—প্রতীকী ছবি।
তিলোত্তমা মজুমদারের “দেখতে ‘নারী’ তার চলন বাঁকা” (রবিবাসরীয়, ২১-৪) শীর্ষক প্রবন্ধটিতে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীকে সামনে রেখে বা ব্যবহার করে পুরুষের ক্ষমতাভোগের যে কথা বলা হয়েছে, তা স্বাধীনতার এত বছর পরেও সমান ভাবে বাস্তব। বিভিন্ন পুরসভা বা পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে কোনও মহিলা জয়লাভের পর তাঁর স্বামী বা পিতা কিংবা অন্য নিকটাত্মীয় পুরুষ সেই নারীকে যে ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন, তার সাক্ষী আমরা কমবেশি প্রায় সবাই। বিহারে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত লালু প্রসাদ যাদবের তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়ে রাজ্যপাট চালানোর স্মৃতি কারও মন থেকে মুছে যায়নি। সাম্প্রতিক কালে জেলবন্দি অরবিন্দ কেজরীওয়াল ও হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী’দের অন্তরাল ছেড়ে বেরিয়ে আসার মধ্যেও তারই ছায়া বলে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের অভিমত। বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইন্দিরা গান্ধী, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জয়ললিতা ও বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নারী হলেও ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে কিন্তু তাঁদের ধারেকাছে কোনও পুরুষই সে ভাবে ঘেঁষতে পারেননি বা পারেন না।
এর পক্ষে অনেক যুক্তি থাকলেও, এর জন্য মাঝে মাঝে স্বৈরতন্ত্রীর তকমাও জুটেছে এঁদের কপালে। সেই তকমা শুধুমাত্র পুরুষের অভিযোগ বলে উড়িয়ে দেওয়ার মতো বিষয় নয় বলেই মনে হয়। নারীর ক্ষমতার সঠিক ব্যবহারকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায় এই ধরনের বিবৃতি বা অভিযোগ। কংগ্রেসের শাসনকাল ও পরবর্তী সময়ে চৌত্রিশ বছরের বাম শাসন এবং বর্তমান তৃণমূলের শাসনের যে পরম্পরা তুলে ধরা হয়েছে এই প্রবন্ধে, সেই সম্বন্ধে কোনও বিরুদ্ধ মন্তব্য না করেও বলা যেতে পারে, সেই আলোচনা এ ক্ষেত্রে খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয় বলেই মনে হয়। আমাদের দেশে আর্থ-সামাজিক কারণে অধিকাংশ গৃহবধূ বা পরিবারের অন্য মহিলার হাতে পর্যাপ্ত বা একেবারেই টাকা না থাকার কারণে তাঁরা সামাজিক নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন প্রতিনিয়তই। এই সুযোগ নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সস্তায় উজ্জ্বলা গ্যাস, লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী এই ধরনের বিভিন্ন প্রকল্পে অনুদান কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন নয়, এটা নারীকেই বুঝতে হবে। তাই নারীর আপন ভাগ্য জয় করার অধিকার পেতে গেলে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারীকে ব্যবহারের প্রবণতা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হতে হবে নিজেদেরই। শুধুমাত্র খাতায়-কলমে সীমাবদ্ধ না থেকে নিজেদের অধিকার অর্জন ও স্ব-রোজগারের দাবিতে প্রতিটা রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক নারী সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে সোজা পথে এবং কারও মুখাপেক্ষী না হয়েই।
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
অন্ধকার এখনও
তিলোত্তমা মজুমদারের প্রবন্ধ অত্যন্ত বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী। যদিও প্রাচীন যুগে মৈত্রী, খনা, লীলাবতী অনেক সম্মানের জায়গায় ছিলেন বলে দাবি করা হয়, বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু একেবারেই আলাদা। পরাধীন দেশে প্রথম বাঙালি ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে ডাক্তারি করতে গিয়ে কী অপমানই না হজম করতে হয়েছিল। পরবর্তী কালে রূপান দেওল বাজাজ বনাম কেপিএস গিল মামলা দেখিয়েছে, সরকারি আধিকারিক হয়েও দীর্ঘ দিন ধরে যৌন নির্যাতন সহ্য করতে হতে পারে। এমন ঘটনা ক্রীড়াজগৎ-সহ বিভিন্ন দফতরে এখনও ঘটে চলেছে।
তসলিমা নাসরিন এ দেশে থাকতে পারেননি। তিনি পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন। তৎকালীন শাসক দল, যারা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করে, তারা তাঁকে আশ্রয় দেয়নি। বলিউডের গ্ল্যামার গার্লদের অনেককেও দীর্ঘ দিন যৌন নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। যা থেকে নতুন একটা পরিভাষা তৈরি হয়েছে ‘মি টু’। আর সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়, আজ এই একবিংশ শতাব্দীতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাঁরই পরিচিতদের কাছ থেকে। আর আমরা, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা ভাবতে থাকি, আরও কত দিন লাগবে এই অন্ধকার যুগ পেরোতে?
সাধন মুখোপাধ্যায়, অরবিন্দনগর, বাঁকুড়া
অভিযোগ
‘চুরির বিদ্যুৎ বিক্রির পুরনো রোগ সারবে কি? নারকেলডাঙায় খুনের ঘটনায় প্রশ্ন’ (আবাপ, কলকাতা, ৪-৫) শীর্ষক সংবাদটি প্রকাশিত হয় বিদ্যুৎ চুরি নিয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানতে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নারকেলডাঙা এবং সংলগ্ন এলাকায় এই বিষয়ে আমরা কী পদক্ষেপ করেছি সেই বিষয়ে তাঁকে বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়। এটাও জানানো হয় যে, ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ চুরি ইতিমধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে এ-ও বলা হয় যে, সিইএসসি এখনও এই বিষয়ে ক্রমাগত নজর রেখে চলেছে এবং যদি কোনও চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকাশিত খবরে আমাদের বিবৃতিটি অসম্পূর্ণ রূপে প্রকাশিত হয়েছে। মাত্র দু’টি লাইন ছাপা হয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট হচ্ছে না আমরা কী পদক্ষেপ করেছি বা করছি। আমরা মনে করছি, এর ফলে জনগণের কাছে আমাদের সম্পর্কে ভুল বার্তা প্রেরিত হচ্ছে।
সংবাদে এমনও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সিইএসসি-র ‘লস কন্ট্রোল সেল’ সূত্রে জানা যাচ্ছে, আরও বেশ কিছু এলাকা আছে যেখানে বিদ্যুৎ চুরির পরিমাণ অত্যধিক। এই বিবৃতি আমরা দিইনি। আমাদের ধারণা, এমন অসম্পূর্ণ বিবৃতি এবং ভুল তথ্য প্রকাশের জেরে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়সিনিয়র ম্যানেজার (পিআর অ্যান্ড কমিউনিকেশন), সিইএসসি
প্রতিবেদকের উত্তর: প্রতিবেদনটির জন্য সিইএসসি-র জেনারেল ম্যানেজার অরিজিৎকুমার বসুর সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। তিনি যা বলেছেন (কথোপকথনের রেকর্ডিং রয়েছে আমার কাছে) তা-ই বক্তব্য আকারে লেখা হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সেই অংশটি হল, “এই চুরি আটকাতেই নতুন প্রযুক্তির কেবল, ডিস্ট্রিবিউশন পিলার বক্স বসানো হয়েছে। মিটার বোর্ডও সুরক্ষিতকরা হয়েছে।” এতে চুরি কিছুটা আটকানো গেলেও সম্পূর্ণ যে বন্ধ করা যায়নি, তা-ও অরিজিৎবাবুই জানিয়েছেন।
তা ছাড়া নারকেলডাঙায় এক ব্যক্তিকে খুনের ঘটনায় পুলিশ নিজেই জানিয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং অন্য দলের মধ্যে চুরির বিদ্যুৎ বিক্রির সিন্ডিকেটের দখল কার হাতে থাকবে সেই নিয়ে লড়াই চলছিল। নারকেলডাঙা থানাতেই খুনের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। ফলে প্রতিবেদনটিতে যা লেখা হয়েছে তা লালবাজারের পুলিশ রিপোর্ট এবং খোদ গোয়েন্দা প্রধানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লেখা। এই প্রতিবাদপত্রে সিইএসসি-র করা দাবি অনুযায়ী যদি নারকেলডাঙা এলাকায় সত্যিই বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে থানায় বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ দায়ের হল কী ভাবে? প্রতিক্রিয়ার জন্য যখন সিইএসসি-র জেনারেল ম্যানেজার অরিজিৎকুমার বসু-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, তখন তাঁর থেকে বিদ্যুৎ চুরির জন্য একটি অর্থবর্ষে কত টাকা সিইএসসি-র ক্ষতি হয় সেটাও জানতে চাওয়া হয়। তাতে অরিজিৎকুমার বসুর মন্তব্য ছিল, “ক্ষতি তো হয়-ই। কিন্তু কত টাকা ক্ষতি হয়, সেই পরিসংখ্যান এই মুহূর্তে আমার হাতে নেই।” অর্থাৎ তিনি মানছেন, চুরি সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায়নি। ফলে সিইএসসি-র পিআর কমিউনিকেশনের সিনিয়র ম্যানেজার এবং সিইএসসি-র জেনারেল ম্যানেজার পরস্পরবিরোধী দাবি করছেন। আর কোন কোন জায়গায় বেশি বিদ্যুৎ চুরি হয়, সেই সংক্রান্ত তথ্য সিইএসসি-র ‘লস কন্ট্রোল সেল’ (লোকসান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) সূত্রে পাওয়া। সেই কারণেই সেটিকে সিইএসসি-র ওই বিভাগ সূত্রে খবর বলে লেখা হয়েছে। সেটা সিইএসসি-র বক্তব্য ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। যদি বক্তব্য হত, তা হলে সিইএসসি জানাচ্ছে বা সিইএসসি-র বক্তব্য বলে লেখা হত।
গেমে আসক্তি
আজ অনলাইন গেমে শিশু থেকে যুবক— সবাই আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে, বাইরের জগৎ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। ব্যাহত হচ্ছে পড়াশোনা, ঘুম। বাড়ছে মানসিক বিপর্যয়। তাই অবিলম্বে এই গেম বন্ধ করা দরকার।
মঞ্জুশ্রী মণ্ডল, তারকেশ্বর, হুগলি