লর্ডসে বিদায়ী ম্যাচে ঝুলনের শেষ উইকেট প্রাপ্তির সময়ও চোখের কোণ মুছেছিলেন সতীর্থ অধিনায়ক হরমনপ্রীত। এই সূত্রে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাংলা তথা ভারতের কিংবদন্তি মহিলা ক্রিকেটার ঝুলন বলেন, “আমি কখনও আবেগ নিয়ে ক্রিকেট মাঠে নামি না, আমি নির্মম।” সুমিত ঘোষের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতার (‘বিদায়বেলায় সতীর্থদের আবেগটাই সেরা প্রাপ্তি’, ২৬-৯) বেশ কিছুটা জায়গা জুড়েও সেই আবেগেরই কথা। প্রসঙ্গত, ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ‘ক্যাপটেন কুল’-এর সঙ্গে ঝুলনের বেশ কিছুটা মিল আছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আবেগ যেমন তাঁর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন, ঝুলনের ক্ষেত্রেও বোধ হয় তেমনই। পাশাপাশি বলতেই হচ্ছে, আবেগ ছাড়া মাঠে নেমে কেউই সফল হতে পারেন না। আর তাই তো ঝুলন মহিলাদের বিশ্বক্রিকেটে নিজের জীবনসফর সম্পূর্ণ করে সর্বাধিক ৩৫৫টি উইকেট তাঁর শো-কেসে সাজাতে পেরেছেন।
আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, এ দেশে ছেলেদের ক্রিকেট নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে আজও যা মাতামাতি হয়, তার অনেকটাই অনুপস্থিত থাকে মেয়েদের ক্রিকেটে। তবে আনন্দ এটাই, ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’ ঝুলন কিন্তু এ-ধারণাটা কিছুটা মুছে দিতে পারলেন নিজের সাফল্যের জোরে। পরিশেষে, ঝুলন গোস্বামীর কাছে এক জন ক্রিকেটপ্রেমীর অনুরোধ, প্রথম বারের আইপিএল-এই তাঁর স্বমহিমায় উপস্থিতি নতুন এই টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য ও আকর্ষণ বাড়িয়ে দিক। এবং আমরা যেন ভবিষ্যতে মেয়েদের ক্রিকেটে মুখ্য কোচ হিসাবে ঝুলন গোস্বামীকেই দেখতে পাই। আসলে ‘ক্রিকেটার হবেন’— এই ছিল যাঁর সত্যিকার স্বপ্ন, হাজার বাধার প্রাচীরগুলো ডিঙিয়ে জীবনভর যে ক্রিকেটার তাঁর স্বপ্নের ভিতরের স্বপ্নগুলোকে উজ্জীবিত রাখতে সক্ষম হয়েছেন, তাঁর মতো ব্যক্তিত্ব নিশ্চিত ভাবেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন এই ভূমিকাতেও।
শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া
শাবাশ মেয়ে
ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল ইংল্যান্ডের মহিলা ক্রিকেট দলকে ওদের দেশের মাটিতে ৩-০’য় হারানোর সঙ্গেই লর্ডসের মাটিতে অবসর নিলেন বিশ্বখ্যাত মহিলা ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামী, যিনি ‘চাকদা এক্সপ্রেস’ নামে পরিচিত। একটি যুগের যেন অবসান হল। ভাবা যায়, ঝুলন যখন ক্রিকেট জীবন শুরু করেন, ভারতের মেয়েরাও যে ক্রিকেট খেলতে সক্ষম, তেমন কোনও ধারণা দেশের লোকদের ছিল না? তাই চাকদহ এক্সপ্রেস-কেও ট্রেনে কলকাতা আসা-যাওয়ায় বহু ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছে। আজ বোধ করি তাঁরাই ঝুলনের অবসর অবধি অর্জন করা সমস্ত কৃতিত্বে বেশি করে গর্বিত হবেন। হয়তো বা পূর্বের কৃতকর্মের জন্য আফসোসও করবেন। ঝুলন গোস্বামীর ঝুলিতে কৃতিত্বের সংখ্যা নেহাত কম নয়, বরং ঈর্ষণীয়। কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে মহিলা ক্রিকেটে যুক্ত থাকা, মহিলা ক্রিকেটে সর্বাধিক ৩৫৫ উইকেট প্রাপ্তি, মহিলা বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৪৩ উইকেট, ওয়ান ডে-তে সর্বাধিক ২৫৫ উইকেট প্রাপ্তি, ২০০৭ সালে আইসিসি-র বর্ষসেরা মহিলা ক্রিকেটার, ২০১০ সালে অর্জুন পুরস্কার, ২০১১-তে সেরা মহিলা ক্রিকেটার আর ২০১২ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার। সমস্ত ভারতবাসী-সহ ঝুলনের নিজেরও একটা আফসোস যে, ২০০৫ এবং ২০১৭ সাল দু’-দু’বার ফাইনালে উঠেও বিশ্বকাপ অধরাই রয়ে যাওয়া। যদিও তিন বার এশিয়া কাপ জয়ী ভারতীয় মহিলা দলের সদস্য তিনি।
কার্যত মহিলা ক্রিকেট দলকে বিশ্ব দরবারে সসম্মানে প্রতিষ্ঠিত করার নেপথ্যে ঝুলনের অবদান অনস্বীকার্য। শুভেচ্ছা জানাই, ওঁর অবসর জীবন যেন আরও আনন্দময় হয়। সচিন, সৌরভ-সহ বহু খ্যাতিমান ওঁকে শুভেচ্ছা, ভালবাসা এবং অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু এটা কেমন যেন চোখে লাগল যে, বোর্ডের তরফ থেকে ঝুলনকে কোনও উপযুক্ত পুরস্কারে ভূষিত করা হল না। ভারতের মহিলা ক্রিকেট তাই এখনও খানিক উপেক্ষিত বলে মনে হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক।
তপন কুমার দাস, রানাঘাট, নদিয়া
সেরার সেরা
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় ঝুলন গোস্বামীর অবসর ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি মাইলস্টোন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। পর পর দু’দিনের দুটো ঘটনা— টেনিসের কিংবদন্তি রজার ফেডেরার টেনিস কোর্টকে বিদায় জানাচ্ছেন, পাশে চির প্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদাল কাঁদছেন। পরের দিন ঐতিহাসিক লর্ডসে ঝুলনের বিদায়ী ম্যাচে এক দিকে ইংরেজ খেলোয়াড়রা ঝুলনকে গার্ড অব অনার দিচ্ছেন, আর অন্য দিকে আমাদের অধিনায়ক হরমনপ্রীত আদরের, শ্রদ্ধার সতীর্থকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন! খেলার মাঠটা হয়তো এই জন্যেই পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র জায়গা। এত লড়াই, এত প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তার পরেও এই আবেগ, এত আবেগরুদ্ধ করা দৃশ্যের অবতারণা খেলার মাঠেই সম্ভব! ঝুলন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের অন্যতম সফল খেলোয়াড়। তবে পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁকে মাপতে গেলে সেটার গভীরতা হয়তো খুব বেশি হবে না। কিন্তু তা এতই চমকপ্রদ, ধারাবাহিক ও বিস্ময়কর, যা মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সমস্ত খেলোয়াড়ের জন্য গর্বের হতে পারে। তিনি মহিলা ক্রিকেটে যত সংখ্যক উইকেট দখল করেছেন, যা যা সম্মান পেয়েছেন, সেগুলো তো শুধুমাত্র কিছু সংখ্যা নয়, বরং তা পুরুষশাসিত সমাজে, ক্রিকেটের মতো ক্রীড়াক্ষেত্রে এক মহিলার সাফল্য বা ব্যক্তিজীবনে শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে একটি মেয়ের সাফল্যকেও তুলে ধরে।
কঠিন পরিস্থিতি বা প্রতিকূল পরিস্থিতি মনে হয় মফস্সল থেকে উঠে আসা ঝুলনের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরতে পরতে জড়িয়ে আছে। তাই ঝুলনকে মাপা যায় তাঁর দৃঢ় সঙ্কল্প আর অধ্যবসায় দিয়ে। যে মহিলা ক্রিকেটের দিক থেকে বহু কাল অবধি সাধারণ মানুষ মুখ ঘুরিয়ে থাকত, পাঁচতারা হোটেল, বিমানে যাতায়াত, লাইভ সম্প্রচার, স্পনসরশিপ— যেগুলো একটা সময় প্রায় স্বপ্নের মতো ছিল মেয়েদের কাছে, সেগুলো আস্তে আস্তে এ দেশে মেয়ে ক্রিকেটাররা সম্পূর্ণ নিজেদের যোগ্যতায় অর্জন করেছেন। এখন মেয়েদের ক্রিকেট দেখতেও মাঠে প্রচুর দর্শক যান। আর এই সবই সম্ভব হয়েছে ঝুলনের মতো কিছু চ্যাম্পিয়ন পারফরমারদের জন্য। ভারতের মহিলা ক্রিকেটে পূর্বে আমরা দেখেছি শান্তা রঙ্গস্বামী, ডায়না এডুলজি, শ্রীরূপা বসু বা সাম্প্রতিক কালের অত্যন্ত সফল মিতালি রাজদের। কিন্তু সবার কথা মাথায় রেখেও বলা যায়, ঝুলন হয়তো এঁদের মধ্যে সেরার সেরা। কারণ, ক্রিকেট ও সামগ্রিক পারিপার্শ্বিকতার নিরিখে বিচার করতে গেলে স্বীকার করতেই হয়, তাঁর পথটা অনেক কঠিন ছিল।
পার্থ সারথি ভট্টাচার্য, বোরহাট, পূর্ব বর্ধমান
রেলযাত্রীর দাবি
শিয়ালদহ টু লালগোলা লাইনে দেখা যায়, তিন নম্বর লাইনের উপর কখনও মালগাড়ি, কখনও এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। তার নীচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা দুই ও তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ধরতে অথবা টিকিট কাটতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক সময় কোলে বাচ্চা নিয়ে, অথবা বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন বা মালগাড়ির নীচ দিয়ে প্ল্যাটফর্মে ওঠেন। অথচ, রেল বিকল্প ব্যবস্থা না করে চুপচাপ। বেথুয়াডহরি ও ধুবুলিয়া স্টেশনে সমস্যাটি প্রকট হলেও মুড়াগাছা স্টেশনেও একই ভাবে তিন নম্বরে দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি। এই স্টেশনগুলোতে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে টিকিট কাউন্টার এবং এক নম্বর থেকে তিন নম্বর ও দুই নম্বর জোড়া প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত ওভারব্রিজ আছে। তিন নম্বর লাইনের উপর দিয়ে ওভারব্রিজটাকে বর্ধিত করলে রেল যাত্রীদের সুবিধা হয়। বর্ধিত ওভারব্রিজের সঙ্গে ব্রিজের নীচে রেলওয়ে টিকিট কাউন্টার করারও দাবি জানাই।
কৃষ্ণপদ প্রামাণিক, বেথুয়াডহরি, নদিয়া