Inequality

সম্পাদক সমীপেষু: বিপুল বৈষম্য

পুঁজিবাদী সমাজের সূচনা থেকেই চালু আছে। বর্তমানে এই লুটতরাজ যেন লাগামছাড়া আকার নিয়েছে। যার ফল এই অভাবনীয় বৈষম্য।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৫১
Share:

দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ আজ সর্বহারায় পরিণত। প্রতীকী ছবি।

সম্প্রতি সুইৎজ়ারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম-এর বার্ষিক বৈঠকে অক্সফ্যাম ইন্টারন্যাশনাল-এর পেশ করা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভারতে যত সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে, তার ৪০.৫ শতাংশ কুক্ষিগত হয়েছে ধনীতম ১ শতাংশ মানুষের হাতে। অন্য দিকে, দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষের ভাগে পড়েছে এই সম্পদের মাত্র ৩ শতাংশ। দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ আজ সর্বহারায় পরিণত।

Advertisement

পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার নিজস্ব নিয়মের কারণে এমন ঘটনা ঘটে এবং তা পুঁজিবাদী সমাজের সূচনা থেকেই চালু আছে। বর্তমানে এই লুটতরাজ যেন লাগামছাড়া আকার নিয়েছে। যার ফল এই অভাবনীয় বৈষম্য। কিন্তু শোষণ-লুণ্ঠন এমন ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারল কী করে? পারল বোধ হয় শ্রমিক শ্রেণি তথা শোষিত মানুষের প্রতিরোধ আগের থেকে অনেক দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে। শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই শ্রমিক আন্দোলন, শোষিত মানুষের আন্দোলন দুর্বল হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের শক্তিও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই মালিকদের আক্রমণও হয়ে উঠেছে একতরফা, বেপরোয়া এবং তা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। আর মালিকদের অনুগত দলগুলি ও তাঁদের পরিচালিত সরকারগুলি এ কাজে মালিকদের সহযোগিতা করে চলেছে।

সোভিয়েটের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের পতনের পরই যেন সাধারণ মানুষের উপর এই আক্রমণ তীব্র আকার নিয়েছে। যত দিন সমাজতান্ত্রিক শিবির মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল, তত দিন তা শ্রমিক শ্রেণির কাছে লাইট হাউসের মতো দিকনির্দেশকের কাজ করেছে। শোষণমুক্ত সমাজের বাস্তব রূপ হিসাবে তা প্রতিনিয়ত অনুপ্রণিত করেছে তাঁদের। সমাজতন্ত্রের প্রতি দেশের শোষিত মানুষের প্রবল আকর্ষণ দেখে সেই সময় সরকারগুলি শ্রমিকদের স্বার্থে নানা আইন তৈরিতে বাধ্য হয়েছিল। বাধ্য হয়েছিল তাদের জন্য নানা ন্যায্য সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করতে। এ সবের চাপে এবং আন্দোলনের জোয়ারের প্রভাবে মালিকরাও সেই সময় শ্রমিকদের প্রতি কিছুটা নমনীয় মনোভাব নিয়ে চলতে বাধ্য হয়েছিলেন।

Advertisement

কিন্তু নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সমাজতন্ত্রের পতনের পর সেই পতনের বিজ্ঞানসম্মত কারণটিকে যথাযথ ব্যাখ্যা করার মতো উপযুক্ত বামপন্থী নেতৃত্বের অভাবে সে কথা দেশের মেহনতি মানুষকে বোঝানো সম্ভব হয়নি। ফলে এ দেশে শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বও মুখ থুবড়ে পড়েছেন। বিশ্ব জুড়ে শ্রমিক আন্দোলনে নেমে এসেছে হতাশা। তারই সুযোগ নিয়েছেন মালিকরা, শোষণকে করে তুলেছেন আগের থেকে অনেক তীব্র।

মনে পড়ে যায় মনীষী রোম্যাঁ রোলাঁর সেই ঐতিহাসিক উক্তি— সোভিয়েট ইউনিয়ন কোনও দিন যদি ধ্বংস হয়, তবে শুধু বিশ্বের সর্বহারারাই ক্রীতদাসে পরিণত হবেন না, সামাজিক বা ব্যক্তিগত সমস্ত রকমের স্বাধীনতারই সমাধি ঘটবে। ইউরোপ জুড়ে কয়েক শতাব্দী ধরে গভীর অন্ধকার নেমে আসবে। তাঁর কথা আজ বর্ণে বর্ণে মিলে যাচ্ছে।

শিলাই মণ্ডল,গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর

পুঁজির চরিত্র

সাম্প্রতিক অক্সফ্যাম রিপোর্টে বৈষম্যের এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়েছেন। অবশ্য শুধু আমাদের দেশই নয়, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে শ্রমিক শ্রেণি-সহ সাধারণ মানুষ মালিক শ্রেণির নজিরবিহীন আক্রমণের শিকার। করোনা অতিমারির সময়ে দেশে দেশে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ার পর্যায়ে চলে গেলেও ধনকুবেরদের মুনাফা আকাশ ছুঁয়েছে। সর্বত্র লাখে লাখে শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই হয়েছেন। এমনকি অতিধনী দেশগুলিতেও সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে কত করুণ, তা প্রকট হয়েছে। সমাজের নীচের তলার মানুষের জন্য আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কোনও সুযোগই জোটেনি। অনলাইন শিক্ষার নামে নীচের তলার মানুষের থেকে শিক্ষার সুযোগ প্রায় কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের ছুড়ে ফেলা হয়েছে অশিক্ষার অন্ধকারে। সর্বত্র খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে লাফিয়ে, মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বহু গুণ বেড়ে গেছে।

এ দেশেও অতিমারির সময়ে যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, হাজারে হাজারে মারা যাচ্ছেন, মৃত্যুর সময়ে একটু অক্সিজেন বা জীবনদায়ী ওষুধ, কিছুই পাচ্ছেন না, কলকারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ রোজগারহীন হয়ে অর্ধাহারে অনাহারে কাটাচ্ছেন, তখনও দেশের মালিক শ্রেণির রাঘববোয়ালদের মুনাফা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। কারও মুনাফা হয়েছে ২০০ শতাংশ, কারও ৩০০ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর অতিঘনিষ্ঠ গৌতম আদানি বিশ্বের ধনীতমদের তালিকায় একেবারে প্রথম দিকে উঠে এসেছেন। শুধু ২০২২ সালেই তাঁর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। আর দেশের ১০০ জন ধনীতম পুঁজিপতির সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬,০০০ কোটি ডলার। অন্য দিকে, ছোট ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসা, যেগুলি এই সময়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তার বেশির ভাগই আর খোলেনি। কার্যত সেগুলিকে গ্রাস করে নিয়েছে বৃহৎ পুঁজি। তাদের কর্মীদের ঠেলে নামিয়েছে সর্বহারা শ্রেণির স্তরে।

কিন্তু এই যে ভয়ঙ্কর বৈষম্য, যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, এর ভারেই যে এক দিন এই ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে, এটা কি পুঁজিপতিদের অজানা? অজানা নয়। কিন্তু পুঁজির চরিত্র এমনই যে, তা কিছুতেই থামতে দেয় না। থামলেই তার বিপদ। তার গতিতে পথের দু’পাশে কারা পড়ে থাকল, তা সে দেখতে পায় না। এ গতি যাতে আত্মঘাতী না হয়ে পড়ে, তার জন্য অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগ মাঝে মাঝেই প্রকাশ পায়। দরিদ্রদের মধ্যে কিছু সম্পদ বিতরণ করারও পরামর্শ তাঁরা দেন। কিন্তু বাস্তবে এই বৈষম্যকে, যা পুঁজিবাদী শোষণ প্রক্রিয়ারই ফল, তাকে আটকানোর কোনও ইচ্ছা মালিকদের নেই। কারও ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর এটা নির্ভর করে না, নির্ভর করে পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রক্রিয়াটিরই উপর, যেটাকে পুঁজিপতিরা সব সময় রক্ষা করে যান। এই ব্যবস্থা থেকে তৈরি হওয়া সঙ্কটের সম্পূর্ণ বোঝা শ্রমিক এবং নিপীড়িত মানুষের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে তাঁরা সফল বলেই ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে আজ ৩ শতাংশ সম্পদ৷

ইন্দ্রজিৎ মিত্র, কলকাতা-৩১

মেয়েদের ক্রিকেট

‘মেয়েদের আইপিএল থেকে রেকর্ড অর্থ, দল নেই কলকাতার’ (২৬-১) প্রতিবেদনটি দেখে অত্যন্ত দুঃখিত এবং হতাশ হয়ে পড়লাম। প্রতিবেদনটি পড়ে যতটা বুঝলাম, আর্থিক কারণেই কেকেআর নিলামে অংশগ্রহণ করেও পিছিয়ে গেল। নিলামে সর্বনিম্ন দর ছিল ৭৫৭ কোটি টাকা। কিন্তু ভারতে প্রথম মেয়েদের আইপিএল-এ বঞ্চিত হল ঝুলন গোস্বামীর বাংলা, বঞ্চিত হল তিলোত্তমা। অথচ, আমদাবাদ, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, দিল্লি, এবং লখনউ বিপুল অর্থ ব্যয় করে কিনে নিয়েছে আইপিএল থেকে নিজ নিজ স্বত্ব। কেকেআর সেটা পারল না। আবার কলকাতার জন্য অন্য কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি-ও এগিয়ে এল না। তাই কলকাতাবাসী এবং বাংলার মানুষ মেয়েদের আইপিএল-এ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে গলা ফাটানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হল।

কলকাতা তথা বাংলা চিরদিন খেলা পাগল। কিন্তু প্রথম মেয়েদের আইপিএল ক্রিকেটে কলকাতা নেই— ভাবতে পারছি না। শাহরুখ খানের ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি কেকেআর কলকাতার জন্য ঝাঁপালে আমাদের মতো ক্রিকেটপ্রেমীদের ভাল লাগত। কলকাতা এবং বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা গর্ব বোধ করতেন। যা-ই হোক, মেয়েদের এই আইপিএলের পাঁচটি দল সামগ্রিক ভাবে মহিলা ক্রিকেট জগতে একটা বিপ্লব তৈরি করুক, মনেপ্রাণে সেটাই কামনা করি।

স্বপন আদিত্য কুমার বিশ্বাস, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement