দুর্গাপুজোর দিন দশেক আগে, যখন চন্দ্রমুখী আলুর দাম ২৮-৩০ টাকা কেজি চলছে, তখন আলুর দাম-বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করলে, বিক্রেতা ছেলেটা বলেছিল, “দাঁড়ান না, পুজোর পর দেখবেন, আলুর দাম বাড়তে বাড়তে ৫০ টাকা কেজিতে গিয়ে দাঁড়াবে।” এখন দেখছি ছেলেটার কথাই ঠিক। আর ভাবছি, যেটা আলু-বিক্রেতা ছেলেটা জানে, সেটা সরকার আগাম জানতে পারে না? দুর্গাপুজোর সময় প্রতি বছরই আলুর দাম বাড়ে, কিন্তু এ বারের বৃদ্ধিটা খুবই অপ্রত্যাশিত। এই অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধি প্রশাসন আগাম জানতে পারল না, না কি জেনেও কোনও ব্যবস্থা করা হল না, বোধগম্য হচ্ছে না।
পক্ষান্তরে দেখছি, কেন্দ্রের নয়া কৃষিপণ্য আইনকে দোষারোপ করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রের আইন রাজ্য মানেনি, মানলেও নিজের মতো করে পরিবর্তন করেছে। এ ক্ষেত্রে সেটাও করা যেত। অনেকে বলছেন, অন্য রাজ্যে বেশি আলু যাচ্ছে, সেখানে এ বছর চাহিদা বেশি। বছর ছয় আগে আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে অন্য রাজ্যে আলু পাঠানো সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তার ফল ভাল হয়নি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ না করে নিয়ন্ত্রণ করা যেত, আর নভেম্বর মাসের একদম শেষে এসে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কোল্ডস্টোর ফাঁকা করার নির্দেশ, আরও কিছুটা আগে করা দরকার ছিল। দাম বৃদ্ধির ঠিক কারণ সরকার জনগণের সামনে আনলে, এক দিকে জনগণ যেমন আশ্বস্ত হত, সেই সঙ্গে প্রশাসনের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় থাকত।
সব শেষে বলতেই হচ্ছে, আলুতে মাটি লাগানো এখনও চলছে। এতে এক দিকে যেমন স্বাস্থ্যহানির বিষয়টি জড়িত, অন্য দিকে বাতিল আলুও চড়া দামে আমাদের কিনতে হচ্ছে।
অসিত কুমার রায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
চাষি কী খাবে
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকায় একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হল আলু। বর্তমানে আলুর দাম আগুন। বাজারগুলিতে পাইকারি মূল্য ৩৬-৪০ টাকা, খুচরো মূল্য ৪২-৪৫ টাকা প্রতি কেজি। সবাই চাইছেন আলুর দাম কমুক। এ বার আসছি কৃষকদের প্রসঙ্গে। বর্তমানে আলুর বীজ প্রতি কেজি ১০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে আলুবীজের খরচ ১৪০০০ টাকা। সারের খরচ প্রায় ১০০০০ টাকা। এ ছাড়াও অন্যান্য খরচ আছে। এর পর ফসল বিক্রির পর চাষি যে টাকা পাবেন, তাতে তাঁদের লাভ কিছুই থাকে না। তার উপর যদি দাম কমে যায়, তা হলে তো চাষির পুরোটাই লোকসান। যাঁরা আলুর দাম কমানোর কথা বলছেন, তাঁদের কাছে একটি প্রশ্ন, আলুর দাম কমে গেলে চাষিরা কী খাবেন?
অমিত সরকার, স্বরূপনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
দুরবস্থা
উলুবেড়িয়ার উত্তর পিরপুর গ্ৰামে অবস্থিত একটি প্রাচীন গ্ৰামীণ ডাকঘর: বাণীবন শাখা ডাকঘর। ১৯৬২ সাল নাগাদ প্রতিষ্ঠিত এই ডাকঘর গত এক দশক যাবৎ চূড়ান্ত দুরবস্থায়। ছিদ্রে-ভরা টিনের ছাউনি আচ্ছাদিত এক চিলতে গুমটি ঘরে মোমের নিবু নিবু আলোতেই চলছে যাবতীয় কাজ— রাতে নয়, দিনেদুপুরে। কারণ, বিদ্যুৎ সংযোগ মেলেনি। গ্ৰাহকদের নানা প্রয়োজনীয় নথিপত্র সুরক্ষিত রাখতে ভরসা ঘুণ-ধরা একটি টেবিলের ড্রয়ার। সরকার যখন ডাকব্যবস্থার সকল স্তরে সার্বিক মানোন্নয়নের কথা বলছে, তখন বাণীবনের মতো শাখাস্তরীয় ডাকঘরে ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। ডাককর্মী জানান, এ ডাকঘরের গ্ৰাহকসংখ্যা এক হাজারের অধিক হলেও, পরিষেবা মেলে যৎসামান্য। চিঠিপত্র বিনিময়, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প-সহ কিছু পরিষেবা মিললেও, স্পিডপোস্ট, কোর ব্যাঙ্কিং-এর মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে গ্ৰাহকেরা বঞ্চিত। অধিকাংশ সময়ে মেলে না রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও পাঁচ টাকা মূল্যের ডাকটিকিট। এহেন পরিস্থিতিতে গ্ৰাহকের সুবিধার্থে ডাকঘরের সার্বিক উন্নয়ন একান্তই প্রয়োজন।
তন্ময় মান্না, বৃন্দাবনপুর, হাওড়া
বেহাল
“পরিষেবা নিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছবে পুরসভা” (২৯-১১) নিঃসন্দেহে সাধু উদ্যোগ। কিন্তু এই সংবাদের ঠিক উপরে একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আবর্জনার দুর্গন্ধে নাকে কাপড় চাপা দিয়ে পথচারীরা শিয়ালদহ আদালতের পাশ দিয়ে হাঁটছেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের এই হাল হলে, পরিষেবা প্রদান এবং নজরদারির জন্য যাঁরা আছেন, তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন কি না, প্রশ্ন ওঠে। টক টু মেয়র বা অধুনা টক টু কেএমসি অনুষ্ঠানে নাগরিকেরা মেয়রকে সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুযোগ পান। ফলে সেগুলো দ্রুত সমাধান হয়। যে কাজ সাধারণ ভাবে কর্মী এবং আধিকারিকদের করার কথা, তার জন্য মেয়রের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হবে কেন? সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও তো আছেন। ফোনের লাইন না পাওয়ায় অনেক অভিযোগ হয়তো মেয়রের গোচরে আসে না। পুজোর আগে সব রাস্তা সারানো হবে বলা হলেও, হয়নি। রুবি মোড়ে, ট্র্যাফিক পুলিশ পোস্ট সংলগ্ন রাস্তার অংশ ভাঙাচোরা। বাইপাস লাগোয়া ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের সার্ভিস রোডের বেশ কিছু স্থান মেরামত হয়নি। রুবি মোড়েই একটি হোটেল ফুটপাতের অংশ ঘিরে প্রাচীর তুলেছে। তাই ওই মোড়ের বাঁকের অংশে ফুটপাতের অস্তিত্ব নেই। পথচারীকে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়। বিভিন্ন এজেন্সি রাস্তা বা ফুটপাত খুঁড়লে, স্রেফ নজরদারির অভাবে ঠিকমতো সেগুলির মেরামত হয় না। অনেক ক্ষেত্রে পাইপ ফেটে পানীয় জলও অপচয় হয়।
পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগ লিপিবদ্ধ করার জন্য একটি ওয়েবসাইট বা একটি হেল্পলাইন এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর স্থায়ী ভাবে চালু করে, গৃহীত ব্যবস্থা অভিযোগকারীকে জানানো হলে, নাগরিকদের ক্ষোভ প্রশমিত হত এবং পুরসভার ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হত।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭
টোটোর দৌরাত্ম্য
শহর ও শহরতলিতে গত ক’বছর ধরেই বাইক ট্যাক্সি এবং অটো তথা টোটোচালকদের দৌরাত্ম্য সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অনেকেরই রেজিস্ট্রেশন নেই, কারও বা আবার নেই প্রয়োজনীয় নম্বর প্লেট! করোনা কালে কম খরচে যাতায়াতের জন্য মানুষ বাইক ট্যাক্সি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন, যার মধ্যে মহিলার সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু যে ভাবে দিনের পর দিন তরুণী নিগ্রহের খবর পাওয়া যাচ্ছে বা পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়ছে, তাতে মহিলাযাত্রী, বিশেষ করে যাঁরা রাতে যাতায়াত করছেন, তাঁদের জন্য বাইক ট্যাক্সিতে যাতায়াত মোটেও নিরাপদ নয়।
এ ব্যাপারে ট্র্যাফিক পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের সক্রিয় পদক্ষেপ করা উচিত। বাইক ট্যাক্সি চালকদের সকলের রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষা করা উচিত, নম্বর প্লেট আছে কি না দেখার জন্য স্পট চেকিং এবং জরিমানা করা উচিত। অনাদায়ে লাইসেন্স জমা রাখা হোক, প্রয়োজনে হাজতবাস। একই কারণে বাইক ট্যাক্সি চালক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা উচিত। অটো ও টোটোচালকদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে এই সঙ্গে এমন অপরাধের সংখ্যা কমানো, তথা অপরাধের প্রবণতা কমানোর জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিও করা উচিত। প্রয়োজনে বাইক ট্যাক্সি চালক সংস্থা, অ্যাপ ক্যাব ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সঙ্গে প্রতি মাসে অন্তত এক বার করে বৈঠক করা উচিত।
আশা করা যায়, পুলিশ প্রশাসন, চালক, সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ড্রাইভার্স ইউনিয়ন এ ব্যাপারে তৎপরতা দেখাবেন, অপরাধ কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন এবং মহিলাযাত্রীদের যাতায়াত সুরক্ষিত ও সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন। শহরের সম্মান ও মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত হতে দেবেন না।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।