সেমন্তী ঘোষের ‘এখন সতর্ক থাকার সময়’ (১-১) লেখাটা মন দিয়ে পড়লাম। লেখক কলকাতাবাসী, তাই কলকাতাকেই ‘মিনি ভারতবর্ষ’ বলে উল্লেখ করেছেন। আমরা কিন্তু বরাবরই জেনে এসেছি পশ্চিমবঙ্গে মিনি ভারতবর্ষ হচ্ছে খড়্গপুর। স্বাধীনতার আগে খড়্গপুরের জনসংখ্যায় বাঙালি ছিল সংখ্যালঘু। এর পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তুরা খড়্গপুরে আসতে শুরু করেন। বাঙালির সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এখনও মনে হয় অবাঙালির সংখ্যাই বেশি হবে। কলকাতায় হয়তো ভিন্ন প্রদেশের লোকসংখ্যা বেশি, কিন্তু খড়্গপুরে ভারতের সব প্রদেশের লোক আছে, কম সংখ্যায় হলেও। সেই হিসেবে খড়্গপুর বেশি মেট্রোপলিটান।
খড়্গপুরে স্বাধীনতার পর যতগুলো সাধারণ নির্বাচন হয়েছে, তাতে মাত্র দু’বার ছাড়া সব বিধায়কই অবাঙালি। মমতাজ নারায়ণ চৌবে, জ্ঞান সিংহ একদা এখানকার বিধায়ক ছিলেন। জ্ঞান সিংহ তো দশম বারে নির্বাচনে পরাজিত হলেন। জিতলে বিশ্ব-রেকর্ড হত। খড়্গপুরের বাঙালিদের কথ্য ভাষাতেও অন্য রাজ্যের ভাষা অনুপ্রবেশ করেছে। যেমন ‘এতে তোমারও পরেশানি, আমারও পরেশানি।’ ‘ধাগা’ যে সুতো, ‘পতংগ’ যে ঘুড়ি, আমরা অনেক পরে জেনেছি। খড়্গপুরে অনেক ছত্তীসগঢ়িয়া পাড়া ছিল। এঁদের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। এঁরা এখন দেশাভিমুখী হচ্ছেন। এটা দুঃখের খবর বইকি।
সঞ্জয় চৌধুরী, খড়্গপুর
বসুধৈব
সেমন্তী ঘোষ বাঙালিদের স্বভাব খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আমাদের এই রাজ্যে বিভিন্ন প্রদেশের লোক আছেন, কেউ বংশ পরম্পরায়, আবার কেউ কাজের তাগিদে এসেছেন। যাঁরাই এসেছেন, তাঁরা বাংলাকে ভালবেসে ফেলেছেন। অন্য দিকে বাঙালিও তাঁদের আপন করে নিয়েছে। বাঙালি নিজের সংস্কৃতিকে যেমন ভালবাসে, তেমনই অন্যের সংস্কৃতিকেও সম্মান করে। বাঙালি খাদ্যরসিক। সে সব প্রদেশের খাবার আপন করে নিয়েছে, তা সে ইডলি-দোসাই হোক, কি মোগলাই খানা। বাঙালি বড়দিন পালন করে, ছটপুজোর প্রসাদ খায়, ইদের নিমন্ত্রণও গ্রহণ করে। বাঙালির ভালবাসার ক্ষমতা অসীম। তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যদি বাঙালি-অবাঙালি, হিন্দু-মুসলমান ভেদ করার চেষ্টা করা হয়, তা হলে সে চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না।
সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া
আরও সত্য
‘বিদ্বেষই একমাত্র সত্য?’ (সেমন্তী ঘোষ, ১৮-১২) প্রসঙ্গে বলি, এক দিন দুপুরের ফাঁকা ট্রেনে রিষড়া থেকে হাওড়া আসছিলাম। আমার সামনের সিটে ৪০-৪৫ বছর বয়সি দুই বন্ধু পাশাপাশি বসে গল্প করছিলেন। এক জন সদ্য বাংলাদেশে তাঁর কাকার বাড়িতে গিয়ে থাকার অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন— “কাকিমা পুজো করবে বলে এক জন প্রতিবেশী ভদ্রমহিলা ফুল দিয়ে গেলেন। এর পর বছর ত্রিশের এক যুবক ঠাকুরকে দেওয়ার জন্য তার গাছের কলা দিয়ে গেল। কাকিমা শাঁখ বাজিয়ে, উলুধ্বনি দিয়ে পুজো করলেন। কাকিমার মুখে শুনলাম যে, ওঁরা দু’জনেই ছিলেন মুসলমান। কাকিমা আরও বললেন যে, গ্রামের মুসলমানরা সবাই তাঁদের যথেষ্ট ভালবাসে। যেখানে যা-ই হোক না কেন, তাঁদের গ্রামে হিন্দু, মুসলমান পরস্পর মিলেমিশেই থাকে।”
বাংলাদেশে কোথাও, কখনও হিন্দুদের উপর নিপীড়ন হয়নি, এ কথা বলা যায় না। কিন্তু সেখানে সব গ্রামে হিন্দুরা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে, লুকিয়ে পুজো করে, শাঁখ বাজাতে, উলুধ্বনি দিতে সাহস পায় না, এ কথাও মানা যায় না। যাঁরা নিয়মিত বাংলাদেশের খবর রাখেন, তাঁরা এটা জানেন। বিদ্বেষবাদী মানুষদের জানা দরকার যে, দুর্গাপূজা কমিটিগুলোকে বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে। তা ছাড়া, জন্মাষ্টমী বাংলাদেশে জাতীয় ছুটির দিন। হিন্দুপ্রধান দেশ ভারতেই এটা জাতীয় ছুটি নয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের মাঝে মাঝেই নির্মম ভাবে অত্যাচারিত হতে হয়। সেটা কি হিসেবের মধ্যে পড়ে না?
