শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, যাত্রা, থিয়েটার ফেলনা জিনিস নয়। এতে লোকশিক্ষে হয়। দর্শকদের চাহিদার অভাবে ‘লোকশিক্ষে’র এই দু’টি শিল্পের বাতি টিমটিম করে জ্বলছে। এ জন্য পরোক্ষ ভাবে সিরিয়াল দায়ী।
সন্ধ্যা দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। ছোটবেলায় মা, কাকিমাদের এ সময়ে তুলসীতলায়, ঠাকুরঘরে প্রদীপ, ধূপ জ্বালিয়ে, শাঁখ বাজিয়ে আরতি করতে দেখেছি। এ সময়ে ছেলেমেয়েরা খেলার মাঠ থেকে ফেরে। পুরুষদের সান্ধ্য আড্ডা জমে উঠত গাঁয়ের চণ্ডীমণ্ডপে, চায়ের দোকানে, বাড়ির উঠোনে। আলোচ্যসূচিবিহীন আলোচনায় উঠে আসত নানা প্রসঙ্গ। আড্ডা থেকে সবাই নানা বিষয়ে ঋদ্ধ হতেন। সিরিয়াল এসে মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে শুধু সন্ধ্যা নয়, গভীর রাত পর্যন্ত সময়টাকে একাই দখল করে নিয়েছে। এর জন্য সন্ধ্যার কাজকর্ম হচ্ছে তাড়াহুড়ো করে। তাতে না থাকছে নিয়মনিষ্ঠা, না থাকছে ভালবাসা। এক ঘরে ছেলেমেয়েকে পড়তে বসিয়ে দিয়ে অন্য ঘরে সিরিয়ালে মগ্ন বাবা, মা। ওরা কী পড়ছে, না পড়ছে, সে দিকে খেয়াল নেই। সিরিয়ালের দৌরাত্ম্যে আড্ডা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, যা মানুষকে নতুন বিষয়ে জ্ঞান, চিন্তা-ভাবনা, সৃজনশীলতা, বিনোদন ইত্যাদি মনের খোরাক জোগাত। সন্ধ্যায় কেউ কারও বাড়িতে আসুক, এটা অনেকেই পছন্দ করেন না। খুব দরকারে কেউ এলেও বাড়ির লোক ভাবেন, কখন এ আপদ বিদায় হবে।
এ কথা অনস্বীকার্য, এই পেশার সঙ্গে বহু মানুষের রুজি-রোজগার জড়িয়ে আছে। তাই নিয়ন্ত্রিত ভাবে সিরিয়াল থাকুক। লোকশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুক।
গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
অলৌকিক
বাংলা সিরিয়াল এখন বাঙালির লাইফলাইন, কারণ এত সস্তায় আর কোনও বিনোদন পাওয়া সম্ভব নয়। পকেটে পয়সা না থাকলে শাকচচ্চড়িকে বিরিয়ানি ভেবে খেতে হয়। তাই পাঁচনকে মধু বলে গিলতে বাধ্য হচ্ছে বাঙালি। সিরিয়াল-পালা মোটামুটি তিন রকম— সামাজিক, পৌরাণিক আর ঐতিহাসিক। ঐতিহাসিকের বাজার খুব একটা ভাল নয়। তাই প্রথম দুটোই চলে। সামাজিকের মধ্যে শাশুড়ি-বৌমার কূটকচালি বড্ড ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। এখন বাজারে বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্ক চলে বেশি। সিরিয়ালের নায়কদের দুটো-তিনটে বৌ। কখন কে আসল হয়ে উঠবে, লেখকও জানেন না। জানে টিআরপি। বাঙালির যৌথ পরিবার এখনও সিরিয়ালে বেঁচে আছে। কারণ, এক জনের ডায়ালগের পরে বাকি দশ জনের প্রতিক্রিয়া দেখালেই সময় কাবার। তার উপরে আছে ‘আগে যা দেখেছেন’ বা ‘পরে যা দেখবেন’। একই লেখকের প্রাধান্য থাকায় ডায়ালগ বড় একঘেয়ে। যাত্রাপালার আওয়াজের মাত্রা কমালেই এখন সিরিয়াল। বাংলায় প্রায় বারোটা বিনোদন চ্যানেলে ৩৫টা মতো সিরিয়াল চলছে, যেখানে প্রচুর অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে কাজ করছে, যাদের প্রতিভার অভাব নেই। দরকার ভাল লেখকের, নতুন কিছু করার ইচ্ছের।
এ বার বলি ঠাকুর-দেবতার পালার কথা। বাঙালির ভক্তির কাছে কেউ পারবে না। তাই পর পর তিন সপ্তাহ ধরে এক নম্বরে ভক্তিমূলক সিরিয়াল। দেবদেবীদের মধ্যে মা কালীর মার্কেট সবচেয়ে ভাল। কালী এলে রামকৃষ্ণ আসবেনই। এটা একেবারে মারকাটারি জুটি। আর এঁদের মুখে যা ইচ্ছে ডায়ালগ বসানো যায়। যেটা শ্রীরামকৃষ্ণ সবচেয়ে অপছন্দ করতেন, সেই অলৌকিক শক্তি দেখানো হচ্ছে। মায়ের পায়ের ফুল ঠেকালে রোগ সেরে যায় দেখালে টিআরপি হয়তো বাড়ে, কিন্তু বাংলা একশো বছর পিছিয়ে যায়। সবচেয়ে মজার বিষয়, হয়তো দেখানো হচ্ছে রামকৃষ্ণ, কিন্তু লেখা হচ্ছে, ‘এটি একটি কল্পিত চরিত্র’। ভাবের ঘরে চুরি। কেন বাংলা সিরিয়াল পর্বের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে না, ভাল ভাল পরিচালকদের সুযোগ দেয় না, বা বড় লেখকদের গল্প নিয়ে সিরিয়াল বানায় না, বোঝা মুশকিল। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি চ্যানেলেরই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। দর্শকদের রুচি তৈরি করাও একটা কাজ।
মিতালি মুখোপাধ্যায় (খাঁ), কলকাতা-৪৭
ছাইভস্ম
সোনালী দত্তের ‘বিষাইছে বায়ু মেগাসিরিয়াল’ (৩-১২) প্রসঙ্গে বলি, অদ্ভুত এক অসুস্থতার বাতাবরণ তৈরি করছে সিরিয়াল! একই চরিত্রের একাধিক বিয়ে তো অধিকাংশ সিরিয়ালের ‘থিম লাইন’। শুধুমাত্র বিয়ে নিয়েই কম করে ২৫-৩০টা পর্ব! সে দিন মেয়ে জানাল যে, আগামী ১৬ এপ্রিল ছোটু-র বিয়ের ‘সঙ্গীত’। ভাবলাম, বিয়ে উপলক্ষে গান বাঁধা হয়েছে, তারই এক আনন্দানুষ্ঠান! কিন্তু বুঝিয়ে দেওয়া হল যে, এই সব আমাদের সময়ে ছিল না! ওই দিন জমাটি হিন্দি-ইংরেজি গানের সঙ্গে তুমুল নাচানাচি হবে। নাচার সাদর আমন্ত্রণও জুটল! মেগাসিরিয়ালের আর্শীবাদ আর কি!
এখন আবার ভয়ঙ্কর ভাবে হিংস্রতা ঢুকে গিয়েছে সিরিয়ালের রন্ধ্রে রন্ধ্রে! একেবারে প্রকাশ্যেই শরীরের যেখানে-সেখানে মারণাস্ত্রের আঘাত, ফিনকি দিয়ে রক্তপাতের হাড় হিম-করা দৃশ্য! ব্যভিচারিতার কৌশলগত ফর্মুলাও বিবৃত হচ্ছে! গল্প-উপন্যাস পড়ার ঝোঁক তো প্রায় অস্তমিত। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিমোট হাতে ছাইভস্ম গেলা।
বিশ্বজিৎ কর, কলকাতা-১০৩
গল্পের ধাক্কা
ধন্যবাদ লেখক অরিন্দম শীলকে। তাঁর লেখা ‘কালশিটে’ (রবিবাসরীয়, ৮-১১) গল্পে তিনি স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানার খুব সুন্দর সামাজিক ও রাজনৈতিক বর্ণনা দিয়েছেন। সাত বছর ধরে একটা রাজনৈতিক দল সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত ভাবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে রেখেছে। ভাবতে অবাক লাগে, এই নিয়ে বিরোধী দলগুলোরও বিশেষ কোনও হেলদোল নেই। নিশ্চুপ আমাদের নাগরিক সমাজ। সংবাদমাধ্যমগুলোকেও বিশেষ কোনও উচ্চবাচ্য করতে দেখি না। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও মৌন।
অথচ, এই স্কুল সার্ভিস কমিশনই এক সময় গ্রামবাংলার সরকারি স্কুলগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। শিক্ষা এবং শিক্ষক, দুই-ই প্রবহমান ছিল। নিয়োগ বন্ধের ফলে আজ ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ধসে পড়েছে, কয়েক জন শিক্ষক মিলে হিমশিম খাচ্ছেন স্কুল চালাতে, আর দোষ গিয়ে পড়ছে সরকারি স্কুলের। কারণ সেখানে পড়াশোনা হয় না। সব পড়াশোনা হয় ইংরেজি মিডিয়াম প্রাইভেট স্কুলে। অলিতে-গলিতে ঘুপচি অন্ধকারময় ভাড়া বাড়িতে গজিয়ে উঠেছে অমুক অ্যাকাডেমি, তমুক অ্যাকাডেমি। না আছে নিশ্বাস ফেলার জায়গা, না আছে খেলাধুলোর জায়গা। আর না আছে সেই স্কুলের শিক্ষকদের সম্মানের সঙ্গে দিন যাপন করার মতো উপযুক্ত বেতন। লাখ টাকা দিয়ে বিএড করে ছেলেমেয়েরা বাধ্য হয় তিন হাজার টাকা মাসমাইনের চাকরি করতে। হতাশায় আত্মহত্যার তালিকাটাও বেশ বড়। উল্টো দিকে, অভিভাবকেরা বাধ্য হন মাসিক দু’হাজার টাকারও বেশি স্কুল ফি দিয়ে তাঁদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে।
অথচ, এক দশক আগেও বছর বছর শিক্ষক নিয়োগ হত। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে রেজ়াল্ট ভাল করা সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। কেন হল এই পরিবর্তন? আজও চলছে ভোটের আগে মিথ্যে ভাষণ আর চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর তাচ্ছিল্য। ভাল লাগল যে, অরিন্দম শীল কিছুটা হলেও ধাক্কা দিয়েছেন এই অচলায়তন নাগরিক সমাজকে।
গীতশ্রী কোলে, শ্রীরামপুর, হুগলি
হানা
হুগলি জেলার সিঙ্গুর থানার অন্তর্গত বেড়, অপূর্বপুর, জলাঘাটা প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দারা হনুমানের উৎপাতে অতিষ্ঠ। হনুমানের দল মাঠের ফসল নষ্ট করছে, বাড়িতে ঢুকে জিনিস তছনছ করছে। তাদের আঁচড়ে অনেকেই অল্পবিস্তর আহত হচ্ছেন। তাই বন দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, অবিলম্বে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হোক।
তাপস দাস, সিঙ্গুর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।