ছবি: সংগৃহীত
এনআরসি, সিএবি, সিএএ, এনপিআর নিয়ে কলকাতার রাজপথে যে ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপালকে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য যে তুমুল ছাত্র বিক্ষোভ হল, তাতে আমি প্রচণ্ড উৎফুল্ল। মনে পড়ে যাচ্ছে ৬০-৭০’এর দশকের ছাত্র আন্দোলনের কথা। সেই খাদ্য আন্দোলনের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল ছাত্রদের। বর্তমানে আমাদের দেশ মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, আকাশছোঁয়া। গণতন্ত্র বিপন্ন, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিসে সুদের হার দিন দিন কমছে। রাজ্যগুলিকে প্রাপ্য জিএসটি-র টাকা দেওয়া হচ্ছে না। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঢেউ কেন সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়ছে না? আন্দোলনের জোয়ার সমগ্র দেশ অচল হয়ে উঠুক। শাসকের চেয়ার নড়ে উঠুক। আন্দোলনের রুদ্র চেহারায় শাসকেরা বাধ্য হোক দাম কমাতে। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে। তাই সমস্ত বামপন্থী শক্তিকে একজোট হয়ে লাগাতার আন্দোলন, বন্ধ করে শাসক শ্রেণির ঘুম কেড়ে নিতে হবে।
অলোক চৌধুরী
কলকাতা-১২০
নিউ নর্মাল
৯-১ তারিখে পাশাপাশি প্রকাশিত দুটো খবর, দুটোই বিজেপির দুই এমপি-কেন্দ্রিক। রাজ্যসভার এমপি স্বপন দাশগুপ্ত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত বক্তা হয়ে বক্তৃতা দিতে এসে ছাত্র বিক্ষোভে আটকে রইলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে (‘সিএএ বক্তৃতার পরে আটকে...’)।
লোকসভার এমপি দিলীপ ঘোষের কৃষ্ণনগরের রাস্তায় সভা করার জন্য আটকে গেল প্রসূতি-সহ অ্যাম্বুল্যান্স। দিলীপবাবু হুমকি দিলেন যাতে গাড়ি অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেওয়া হয় এবং তাঁর সভায় বিঘ্ন না ঘটে (‘ভিতরে প্রসূতি, অ্যাম্বুল্যান্স রুখে...’)।
দুটো ঘটনাই ইঙ্গিত করে ‘জোর যার মুলুক তার’ নীতির।
স্বপন দাশগুপ্তের বক্তব্যের বিরোধ করা যেতে পারে পাল্টা যুক্তি দিয়ে, পাল্টা সভা করে। তাঁর বক্তব্য পেশ করার অধিকার খর্ব করার চেষ্টা প্রমাণ করে, গা-জোয়ারি করে নিজের মতামত চাপিয়ে দেওয়া ও বিরোধী মতামত দাবিয়ে দেওয়ার এ প্রবণতা অবস্থাভেদে সব রাজনৈতিক দলের মজ্জাগত। আজকে দক্ষিণপন্থীদের রমরমার যুগে তাদের দর্শনের নিন্দা করতে গিয়ে এ কথা ভুললে চলবে না, বামপন্থীদের একচ্ছত্র ক্ষমতা দখলের এবং বিরোধী শক্তির বিনাশ সাধনের বহু ইতিহাস এই বঙ্গ এবং বিশ্বের বহু দেশে জ্বলজ্বল করছে।
আর দিলীপবাবু এবং তাঁর দল এই রাজ্যে তাঁদের সমর্থন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি দিন ঔদ্ধত্যের নতুন নতুন শিখরে পৌঁছচ্ছেন। যানবাহনের জন্য নির্ধারিত রাস্তা দখল করে মিটিং করা এবং মিটিংকে ‘ডিসটার্ব’ না করার জন্য অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া যে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, এ বোধ দিলীপবাবুদের কাছ থেকে আশা করা বোধ হয় অন্যায়। মনে রাখা দরকার, তাঁরা এখনও বিরোধী শক্তি। এক বার ক্ষমতা দখল করলে তাঁরা ধরাকে সরা জ্ঞান করবেন, মনে হওয়া অমূলক?
গায়ের জোরে সহ-নাগরিকের অধিকার হরণ এখন ‘নিউ নর্মাল’। রাস্তার অর্ধেক জুড়ে বাড়ি তৈরির সরঞ্জাম ফেলে রাখা, তারস্বরে মাইক বাজানো, ট্রেনের সিট দখল করে ডেলি প্যাসেঞ্জাদের ভ্রমণ, আপত্তির তোয়াক্কা না করে বাস ট্রেন অটোয় ধূমপান, নতুন ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনলে স্থানীয় ক্লাবকে বাধ্যতামূলক উৎকোচ দিতে হওয়া ইত্যাদি নিত্য ঘটে যাওয়া অনাচারের উদাহরণ।
রাজনৈতিক নেতারা এই সমাজেরই অংশ। তাই তাঁরা আরও বৃহৎ আকারে অনেক নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছেন, যেমন মানুষকে ভোট দিতে না-দেওয়া, পুলিশ-প্রশাসনের উপর অনৈতিক প্রভাব খাটানো ইত্যাদি। বৃহত্তম গণতন্ত্রে অগণতান্ত্রিক পেশিশক্তির প্রয়োগ গণতন্ত্রকেই প্রহসনে পরিণত করছে।
শুভেন্দু দত্ত
কলকাতা-১০১
বিনীত প্রশ্ন
যাঁরা আজকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে গলা ফাটাচ্ছেন এবং অশান্তি সৃষ্টি করছেন, তাঁদের প্রতি কয়েকটি বিনীত প্রশ্ন:
১) পাকিস্তান-বাংলাদেশের হিন্দু-শিখদের অগতির গতি যে একমাত্র ভারত, তা কি অস্বীকার করা যায়?
২) এনআরসি এবং এনপিআর নিয়ে হাজার একটা আপত্তি তুলতে পারেন, দেশব্যাপী গণ-আন্দোলন সংগঠিত করতে পারেন, কিন্তু নিতান্ত নিরীহ এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে দেশের লোককে ভুল বোঝাচ্ছেন কেন?
৩) আজ যাঁরা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে মুসলিমদের উল্লেখ কেন নেই বলে আওয়াজ তুলছেন, তাঁরা বিগত ৭০ বছরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর ঘটতে থাকা নারকীয় অত্যাচার, যথা জমি দখল, খুন-ধর্ষণ, বলপূর্বক ধর্মান্তর, দেবস্থান অপবিত্রকরণ ইত্যাদি বিষয়ে টুঁ শব্দটিও করেননি কেন? আজকের ভারতের শিক্ষিত হিন্দুদের এক বিরাট অংশের মনে যে সাম্প্রদায়িকতা দানা বাঁধছে, যা এত কাল অভাবনীয় ছিল; এবং যে-সব সঙ্ঘ-পরিষদ-দল-মহাসভা এত কাল নিতান্ত অপাঙ্ক্তেয় ছিল তারা আজ ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করছে, এ সবের পিছনে কি আপনাদের চরম একদেশদর্শিতার দায় কিছু কম?
সুরজিৎ দত্ত
জলপাইগুড়ি
অনঙ্গমোহন
পত্রলেখক অরুণকান্তি দত্তকে ধন্যবাদ একটি ঐতিহাসিক ভুলের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য (‘সুভাষের ঘুসি?’, ১০-১)। কিন্তু পত্রে উল্লিখিত নেতাজির সতীর্থের নাম অনঙ্গমোহন ‘দাম’, ‘দাস’ নয়। সম্ভবত মুদ্রণপ্রমাদ। অনঙ্গমোহন (১৮৯০- ৬.১.১৯৭৮) বাস্তবিকই ইতিহাসের এক উপেক্ষিত চরিত্র। ঘটনার প্রকৃত নায়ক হয়েও তেমন করে পাদপ্রদীপের আলোয় আসার সুযোগ পাননি কখনও। কাছাড় জেলা পৃথকীকরণ আন্দোলনের অন্যতম এই পৃষ্ঠপোষক বহু দিন শ্রীহট্টের স্বগ্রামে অন্তরিন ছিলেন, মুক্তি পান দ্বিতীয় বিশ্বমহাযুদ্ধের পর। মৃত্যু কলকাতার উপকণ্ঠে সোদপুরে।
আরও কিছু তথ্য। ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬-তারিখে কেবলমাত্র এক জন বেয়ারার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্ত সুভাষ ও অনঙ্গমোহনকে কোনও রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই তাড়াহুড়ো করে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই হিমালয়সদৃশ ভুলটি সংশোধন করে নিয়ে নেতাজি জন্মশতবর্ষের প্রাক্কালে ১২ জানুয়ারি ১৯৯৬-এ, কলেজ গভর্নিং বডির এক সভায় এই বহিষ্কার-আদেশটি রদ করা হয়। সেই ঐতিহাসিক সভায় সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল বর্তমান পত্রলেখকের।
বিশ্বনাথ দাস
প্রাক্তন অধ্যাপক, পূর্বতন প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা
বৃত্তিকর
‘বৃত্তিকর কেন?’ (২৮-১২) চিঠি প্রসঙ্গে জানাই, পশ্চিমবঙ্গের মতো বৃত্তিকর আর কোনও রাজ্যে নেই— এ তথ্য ঠিক নয়। ওড়িশা, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের মতোই বৃত্তিকর আদায় হয়। বস্তুত দেশের বেশির ভাগ রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত হারে এই পথে আয় করে থাকে। বৃত্তিকর নেই এমন রাজ্যের সংখ্যা তুলনায় কম।
শমীকরঞ্জন সামন্ত
পরমানন্দপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
মানসী জোশী
খেলা-র পাতায় ‘ফেলে আসা ২০১৯’ (৩১-১২) প্রসঙ্গে জানাই, ২০১৯-এ যাঁরা ক্রীড়াজগতে অবিস্মরণীয় নজির রেখেছেন তাঁদের তালিকায় বাদ পড়েছেন এক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়: মানসী জোশী। যিনি ২০১৯ সালে প্যারা ব্যাডমিন্টন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। মানসী ২০১৯ সালে এক দুর্ঘটনায় এক পা হারিয়েছিলেন। তার পর অদম্য মানসিক জোর ও অধ্যবসায়ের ফলে এই সাফল্য পান, যা আগে কোনও ভারতীয় পাননি।
অখিল বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৮৯
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।