পিটার হ্যান্ডকে
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লেখক পিটার হান্টকে-কে নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। সে বিষয়ে এবং পিটার হান্টকের লেখার উপর আলোকপাত করে গৌতম চক্রবর্তীর লেখাটি (‘মানুষই তাঁর কাছে একমাত্র ইভেন্ট’, রবিবাসরীয়, ২০-১০) স্বাতন্ত্র্যের দাবি রাখে। তিনি আমাদের পরিচয় করিয়েছেন এমন এক জন সাহিত্যিকের সঙ্গে, যাঁর কাছে মানুষ শেষ কথা ও যিনি নতুনত্বের প্রয়াসে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন তাঁর সাহিত্যে।
এক জন শিল্পীর শিল্পের প্রশংসা করতে গেলে বা তাঁর শিল্পকে সহ্য করার জন্য সেই শিল্পীকে সামাজিক মূল্যবোধের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে— এমন ধারণা দীর্ঘ কাল ধরে রয়েছে। রোমান যুগে ক্যাথলিক চার্চ, পরবর্তী কালে কমিউনিস্ট এবং নাৎসিদের কাছে যে সব শিল্পী সেই সময়ের সামাজিক মানদণ্ডগুলি পূরণ করতে অক্ষম ছিলেন তাঁদের সম্পর্কে সবার দৃঢ় মতামত ছিল তাঁদের প্রত্যাখ্যান করার।
মনে পড়ছে অস্কার ওয়াইল্ড-এর এ রকম প্রসঙ্গে লেখা ‘‘কোনও বই নৈতিক বা অনৈতিক হয় না। সুলিখিত হয়, কিংবা বাজে লেখা হয়।’’ অর্থাৎ, বইটা কেমন লেখা হয়েছে, শুধু তার ভিত্তিতেই সেটিকে বিচার করা উচিত। তাঁর নিজের জীবনে মানহানি হয়েছে, তাঁকে কলঙ্কিত আখ্যা পেতে হয়েছে, লোকে তার সাহিত্যকীর্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছে তার ‘পাপ’কাজের জন্য, কিন্তু পরিশেষে কালজয়ী হয়েছে তাঁর সাহিত্য।
অন্য কিছু নোবেলজয়ী লেখকের সঙ্গে হান্টকের ‘বিতর্কিত’ ইমেজের অনেক মিল পাওয়া যায়। ব্রিটিশ নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টার (২০০৫ নোবেল), মিলেসোভিচের স্বপক্ষে ছিলেন। জার্মানির গুন্টার গ্রাস (১৯৯৯ নোবেল) দুই জার্মানির মিলনের বিপক্ষে ছিলেন। পর্তুগালের হোসে সারামাগো (১৯৯৮ নোবেল) এতটাই বাম ঘেঁষা ছিলেন, পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যে সব সাংবাদিক কমিউনিস্ট পার্টি লাইনের বিপক্ষে মত দিতেন তাঁদের গালাগালি করতেন ও সরিয়ে দিতেন। ফ্রান্সের জঁা পল সার্ত্র (১৯৬৪ নোবেল) সোভিয়েট ইউনিয়ন ভ্রমণ (১৯৫৪) করে বলেছিলেন ‘‘সোভিয়েট ইউনিয়নে পুরো বাক্স্বাধীনতা রয়েছে’’, যেটি বিতর্কিত। নরওয়ের লেখক নুট হামসুন (১৯২০ নোবেল) হিটলারের অনুরাগী ছিলেন।
আজ বিশ্ব অনেক মুক্তচিন্তার অধিকারী হয়েছে ধরে নেওয়া যায়, তবে কেন এই বিদ্বেষ? হয়তো এই এমন একটি সময়, যেখানে মানুষজন শিল্পের সঙ্গে ভাবাদর্শ ও শিল্পীর সঙ্গে তাঁর রাজনীতির প্রভেদ করতে অক্ষম। তাই হান্টকে বলছেন ‘‘আমার বাড়ির গেটে প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক এসেছেন, যাঁদের আমার মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন আছে, যাঁরা কেউ আমার কোনও বই পড়েননি।’’ তাঁর বই কেমন সেটা বিবেচ্য হওয়া উচিত, তিনি তো নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হননি যে তাঁর রাজনৈতিক মতবাদ প্রাধান্য পাবে!
কেয়া চৌধুরি
কলকাতা-৪৭
মোচ্ছব
দৃশ্য ১: মায়াপুর থেকে কলকাতা ফিরছি, নভেম্বর ১ তারিখে, শুক্রবার। বাদকুল্লা ছাড়িয়ে রানাঘাটের আগে তখন বেশ কয়েকটি কালীমাতার বিসর্জন-মিছিল চলমান। লক্ষণীয়, কালীপুজো ছিল রবিবার। এক এক জায়গায় পাড়া কাঁপিয়ে জলসা চলছে, ডিজের সাউন্ডে পিচ-রাস্তাও থরহরি, সঙ্গে উদ্দাম-মত্ত নেত্য যুবক-যুবতীদের। আলোর রোশনাই জেনারেটর বাহিত হয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। আগে-পিছে গাড়ির সারি একের পর এক।
আমাদের ড্রাইভার একটু এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই, রে-রে করে তেড়ে এলেন ভক্তের দল। সকলেই মদ খেয়ে অাছেন (গন্ধে মালুম)। মুখে অশ্রাব্য ভাষা। কেন আমরা না জেনে ওই দিন ভ্রমণ করছি, তাও শুনতে হল। ‘‘এ রাস্তায় গাড়ি যাবে না। ওই গলতা দিয়ে চলে যান। হাইওয়ে পেয়ে যাবেন।’’
তাই করলাম। কিন্তু এ বার সামনে একের পর এক পুজো প্যান্ডেল। মা কালী সর্বত্র অধিষ্ঠান করছেন। সঙ্গে চলছে অবিরাম ‘ফাংশন’। ‘‘কে আপনাদের এই গলিপথ দিয়ে যেতে বলেছে?’’ তাদের নাম-ধাম কি জেনে রেখেছি ছাই! ‘‘গাড়ি পেছোন... যাবে না কোনও গাড়ি এ রাস্তা দিয়ে...’’ সমস্বরে দাবি তাঁদের। একই আস্ফালন, একই উন্মত্ত আচরণ। সমান তালে গালাগালির বন্যা। কিছু ক্ষণ পর কী সুমতি হল কে জানে! ‘‘পাঁচশো টাকা দিতে হবে চাঁদা। তবে যেতে পারবেন।’’ হই-হল্লা, হাসি-টীকা-টিপ্পনী। ইনি ওঁকে সামলান, কেউ এগিয়ে আসেন, টলটলায়মান কাউকে আবার কোনও ভক্ত আটকাচ্ছেন।
অতঃপর কী সব কথা হল নিজেদের মধ্যে, ‘‘ঠিক আছে, যা পারবেন দিন’’, পরিত্রাণ পেতে একশো টাকা চাঁদা (?) দিতে হল। তাঁরা নিজেরাই পথ করে দিলেন। এগারোটা নাগাদ ফিরতে পারলাম।
দৃশ্য ২: শনিবার ২ তারিখ। কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে নেমেছি সন্ধে সাড়ে পাঁচটায়। খাদিমের দোকানের পাশের গলিপথে তখন বেজায় তাণ্ডব। চলেছেন ছট-যাত্রীরা, তাঁদের পূজার ডালি নিয়ে। এক একটা পটকা ছুড়ছেন অবলীলায়, পথচলতি মানুষজনকে উপেক্ষা করে। প্রচণ্ড শব্দ। সামনেই বিদেশি মদের দোকান। এক একটা বিয়ারের বোতল কিনে নিয়ে ঠান্ডা পানীয়ে মিশিয়ে নিচ্ছে দশ/পনেরো বছরের নওল কিশোরের দল। বাকিরা বেসামাল নৃত্যে মশগুল।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী
কলকাতা-১২৫
ছুটি ও ছট
ভাইফোঁটার অব্যবহিত পরে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আগামী বছরের পুজোর ছুটি নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। নানা অছিলায় ছুটি মঞ্জুর করা, ক্যালেন্ডার দেখে একটানা অবকাশের সুযোগ করে দেওয়া, শনি বা রবিবারে ছুটি পড়ে গেলে কাজের দিনে ওই ছুটি দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের মন জয় করার কৃতিত্ব তাঁর আছে। অনেকের অভিযোগ: ডিএ ও পে-কমিশন বুভুক্ষু কর্মচারীদের ক্ষতে ছুটির মলম লাগিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রশমন করেন। আগামী বছর জানুয়ারি থেকে পে-কমিশন চালু হতে চলেছে, তা সত্ত্বেও তিনি ছুটি মঞ্জুরের কার্পণ্য করেননি। অভিযোগ তাই অমূলক। টানা কাজের মাঝে ছুটির প্রয়োজনীয়তার সওয়াল তিনি করেছেন। সংগঠিত ক্ষেত্রে দশ লক্ষ সরকারি কর্মচারীদের বাইরে থাকা অসংগঠিত ক্ষেত্রের লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ, জীবিকা ও স্বার্থ বজায় রেখে কী ভাবে ছুটি উপভোগ করতে পারেন, তার উপায় যদি বাতলে দিতেন, উপকার হত। মাঝে মাঝে বিরোধী দলের ডাকা বন্ধ ভাঙার জন্য যদি ‘শ্রমদিবস নষ্ট হতে দেব না’ নীতি শিথিল করেন, বিষয়টা পক্ষপাতশূন্য হয়।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেন, নিয়ম না-মেনে ছটপুজোয় কেউ ঘাটে চলে গেলে তিনি পুলিশ দিয়ে লাঠি, গুলি চালাতে পারবেন না— তখন কেউ তালা না ভাঙলেই বরং বিষয়টা আশ্চর্যের হত। বিশেষ পাঁচ শতাংশ ভোটারের বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি তিনি নিতে চাননি, বিশেষত হিন্দুত্ববাদী দল যখন সুযোগের অপেক্ষায়। ঠিকই, তবে ভাবাবেগের দোহাই দিয়ে যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়, তখন ঠুঁটো হয়ে থাকা তৎকালীন রাজ্য প্রশাসনের সমালোচনা করার যোগ্যতা একই যুক্তিতে বোধ হয় আর থাকে না।
রাজশেখর দাস
কলকাতা-১২২
প্রশ্নপত্রেই
বেশ কিছু দিন আগে উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ কয়েক বার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রেই উত্তর করতে হবে। এর পর টেস্ট পরীক্ষা এই ফর্ম্যাটে নিতে গিয়ে স্কুলগুলি পড়ে আতান্তরে। কারণ, প্রশ্নপত্র তৈরিতে যা খরচ পড়বে, তার আর্থিক সঙ্গতি বহু স্কুলের নেই। সংসদকে পুনরায় নোটিস জারি করে জানাতে হয়, আগের নিয়মেই পরীক্ষা হবে। এ অদূরদর্শিতার প্রয়োজন ছিল?
অরুণ মালাকার
বেড়ামারা রামচন্দ্রপুর হাই স্কুল
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।