— ফাইল ছবি
‘যাত্রীরা সচেতন না হলে কী করার থাকতে পারে’ (১২-১১) প্রসঙ্গে বলতে চাই, বুধবার সকাল সাতটা নাগাদ কোন্নগর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম, সাড়ে সাত মাস পর লোকাল ট্রেন চলার প্রত্যক্ষ ছবিটা কী। যাত্রীরা কতটা সরকার বা রেল কর্তৃপক্ষের অনুরোধ বা নির্দেশ সম্বন্ধে সচেতন। দুঃখের কথা, অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। প্রতি ট্রেনেই সকাল সাতটা-সাড়ে সাতটার মধ্যে যাত্রিসংখ্যা ১৫০০ বা তারও বেশি। হাওড়াতে চিত্রটা আরও ভয়ঙ্কর ছিল, সন্দেহ নেই। দূরত্ববিধি মেনে প্রতি আসনে দু’জন করে বসার জায়গায় তিন-চার জন, সঙ্গে কামরার ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকা আর গেটে দাঁড়ানো যাত্রীর সংখ্যাও কম ছিল না।
তবে শুধু যাত্রীদের দিকে আঙুল তুলে দায়িত্ব এড়িয়ে গেলেই চলবে না। লকডাউনের আগে সকালের দিকে বা অফিস টাইমে প্রতি ট্রেনে যাত্রিসংখ্যা থাকত কমপক্ষে ২০০০-২৫০০, লেট করলে প্রায় ৩০০০। সাত মাস ধরে সাধারণ মানুষ তথা মধ্যবিত্তের দল অনেক কষ্ট করে বেশি ভাড়া দিয়ে, বেশি সময় খরচ করে টোটো, অটো এবং বাসে অফিস বা অন্য কাজে যাতায়াত করেছেন। তাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন, কবে লোকাল ট্রেন চালু হবে এবং তাঁদের দৈনন্দিন দুর্ভোগের সমাপ্তি ঘটবে। সেই চিত্রই দেখা গিয়েছে।
আশঙ্কা হয়, সোমবার থেকে চিত্রটা আরও ভয়ঙ্কর হবে। কারণ ট্রেন চলছে জানলে যাঁরা বেরোচ্ছিলেন না, তাঁরাও বেরোবেন। রেল কর্তৃপক্ষ ও সরকারি কর্তাদের এ ব্যপারে আরও একটু সচেতন হওয়া উচিত ছিল।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
উধাও বিধি
ট্রেনের সংখ্যা না বাড়ালে এবং যাত্রী নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক ব্যবস্থা না করলে যে এমন ভিড় হবে, তা আমাদের মতো সাধারণ মানুষও সহজে বুঝতে পারেন। সেই কথাটা রেল প্রশাসক এবং রাজ্য প্রশাসনের মাথায় ঢুকল না কেন, বুঝলাম না। ট্রেন চালু হওয়ার আগের দিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে রেল দফতর থেকে যে সব চিত্র আমাদের উদ্দেশে প্রদর্শিত হল, তা দেখে আশা জেগেছিল। সেখানে করোনাবিধি মানার নানা আয়োজন দেখেছি। দেখেছি, প্ল্যাটফর্মে সুনির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়ানোর জন্য সাদা বৃত্ত, প্রতি যাত্রীর জন্য থার্মাল স্ক্রিনিং, জীবাণুমুক্ত কামরার অভ্যন্তর, একটি ছেড়ে একটি সিটে বসার ব্যবস্থা, বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান ইত্যাদি। কিন্তু প্রথম দিনেই দেখছি সবই প্রায় উধাও। সুদূর বনগাঁ লোকাল থেকে শুরু করে মেদিনীপুর, খড়্গপুরেও একই চিত্র। আসন থেকে ধুলো ঝেড়ে যাত্রীদের বসার জায়গা করে নিতে হচ্ছে ট্রেনের ভিতর, এমন চিত্রও সামনে এসেছে। ট্রেনে অল্প যাত্রী থাকলেও সব রকম বিধিকে শিকেয় তুলে দেওয়া হয়েছে।
গৌরীশঙ্কর দাস
সাঁজোয়াল, খড়্গপুর
প্রহসনের বৃত্ত
গত ১০ নভেম্বর এই সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় প্রকাশিত রেল দফতরের তরফে প্ল্যাটফর্মে বৃত্ত আঁকার ছবিটি প্রহসন বলে মনে হচ্ছে। নিত্যযাত্রীরা জানেন যে, গুচ্ছের রেলবিধি কাগজে-কলমে থাকা সত্ত্বেও তা মানা হয় না। শিয়ালদহ স্টেশনের কথাই ধরা যাক। গত তিন মাস ধরে ‘স্পেশাল ট্রেন’ নাম দিয়ে বেশ কিছু ট্রেন চলছে। নিরুপায় হাজার হাজার মানুষ তাতে যাতায়াতও করছেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নির্দেশিকা কার্যকর করার ক্ষেত্রে কতটুকু উদ্যোগী হতে দেখা গিয়েছে রেলকে? বার বার যাত্রীদের ‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপের কথা স্মরণ করালেও, রেলযাত্রায় এর যে কী উপযোগিতা, তা ঠিক উপলব্ধি করা গেল না। শোনা গিয়েছিল, স্টেশনে ঢোকার মুখে প্রত্যেক যাত্রীর থার্মাল স্ক্রিনিং হবে। কোথায় কী? ঢোকার মুখে টিকিট চেকিং হচ্ছে, বিক্ষিপ্ত ভাবে থার্মাল গান ব্যবহার করা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার কোনও বালাই নেই।
আর এক যন্ত্রণার জায়গা হল, ব্যাগেজ স্ক্যানার। এর উদ্দেশ্য বোঝা গেল না। শুধুমাত্র ট্রলি বা বড় ব্যাগ স্ক্যানারে চাপাতে হচ্ছে। বাকি সব বাদ। প্রশ্নটি যদি নিরাপত্তারই হয়, তবে এই দ্বিচারিতা কেন? তা ছাড়া এই স্ক্যানার মেশিন স্যানিটাইজ় করার কোনও উদ্যোগ নজরে আসেনি। ফলে কোনও একটি ব্যাগ থেকে ভাইরাস মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত ট্রেনে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
দেবব্রত রায়
রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
বেশি ট্রেন
2 একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের লোকাল ট্রেনে ১২০০ যাত্রী বসে যেতে পারেন। ধরে নেওয়া হল, একটা করে সিট ফাঁকা রেখে মাত্র ৬০০ যাত্রী একটি লোকালে স্থান পাবেন। বাকিরা কী করে যাবেন? অফিসযাত্রীর অভিজ্ঞতা বলে, বাস্তবে ১২০০-র অন্তত চার গুণ যাত্রী অফিসের সময়ে কম্পার্টমেন্টে নিজেদের গুঁজে দেন বাধ্য হয়ে। করোনাকালে সেই ভাবে যাতায়াতের কথা ভাবতেও ভয় হয়। সম্প্রতি এক রেলযাত্রীর কথা পড়লাম, যিনি খিদেয় মরার চেয়ে রোগের সংক্রমণে মারা যাওয়া শ্রেয় বলে মনে করছেন। একে বিচ্ছিন্ন এক জনের উক্তি বলে ধরলে ভুল হবে। দীর্ঘ কাল পরে চালু হল লোকাল ট্রেন। রোগ সংক্রমণ এবং আইন-শৃঙ্খলা, উভয় দিক সামলাতে হলে প্রথম থেকেই বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করা প্রয়োজন ছিল।
অফিস টাইম ছাড়া বাকি সময়ে ক্ষীণ পরিষেবার পরিকল্পনা পরিত্যাগ করলেই মঙ্গল। এই সময়ে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁদের একটা বড় অংশ বরিষ্ঠ নাগরিক। এঁরা কর্মজীবনে অনেক অর্থ রেলকে পরিষেবার বদলে প্রদান করেছেন। ওই সময় ট্রেনের সংখ্যায় আরও কোপ মারা অশক্তদের প্রতি নিষ্ঠুরতা হবে। তাতে করোনা থেকে বাঁচলেও ভিড়ে উঠতে-নামতে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
যাত্রীরাই রেলের লক্ষ্মী। একে তো বেশ কয়েক মাস শুধুমাত্র রেল কর্মচারীদের জন্য ট্রেন চালিয়ে এবং শ্রমজীবী মানুষকে রক্ষিবাহিনী দিয়ে বলপ্রয়োগ করে সেই ট্রেন থেকে নামিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট বিরাগভাজন হয়েছেন। এর পরেও কি সাধারণ যাত্রীদের অবাঞ্ছিত গণ্য করে এড়াতে চাইবে রেল? অপ্রীতিকর কাণ্ড ঘটে যাওয়ার আগেই যাত্রিসংখ্যা আন্দাজ করা কি খুব কঠিন কাজ?
বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর, হুগলি
বঞ্চিত হকার
লোকাল ট্রেন চালুর খবরে হাসি ফুটেছিল হকার ও স্টেশনের দোকানদারদের মুখে। কিন্তু রেলের সিদ্ধান্ত, আপাতত হকাররা ট্রেনে উঠতে পারবেন না ও স্টেশনের দোকান খোলা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত অমানবিক। এঁরা দীর্ঘ দিন ধরে কর্মহীন। করোনা কি শুধু এই মানুষগুলো থেকে ছড়াবে? এত যাত্রী যখন ঠাসাঠাসি করে যাতায়াত করছেন, তখন এই নিরীহ মানুষগুলোর ট্রেনে ওঠায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা মারার কোনও যুক্তি নেই। অবিলম্বে ট্রেনে হকারদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে উঠতে দেওয়া হোক। রেলকে স্বার্থপর দৈত্যের বাগান করে রাখবেন না
অভিজিৎ ঘোষ
কমলপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
লাইসেন্স
রেল কর্তৃপক্ষের কাছে নিবেদন, হকার ও ছোট দোকানদারদের লাইসেন্স দিন। তাঁদের মাসিক ফি-র বিনিময়ে ব্যবসা করার সুযোগ দিন। এতে রেলের ভাল আয়ও হবে।
সমর বিশ্বাস
মাজদিয়া, নদিয়া
টাইম টেবিল
টাইম টেবিল কী করে পাব, সে বিষয়ে কোনও উল্লেখ থাকছে না সংবাদপত্রে। ট্রেনের টাইম টেবিল রেলের ওয়েবসাইটে প্রচার প্রয়োজন। তা না হলে যাত্রীদের সমস্যা হবে।
সমীর ভট্টাচার্য
কালীনারায়ণপুর, নদিয়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।