Bayron Biswas

আশ্চর্য কিসে?

‘সাগরদিঘি মডেল’ নিয়ে খুবই নাচানাচি করেছে বামেরা। অথচ, ওই মডেলের সঙ্গে ক্ষমতা দখল ছাড়া জনগণের স্বার্থের কী সম্পর্ক, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩ ০৬:০৪
Share:

বাইরন বিশ্বাস। ফাইল চিত্র।

বাইরন বিশ্বাসের দল বদলে অবাক হইনি (তিন মাসেই ‘হাত’ ছেড়ে ফুলে বাইরন, ৩০-৫)। প্রতিটি পুঁজির সেবক দলের নেতা-মন্ত্রী বিধায়ক, সাংসদ-সহ যে কোনও ব্যক্তি যে এমন করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কে দল বদলে কোন দলে যোগ দেবেন, হিসাব মেলা ভার। এই নেতারা আজ যাকে মাথায় তুলে রাখেন, কালকে তার শ্রাদ্ধ করে ছাড়েন। কারণ, দলগুলোর কোনও নীতি-আদর্শ নেই। যেন তেন প্রকারেণ সবাই সাংসদ বা বিধায়ক পদ চান। এই চিন্তাই সমাজকে শেষ করেছে।

Advertisement

দলের কোনও বিধায়ক যদি অন্য দলে চলে যান, তার দায় দলের নেতৃত্বের। কারণ, দলই জয়ের সম্ভাবনা বুঝে প্রার্থী নির্বাচিত করে। সিপিএম দল থেকেও রেজ্জাক মোল্লা, ঋতব্রত-সহ দলের বিধায়ক, সাংসদরা অন্য দলে নাম লিখিয়েছেন। চৌত্রিশ বছর মার্ক্সবাদের নাম নিয়ে সুবিধাবাদের চর্চা করার ফল এটা। দলের নেতারা এগুলো মেনে নিচ্ছেন, সদস্য সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভয়ে দল থেকে এঁদের বহিষ্কারও করছেন না। ক্ষমতা পাওয়ার লোভে কিছু নেতা যেখানে-সেখানে জোট করছেন। আইএসএফ-এর মতো দলকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে, বিজেপির হাত ধরে কেন্দ্রে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ সরকার বসিয়েছিল। বর্তমানে ‘আগে রাম পরে বাম’— অর্থাৎ আগে বিজেপি পরে সিপিএম— বলতেও কুণ্ঠিত নয়। ‘সাগরদিঘি মডেল’ নিয়ে খুবই নাচানাচি করেছে বামেরা। অথচ, ওই মডেলের সঙ্গে ক্ষমতা দখল ছাড়া জনগণের স্বার্থের কী সম্পর্ক, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন যাঁরা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিচ্ছেন, আগামী দিনে তাঁদের অনেকেই সিপিএম ছেড়ে দেবেন। যথার্থ কমিউনিস্ট পার্টিতে এগুলো হওয়ার কথা নয়। ফলে বাইরনের দলত্যাগের সঙ্গে জনগণের স্বার্থের কোনও সম্পর্ক নেই।

নিখিল কবিরাজ, রামনগর, হাওড়া

Advertisement

আইন চাই

বাম ও কংগ্রেসের কাছে সাগরদিঘি একটা মডেল হয়ে উঠেছিল। জল ঢেলে দিয়েছেন বাইরন বিশ্বাস। সব ‘দলবদলু’ বিধায়কের বক্তব্য একই— দলে থেকে কাজ করতে পারছি না, মানুষের জন্য কাজ করতে হলে দল বদল না করে উপায় ছিল না, দলে দম বন্ধ পরিবেশ ইত্যাদি। সাধারণ মানুষ একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে নির্বাচিত করেন জনপ্রতিনিধিকে। তাই দলের প্রতীকে জেতা বিধায়কদের প্রতি ভোটাররা যে রুষ্ট হবেন, তা স্বাভাবিক। কালের নিয়মে এক সময়ে বর্তমানের বিরোধীরা ক্ষমতায় আসবেন। তখনও দেখা যাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বিরোধী দল থেকে শাসক দলে নাম লেখাচ্ছেন। তখনও বিরোধী দলের নেতারা তারস্বরে বলবেন দলত্যাগ বিরোধী আইন বলবৎ হওয়ার কথা। অবিলম্বে দল বিরোধী আইন বলবৎ হওয়া প্রয়োজন। না হলে ভবিষ্যতে দল ভাঙানোর এই খেলা সব দলের কাছে বুমেরাং হয়ে উঠবে।

শ্রীমন্ত পাঁজা, গঙ্গাধরপুর, হাওড়া

মেয়াদ

বাইরন বিশ্বাসের পদত্যাগের পরে অনেকে বলবেন, ভোট দিয়ে কী লাভ? এখানেই গণতন্ত্রকে বাঁচাতে গেলে নির্বাচন কমিশনকে কিছু নিয়ম নতুন করে আনতে হবে। যেমন, যে দলের হয়ে কোনও প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়াবেন, সেই দলে ন্যূনতম আড়াই থেকে তিন বছর থাকা আবশ্যক করতে হবে। না হলে পদত্যাগ করে ফের নির্বাচনে দাঁড়াতে হবে।

অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ

বিরোধীর সঙ্কট

বাইরন বিশ্বাস জানিয়েছেন, কংগ্রেস দলে থেকে তিনি নাকি মানুষের সেবা করতে পারছিলেন না। মানুষের সেবা করতে হলে কি শাসক দলকেই বেছে নিতে হবে? তা হলে আগেই তো এই সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। আগামী দিনে কংগ্রেসের কোনও প্রার্থীকে নির্বাচিত করার আগে ভোটাররা নিশ্চয়ই দু’বার ভাববেন, যাঁকে নির্বাচিত করবেন তিনি আবার দল বদল করবেন কি না? এখানেই তৃণমূলের লাভ। তারা বিরোধী শক্তিকে এই ভাবেই ধ্বংস করবে। ঘাটালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসে বাইরন বলেছেন, এখন শাসক দলে না থাকলে কোনও কাজ করা যায় না। এর দ্বারা হয়তো এ-ও প্রমাণিত হয়, শাসক দল বিরোধী বিধায়ককে জনসেবার কাজ করতে দেয় না।

তপনকুমার ঘোষ, শ্রীরামপুর, হুগলি

ব্যর্থতা কার?

সাগরদিঘির কংগ্রেস বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। বাইরন বিশ্বাস কাজটি হয়তো ভাল করেননি। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ঠিকমতো বাংলার কংগ্রেসকে পরিচালনা করতে পারছেন তো? বাইরন বিশ্বাসের পরিবার প্রথম থেকেই তৃণমূলের সমর্থক। তিনি তৃণমূলের টিকিট না পাওয়ায় কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। আদৌ কি তিনি কংগ্রেস ঘরানার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছিলেন? দ্বিতীয়ত, ১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেন। কিছু কংগ্রেস সমর্থক নীতির প্রশ্নে জাতীয় কংগ্রেসে থেকে যান। এঁদের বেশির ভাগই এখনও মহম্মদ সেলিম কিংবা সুজন চক্রবর্তীর তুলনায় মমতা সম্পর্কে নরম মনোভাব পোষণ করেন। অধীর চৌধুরী অন্য নেতাদের তুলনায় মমতাকে একটু বেশি আক্রমণ করেন, সেটা কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীরা সমর্থন করছেন তো?

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, সবং,পশ্চিম মেদিনীপুর

অন্য দৃষ্টান্ত

২০১১ সালে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ‘বিরোধী‌শূন্য’ বাংলা গড়তে চেয়েছে। পঞ্চায়েত সদস্য থেকে বিধায়ক-সাংসদ পর্যন্ত, বিরোধী দলগুলির একের পর এক প্রতিনিধিকে নিজের দলে এনেছে। দলগুলো ভুলে যায়, ক্ষমতায় থাকাকালীন তারা যা করে, তা ফিরে আসে বুমেরাং হয়ে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি যখন একের পর এক কিনে নিচ্ছিল তৃণমূল নেতাদের, তখন বিপাকে পড়েছিল তৃণমূল। আগামী দিনে এই প্রবণতা হয়তো বাড়বে। বাংলার এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি বেশি পুরনো নয়। বাংলা দেখেছে নিজের পার্টির সিদ্ধান্তের জেরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে‌ পারেননি জ্যোতি বসু। ভুল শোধরানোর নামে পার্টির একাংশের দল ভাঙার উদ্যোগের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন জ্যোতিবাবু।

সৌতক সরকার, কলকাতা-৭৩

ব্যক্তি ঋতুপর্ণ

অভিরূপ মুখোপাধ্যায়ের ‘ব্যক্তিমানুষের ইচ্ছার উড়ান’ (২৭-৫) প্রবন্ধে মনে পড়ে গেল এক বহুমুখী প্রতিভার ধারালো স্বাক্ষর, ঋতুপর্ণ ঘোষকে। যিনি শিখিয়েছিলেন কী ভাবে রক্ষণশীল সমাজের প্রতিবন্ধকতাকে ভেঙে আপন সত্তার উন্মেষ ঘটাতে হয়। পরিবারের একক মানুষের আবেগ ও আর্তনাদ বার বার ধরা পড়েছে তাঁর ছবিতে। শুধুমাত্র সংলাপ যে সিনেমার গতি আনতে পারে তা আগে কল্পনাতেই ছিল না। উনি তা দেখিয়ে দিয়ে গেলেন। শেষের দিকে এই হাসিমুখ ‘মানুষ ঋতু’ ছাপিয়ে যাচ্ছিলেন পরিচালক ঋতুকে। আচমকা চলে গিয়েও তাঁর শিল্পের জন্য আজীবন তিনি বেঁচে থাকবেন।

শ্রবণা সেনগুপ্ত, ব্যান্ডেল, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement