Students

সম্পাদক সমীপেষু: শেষের বেঞ্চে

বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকা ভাল করে নজরই দেন না ক্লাসে চুপচাপ বসে থাকা তথাকথিত ‘ব্যাকবেঞ্চার’ ছেলেমেয়েদের। ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস কমতে কমতে একেবারে তলানিতে চলে যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:১৭
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মানবী মজুমদার তাঁর “‘প্রথম’ হওয়াই উদ্দেশ্য?” (৭-১১) প্রবন্ধে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটা সমস্যা তুলে ধরেছেন। কিন্তু সমাধান তত দিন পর্যন্ত হবে না, যত দিন না আমরা তথাকথিত ‘ভাল ছাত্র-খারাপ ছাত্র’র ধারণা থেকে বেরোতে পারছি। এক জন ছাত্র বা ছাত্রীর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য পাঠ্যবই-নির্ভর পড়াশোনার বাইরেও অনেক কিছু থাকে। যে ছেলেটি বা মেয়েটি ভাল ছবি আঁকে, খেলাধুলায় ভাল বা ভাল গান গায়, তাকে আমরা কখনও ভাল ছাত্র বা ছাত্রীর তালিকায় রাখি না। ভাল হতে গেলে তাকে ক্লাসের পরীক্ষায় ভাল ফল যেন করতেই হবে। অভিভাবক থেকে শুরু করে অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এই ধারণার বশবর্তী। বাড়িতে হোক বা স্কুলে, হামেশাই তাঁরা একঘরে করে রাখেন পরীক্ষায় ভাল ফল না করা ছেলেমেয়েদের, মারধর করেন, আরও বেশি করে চাপিয়ে দেন পড়ার বোঝা। দাবিয়ে রাখেন সেই ছেলে বা মেয়েটির প্রকৃত মেধা। বহু ছেলেমেয়ের মধ্যেকার মননশীলতাগুলো এ ভাবে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়।

Advertisement

বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকা ভাল করে নজরই দেন না ক্লাসে চুপচাপ বসে থাকা তথাকথিত ‘ব্যাকবেঞ্চার’ ছেলেমেয়েদের। ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস কমতে কমতে একেবারে তলানিতে চলে যায়। অথচ, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আদরমাখা সুনজর নিজ নিজ পছন্দের ক্ষেত্রে তাদের আরও উজ্জ্বল করে তুলতে পারে। স্কুলগুলোতে র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু হলে এই ছেলেমেয়েদের যে একদম খাদের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে, সে কথা বলা বাহুল্য। এই প্রসঙ্গে এই বিষয়টিও উল্লেখ্য যে, আমাদের রাজ্য তথা দেশের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিজেদেরই আগে সুশিক্ষা এবং ছাত্রছাত্রীদের সুশিক্ষা দানের পন্থাগুলি সম্পর্কে বিশদে অবগত হওয়া একান্ত প্রয়োজন।

অর্ণব মণ্ডল, রামচন্দ্রপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

Advertisement

শিক্ষার সার্থকতা

মানবী মজুমদারের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমি স্কুলশিক্ষক নই, তবে ১৮ বছর বয়স থেকে আজ ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্কুল ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে আসছি। কোনও সাজেশন দিতাম না এবং মজার ছলে পড়াতাম বলে কিছু অভিভাবক আমাকে পছন্দ করতেন না। কেউ কেউ তাঁদের ছেলেমেয়েদের ছাড়িয়েও দিয়েছেন। মনে আছে, নাইনের ক্লাসে ছাত্রদের প্রশ্ন দিয়েছিলাম, “পুত্রের বয়স দ্বিগুণ হলে পিতার বয়স দ্বিগুণ হয় না কেন?” একটিমাত্র ছাত্র যথাযথ বীজগাণিতিক হিসাব দেখিয়ে শেষে মন্তব্য করেছিল “তা হলে কোনও পিতাই পুত্রদের মানুষ করতে পারত না।” ছেলেটির ভাবনাচিন্তা এবং রসবোধ আমায় আশ্চর্য করেছিল। মনে হয়েছিল, পড়াশোনাটা সে যথেষ্ট উপভোগ করে। চাকরি পাক আর না পাক, তার শৈশব-কৈশোরটা অন্তত অপচয় হল না।

বর্তমানে শিক্ষার উদ্দেশ্যই কর্মসংস্থান। এই কর্মসংস্থানের আকালের যুগে যেন তেন প্রকারেণ প্রথম স্থান অধিকারের লাগামছাড়া রেষারেষি এবং তাতে বাণিজ্যিক উৎসাহের জোগান আশ্চর্যের নয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ব্যতীত এই যুগে একক প্রচেষ্টায় ব্যাপক কর্মসংস্থান অসম্ভব। কিন্তু আমাদের শিক্ষা রাজনৈতিক সদিচ্ছা উৎপাদনেও অসমর্থ। তাই শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভাবনা খুব জরুরি। প্রথমেই দেখা দরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পঠনপাঠনকে কী ভাবে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। নইলে শিক্ষার ভিতও যেমন তৈরি হবে না, তেমনই পড়াশোনার নামে শুধুই অপচয় ঘটবে শৈশব, কৈশোরের দিনগুলির।

দুর্গেশ কুমার পান্ডা, নরেন্দ্রপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

বিস্মৃত নেত্রী

‘দুই হাতে তরবারি’ (৬-১১) শীর্ষক প্রবন্ধটিতে স্বাতী ভট্টাচার্য মহিলাদের ক্ষমতায়নের যে সমস্যাগুলি তুলে ধরেছেন, তা যথার্থ। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে এক-তৃতীয়াংশ আসনে মেয়েদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে সমাধানসূত্রটি প্রয়োগ করা হয়েছে, বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার অপপ্রয়োগ দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। পঞ্চায়েত থেকে পার্লামেন্ট— সর্বস্তরেই দেখা যায় যে, পদাধিকারী ব্যক্তির পরিবারের কোনও মহিলা দলের টিকিটে জয়ী হয়ে পূর্বোক্ত পদাধিকারীর ‘রাবার স্ট্যাম্প’-এ পরিণত হন।

যে সন্তোষকুমারী গুপ্তের কথা উল্লেখ লেখিকা করেছেন, তাঁকে শুধু যে তদানীন্তন স্বরাজ্য দলের স্বার্থেই ব্যবহার করা হয়েছে, এটা মনে করলে ভুল। কেননা, বিশের দশকের শ্রমিক আন্দোলনের কথা ইতিহাসের পাঠ্যবইগুলিতে পড়ানো হলেও সেখানে সন্তোষকুমারীর মতো শ্রমিক নেত্রীর কথা কমই আলোচিত হয়। ইতিহাসবিদ সুমিত সরকার ১৯২২ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত বছরগুলিতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে যেখানে ‘সুস্পষ্ট অবনতি’ লক্ষ করেছেন (আধুনিক ভারত, পৃ ২৪৭, ১৯৯৩) সেখানে সমসাময়িক কালে মাত্র ২৬ বছরের এক তরুণীর নেতৃত্বে বাংলায় অন্তত ন’টি বড় চটকল ধর্মঘটের কথা তিনি কী ভাবে ভুলে গেলেন‌? সন্তোষকুমারীর মতো নেত্রীরা কেন হারিয়ে গেলেন সেটা বুঝতে গেলে এটাও বুঝতে হবে যে, মহিলাদের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার যে প্রবণতা, সেটা দলমত নির্বিশেষে সমস্ত পুরুষের ক্ষেত্রেই মনে হয় মজ্জাগত।

শুভেন্দু মজুমদার, কল্যাণী, নদিয়া

লড়াকু মেয়েরা

এমনটা হলে কেমন হত, সেই স্বপ্ন দেখার আকাঙ্ক্ষা পাঠক সমাজে জাগানোর চেষ্টা করেছেন স্বাতী ভট্টাচার্য। বর্তমান রাজনীতিতে মেয়েদের সংখ্যা নজরে পড়ার মতো নয়। শাসক বা বিরোধী, কেউ মেয়েদের নেতৃত্বদানকারী ক্ষমতার জায়গায় আসতে দিতে চায় না। ব্যতিক্রম আছে বইকি। এসইউসিআই(সি) দলে মহিলাদের বেশি দেখা যায়। অতি অল্পবয়সি থেকে শুরু করে বৃদ্ধাদের পর্যন্ত সংগ্রাম করতে দেখি। তাঁরা নিজেরা আদর্শগত চর্চা করেন, জনস্বার্থে প্রতিবাদ সংগঠিত করেন, এমনকি লাঠি-গুলির মুখে দাঁড়াতে ভয় পান না। এঁদের মধ্যে একে অপরকে দাবিয়ে রাখার ইচ্ছা দেখা যায় না। কে কত বেশি উন্নত হতে পারেন, তার একটা প্রচেষ্টা যেন প্রত্যেকের মধ্যে থাকে। তাঁরা প্রয়োজনীয় সাহায্য করেন একে অপরকে। সমাজের নৈতিক অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে মেয়েদের অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।

কৃষ্ণা সীট, জগদল্লা, বাঁকুড়া

নিজের কথা

অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের “‘সাধারণ মেয়ে’র বারোমাস্যা” (৪-১১) পড়ে তৃপ্তি পেলাম। গৃহবধূর গৃহকর্ম কোনও কাজই নয় এ রকম ধারণা প্রচলিত ছিল সমাজে। আজ তাঁদের প্রতি দিনের বাসন মাজা, কাপড় কাচা, ঘর পরিষ্কার, রান্নাবান্নার মতো গৃহকাজই মনোযোগ দিয়ে সমাজমাধ্যমে দেখছে মানুষ। তবে প্রবন্ধকারের সঙ্গে একমত হতে পারলাম না ‌একটি বিষয়ে— সব মহিলাই শরীর প্রদর্শন করে ব্লগ চালান না। রান্নার ব্লগ, দৈনন্দিন জীবনযাপনের ব্লগ, সেলাইয়ের ব্লগ, সব কিছুই অতি সাধারণ মেয়েরা নিষ্ঠা, সততার সঙ্গে চালান। এই ব্লগগুলিতে যেন আমাদের রোজকার জীবনের কথাই প্রদর্শিত হয়। সবাই জানেন, সিনেমা বা বিভিন্ন জগতের ‘সেলেব্রিটি’দের জীবন আমাদের জন্য নয়। যেটা নিজের জীবনের কথা বলে, সেটাই জনপ্রিয় হয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে থেকেও, তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মেয়েদের উপার্জনের একটি পথ খুলে গিয়েছে। তার জন্য মেয়েদের বিশেষ কোনও যোগ্যতার দরকার নেই, দরকার শুধু নিজের জীবনযাপনের কথাটি আন্তরিক ভাবে প্রকাশ করা। এখানেই মেয়েরা বাজিমাত করেছেন। কবেকার ফুল্লরার বারোমাস্যা থেকে আজকের রমা, মিতার বারোমাস্যা— সুন্দর যাত্রাপথ।

সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement