ছবি: সংগৃহীত
ভারতবর্ষের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে পদদলিত করে, ভারতীয় সংবিধানের আত্মাকে অবমানিত করে যে ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক বিভাজনমূলক নাগরিকত্ব আইন বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার রূপায়িত করতে চাইছে, তাকে তীব্র ধিক্কার জানাই। একই সঙ্গে বলি, এই বিদ্বেষমূলক আইনের প্রতিবাদে যে সমস্ত মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ আন্দোলনে শামিল হয়েছেন, তাঁদের সকলের কাছে আবেদন, আইন হাতে তুলে নেবেন না, দেশের মানুষের কল্যাণে সভা-সমাবেশ-বিক্ষোভ-আন্দোলনকে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখা খুবই জরুরি। আমরা জানি সামনের দিনগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন, তাই লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে অখণ্ড স্বাধীন ভারতকে রক্ষা করতেই হবে। এটাই হোক আমাদের জান-মান নিয়ে বাঁচার অগ্নিশপথ।
নতুন নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি-র বিরুদ্ধে উদার সহিষ্ণু ভারতের কোটি কোটি মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে সংবিধানকে সামনে রেখে সভা-সমাবেশ করে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন। বিভেদকামী সরকারের পতন সুনিশ্চিত করতে জনতার একতা দেখে মুগ্ধ হই।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়েছিল। মহম্মদ আলি জিন্না বলেছিলেন হিন্দু আর মুসলমান দু’টি পৃথক জাতি, তাই দু’টি আলাদা দেশ দরকার। পাকিস্তান আন্দোলন হয়েছিল এর ভিত্তিতেই। হিন্দু মহাসভার নেতা সাভারকরও একই নীতিতে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু ভারতের সংবিধান প্রণেতারা জিন্না বা সাভারকরের পথ নেননি। তাঁরা ভারতবাসীকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন।
আজ, স্বাধীনতার ৭২ বছর পর সেই সংবিধানকে অস্বীকার করে মহাত্মা গাঁধী থেকে বাবাসাহেব অম্বেডকরের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে ‘ক্যাব’-এর নামে আবার দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের সরকার। দেশময় বিভাজনের রাজনীতির ঘৃণ্য পুনরুজ্জীবন ঘটাচ্ছে। এই রাজনীতিতে বিজেপি সরকার কতটা সফল হবে তা কিন্তু সময় বলবে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আরএসএস তথা হিন্দু মহাসভার নেতারা স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিলেন, দেশ বিভাজনেরও অন্যতম কান্ডারি ছিলেন দুর্ভাগ্য, আজ তাঁদের উত্তরসূরিরা দেশপ্রেম শেখাচ্ছেন! এর চেয়ে বড় প্রহসন আর কী হতে পারে।
এই আমলেই প্রতারক ব্যবসায়ীরা দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পালিয়েছে, তাদের ধরে আনতে বিজেপি সরকার চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কালো টাকা ফেরত আনতে পারেনি মোদী সরকার। সাধারণ মানুষের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী। তেমন কিছু ঘটেনি। নোটবন্দি থেকে জিএসটির মতো অবিমৃশ্যকারী পদক্ষেপে দেশের অর্থনীতি আজ ধ্বংসের শেষ কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। ধর্মের বড়ি খাইয়ে গোটা দেশকে তিনি ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে চলেছেন।
দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এই সরকার চরম ব্যর্থ। বিগত ৪৫ বছরের পরিসংখ্যানে বেকারত্ব সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। মানুষ দিন দিন দিশেহারা বোধ করছেন। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে উপযুক্ত রোজগারের সুযোগ থেকে অসংখ্য মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকার নিশ্চুপ।
দেশের নাগরিকদের হাজার সমস্যার সমাধান করতে না পেরে অন্য দিকে দৃষ্টি ঘোরাতে সংবিধান-বিরোধী নতুন নাগরিকত্ব আইন হাজির করে নরেন্দ্র মোদী সরকার কী বার্তা দিতে চাইছে— সেটা আমাদের বুঝতে হবে। ভারতীয় মুসলমানরা যে ভারতের যথেষ্ট মূল্যবান সম্পদ, আশা করি দেশবাসী তা ভুলতে পারবেন না। দেশের জনতা নাগরিকত্ব আইন-এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। এই মহান ভূমিকা পালনের জন্য দেশবাসীকে কুর্নিশ জানাই।
মিশ্র সংস্কৃতিই আমাদের অর্জিত বৈভব। তা আমরা রক্ষা করবই।
ফারুক আহমেদ
ঘটকপুকুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
‘ঠিক’ সময়
২ ডিসেম্বর জবলপুর থেকে শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেসে হাওড়া আসছিলাম। ট্রেনটি জবলপুর থেকে ছাড়বার কথা রাত ১১টা ৫০ মিনিটে। ছাড়ল মিনিট কুড়ি দেরিতে। প্রমাদ গনলাম। এক জন সার্ভিস বয় অভয় দিয়ে জানাল, ট্রেন যত দেরি করেই ছাড়ুক, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। ক্রমে ব্যাপারটা পরিষ্কার হতে লাগল। পরের দিন সকালে সিংগ্রউলি পৌঁছলে দেখা গেল, নির্দিষ্ট সময়ের আধ ঘণ্টা আগেই পৌঁছে গিয়েছে ট্রেন। এক ঘণ্টার বেশি সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকল ট্রেনটি। তার পর চলল মজার খেলা। ট্রেন ছোটার সময় নেটে দেখা যায় এক ঘণ্টার উপর লেট হয়ে গিয়েছে, অথচ পরের স্টেশনে পৌঁছতেই রাইট টাইম। নিয়মিত ওই ট্রেনে যাতায়াতকারী এক সহযাত্রী বুঝিয়ে বললেন, টাইম টেবিলে অনেক বেশি সময় দেওয়া আছে। তাই যতই লেট করুক, অলওয়েজ় রাইট টাইম। ভদ্রলোকের কথা সত্য প্রমাণ করে ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ মিনিট আগেই হাওড়া পৌঁছল। এ যেন পাশমার্ক কমিয়ে দিয়ে পাশের হার বাড়ানোর সহজ পন্থা।
বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর, হুগলি
শুরুই হয়নি
গড়িয়া স্টেশন রোড এলাকার সরকার উল্লিখিত আধার এনরোলমেন্ট সেন্টার হল পাঁচপোতা পোস্ট অফিস। কিন্তু আজ পর্যন্ত এখানে আধারের কাজ শুরুই হয়নি।
মন্টু হালদার
পাঁচপোতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
উদ্বাস্তুর জমি
‘রাজ্যের সব উদ্বাস্তুকেই এ বার জমির মালিকানা’ (২৬-১১) শীর্ষক সংবাদে লেখা হয়েছে, ‘‘রাজ্য সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের জমির মালিকানা আগেই দিয়েছে রাজ্য’’, তা ঠিক নয়। এখনও ওই সমস্ত কলোনির বহু বাসিন্দা জমির মালিকানা পাননি। এই পত্রলেখক ২০০০-০১ থেকে বার বার আবেদন করা ও উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরে প্রায় প্রতি সপ্তাহে যাতায়াত করতে করতে তাঁর নিজের বয়স ৭০ এবং তাঁর দাদার বয়স ৮০-র কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, এখনও জমির মালিকানা পাননি। আমাদের পিতৃদেব ১৯৫০ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে সপরিবার কলকাতায় আসেন এবং সেই সময় থেকে আমরা কলকাতায় রয়েছি। কোনও কারণ ছাড়াই বিভিন্ন বাহানায় বছরের পর বছর আমাদের ঘোরানো চলছে।
নিলয় চৌধুরী
কলকাতা-৪৭
ইডব্লিউএস
২-৭ তারিখে অনুষ্ঠিত রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির (ইডব্লিউএস) প্রার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ৯-৭ তারিখে প্রয়োজনীয় আদেশনামা প্রকাশ করে। ইচ্ছুক প্রার্থীরা ওই আদেশনামা অনুসারে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করতে শুরু করেন, এবং প্রভূত নথিপত্র দলিল দস্তাবেজ ওকালতনামা পেশ করে যোগ্যতামান পূরণের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা ইডব্লিউএস সার্টিফিকেট সংগ্রহে সমর্থ হন।
আশ্চর্যের কথা, ওই ইডব্লিউএস সার্টিফিকেট প্রদানে রাজ্য সরকার তৎপর হলেও, সরকারের সিংহভাগ নিয়োগ পরীক্ষার ভারপ্রাপ্ত পাবলিক সার্ভিস কমিশন এখনও অবধি একটি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতেও ওই সংরক্ষণের সংস্থান রাখেনি। এ বছর ইসু হওয়া ইডব্লিউএস সার্টিফিকেটগুলির মেয়াদ ২০২০-র ৩১ মার্চ শেষ হয়ে যাবে। ফলে সার্টিফিকেট সংগ্রহে সমর্থ হলেও, ওই সব পরীক্ষার পরীক্ষার্থীরা ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সুযোগ পাবেন না। পাবলিক সার্ভিস কমিশন সরকারের সংরক্ষণ নীতিকে অমান্য করতে পারে কি?
দীনবন্ধু সামন্ত
কলকাতা-৬৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।