coronavirus

সম্পাদক সমীপেষু: সামাজিক দায়িত্ব

করোনা-কালে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নামে মানুষে-মানুষে মানসিক এবং সামাজিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২১ ০৫:৩৪
Share:

আবির্ভাব ভট্টাচার্য যথার্থই বলেছেন, ভিড় কামরায় উঠতে না পেরে রেলকর্মীদের জন্য সংরক্ষিত কামরায় উঠে এনআরএস হাসপাতালের নার্স কারও অধিকার খর্ব করেননি, বরং এক জন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে নিজের দায়িত্ব রক্ষা করতেই তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন (‘অধিকার বনাম সামাজিক দায়িত্ব’, ১৯-৬)। প্রকৃত মানুষ হয়ে সহ-নাগরিকের দিকে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াই মানবধর্ম। সেই ধর্ম সংরক্ষিত কামরার আরপিএফ জওয়ানেরও পালন করা উচিত ছিল।

Advertisement

অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সমাজের বহু মানুষ মানবিক আচরণ পালন করেন না। কর্মক্ষেত্রে লোকাল ট্রেনে আসা-যাওয়ার সময় দেখেছি, নিত্যযাত্রীরা গন্তব্য স্টেশনে না পৌঁছনো পর্যন্ত পুরো যাত্রাপথ সিটে বসে থাকাই তাঁদের অধিকার বলে ভাবেন। অনেক প্রবীণ কিংবা শিশু-কোলে মায়েরা সিট না পেয়ে বহু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও এঁরা না-দেখার ভান করেন। বাসে যাত্রাকালেও দেখেছি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ সিট ছেড়ে একটু বসতে দেন না। উল্টে বাসচালকের ব্রেক কষার ঝাঁকুনিতে সিটে বসে-থাকা কোনও যাত্রীর উপর দাঁড়িয়ে-থাকা যাত্রী যদি পড়ে যান, তাঁর কটূক্তি জোটে। যত দিন যাচ্ছে, আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর জীবনযাপনে মগ্ন কিছু মানুষের মধ্যে চার পাশের লোকের দুঃখ, যন্ত্রণার প্রতি উদাসীনতা চোখে পড়ছে। করোনা-কালে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নামে মানুষে-মানুষে মানসিক এবং সামাজিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। উদার অর্থনীতির যুগে মানুষের ঔদার্য আজ কোথায়? সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে নিজের দায়িত্ব সে যেন সম্পূর্ণ ভুলে যেতে বসেছে।

অরুণ মালাকার

Advertisement

কলকাতা-১০৩

রোগের জটিলতা

আবির্ভাব ভট্টাচার্য লিখেছেন, মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে আসামাত্র পরীক্ষা করার সময়ে মারা যান, ডাক্তারবাবু অপদার্থ বলে গণ্য হন। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মানুষ ছোটখাটো রোগ হলে চট করে চিকিৎসকের কাছে যান না। আগে নিজে চিকিৎসা করে নিজের প্রতিভা বিকাশে তৎপর হন। আর একটু বাড়াবাড়ি হলে আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত মানুষের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ডাক্তারদের ডেকে পাঠান। তার পর রোগটিকে গবেষণার বিষয় বানিয়ে হাসপাতালে আসেন। এখন অবশ্য অবস্থা বদলাচ্ছে, তবে সে ভাবে নয়। না হলে সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের অধিকাংশ রোগীই জটিল অবস্থায় থাকেন কেন?

স্বপন মজুমদার

গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান

রেলকর্মীর দোষ?

রেলকর্মীরা তাঁদের ইউনিয়নের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নাকি জানিয়েছেন, রেলকর্মী ছাড়া আর কেউ যেন স্টাফ ট্রেনে উঠতে না পারেন তার ব্যবস্থা করতে। আর তা না হলে রেলকর্মীরা নাকি কাজে অনুপস্থিত থাকবেন। আমার কিন্তু জানা আছে, স্টাফ ট্রেনের ভিড় কমানোর জন্য রেলের ইউনিয়ন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ট্রেন বাড়ানোর কথা বলেছেন। আবির্ভাববাবু অতিমারিতে ব্যাঙ্ককর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সামাজিক দায়িত্বের কথা ভাল ভাবে বুঝেছেন। কিন্তু রেলকর্মীদের সেই দায়িত্ব তিনি দেখতে পাননি। অতিমারির প্রথম থেকেই যাঁদের কাজ থেমে থাকেনি। যাঁদের ‘বাড়ি থেকে কাজ’ বলে কিছু নেই, তাঁরা হলেন স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ আর রেল ও পণ্য পরিবহণকর্মী।

বারুইপুর-শিয়ালদহ স্টাফ ট্রেনে জনৈক স্বাস্থ্যকর্মীর হেনস্থা হওয়ার ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। কিন্তু ঠিক এর উল্টো একটা ঘটনা এই পত্রলেখকের সামনে ঘটেছে। বজবজগামী স্টাফ স্পেশাল ব্রেসব্রিজ ছাড়ার পর একটি মাস্কহীন ছেলেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সে রেলকর্মী কি না। ছেলেটি উত্তর দিল, বেশি কথা বললে প্রশ্নকারীকে ট্রেন থেকে ফেলে দেবে সে। রেলকর্মীদের প্রতি এই দুর্ব্যবহার খবরে প্রকাশ হয় না। কেবল রেলকর্মীদের দায়িত্ববোধ নিয়ে কথা ওঠে। দায়িত্ব সকলের। প্রত্যেকে নিজের দায়িত্বের প্রতি, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা জরুরি। সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সমাজ-জীবনের সেই শর্ত অনেকটা শিথিল হয়েছে। শুধু রেলকর্মীদের প্রতি আঙুল তোলা ঠিক নয়।

নরেন্দ্রনাথ কুলে

কলকাতা-৩৪

জোরের মুলুক

সহনাগরিকদের প্রতি কতিপয় রেল কর্মচারীর দুর্ব্যবহার ও অসৌজন্যের যে নিদর্শন সম্প্রতি উঠে এল, তাতে ‘সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মতো গুণগুলি’ না দেখতে পেয়ে শিউরে উঠতে হয়।

রেলযাত্রার সঙ্গে জোর যার মুলুক তার আচরণ দেখা যায় ভিন্ন প্রেক্ষিতেও। বৈধ টিকিটধারী মানুষজনকে হেনস্থা করে এক শ্রেণির নিত্যযাত্রীর জোর করে সিট দখলে রাখা, গোটা যাত্রাপথে তারস্বরে হই-হুল্লোড় করে আবহাওয়া উত্তপ্ত রাখা যেন স্বাভাবিক অধিকারের এক নির্লজ্জ প্রদর্শন হয়ে দাঁড়ায়। কতটা হৃদয়হীন হলে অসহায় পুরুষ যাত্রীটিকে মহিলা কামরা থেকে ঠেলে ফেলে নারীশক্তির সঙ্ঘবদ্ধ চেহারা তুলে ধরা হয়, তা ব্যাখ্যার অতীত। গা-জোয়ারি অধিকার বোধের এই দৃশ্য দেখা যায় সংরক্ষিত কামরায় সাধারণ মানুষদের ভাবলেশহীন আনাগোনার প্রাত্যহিক প্রয়াসেও। অভিজ্ঞ যাত্রী সব জেনে বুঝে নির্লিপ্ত থাকেন। অন্যথায় নিগ্রহের মুখে দাঁড়িয়েও রেলরক্ষীর হদিস মেলে না। অত্যধিক ভিড় কামরায় হকারদের নির্বিকার বেচাকেনার দাপটে এক কলেজ পড়ুয়ার ট্রেন থেকে পড়ে অসহায় মৃত্যুর মতো ঘটনাও দেখেছি।

বর্তমানে আমাদের বহুস্তরীয় সমাজ কাঠামোয় একবগ্গা অধিকারবোধের হিংসাশ্রয়ী, নগ্ন চিত্র মাঝেমধ্যে সংবাদপত্রে জায়গা করে নেয়। শিক্ষাবর্ষ শেষ হলেও ছাত্র-রাজনীতিতে ছড়ি-ঘোরানো নেতা হস্টেলে নিজের বরাদ্দ ঘরটি দখলে রাখে। হকারদের জন্য পথচলতি নাগরিক ফুটপাত ছেড়ে পথে নামতে বাধ্য হন। এ সবই এখন যেন অতি স্বাভাবিক ঘটনা।

সুপ্রতিম প্রামাণিক

আমোদপুর, বীরভূম

স্বাস্থ্যের অধিকার

আবির্ভাব ভট্টাচার্য যাকে ‘অধিকার’ বলেছেন, আমার মতে তাকে আত্মপরতা বলাই ঠিক। বিশ্বায়নের ভোগবাদ-ভিত্তিক অর্থনীতি আজ মানবসমাজকে ক্রমাগত খণ্ডিত করে চলেছে। মানুষের পরিবর্তে আমরা এখন যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল। তাই সামাজিক দায়িত্ব এখন অধিক মাত্রায় যান্ত্রিকতায় পর্যবসিত, মানবতাবর্জিত। আর অধিকারের কথা বলতে গেলে, বিশেষ করে নিবন্ধে উপস্থাপিত অতিমারি পরিবেশে, স্বাস্থ্যের অধিকারের কথা ভাবতে হবে। এই অধিকার অর্জন আমরা করতে পারিনি। ব্রাজিলে দুই দশক সামরিক শাসনের পর যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়, তখন থেকেই (১৯৮৫-৮৮) নিরবচ্ছিন্ন দুই দশকব্যাপী গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সেই দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যের অধিকার অর্জন করেছে। ব্রাজিলে জিডিপি-র ৮ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়, যেখানে ভারতে হয় মাত্র ১.২৮ শতাংশ। অধিকার অর্জনের অর্থ বুঝিনি বলেই প্রতিষেধক প্রদানে আমরা বিশ্বের গড় হার থেকে পিছিয়ে। করোনার সর্বজনীন প্রতিষেধক প্রদান নিয়েও ভারত সরকারের দিশাহীন নীতির শিকার আমরা।

পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়

খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা

অকেজো ফোন

গত ১৩-১৪ জুন এখানে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হয়। বাজ পড়ে বিএসএনএল-এর সমস্ত ল্যান্ডলাইন অকেজো হয়ে যায়। পঞ্চায়েত, পোস্ট অফিস, ব্যাঙ্ক, সমবায়, কোনও দফতরেই ফোন কাজ করছে না। ফলে সকলেই অসুবিধার সম্মুখীন। আমি ৭৮ বছরের বৃদ্ধ। একা থাকি। যে কোনও পরিষেবা পেতে আমার খুব সমস্যা হচ্ছে।

জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী

ভেদিয়া, বীরভূম

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement