ঈশানী দত্ত রায়ের ‘তবু অনন্ত জাগে’ (১১-৭) একটি হৃদয়স্পর্শী প্রতিবেদন। হ্যাঁ, মৃত্যু এখন একটা সংখ্যামাত্র, তা অতিমারিতেই ঘটুক বা লাইন ধরে বাড়ি ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের মিছিলেই হোক। কিন্তু প্রতিটি সংখ্যার নেপথ্যে থাকে একটি করে পরিবার। তাঁদের কথা ঢাকা পড়ে যায়। অনেক সময়ই ভেসে যায় সংসার। অতিমারি বা যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে এই পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভিড় জমান ভিন্রাজ্যে, পরিবারের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে। বেঁচে থাকার জন্য এ এক জীবন মরণ লড়াই, যা কিছুতেই থামার নয়। স্বাভাবিক কারণেই, কাশ্মীরে জঙ্গিদের হাতে সহকর্মীরা খুন হওয়ার পরেও মুর্শিদাবাদের শ্রমিকরা বলেছিলেন যে, তাঁরা আবার কাশ্মীরে যাবেন। যেতে হবে, নইলে সংসার চলবে না। জীবনযুদ্ধে আজ যেন তাঁরা মাঝদরিয়ায়। এই অন্তহীন সংগ্রাম থেকে রেহাই নেই।
এ দিকে বেকারত্বের নিরিখে গত ৪৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড গড়েছে মোদী সরকার। সরকারি স্তরে নিয়োগের কোনও পরিকল্পনা নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে বিভিন্ন দফতরে নিয়োগ প্রায় বন্ধ বললেই চলে। লকডাউনের মধ্যেই একের পর এক রাষ্ট্রীয় সম্পদ জলের দরে বেচে দেওয়া হল শাসক ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট সংস্থার কাছে। রাজ্যের অবস্থাও অনুরূপ। সরকারি অফিস থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে কোনও নিয়োগ নেই গত দশ বছরে। নতুন শিল্প আসা তো দূর, অনেক পুরনো কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে, যা খোলার তেমন কোনও চেষ্টা শাসক দলের তরফে দেখা যাচ্ছে না। সীমাহীন দারিদ্রের মুখোমুখি রাজ্যের বড় অংশের মানুষ। পরিত্রাণের পথ কোথায়?
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত
কলকাতা-৫১
শুধুই সংখ্যা?
ফুটপাতে অবহেলায় মৃত্যু আর নামী নার্সিংহোমের দামি শয্যায় মৃত্যুর মধ্যে যা-ই পার্থক্য থাক, অচেনা মানুষের কাছে সে শুধু সংখ্যা হিসেবেই পরিগণিত হয়েছে। খবরের কাগজের প্রথম পাতায় করোনায় আক্রান্ত, সুস্থ হয়ে ওঠা ও মৃত্যু সংক্রান্ত খবর শেষে সংখ্যাতেই পর্যবসিত হয়। সংখ্যা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে অনুভূতির অস্তিত্বকে নিজেদের অজানতেই অস্বীকার করে ফেলেছি। ঈশানী দত্ত রায়ের লেখা পড়ে তাই আত্মগ্লানি আসতে বাধ্য।
করোনার প্রথম ঢেউ, দ্বিতীয় ঢেউ প্রায় পেরিয়ে আমরা তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় দুলছি। কিন্তু এই ঢেউয়ের পর ঢেউ আমাদের অনুভূতিকে কতটা আন্দোলিত করে? মৃত্যুর খবর মানেই সংখ্যা। এই সংখ্যার হ্রাস পাওয়া আমাদের উল্লসিত করে। আনন্দের প্রধান কারণ ওই সংখ্যায় আমি বা আমার খুব কাছের জন নেই। সংখ্যাটি যখন শূন্য হবে, আনন্দে তখন আমরা ফেটে পড়ব। মুক্তি পাব মানসিক লকডাউনের ঘেরা জাল থেকে। ভুলে যাব কে বা কারা মারা গিয়েছেন। ভুলে যাব তাঁদের কথা, যাঁরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। করোনা হয়তো চলে যাবে এক দিন। কিন্তু মানুষের কী হবে? মানবিকতার কী হবে? পরিসংখ্যানের কারাগার থেকে বেরোনো কি কখনও সম্ভব হবে?
মানুষকে মানুষ হিসেবে চেনা, মৃত্যুকে সংখ্যা নয়, বরং অন্তিম পরিণতি হিসেবে সম্মান করা, এই উপলব্ধি মানবিকতারই অংশ। মর্মস্পর্শী লেখাটা বাস্তবিক আমাদের এই উপলব্ধিকেই প্রসারিত করে।
অশোক বসু
বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
প্রসঙ্গ বিশ্বভারতী
নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তোমরা বুঝতে পারবে না’ (৪-৭) প্রবন্ধ সূত্রে কিছু কথা। অনেক দৈহিক ও সাংসারিক দীনতা বহন করে ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়, জগদানন্দ রায়, কবি সতীশচন্দ্র শান্তিনিকেতনে আশ্রম-বিদ্যালয় স্থাপনকালে (১৩০৮, ৭ পৌষ) রবীন্দ্রনাথের সহায়ক হিসেবে পাশে ছিলেন। সময় বাঁধা ঘরবন্দি শিক্ষাপ্রণালীতে দমবন্ধ হওয়া শিশুমন প্রকৃতির শুশ্রূষা ও শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তায় পরিপূর্ণ ভাবে বিকশিত হবে— এই ছিল রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছা। আসলে তখন ছিল না বাহ্যিক ফল লাভের চিন্তা। ছিল সকল ছাত্রকে আপন করে নেওয়ার আন্তরিক চেষ্টা। তখন তাঁদের সেবার মধ্যে ছিল এক গভীর আনন্দ, আর তাতেই তাঁরা উপলব্ধি করতেন জীবনের চরম সার্থকতা। ক্রমে বিদ্যালয় পরিধির বিস্তৃতিকালে অকারণ বিদ্বেষ ও অহেতুক বিরুদ্ধতায় রবীন্দ্রনাথ আহত হন। মোহিত সেন ও ত্রিপুরাধিপতির আনুকূল্য লাভ করলেও লোকচক্ষুর অগোচরে ও বহু দুঃখের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর চলার পথ খুঁজেছিলেন।
শান্তিনিকেতনে ‘সর্বমানবের যোগসাধনের সেতু’ রচনার কল্পনা রবীন্দ্রনাথের মনকে ক্রমশ অধিকার করতে থাকে। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনেক আগেই, শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক ও ছাত্রদের তিনি শিকাগো থেকে লিখেছিলেন, “এখানে মানুষের শক্তির মূর্তি যে পরিমাণে দেখি পূর্ণতার মূর্তি সে পরিমাণে দেখতে পাই নে।...মানুষের শক্তির যতদূর বাড় হবার তা হয়েছে, এখন সময় হয়েছে যখন যোগের জন্য সাধনা করতে হবে। আমাদের বিদ্যালয়ে আমরা কি সেই যুগসাধনার প্রবর্তন করতে পারব না? মনুষ্যত্বকে বিশ্বের সঙ্গে যোগযুক্ত করে তার আদর্শ কি আমরা পৃথিবীর সামনে ধরব না?” আসলে শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়কে বিশ্বের সঙ্গে ভারতের যোগসূত্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। চেয়েছিলেন মানুষকে উদার বিশ্বপ্রকৃতির মাঝে মুক্তি দিতে। ১৯১৮-র ২৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বভারতী। কিন্তু আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর ঘাটতি রয়ে যায় অর্থাভাবে। না চাইলেও তা হয়ে যায় যেন ডিগ্রি বিতরণের কারখানা। প্রাথমিক ভাবে নিজস্ব পাঠ্যক্রম ও শিক্ষাপদ্ধতি অনুসৃত হলেও ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন-জীবিকার কথা ভেবে অনেক বিষয়ে আপস করতে হয়েছিল। আর অর্থকষ্টে জেরবার সত্তরোর্ধ্ব কবিকে বার হতে হয়েছিল ভিক্ষার ঝুলি হাতে। কবির ভাষায় শান্তিনিকেতন কলেজ বিশ্বভারতীর ‘পোষ্যপুত্র’ হয়ে যায়। বর্তমানে সে চলতি শিক্ষাব্যবস্থার অঙ্গ হিসেবে রয়ে গিয়েছে। আর হয়তো নাগরিক আবিলতায় শ্রদ্ধা ও আনন্দের স্পর্শ হারিয়ে যেতে বসেছে। যে অনুমান তিনি জীবিতকালেই করে ৮ শ্রাবণ, ১৩৪৭-র বক্তৃতায় বলেছিলেন, “প্রথম যে আদর্শ বহন করে এখানে এসেছিলুম, আমার জীর্ণ শক্তির অপটুতা থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে নিজের হাতে বহন করবার আনন্দিত উদ্যম কোথাও দেখতে পাচ্ছি নে। মনে হয়, এ যেন বর্তমান কালেরই বৈশিষ্ট্য। সবকিছুকে সন্দেহ করা, অপমান করা, এতেই যেন তার স্পর্ধা।”
সুদেব মাল
খরসরাই, হুগলি
জনক
বিকাশ সিংহের ‘অনন্ত যুগও এক দিন ফুরোবে’ (১৯-৭) লেখাটিতে জর্জ লেমেত-এর উল্লেখ নেই দেখে অবাক হলাম। অঙ্ক কষে বিগ ব্যাং-এর ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেন জর্জ লেমেত, গত শতাব্দীর বিশের দশকে। ফ্রেড হয়েল ১৯৪৯ সালে বিগ ব্যাং নামটি দেন। ষাটের দশকে পেনজিয়াস ও উইলসন মহাজাগতিক বিকিরণ আবিষ্কার করে লেমেত-এর তত্ত্বটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন মাত্র। বিগ ব্যাং সম্পর্কে কোনও আলোচনা জর্জ লেমেত-এর উল্লেখ ছাড়া ভীষণ ভাবে অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
অতনু ভট্টাচার্য
কলকাতা-২
প্রতিবাদ হয়েছে
‘ইস্পাতের শনির দশা’ (৫-৭) নিবন্ধে বিপ্লব কেতন শর্মা লিখেছেন, কলকাতায় সেল-এর কাঁচামাল সরবরাহ দফতর বা ‘আরএমডি’ উঠিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করে এ রাজ্যে কোনও প্রচার, বিক্ষোভ, মিছিল হয়নি। এটি অসত্য। এ বিষয়ে বিজেপি ছাড়া সব দল পথে নেমেছে। মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমগুলি সেই ঘটনার প্রচার এড়িয়ে গিয়েছে। তাই হয়তো লেখকের মনে হয়েছে, কিছু হচ্ছে না।
মন্টু মাজি
বোলপুর, বীরভূম