তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ছবি) মন্তব্য করেছেন, যে সব নাম আসছে, তার ৫০ শতাংশই বাতিলযোগ্য। অনেকের নামে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, আবার কেউ কেউ বিধানসভা ভোটে বিরোধীদের সাহায্য করেছেন। তাই দল তাঁদের প্রার্থী করবে না (সুপারিশে করে খাওয়ার মানসিকতা, ক্ষুব্ধ অভিষেক, ১১-৪)। এই কথা থেকে স্পষ্ট, তৃণমূলের অনেকেবিভিন্ন ভাবে দুর্নীতি এবং দলবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত, দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে সেই খবরও আছে। প্রশ্ন জাগে, সেই দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা না করে, শুধু প্রার্থী-পদ থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে কেন? চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে টাকা তোলার অসংখ্য অভিযোগ পেয়েও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত এক জনের বিরুদ্ধেও দল পদক্ষেপ করেনি। এমনকি স্বীকার পর্যন্ত করেনি।
দলের ছোট-বড় অনেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়া, সিন্ডিকেট করা, চাকরির টোপ দিয়ে টাকা তোলা-সহ অভিযোগ উঠলেও দল অধিকাংশ ক্ষেত্রে উদাসীন থেকেছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দলের ফল খারাপ হওয়ার পর দলের সুপ্রিমো বিভিন্ন প্রকল্পে নেওয়া কাটমানি ফেরত দেওয়ার কথা বললেও, সে ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা হয়নি। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে দল আশাতীত সাফল্য পাওয়ায় সেই ঘোষণার ফল নিয়েও আর নাড়াচাড়া হয়নি। সম্প্রতি বাঁকুড়ার ওন্দায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলীয় সভায় দলের এক মহিলা সমর্থক দলেরই এক স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে চাকরি করে দেওয়ার টোপ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। ওই মহিলা থানায় অভিযোগ করায় সেই নেতা তাঁর উপরে হামলা চালিয়েছেন বলেও অভিযোগ। তার পরেও সেই নেতার বিরুদ্ধে এত দিন পদক্ষেপ করা হয়নি। এ সব ঘটনা দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরে না।
প্রদ্যোৎ পালুই, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
দুষ্কৃতীর পরিণতি
‘নতুন অন্ধকার’ (১৯-৪) শীর্ষক সম্পাদকীয়টির বক্তব্য সমর্থনযোগ্য নয়। নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু দেশের কিছু রাজ্য, যেমন উত্তরপ্রদেশ, মাফিয়ারাজের জন্য কুখ্যাত। এই দুষ্কৃতীরা রাজ্য জুড়ে দাপিয়ে বেড়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতায়। মাফিয়া ডনদের অনেকেই দল পাল্টে বিধায়ক, সাংসদ হয়েছেন। বন্দুক জীবিকা যাঁদের, বন্দুকই তাঁদের মারে। দুষ্কৃতীদের প্রাণ যাবে হয় তাঁর প্রতিপক্ষের হাতে, অথবা পুলিশের গুলিতে। এমনকি কোনও অপরাধী অপরাধ থেকে সরে এলেও রেহাই পাননি প্রতিপক্ষের দুষ্কৃতীদের হাতে থেকে। পয়লা বৈশাখে নিহত আতিক আহমেদ এর উদাহরণ। সম্প্রতি প্রয়াগরাজ এলাকায় তাঁর প্রতাপ কমে এলেও রেহাই মেলেনি প্রতিপক্ষ দুষ্কৃতীদের হাত থেকে। আতিকের স্ত্রী, পুত্ররাও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ। আতিক হত্যার কয়েক দিন আগে পুলিশ এনকাউন্টারে মারা যান তাঁর ছেলে আসাদ আহমেদ, মাত্র ১৯ বছর বয়সে। আর এক ছেলে প্রয়াগরাজের জেলে বন্দি।
এ রকম এক জন ডনের এমন পরিণতি স্বাভাবিক। মাফিয়াদের বাঁচাতে আইনসিদ্ধ প্রথায় ব্যবস্থা গ্রহণে যেমন সরকারের বিলম্ব হয়, তেমনই রাজনৈতিক পালাবদলের পর অনেক সময়ে খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ প্রভৃতি অপরাধে অভিযুক্তদের রেহাই পেতে দেখা গিয়েছে। যে দুষ্কৃতী নিরপরাধ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, তার অধিকার নেই সংবিধানের দোহাই দিয়ে নিঃশঙ্কে বেঁচে থাকার।
তারক সাহা, হিন্দমোটর, হুগলি
ব্যবসায়ীর সঞ্চয়
‘খিড়কি’ (১১-৪) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি পড়ে বোঝা গেল, চাকরিজীবীদের সঞ্চয়ের পরিমাণ নিয়ে সবাই বেশি চিন্তিত। যাঁরা ছোটখাটো ব্যবসায়ী, তাঁদের সংখ্যা এ দেশে সবচেয়ে বেশি। তাঁদের জীবিকা নির্বাহই অত্যন্ত সঙ্কটে, সঞ্চয় আরও অনেক কঠিন লড়াই হয়ে উঠেছে। এর কারণ, আজকের ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য কয়েক ডজন শিল্পপতির হাতে। এঁরা যে ভাবে সমস্ত রকম শিল্প, উৎপাদন ব্যবস্থা, ছোটখাটো ব্যবসাকে নিজেদের জালে গুটিয়ে নিয়েছেন, তাতে ছোট ব্যবসায়ীরা টিকতে পারছেন না। চপ-ফুলুরি কিনতে চাইলেও তা পাওয়া যায় বড় কোনও শিল্পপতির অ্যাপ থেকে। এই রকম ভয়াবহ অবস্থায় কী করে আর্থিক সচেতনতা বাড়বে? সরকার যদি ছোট ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা না করে শুধুমাত্র এক ডজন শিল্পপতিকেই জাল বিস্তার করতে উৎসাহ দিতে থাকে, তা হলে ডিজিটাল ভারত দুমড়ে মুচড়ে ‘ক্ষুধার্ত ভারত’ তৈরি হবে।
বিবেকানন্দ চৌধুরী, কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
কামানের স্থান
মাটি থেকে তুলে কামান মিউজ়িয়মে পাঠানোর খবরটি পড়লাম (কামান তুলতে ‘আপত্তি’ রেলকর্তাদের, কাজ বন্ধ রইল স্ট্র্যান্ড রোডে, ৫-৫)। কিছু পুরনো লেটার-বক্সও এই ভাবে সংরক্ষণের কথা উঠেছে। এর মূল উদ্দেশ্য ঐতিহ্য সংরক্ষণ হলেও, কর্তৃপক্ষের কয়েকটা বিষয় ভেবে দেখা প্রয়োজন। পাড়ার মোড়ের একটু অন্য রকম দেখতে ডাক-বাক্সটা যে এ দেশে গণ-যোগাযোগ ব্যবস্থার বিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত একটি ভিক্টোরিয়ান লেটার-বক্স, সেটা জেনে আশ্চর্য ও গর্বিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে হয়তো স্থানীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন।
এ ভাবে স্মারকগুলি তুলে ফেললে সেই সুযোগটা আর থাকে না। আসলে ‘হেরিটেজ’ বলতে শুধু বড় ইমারত নয়। তার সঙ্গে এমন সব ছোট জিনিস ছাড়াও, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্মৃতি মিলিয়ে একটি পাড়া বা এলাকা হয়ে ওঠে ‘হেরিটেজ জ়োন’। এই পত্রিকাতেই শর্মিষ্ঠা দত্ত গুপ্তর ‘বেঁধে বেঁধে থাকার পাঠ’ (৯-৪) শীর্ষক উত্তর-সম্পাদকীয়তে এই পাড়া-ভিত্তিক ইতিহাসচর্চার বিকেন্দ্রীকরণের কথা উঠে এসেছে। সেই সূত্রে বলি, এই শহরেই এমন উদাহরণ আছে যেখানে পুর প্রতিনিধি ও স্থানীয় ঐতিহ্যপ্রেমীদের উদ্যোগে নিমতলা ঘাট স্ট্রিটে প্রাচীন কামান খুঁড়ে তুলে স্থানীয় এলাকাতেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের পাশেই রাখা রয়েছে একটি পুরনো কামান। এর ফলে দর্শনীয় বস্তুগুলি এলাকার ঐতিহ্য মূল্য যেমন বাড়িয়েছে, তেমনই স্থানীয় মানুষকে করেছে ঐতিহ্য সচেতন।
এই আপত্তির উত্তরে বলা যায় যে, অমুক মিউজ়িয়মে তো আছে জিনিসটি! গিয়ে দেখলেই হয়। কিন্তু আমাদের দেশে উনিশ শতকের গোড়া থেকে মিউজ়িয়ম আন্দোলন শুরু হওয়ার পরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে কতটা প্রভাব ফেলেছে? নিজের শহরের মিউজ়িয়ম দেখতে আমরা কতটা উৎসুক? যেমন দমদমের সেন্টার জেল মোড় থেকে ক’দিন আগে যে কামানটি তোলা হল, তার জায়গা হয়েছে হাই কোর্টের জুডিশিয়াল মিউজ়িয়ম অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার-এ। শহরবাসীদের কত জন শুনেছেন এই মিউজ়িয়মটির নাম? ফলে স্থানীয় এলাকা থেকে স্মারক সরালে সংরক্ষণ হয়তো হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষের সঙ্গে স্থানীয় ঐতিহ্যের যোগ দুর্বল হয়ে পড়ে।
ঐতিহাসিক স্মারক রক্ষায় সংগ্রহশালার ভূমিকার কথা অস্বীকার না করেও, ঐতিহ্য সংরক্ষণে স্থানীয় মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়নের কথা বলতে চাইছি। এই সব জিনিস রক্ষায় স্থানীয় গণসংগঠনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত। যেখানে প্রয়োজন হবে, সেখানে সরকারি গাইডলাইন মেনে ক্লাবে ছোট ছোট সংগ্রহশালা গড়ে উঠতে পারে। এলাকা থেকে স্মারক তুলে নিয়ে গিয়ে, আর স্থানীয় মানুষকে ঐতিহ্য থেকে বিযুক্ত করে ঐতিহ্য সংরক্ষণের আন্দোলন খুব একটা সফল হবে কি?
অমিতাভ পুরকায়স্থ, কলকাতা-১২৯