রোধ করা সম্ভব নয়।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা
কলকাতা-১০৭
বিপন্ন শৈশব
অতিমারির গ্রাসে নিঃসন্দেহে আজ বিপর্যস্ত জীবনযাত্রা আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিপন্ন শৈশবও। ধুলো-কাদার আতিশয্যে স্বাভাবিক বিকাশের পথ কচিকাঁচারা হারিয়ে ফেলেছে, বন্ধ হয়ে গিয়েছে সামাজিক ভাবে সাবালক হয়ে ওঠার পথও। সামাজিক দূরত্ববিধির বেড়াজালে আবদ্ধ শৈশব অচিরেই হারিয়ে ফেলছে মানসিক সুস্থতার প্রাকৃতিক ছন্দ। পাশাপাশি শরীরের স্বাভাবিক ‘ইমিউনিটি’-র বিকাশেও মারাত্মক ভাবে এর প্রভাব পড়ছে, পড়াশোনার কথা নাহয় বাদই দিলাম। চার দেওয়ালের বন্দি জীবনে স্মার্টফোনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে ওঠা শৈশব এক অজানা স্রোতে ভেসে যাচ্ছে, যার কূল ঠাহর করার মতো পরিস্থিতি হয়তো এখনও আসেনি। কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতার দিক থেকে সেই কূল ঠাহরের প্রয়োজনীয়তাও কি সেই ভাবে বোধ করছি আমরা?
শ্রীময়ী দে
কলকাতা-১২২