অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। ফাইল চিত্র।
‘লজ্জা’ শীর্ষক (৩০-১) সম্পাদকীয়টি সময়োপযোগী। এই প্রতিবাদ না করলে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের উপর বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আক্রমণকে মেনে নেওয়া হত। এই প্রবীণ অর্থনীতিবিদ জনগণের হিতার্থেই, নীতিবোধের তাগিদে কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। আশঙ্কা হয়, উপাচার্যের আক্রমণের কি এটাই কারণ? লজ্জা সুরুচিসম্পন্ন ভদ্রলোকের আভরণ, স্তাবকদের যা থাকে না। এই উপাচার্য আসার পরেই যে ভাবে প্রবীণ আশ্রমিকদের সংগঠনের ঘরে তালা ঝুলিয়েছেন, স্থানীয় মানুষদের চলাচলের মাঠটিতে পাঁচিল দিয়েছেন, তাতে ভাবখানা এমন যেন বিশ্বভারতীর সমগ্র অঞ্চল তাঁরই ব্যক্তিগত সম্পত্তি। প্রবীণ আশ্রমিক শ্রদ্ধেয় সুপ্রিয় ঠাকুর তাঁর এই সমস্ত কার্যকলাপের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে তাঁর এই মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘তোতাকাহিনী’-কথিত পাখির খাঁচা করতে চাননি, সকলকে নিয়ে চলতে চেয়েছিলেন।
অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের দাদামশায় ক্ষিতিমোহন সেন, মা অমিতা সেন, বাবা আশুতোষ সেন বিভিন্ন ভাবে বিশ্বভারতীকে সমৃদ্ধ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের সময় থেকেই আশ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন প্লটে জমি নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল, বা লিজ় হিসাবেও দেওয়া ছিল। আজ, উপাচার্য নিকৃষ্ট বাক্য প্রয়োগে সেখান থেকে তাঁদের উৎখাত করার চেষ্টা করছেন! ‘দখলিস্বত্ব’ বলেও তো একটা কথা আছে। ভদ্রজনোচিত আচরণ করতে হলে, এই প্রবীণ অধ্যাপকের বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি মিটমাট করে আসা উচিত ছিল উপাচার্যের। তা না করে তিনি বিষয়টি নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করছেন। এমনকি হাস্যকর ভাবে অধ্যাপকের নোবেল প্রাপ্তি নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন। এতে তাঁরই স্বরূপ প্রকট হচ্ছে, এবং উপাচার্য নিজেকেই অসম্মানিত করছেন।
শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
প্রতিবাদ জরুরি
যে ভাবে অমর্ত্য সেনকে লাগাতার কদর্য ভাবে বিশ্বভারতীর উপাচার্য অপমান করে চলেছেন তার তীব্র প্রতিবাদ জানানো জরুরি। ‘লজ্জা’ সম্পাদকীয়তে যথার্থই লেখা হয়েছে যে, অনর্থক বিব্রত করে সম্মাননীয় ব্যক্তির মান নষ্ট করা যায় না, কেবল নিজেরই অপমান হয়। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানেরও অসম্মান হয়। এখন সংবাদমাধ্যম আর সমাজমাধ্যমের দৌলতে সারা বিশ্বের মানুষ দেখছে, অন্যায় ভাবে কিছু ব্যক্তি কী ভাবে অমর্ত্য সেনের দু’কাঠা জমির দখল নিয়ে এক কদর্য খেলায় মেতে উঠেছেন। একদা রামমোহন, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে আরও অনেক মনীষীকে এক দল সঙ্কীর্ণ, স্বার্থান্বেষী মানুষের হাতে চরম হেনস্থা হতে হয়েছে। সেই সব কলঙ্কের ইতিহাস জানলে শিহরিত হতে হয়। দেশ এখন গভীর খাদের মুখে দাঁড়িয়ে। এক দিকে ধর্মের নামে বিভাজন, অন্য দিকে দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। গরিব আরও গরিব হচ্ছে।
অমর্ত্য সেনের মাতামহ পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। কবীর, দাদূ, রবিদাস প্রমুখ সমন্বয়পন্থী সন্তদের আদর্শে জড়িত এই মানুষটি বিশ্বভারতীকে গড়ে তোলার জন্য আমৃত্যু পরিশ্রম করেছেন। অমর্ত্য সেনের জীবনে ক্ষিতিমোহনের প্রভাব ব্যাপক। তাঁর মতো বিশ্ববন্দিত অর্থনীতিবিদ আগাম আঁচ করতে পারেন, এই অপশক্তির অগ্রগতি না থামাতে পারলে দেশ ও জাতির জীবনে অন্ধকার নেমে আসবে। আমরা যদি অমর্ত্য সেনের সম্মানহানির প্রতিবাদ না করি, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
পঙ্কজ পাঠক, শ্রীপল্লি, বর্ধমান
উদ্বোধন
‘পলিটিক্যাল লোকে বই লিখতে পারে না!’ (৩১-১) কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা উদ্বোধন মঞ্চে আক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বই কোন পেশার মানুষ লিখলেন, সেটা বিবেচ্য নয়। আসল কথা, লেখার মান ও সাহিত্য গুণ। আর লেখকের নাম নয়, বইয়ের মানকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত পাঠকদের। মুখ্যমন্ত্রী যে-হেতু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তাই তাঁর ভাষণে ঘরোয়া রাজনীতির প্রসঙ্গ উঠে এল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বইমেলা উদ্বোধন মঞ্চে এই প্রসঙ্গ না এলেই অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্য রক্ষিত হত না কি? রাজনীতি নয়, বইমেলার উদ্বোধনী ভাষণে স্থান পাওয়া উচিত ছিল সাহিত্য, সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক বিষয়। দেশ-বিদেশের বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, সমাজকর্মী, চিকিৎসক, বৈজ্ঞানিককে দিয়ে আন্তর্জাতিক বইমেলা উদ্বোধন করার কথা কি ভাবা যায় না?
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
সব বোঝেন
আমি লেখক মমতা, কবি মমতা ও ব্যক্তি মমতার ফ্যান। তাঁর সহজ-সরল ভাষার লেখাগুলি খুব ভাল লাগে। তবুও বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর লেখার সমালোচনার পরোক্ষ যে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি, তা ঠিক মেনে নিতে পারলাম না। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে রাজনীতি-করা লোকেদের দেখছি। সমসাময়িক রাজনৈতিক নেতাদের (সব দলের) দেখে আমার উপলব্ধি যে, রাজনীতি-করা লোকেরা আর সাংবাদিকরা শুধু বই লেখা কেন, ভূ-ভারতে হেন কাজ নেই যা পারেন না। তাঁদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়, পড়াশোনা বা কোনও ডিগ্রি ছাড়াই তাঁরা আইন, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, সব বোঝেন। তাই তাঁরা নিজেদের সমালোচনার ঊর্ধ্বে বলে মনে করেন।
দীপেন ঢাং, বাঁকুড়া
বইমেলার স্মৃতি
বইমেলা নিয়ে স্মৃতিবিলাসীদের উন্মাদনা আলাদা মাত্রা পায়। লেখার মাধ্যমে যাঁদের সঙ্গে গড়ে ওঠে আত্মীয়তা, মনের টান, তাঁদের স্বচক্ষে দেখার সুযোগ করে দেয় বইমেলা। এ রকমই কোনও এক বইমেলায় দেব সাহিত্য কুটীরের স্টলে অটোগ্রাফ দিতে দেখেছি বুদ্ধদেব গুহকে। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় অডিটোরিয়ামে হাসির ধারা ছুটিয়েছেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে দেখেছি হাসিমুখে অচেনা পাঠকের আঁকা পোর্ট্রেটকে সাধুবাদ জানিয়ে দু’কথা লিখে দিতে। দে’জ় প্রকাশনার স্টলে দেখেছি অটোগ্রাফ বিলোচ্ছেন শংকর। পত্রভারতীর স্টলে আবিষ্কার করেছি অনীশ দেব পাঠকের সঙ্গে অনাবিল আড্ডায় মশগুল। আনন্দ পাবলিশার্সে স্মরণজিৎ চক্রবর্তীকে নিয়ে তরুণদের উন্মাদনা। বইমেলার স্মৃতি এ ভাবেই বেড়ে চলে।
সায়ন তালুকদার, কলকাতা-৯০
হকিতে নবম
ওড়িশার সদ্য-অনুষ্ঠিত ১৫তম বিশ্বকাপ হকি প্রতিযোগিতায় ভারতীয় হকি দল নবম স্থান পেল। গত দু’টি বিশ্বকাপেও একই ফল। গ্রুপ লিগের ৩টি ম্যাচে ১৭টি পেনাল্টি কর্নার পেয়েও মাত্র একটি ক্ষেত্রে যথাযথ গোল করতে পেরেছে ভারত। এমনকি নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্রসওভার ম্যাচে ভারতীয় দল ১০টি পেনাল্টি কর্নার থেকে মাত্র ১টিতে গোল করেছে। এই বিশ্বকাপে ভারতীয় দল মোট ৪টি ম্যাচে মাত্র ৪টি ফিল্ড গোল করতে পেরেছে (১টি স্পেন, ১টি ওয়েলস আর ২টি নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে)। শুধুমাত্র পেনাল্টি কর্নারের উপর ভরসা করে ম্যাচ জেতার আশা করা চলে না। অতীতের ধ্যানচাঁদ, কে ডি সিংহ বাবু বা বলবীর সিংহ সিনিয়রদের কথা নাহয় বাদই দিলাম, পরের দিকে অশোককুমার, মহম্মদ শাহিদ, জ়াফর ইকবাল বা ধনরাজ পিল্লাইয়ের মতো অসামান্য ড্রিবলিং স্কিলের অধিকারীদের কথা মনে পড়ে, যাঁরা অনায়াসে বিপক্ষের ডিফেন্সকে ফালাফালা করতেন, গোল করতেন এবং করাতেন।
অমিতকুমার চৌধুরী, কলকাতা-৭৫