Attacks on journalists

সম্পাদক সমীপেষু: অপ্রকাশ্য প্রতিবাদ

শেখ শাহজাহানের অপকর্মের কাহিনি যাতে প্রকাশ্যে না আসে, সেই জন্য ওই অঞ্চলে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে নিষেধ ছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:৫৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

‘বোকার মতো প্রশ্ন’ (৫-২) প্রবন্ধে স্বাতী ভট্টাচার্য যথার্থই বলেছেন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী বা পুলিশ সাংবাদিকদের পেটালে, ‘অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া হবে কি না’ জানতে চাওয়াটা বোকামিই বটে। আসলে সাংবাদিকদের কিছুটা ‘দাওয়াই’ দিয়ে যদি তাঁদের কণ্ঠ রোধ করা যায়! শিক্ষিত সাংসদ মহুয়া মৈত্র তাঁদের ‘দু’পয়সার সাংবাদিক’ বলে দেগে দিতে কুণ্ঠা বোধ করেন না। এই সাংবাদিকরাই অনাচারী বা অন্যায়কারীর দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে আনেন। সেই জন্যই অনেকের এত রাগ সাংবাদিকদের উপর। সাংবাদিকরা যদি সমাজের আনাচে-কানাচে অপকর্মের বিভিন্ন ঘটনা সংবাদমাধ্যমে তুলে না ধরতেন, তা হলে অপরাধীদের বাড়বাড়ন্ত মাত্রাছাড়া হত। মিডিয়াকে বাদ দিয়ে আজ কোনও কিছু ভাবা যায় না। অপরাধীরা মিডিয়াকে এড়িয়ে চলে, গালাগাল দেয়, সুযোগ পেলে সাংবাদিকদের মারধর করে, ক্যামেরা, মোবাইল ভেঙে দেয়। সন্দেশখালি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের বিভিন্ন ঘটনা সে কথাই বলে।

Advertisement

শেখ শাহজাহানের অপকর্মের কাহিনি যাতে প্রকাশ্যে না আসে, সেই জন্য ওই অঞ্চলে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে নিষেধ ছিল। ইডি-র দৌলতে সাংবাদিকরা সেই ‘নো গো জ়োন’-এ প্রবেশের সুযোগ পেলে শুরু হয় সাংবাদিকদের পেটানো পর্ব; কিন্তু তত ক্ষণে লাইভ টেলিকাস্ট-এর দৌলতে শাহজাহান বাহিনীর তাণ্ডব অনেকেই দেখে ফেলেন। সাংবাদিকদের ক্যামেরা, গাড়ি ভাঙচুর করে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে শাহজাহান বাহিনী জানান দেয়, সবার উপরে ‘ভাইজান’। সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের প্রতিবাদ হয়নি। তা সত্ত্বেও সাংবাদিকরা ঝুঁকি নিয়েই সংবাদ সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেন।

সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সত্য খবর প্রচারকে বর্তমান শাসক দলের খুবই পছন্দ হয়েছিল সেই সময়ে। কিন্তু এখন সেই সত্যবাদী সাংবাদিকদের সহ্য হবে কেন? তাই সাংবাদিকদের পেটাতে হবে ও কেউ সেই ঘটনার নিন্দা করতে পারবে না। সমস্ত জনসাধারণ প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও, সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ মন থেকে মানতে পারেননি। সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ চরম নিন্দনীয়।

Advertisement

দেবাশ্রিত রায়, রানাঘাট, নদিয়া

গণতন্ত্রের জন্য

স্বাতী ভট্টাচার্য ছাপোষা সাংবাদিকদের কাজের পরিস্থিতি, তাঁদের মধ্যে বিভাজন, এবং দুর্নীতির খবর সংগ্রহে সাংবাদিকদের বাধা দানের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন। দীর্ঘ দিন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থেকে দেখেছি, সাংবাদিকরা সত্য ঘটনা তুলে ধরলেই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আস্ফালন শুরু হয়, এবং প্রশাসনের নীরবতা মেলে। এই প্রহসন বরাবর চলে আসছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের অন্যতম কাজ দুর্নীতির খবর প্রকাশ। তা করতে গিয়ে সাংবাদিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের ক্যামেরা ভাঙা হচ্ছে, এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এখন আবার কিছু রাজনৈতিক নেতা নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন, যাতে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। কোনও একটি বিষয়ের উপর সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ছাতা, মিষ্টির প্যাকেট, ডায়েরি দেওয়ার রীতি চালু হয়েছে, যাতে সেই সাংবাদিকরা নেতার দুর্নীতিকে আড়াল করেন। কিন্তু যাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরে সত্য খবর তুলে ধরার সাহসের পরিচয় দিচ্ছেন, সেই সমস্ত সাংবাদিকের উপর নেমে আসছে কষাঘাত। তাই লেখকের কথাকে সমর্থন করে বলি, সাংবাদিকদের সমব্যথী না হলেও প্রতিবাদ করা চাই। না হলে ভারতীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, শিয়াখালা, হুগলি

ক্ষমার অযোগ্য

স্বাতী ভট্টাচার্যের লেখাটি প্রাসঙ্গিক। সাংবাদিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা কি সুস্থ গণতন্ত্রের পরিচয়? সত্য জানার অধিকার সকলের রয়েছে। সাংবাদিকদের পেশাগত কাজেই সত্যানুসন্ধান, সঠিক খবর জনগণের সামনে তুলে ধরা। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, সত্যের জন্য সব কিছু ত্যাগ করা যায়, কিন্তু কোনও কিছুর বিনিময়ে সত্যকে ত্যাগ করা যাবে না। প্রত্যেক শাসক দলের ভাবা উচিত, তারা কিসের জন্য ক্ষমতায় এসেছে? এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত আছে সাংবাদিক নিগ্রহের উত্তর। ক্ষমার অযোগ্য সেই কাজ করে যখন অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে গণতন্ত্রের মুখোশে একনায়কতন্ত্র হাজির হয়েছে।

অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ

পর্দার আড়ালে

‘বোকার মতো প্রশ্ন’ প্রবন্ধটি পড়ে আজ আর তেমন করে মনে শঙ্কা দানা বাঁধে না। সাংবাদিক বা প্রতিবাদী ব্যক্তিদের পেটানোই শাসকের কাজ। পার্থক্য এই, এখন একটু বেশি হচ্ছে। এ সব ঘটনা গা সওয়া। আমজনতাও ঝুঁকি না নিয়ে শাসকের ছত্রছায়ায় থাকতে চায়। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকরা এই বৃত্তিকে ভালবাসেন। অকুতোভয় হওয়ায় সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। আজও গণতন্ত্রের ইতিবাচক যেটুকু বেঁচে আছে, তা সাংবাদিকদের জন্য, বিরোধীদের জন্য।

তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় সাংবাদিকদের। শাসকের বিরুদ্ধে তাঁরা সরব হলেই বাঁশ, লাঠি, কাটারি, ঝাঁটা, জুতো নিয়ে কিছু দুর্বৃত্ত হয়ে ওঠে মূর্তিমান বিভীষিকা। হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, আদালত থেকে শ্মশান— সর্বত্র এদের অবাধ গতি। এদের কাজকর্মে বাধা পড়লে রাস্তায় চলে সাংবাদিকের গাড়ি ভাঙচুর, বাঁশ-পেটা, ক্যামেরা আছড়ে ভাঙা, হাত মুচড়ে দেওয়া, নথিপত্র ছিনিয়ে নেওয়া, ক্যামেরা বা মোবাইলের ছবি ডিলিট করতে বাধ্য করা। যে সব রুই-কাতলার নির্দেশে এ সব ঘটানো হয়, তিনি বা তাঁরা থাকেন যবনিকার অন্তরালে। মনে পড়ছে, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘উলঙ্গ রাজা’ কবিতাটি— “সবাই দেখছে যে, রাজা উলঙ্গ, তবুও/ সবাই হাততালি দিচ্ছে।/ সবাই চেঁচিয়ে বলছে: শাবাশ, শাবাশ!”

সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪

নৈরাজ্য

সম্প্রতি সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা ওল্টালেই দেখা যায়, রাজ্য যেন আইন না-মানার একটা রাজ্যে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত মানুষ, শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারি কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, এমনকি সাধারণ পুলিশকর্মী পর্যন্ত নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পান না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ এবং প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের কর্তারা এ সব ঘটনা সম্পর্কে নীরব, নতুবা তাঁদের মতো ব্যাখ্যা করেন। পাঠক কিন্তু চান, সেই সংবাদ যেন তাঁদের কাছে সাংবাদিকরা তুলে ধরেন। ঘটনাটি যেমন ঘটেছে, ঠিক তেমন ভাবেই তার বিবরণ প্রকাশ করেন।

এখানেই যত গণ্ডগোল। সংবাদপত্রের মালিক বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার আশায় তাদের মতো করে সংবাদ পরিবেশন করেন। নয়তো, এক জন সাংবাদিককে নানা রকম ভয়, প্রলোভন, বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, বা তাঁকে আপসে যেতে হয়। সন্দেশখালির শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডি-র তদন্তকারী দলের হানার সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের দুষ্কৃতীদের দ্বারা আক্রান্ত হতে হল। সমাজের যে বুদ্ধিজীবীরা ক’বছর আগে সিঙ্গুর আন্দোলনে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাঁরা আজ কোথায়?

এ সব দেখেও এক জন সাংবাদিককে গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে হয়। এই পেশাদারিত্ব রক্ষা করার দায়িত্ব তাঁর যেমন আছে, তেমনই তাঁর সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। সেটা ভুলে গেলে গণতন্ত্র টিকবে?

সন্তোষ কুমার দে, হাওড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement