— ফাইল চিত্র।
ভারতীয় কৃষিব্যবস্থার সাপেক্ষে বর্তমান শতাব্দীর চলতি দশক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমস্যাদীর্ণ কৃষিসমাজের সামনে উজ্জ্বল সম্ভাবনার রাস্তা যে খোলা নেই, তা একেবারেই নয়। সঠিক সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে উপযুক্ত পরিকল্পনা গৃহীত হলে চিরাচরিত ফসলের বাইরে ফল এবং আনাজের সরবরাহে বিশ্বের বাজারে ভারত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করতে পারে। ভারতীয়দের উপর করা সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, আমাদের খাদ্যতালিকা ক্রমশ ক্যালরি-কেন্দ্রিক থেকে পুষ্টি-কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে ভাত, রুটি, ডালের একচেটিয়া সাম্রাজ্যে আনাজ এবং ফল দখল বসাবে। এমতাবস্থায় ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যার বাজারে উপরোক্ত খাদ্যগুলির যে পরিমাণ চাহিদা তৈরি হবে, তা অকল্পনীয়।
কেবলমাত্র দেশে নয়, ইউরোপ, আমেরিকাতেও মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ভৌগোলিক ভাবে সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে ভারতে উৎপন্ন ফসলের ক্ষেত্রে যে বিপুল বৈচিত্র দেখা যায়, তা আবহাওয়াজনিত কারণে ইউরোপ বা আমেরিকার দেশগুলিতে সে ভাবে দেখা যায় না। সে দিক থেকে বলা যায়, এই দেশের কৃষকসমাজের কাছে সঠিক অর্থে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ফল এবং আনাজ চাষের মাধ্যমে কৃষকদের সামনে যেমন অধিক আয়ের পথ খুলে যাবে, তেমনই সারা বছর ধরে আর্থিক কর্মকাণ্ড চালানোর মতো কাজও তৈরি হবে। এরই পাশাপাশি কৃষিতে উদ্বৃত্ত শ্রমিকদের, বিশেষত ছোট কৃষকদের, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তবে বিকল্প কৃষির এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে হলে, বেশ কিছু উদ্যোগ করতে হবে। প্রথমত, দ্রুত বীজ প্রযুক্তির উন্নতিসাধন চাই। ভারতের মতো দেশে একাধিক বিশ্বমানের কৃষি গবেষণাগার রয়েছে। গবেষণাগারগুলির জন্য সাধারণ বাজেটে অধিক অর্থ বরাদ্দ করে এবং গবেষণা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাগুলিকে স্বায়ত্তশাসনের অবকাশ দিতে হবে সরকারকে। এ ছাড়া, ‘১ হেক্টর ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং সিস্টেম’, যার মাধ্যমে দেশের বেশ কিছু জেলায় পরিবেশবান্ধব এবং দুর্যোগ-প্রতিরোধী চাষাবাদ সম্ভব হয়েছে, গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি কৃষিকাজে সৌরশক্তির ব্যবহার, জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং নিশ্চিত রফতানির দীর্ঘমেয়াদি ‘সাপ্লাই চেন’ তৈরি করতে পারলে দেশের কৃষকদের জীবন আরও সহজ হয়ে উঠবে।
ভারতের মতো দেশে উপরোক্ত লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে হলে এলাকা-ভিত্তিক স্থানীয় পরিকল্পনার উপর জোর দিতে হবে। স্থানীয় আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রশাসনকে কৃষক, গবেষক এবং গবেষণাগারের মধ্যে মেলবন্ধনের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে ভারতকে ফল এবং আনাজের ভান্ডার গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
অর্ক গোস্বামী, আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান
এগিয়ে পড়শি
কলকাতার এক কালের বিখ্যাত কয়েকটি বিস্মৃতপ্রায় ক্লাবের নাম শিবপুর বি ই কলেজ, ক্যালকাটা রেঞ্জার্স ক্লাব, ক্যালকাটা কাস্টমস। ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, মর্যাদা এবং গুরুত্বের দিক থেকে দেখলে, হকি বেঙ্গল আয়োজিত ১৮৯৫ সালে শুরু হওয়া বেটন কাপ হল বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন প্রতিযোগিতা। তার পরেই ছিল ১৯০৫ সালে শুরু হওয়া ক্যালকাটা হকি লিগ। কলকাতায় অনুষ্ঠিত হওয়া দু’টি প্রতিযোগিতাই ছিল ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ। ভারত বহু বছর ধরে এই খেলাটিতে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে এসেছে। উপরোক্ত ক্লাবগুলি ছিল এই খেলার অন্যতম নামী ক্লাব। স্বাধীনতা উত্তরকালে এই ক্লাবগুলির সঙ্গে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান স্পোর্টিং-এর লড়াই ছিল এই প্রতিযোগিতার মূল আকর্ষণ। হকিতে মোহনবাগানের সাফল্য ছিল ঈর্ষণীয়। ষাট-সত্তরের দশকে এই ক্লাবগুলির খেলা থাকলে ফুটবলের মতোই দর্শক ভর্তি থাকত সেই সব মাঠের গ্যালারি। কিন্তু এখন এই খেলাটির অবস্থার খবর কি কেউ রাখেন? কলকাতার হকির সেই গরিমার মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল। তবে ভারতীয় হকির গরিমা নতুন সাজে বিশ্ব জুড়ে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে ওড়িশা সরকারের বদান্যতায়।
ইন্টারনেটে সার্চ করলে ভারতের ফুটবলের ‘মক্কা’ এখনও কলকাতাকেই দেখায়। কিন্তু দিন দিন এই রাজ্যে খেলার যা পরিস্থিতি দাঁড়াচ্ছে, তাতে গর্বের পরিচিতিগুলি আর ক’দিন ধরে রাখা যাবে, সন্দেহ আছে। বাংলার রঞ্জি দলে ক’জন বাঙালি ক্রিকেটারকে খেলতে দেখা যায়? আর, আইএসএল-এই বা ক’জন বাঙালি ফুটবলার খেলেন?
সম্প্রতি সংবাদসূত্রে জানা গেল, ২০০১ সালে আমাদের পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশার ক্রীড়া খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৪ কোটি টাকা, যা আজ বেড়ে হয়েছে ১৩০০ কোটি। আর এই মক্কায় মানে, বঙ্গ বাজেটে ক্রীড়া খাতে বরাদ্দ মাত্র ৮৫০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপস শুরু হওয়ার মাত্র তিন মাস আগে ঝাড়খণ্ড পিছিয়ে আসার পর ওড়িশা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সাফল্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করে প্রশংসিত হয়। এই সাফল্যের পর, আর্থিক দিক থেকে প্রায় ডুবে যাওয়া হকি ইন্ডিয়া ওড়িশা সরকারের কাছে আবেদন রাখে, কিছু দিনের জন্য তারা যেন ইন্ডিয়ান হকি দলকে স্পনসর করে। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক তৎক্ষণাৎ সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। ২০১৮ এবং ২০২৩ সালে ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে সাফল্যের শীর্ষে উঠে হকি ওয়ার্ল্ড কাপ পরিচালনা করে ওড়িশা সরকার নিজের রাজ্যের মাথা উঁচু করেছে।
হকির পর এ বার ফুটবলের দিকে নজর ঘুরিয়েছে ওড়িশা। এ বছরেই জানুয়ারি মাসে কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে কলিঙ্গ সুপার কাপের ফাইনালে ওড়িশাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল ইস্টবেঙ্গল। গত নভেম্বরে ২০২৬ সালের ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ার গ্রুপে ভারত বনাম কাতারের খেলাও হয় এই স্টেডিয়ামেই। স্টেডিয়ামে দর্শকাসন ছিল মাত্র ১২ হাজার।
বাস্তবিকই বঞ্চিত আমরা। ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে গ্লোবাল ফুটবল ডেভলপমেন্টের প্রধান কিংবদন্তি কোচ আরসেন ওয়েঙ্গারের উপস্থিতিতে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) এবং ওড়িশা সরকারের মধ্যে একটি ফুটবল ট্যালেন্ট অ্যাকাডেমি গড়ার জন্য মউ স্বাক্ষরিত হয়। অথচ, এই ট্যালেন্ট অ্যাকাডেমি ভারতের অনেক জায়গায় হতে পারত। বোঝাই যাচ্ছে, সরকার ইচ্ছে করলে কোনও কাজই লাল ফিতের ফাঁসে আটকে থাকে না। ২০১৮ আর ২০২৩ ওয়ার্ল্ড কাপ হকি, ২০২২ সালে মহিলাদের অনূর্ধ্ব-১৭ ওয়ার্ল্ড কাপ, ২০২৬ সালের ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ার গ্রুপে ভারত বনাম কাতারের খেলা— এত কিছু সফল ভাবে সম্পন্ন করানোর পর এআইএফএফ আর কিছু ভাবার অবকাশ পায়নি।
গত সেপ্টেম্বরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং স্পেনের বিখ্যাত লা-লিগার মধ্যে কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে ছোটদের ফুটবল ট্যালেন্ট অ্যাকাডেমি চালু করার জন্যে একটি মউ স্বাক্ষর হয়েছে। তবে, ওড়িশা পারলেও বাংলা কত দূর পারবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭
নতুন ব্যবস্থা
আজকাল ‘ইউপিআই’-এর মাধ্যমে অনলাইন টাকা লেনদেন খুবই জনপ্রিয়। দ্রুত গতির এই ব্যবস্থায় এক জনের জায়গায় ভুল করে অন্য জনকে টাকা পাঠানোর ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সে ক্ষেত্রে টাকা ফেরত পাওয়া খুবই অসুবিধার ব্যাপার। ইমেল বা অন্য অনেক ক্ষেত্রে ‘আনডু’ বোতাম ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠানো ভুল তথ্য প্রাপকের কাছে পৌঁছনো বাতিল করা যায়। ‘ইউপিআই’ কর্তৃপক্ষ এমন ধরনের কোনও ব্যবস্থা অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত করলে অনেকেই উপকৃত হবেন।
অমিতাভ সরকার, কলকাতা-৩৬