ভোটবাক্সের সৌজন্যে শাসনযন্ত্রের মসনদে পালা বদল হয়। কিন্তু বিভেদকামী মানুষগুলোর মানসিকতা বদলায় না। উপলব্ধি করি যে, এক শ্রেণির মানুষের কাছে ‘বিদ্বেষই একমাত্র সত্য’, তার উপরে কিছু নেই। তীব্র মুসলিম-বিদ্বেষ এঁদের আর সব মূল্যবোধকে ভুলিয়ে দেয়, বাস্তব থাকে অনেক দূরে।
সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়, খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
আতঙ্কের ভোট
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভয় আর আতঙ্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচন মানেই বহু মায়ের কোল খালি হয়ে যায় এই বঙ্গে। আগে আমরা বিহার-সহ অন্য অনেক রাজ্যের রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে কথা বলতাম। এখন সবাই এই রাজ্যের দিকেই আঙুল তোলে। আমরা বাঙালিরা নিজেদের উন্নত, সংস্কৃতিমনস্ক বলে মনে করি। অথচ, সেই বাঙালির আজ এই অধঃপতন বিশ্বের কাছে আমাদের মাথা নত করছে। এই হিংসার সংস্কৃতি আমাদের কাম্য নয়। তাই সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে অনুরোধ, আগামী নির্বাচনে কোনও প্রাণহানি যাতে না হয়, সেই অঙ্গীকার করুন। বিহার যদি হিংসামুক্ত নির্বাচন করতে পারে, তা হলে আমরা পারব না কেন?
প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রধান কর্মসূচি এটাই হওয়া উচিত যে, কোনও হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। উত্তেজনামূলক ভাষণ দান থেকে নেতাদের বিরত থাকা উচিত। গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের হাতেই দেশ গঠনের ক্ষমতা। তাই সাধারণ মানুষকে স্বাধীন ভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দিন।
প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
শীতঘুম
‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচিতে যে সমস্যাগুলির অবিলম্বে সমাধান করা হবে বলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ঢালাও প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলি কি পুরসভা, পঞ্চায়েত বা জনপ্রতিনিধিদের অজানা? নিজেদের এক্তিয়ারে থাকা সমস্যাগুলির স্থানীয় প্রশাসন যদি দীর্ঘ দিনেও সুরাহা করতে অসমর্থ হয়, তা হলে প্রচারমাধ্যমকে সাক্ষী রেখে ঘর ভর্তি আমলা এবং পুলিশের উপস্থিতিতে নিয়মিত ভাবে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকের যৌক্তিকতা কোথায়? রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হলেও অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকেন। দুয়ারে বিধানসভা নির্বাচন কড়া নাড়ায় এই বার বোধ হয় শীতঘুম ভাঙার সময় হয়েছে।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭
জোটের গেরো
সিপিএম-কংগ্রেস জোট বেঁধে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা ভোটে লড়বে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী আছে, ২০১০ সালে পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছিল বামেরা। সনিয়া সরকার বাঁচালেও সেই ঘা এখনও শুকোয়নি।
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের উৎখাত করতে সনিয়া তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাঁধলেন। সে জোটও সুখের হয়নি। ২০১৬ সালে জোট হল বাম-কংগ্রেসের। নিচুতলার কর্মী-সমর্থকরা এই জোট মেনে নেননি। বামেদের থেকে বেশি আসন পেল কংগ্রেস। ২০২১-এ ফের নির্বাচনের সম্মুখীন পশ্চিমবঙ্গ। কেরলে বামেদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল কংগ্রেস, বাংলার মানুষ সেটা জানে। দল জোট করলেও, কর্মী-সমর্থকরা তা গ্রহণ করবেন কি?
সুচন্দা বিশ্বাস, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা