Delhi Municipality election

সম্পাদক সমীপেষু: স্থগিত ভোট

পুরসভায় ২৫০টি আসনের মধ্যে আপ জিতেছে ১৩৪টিতে। বিজেপি পেয়েছে ১০৪টি। অর্থাৎ, নির্বাচকরা আগামী পাঁচ বছর আপকেই বেছে নিয়েছেন দিল্লি পুরসভা পরিচালনার জন্য।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৯
Share:

বিজেপি-আপের তাণ্ডব। ফাইল ছবি।

মেয়র ও ডেপুটি মেয়র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৬ জানুয়ারি দিল্লি পুরসভায় যা ঘটল, তাকে বিজেপির খিড়কি দিয়ে ঢুকে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে (‘বিজেপি-আপের তাণ্ডবে বন্ধ দিল্লির মেয়র নির্বাচন’, ৭-১)? পুরসভায় ২৫০টি আসনের মধ্যে আপ জিতেছে ১৩৪টিতে। বিজেপি পেয়েছে ১০৪টি। অর্থাৎ, নির্বাচকরা আগামী পাঁচ বছর আপকেই বেছে নিয়েছেন দিল্লি পুরসভা পরিচালনার জন্য। তার পরও যে কাণ্ড সে দিন ঘটল, তা কি বিজেপির চরম নীতিহীনতা এবং ক্ষমতার লোভের এক নিকৃষ্ট নিদর্শন হয়ে থাকল না? নির্বাচনের গণ-রায় মেনে নেওয়ার মতো মানসিকতা বিজেপি নেতারা দেখাতে পারলেন না কেন? যে ভাবে প্রোটেম স্পিকার পদের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আপের প্রস্তাবিত পুরপ্রতিনিধিদের নাম নাকচ করে দিয়ে বিজেপি পুরপ্রতিনিধি তথা প্রাক্তন মেয়র সত্য শর্মাকে এই পদের জন্য বেছে নিলেন দিল্লির উপরাজ্যপাল বিনয় সাক্সেনা, তাকে কি গণতান্ত্রিক বলা যায়? এটি কি তাঁর পদটির অপব্যবহার এবং বিজেপির প্রতি পক্ষপাতিত্ব নয়? তা ছাড়াও সাক্সেনা রাজ্যে ক্ষমতাসীন আপ-এর সঙ্গে কোনও পরামর্শ না করেই যে ভাবে দশ জন বিজেপি কর্মীর নাম মনোনীত সদস্য হিসাবে ঘোষণা করে দিলেন, তা-ও বোধ হয় গণতান্ত্রিক আচরণকেই লঙ্ঘন করল। শেষে তিনি যখন রীতি অনুযায়ী প্রথমে নির্বাচিত পুরপ্রতিনিধিদের শপথের পরিবর্তে মনোনীত সদস্যদের শপথ শুরু করান, তখনই দুই দলের পুরপ্রতিনিধিরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ফলে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।

Advertisement

গায়ের জোরে চূড়ান্ত নীতিহীন কায়দায় বিজেপির ক্ষমতা দখলের এমন চেষ্টা অবশ্য দেশবাসীকে আর বিস্মিত করে না। ক্ষমতায় বসার আগে যে দিন নেতারা বিজেপিকে ‘আলাদা ধরনের দল’ ঘোষণা করে দেশের মানুষের কাছে সমর্থন চেয়েছিলেন, সে দিন স্বাভাবিক সারল্যে বহু মানুষ তা বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু গত প্রায় এক দশকের অভিজ্ঞতায় মানুষ দেখেছেন, ক্ষমতা দখলের জন্য বিজেপি নেতারা এমএলএ কেনা, দল ভাঙানো, পদের লোভ দেখানো, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, ইডি-সিবিআই লাগিয়ে বশে আনা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানো, জাতপাতের জিগির তোলা প্রভৃতি এমন কোনও অনৈতিক রাস্তা নেই যা নেননি। রাজনীতিতে যে নৈতিকতা বলে কিছু আছে, বিজেপির আচরণ দেখে তা বোঝার উপায় নেই। আবার এই বিজেপিই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের আকণ্ঠ দুর্নীতির দিকে আঙুল তুলে নৈতিকতার চ্যাম্পিয়ন সাজার চেষ্টা করছে। তৃণমূলের প্রতি অনাস্থা এবং পূর্বতন সিপিএম শাসকদের নীতিহীনতায় ক্ষুব্ধ কিছু মানুষ সেই ছদ্মবেশ দেখে তাদের চিনতে ভুল করছে। দিল্লি পুরসভার ঘটনা হয়তো তাঁদের চোখ খুলতে সাহায্য করবে।

সমুদ্র গুপ্ত, কলকাতা-৬

Advertisement

স্কুলের খরচ

নতুন শিক্ষাবর্ষে ১-৭ জানুয়ারি, ছ’দিন ধরে ‘স্টুডেন্ট উইক’ পালন করা হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে, যেখানে গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি, বুক ডে, আউটডোর গেমস, শিশু সংসদ এবং বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আনন্দ পাঠের ভিতর দিয়ে বিদ্যালয়গুলিকে আবার সচল করার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই সব অনুষ্ঠানের জন্য অর্থের কোনও বন্দোবস্ত করা হয়নি। একেই নিয়োগ দুর্নীতি এবং শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা চালু করার জন্য গ্রামের বিদ্যালয়গুলি শিক্ষক-শূন্য হয়ে পড়ছে, পড়াশোনার মান ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে গ্রুপ ডি শিক্ষাকর্মীর অভাব। দুর্নীতির ফলে প্রায় দেড় হাজার গ্রুপ ডি কর্মচারীর চাকরি চলে যাওয়ার নির্দেশ বিদ্যালয় প্রধানদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধান শিক্ষকদেরই ঘণ্টা বাজানো থেকে করণিকের কাজ, সবই করতে হচ্ছে। সাফাইকর্মী বা নিরাপত্তারক্ষীর জন্যও আলাদা করে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে না। সেই কাজও করাতে প্রধান শিক্ষকরা হিমশিম খাচ্ছেন। অথচ, সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ২৪০ টাকা অবধি ভর্তির ফি নেওয়ার কথা বলছে, যে টাকা ইলেকট্রিক বিল থেকে আরম্ভ করে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, পানীয় জলের ব্যবস্থা থেকে আরম্ভ করে সমস্ত কাজে খরচ করতে হয়। কিন্তু এ ভাবে যে টাকাটা আসে, সেটা খুবই সামান্য। ফলে বিদ্যালয়গুলিকে সুষ্ঠু ভাবে চালাতে গিয়ে প্রধান শিক্ষকদের নাজেহাল অবস্থা। শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে পড়াশোনা নিয়ে, বিদ্যালয় পরিচালনায় সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কোনও কিছু আলোচনা করার সুযোগ হয় না শিক্ষকদের। শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান হাল দেখে শিক্ষকদের মধ্যেও যেন একটা গা-ছাড়া ভাব। তাঁরাও হতাশ। বর্তমানে বিদ্যালয়গুলির স্টাফ রুমে কান পাতলে শোনা যায়, বকেয়া ডিএ বা শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে উত্তপ্ত কথাবার্তা। কিন্তু এর মধ্যেও কিছু শিক্ষকের আফসোস, সরকার সবই দিচ্ছে, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা করতে এক বারও বলছে না। সব কিছু পাইয়ে দিয়ে, পাশ করিয়ে দেওয়াটাই যেন সরকারের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কী শিখল, সেটা গৌণ। শিক্ষাব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থার জন্য বিদ্যালয়গুলি খুবই অসুবিধায় পড়েছে।

অরুণকুমার মণ্ডল, খানাকুল, হুগলি

স্বাস্থ্য বিমা

স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামের খরচ কমাতে জিএসটি তোলার দাবি (‘প্রিমিয়ামের খরচ কমাতে জিএসটি তোলার দাবি’, ১১-১) সঙ্গত। বহু দেশে স্বাস্থ্য বিমা বাধ্যতামূলক। এ দেশেও বর্তমানে চিকিৎসার ক্রমবর্ধমান খরচের কথা মাথায় রাখলে সবারই স্বাস্থ্য বিমা থাকা উচিত, কারণ অসুখ বলে-কয়ে আসে না। স্বাস্থ্য বিমা নানা ভাবে মানুষকে সুরক্ষিত রাখে। সাধারণ মানুষকে যদি আরও বেশি উৎসাহিত করতে হয়, তা হলে বিমা খাতে খরচটি সাধারণ মানুষের নাগালেই রাখতে হবে। বর্তমানে বিমার খরচ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছে, এবং তাতে খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে অতিরিক্ত হারে জিএসটি বাবদ অর্থ আদায়। বিমার প্রিমিয়ামের উপর থেকে এই বোঝা যদি নামিয়ে ফেলা যায়, বা অন্তত ভার খানিকটা হ্রাস করা যায়, তা হলে বিমার প্রিমিয়াম সাধারণ মানুষের আয়ত্তে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে আরও অনেেক স্বাস্থ্য বিমায় উৎসাহিত হতে পারেন।

সুশীলা মালাকার সরদার, বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগনা

বিক্রি পড়ছে

‘সুদের কাঁটায় কলকাতায় কমে গেল আবাসন বিক্রি’ (১১-১) সংবাদটির পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। সংবাদটির সঙ্গে যে সারণি (সূত্র: নাইট ফ্র্যাঙ্ক ইন্ডিয়া) দেওয়া রয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে ২০২২ সালে ফ্ল্যাট-বাড়ি বিক্রি মুম্বইয়ে বেড়েছে ৩৫%, দিল্লি ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে বেড়েছে ৬৭%, বেঙ্গালুরুতে ৪০%, পুণেতে ১৮% প্রভৃতি। একমাত্র কলকাতায় কমেছে ১০%।

সুদের হারে বৃদ্ধি যে কলকাতায় ফ্ল্যাট-বাড়ি বিক্রি কমার কারণ, এটা তা হলে প্রমাণ হচ্ছে কী করে? এমন তো নয় যে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার বাড়াচ্ছে, আর তার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক ও অন্য ঋণদানকারী সংস্থাগুলি খালি কলকাতার ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকেই বর্ধিত হারে সুদ নিচ্ছে। ব্যাঙ্ক ও অ-ব্যাঙ্ক ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলি গৃহঋণের উপর সুদের হার বাড়ালে তা তো সারা দেশে একই ভাবে প্রযোজ্য হয়েছে।

কলকাতায় ফ্ল্যাট-জমি বিক্রি হ্রাস পাওয়ার প্রধান কারণ হল এখানে চাকরি-বাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ ক্রমশই সঙ্কুচিত হতে থাকা। এ শহর তথা এ রাজ্যের আর্থিক সমৃদ্ধি না আসা পর্যন্ত এই প্রবণতা বজায় থাকবে। রাজ্য জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটি ছাড় দিয়ে খুব অল্প সময়ের জন্য হয়তো বিক্রির হার বাড়াতে সক্ষম হবে, তবে তা হবে একেবারেই স্বল্পস্থায়ী প্রবণতা, এটা কোনও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়।

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, কলকাতা-৭০

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement