Society

সম্পাদক সমীপেষু: বোকা হবে কেন?

আজকের ইঁদুর-দৌড়ে ঘরের একরত্তিদের প্রথম হতে হবে— এই কথাগুলি শিখিয়েই আমরা তাদের জীবনযুদ্ধে নামতে বাধ্য করি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:১৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

অর্ঘ্য ঘোষের “‘কাউকে ঠকাতে পারব না’, রিক তাই চায় বোকা হতে” (৩০-৩) শীর্ষক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। সুকুমার রায়ের কবিতায় বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই বোকা মাঝিকে তার জীবনের বারো আনা ফাঁকির কথা বুঝিয়েছিল। পরবর্তী কালে মাঝি প্রমাণ করে দিয়েছিল, সেই বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাইয়ের জীবনটাই ষোলো আনা মিছে। একরত্তি ছেলেটি ‘বোকা’ হয়েই বেঁচে থাকতে চায় শুনে অনেকেই যেমন বিস্মিত হবেন, তেমনই অনেক অভিভাবকও আশ্চর্য হতে পারেন। কারণ, আজকের ইঁদুর-দৌড়ে ঘরের একরত্তিদের প্রথম হতে হবে— এই কথাগুলি শিখিয়েই আমরা তাদের জীবনযুদ্ধে নামতে বাধ্য করি। এখন সব ক্ষেত্রেই এক জন চালাক মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

Advertisement

আমরা কেউই আজকের দিনে কুমুদের মতো বলে উঠতে পারি না, “...কী জানো জয়া, সবাই নিজেকে ভোলায়। খিদে-তেষ্টা পেলে তা মেটানো, ঘুম পেলে ঘুমানো, এসব ছাড়া জীবনটা আমাদের বানানো, নিজেকে ভোলানোর জন্য ছাড়া বানানোর কষ্ট কে স্বীকার করে? বেশিরভাগ মানুষের এটা বুঝবারও ক্ষমতা থাকে না, সারাজীবনে ভুলও কখনও ভাঙে না, বুঝতেই যদি না পারা যায়, ভুল আর তবে কিসের ভুল? কেউ কেউ টের পেয়ে যায়, তাদের হয় কষ্ট। জীবনকে যারা বুঝে, বিশ্লেষণ করে বাঁচতে চায় এইজন্য তারা বড় দুঃখী। বড় যা-কিছু আঁকড়ে ধরতে চায় দেখতে পায় তা-ই ভুয়ো। এইজন্য এই ধরনের লোকের মনে জীবন থেকে বড় কিছু প্রত্যাশা থাকা বড় খারাপ— যত বড় প্রত্যাশা থাকে তত বড় দুঃখ পায়।...” (পুতুলনাচের ইতিকথা, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়)

আসল কথা, এই ভুয়ো জগতে কুমুদের মতো মানুষগুলোর বড়ই অভাব। তাই বাবার মুখে ‘সবাই আমাকে ঠকিয়ে নিচ্ছে’— শোনার পরিপ্রেক্ষিতে রিক বাগদি যখন অকপটে বলে ওঠে, কিন্তু বাবা কাউকে ঠকিয়েছে এমনটা শুনিনি। বাবার মতো আমিও কাউকে ঠকাতে চাই না— তখন এই চালাক পৃথিবীতে বাস করা আমাদের খানিক অবাক তো হতেই হয়।

Advertisement

বরং, এমন গভীর বোধের জীবনকথা শুনলে প্রথমেই অভিভাবকেরা ‘তোর দ্বারা কিস্যু হবে না’ বলে ছোটদের পিছনে ‘রে-রে’ করে তেড়ে আসেন। ফলে, নিষ্পাপ মনে কাঁটার মতো বিঁধে থাকা অনেক কথাই সমাজের ছোটরা আজ বলতে পারে না। এই দমচাপা প্রেশার কুকারে প্রতিনিয়ত সিদ্ধ হয়ে চলে আজকের বাল্য-কৈশোর। মনের সুকুমার বৃত্তিগুলোর স্ফুরণ যে বয়সে ঘটার কথা, তখন থেকেই অভিভাবকেরা তাদের জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার পাঠ দিয়ে চলেন। আর এখানেই আমরা বড়রা ভুল করে ফেলি। তাই একরত্তির মুখে বোকা হতে চাওয়ার কথায় সভ্য সমাজ ঊষর মরুভূমিতে এক টুকরো সবুজের স্বতন্ত্র দৃশ্যটি দেখতে পায়। লাভপুরের তৃতীয় শ্রেণির রিক বাগদি অতি সহজেই জীবনের জটিল বোধের কথাগুলি সহজ আকারে বলে দিতে পারে, যা আমরা বড়রা সমগ্র জীবন জুড়ে বলে উঠতে পারি না। কারণ মানবজমিন জুড়ে ধূর্ততার বীজ বপনেই যে ব্যস্ত হয়ে রয়েছি আমরা।

সঞ্জয় রায়, হাওড়া

আশার আলো

অর্ঘ্য ঘোষের প্রতিবেদন চিন্তাধারায় একটা বড় ধাক্কা দিল। রিককে সাধুবাদ। ও অনেকের তথাকথিত অগাধ পাণ্ডিত্যের দুর্গে সপাট ধাক্কা দিয়েছে। এমন সবুজ চিন্তাধারা এই অবুঝ কিশোরের মধ্যে যে জন্মেছে, নিশ্চয়ই তা গবেষণার বিষয়। অনেকেই এর থেকে যথেষ্ট আশার আলো দেখতে পাবেন, ভাববেন, ‘এখনও সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি।’ তবে লাভপুরের মতো দেবানন্দপুর, ঘাটশিলা, কাঁঠালপাড়া, জোড়াসাঁকো, চুরুলিয়া— আরও কত এমন পবিত্র মাটি রয়েছে, যেখানে ঠিকমতো জল-বীজ-সার পড়লে এমন অনেক রিককে পাওয়া যেতেই পারে।

এরাই হয়তো সমাজের দীর্ঘ দিনের জমে থাকা ক্লেদ সরিয়ে গণতন্ত্রের নতুন সূর্য তুলে আনবে, যা চেয়েছিলেন বিবেকানন্দ, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল। আমরা যারা ‘এ দেশে আর ভাল কিছু হবে না’ এই হতাশায় ভুগি, তারাও নতুন সূর্যের আলোয় উদ্দীপিত হয়ে নতুন ভারতে বাঁচতে শিখব।

সাধন মুখোপাধ্যায়, অরবিন্দনগর, বাঁকুড়া

সৃষ্টির দাস

‘যৎকিঞ্চিৎ’ (২৪-৩) বিভাগে মনুষ্য সমাজের অঙ্গ হয়ে ওঠা এক যন্ত্রমানবের শিহরন জাগানো কীর্তির এক অনবদ্য বিশ্লেষণাত্মক মন্তব্য পড়লাম— “এ এক আশ্চর্য সময়, যখন মানুষ ক্রমে রোবট হতে চাইছে তার যাবতীয় বোধ, আবেগ বিসর্জন দিয়ে; আর রোবট হয়ে উঠছে মানুষ।” রিয়াধে অনুষ্ঠিত একটি প্রযুক্তি সম্মেলনে মনুষ্য-সদৃশ এক রোবট এক মহিলা সাংবাদিকের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোবটটির প্রস্তুতকারক সৌদি রোবোটিক্স কোম্পানি কিউএসএস জানাচ্ছে যে, রোবটটি মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে স্বাধীন ভাবে কাজ করেছিল। আজকাল অশ্লীল-শ্লীল নিয়ে বেশির ভাগ খবর আর তর্ক ছাপার থেকে বেশি ডিজিটাল মাধ্যমে ঘুরপাক খায়। সপ্তম-অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলে একটি রচনা আমাদের প্রত্যেকটি পরীক্ষার আগে বাংলা এবং ইংরেজিতে তৈরি করে রাখতে হত— ‘বিজ্ঞান আশীর্বাদ, না অভিশাপ’। ইংরেজি রচনাটি সাধারণত শুরু হত, ‘সায়েন্স— আ গুড সার্ভেন্ট বাট আ ব্যাড মাস্টার’ দিয়ে। ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা পড়ার আগে হয়তো রচনার এই বিষয়টি কারও মাথায় আসেনি। ১৯৫৪ সালে জর্জ ডেভল দ্বারা প্রথম বারের মতো ডিজিটাল ভাবে পরিচালিত যান্ত্রিক হাত আবিষ্কারের পর এটা হয়তো এক বিরাট কেলেঙ্কারিই বটে। ১৯৫৯ সালে প্রখ্যাত শিল্পী ধীরেন বলের লেখা ও রঙিন ছবিতে ছোটদের এক অসাধারণ ২২ পাতার বই তুতু-ভূতু প্রকাশিত হয়। ভূতু নামের ছোট বেড়ালটি খেলতে খেলতে ছানা-পানা নামের দু’টি মুরগি ছানার ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ে রক্তারক্তি করে দেয়। তাদের মায়ের নালিশ শুনে ভূতুর মা ভূতুকে এইসা বকুনি দিল— ‘ছি-ছি ভূতু, এ কি বদ স্বভাব তোর? ভদ্রলোকের ছেলে হয়ে এ কি নোংরামি! এখন আমরা মানুষের মতোই সভ্য আর শিক্ষিত।’

ঘটনা হচ্ছে রোবট ধীরে ধীরে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠছে। চাষবাসে, কলকারখানায় উৎপাদনে, স্বাস্থ্য পরিষেবায়, পরিবহণ, এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত হচ্ছে তারা। কিন্তু রোবটের কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যখন মানুষের নিয়ন্ত্রণ পেরিয়ে নিজেই চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করতে যায়, তখন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সুযোগ থেকে যায়। অর্থাৎ, রোবটচালিত যাত্রী-বোঝাই গাড়ি, বা হাঁটু বা হৃদ্‌যন্ত্রের প্রতিস্থাপনে ব্যবহৃত রোবটিক হাত যদি ভুল করে বসে, তা হলে তার মাসুল কে দেবে? মানুষের মস্তিষ্ক বেশি দিন অনভ্যাসের দাস হয়ে বসে থাকলে ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা হারাতে বাধ্য, এ আজ পরীক্ষিত সত্য। ভয় হয়, রোবটগুলি ক্রমশ যে ভাবে পরিশীলিত হয়ে উঠছে তাতে তারা আগামী দিনে মানুষকে জাগতিক শ্রমের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে সুযোগ-সুবিধার আনন্দ দিয়ে এক ইউটোপিয়ান ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে। এমনটা হলে কিন্তু মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তার ধার ও ভারের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭

বেপরোয়া

বেলেঘাটা থেকে শিয়ালদহ স্টেশন অভিমুখে অটোগুলি বেপরোয়া ভাবে যাতাযাত করে। ফলে স্টেশন থেকে বেরোনো বা স্টেশন অভিমুখী যাত্রীদের দুর্ঘটনার ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকতে হয়। এখানে পুলিশকর্মী থাকলেও, তাঁরা নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৭৫

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement