‘খাদ্যাখাদ্যবিনিশ্চয়’ (সম্পাদকীয়, ৯-১২) নিবন্ধের প্রেক্ষিতে কিছু কথা। ক্রেতা যদি জানতে না পারেন কোন ব্র্যান্ডের মধু কৃত্রিম ভাবে, রাসায়নিক উপায়ে প্রস্তুত হয়েছে, তা হলে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন কী ভাবে? তথ্যের অধিকার আইন অনুযায়ী ক্রেতার সেই তথ্য জানার পূর্ণ অধিকার আছে। এই সংক্রান্ত যতগুলো খবর বা নিবন্ধ এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে, কোথাও সেই তথ্য পাওয়া গেল না। প্রাকৃতিক বা খাঁটি মধু পাওয়া যায় শুধুমাত্র কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে, যার সংখ্যা সীমিত এবং শহরাঞ্চলের মুষ্টিমেয় স্থানে সীমাবদ্ধ। অথচ বিভিন্ন নামী-অনামী ব্র্যান্ডের মধু যে কোনও ওষুধের দোকানে ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সহজেই মেলে।
মধু শুধু রোগ প্রতিরোধক নয়, ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি, কাশি নিরাময়ে খুব কার্যকর। আজকাল চিনির বিকল্প হিসেবে অনেকেই নিয়মিত মধু সেবন করে থাকেন। অথচ, না জেনে সেই চিনি এবং আরও কিছু ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান তাঁরা গ্রহণ করে চলেছেন। শিশুদের মধু খাওয়ানো হয় স্বাস্থ্যগত ও সংস্কারগত কারণে। যদি নিবন্ধে প্রকাশিত তথ্য নির্ভরযোগ্য বলে মেনে নেওয়া হয়, তা হলে দিনের পর দিন না জেনে তাদের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হচ্ছে। এতে পরবর্তী কালে তারা অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্ট হয়ে পড়বে, যার দীর্ঘস্থায়ী ও ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে তাদের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায়।
অবিলম্বে ব্র্যান্ডগুলির নাম জনগণের গোচরে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি।
অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়, নিউ টাউন, কলকাতা
বালির মাঠ
শিবাজীপ্রতিম বসুর লেখা ‘বালির মাঠ থেকে সিটি সেন্টার’ (রবিবাসরীয়, ২৯-১১) যেমন তথ্যসমৃদ্ধ, তেমনই তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতার দলিল। আমারও কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের খুলনা জেলার রাড়ুলী কাটিপাড়া গ্রামের কপোতাক্ষ নদের বালুকাবেলায় আমার বালিকাবেলা রেখে এসে সাহায্য নিতে হয়েছিল এই বালির মাঠের। রাজনৈতিক ডামাডোলে গ্রামে এক দিনে ১৬ জন খুন হয়ে গেলেন। শেষ রাতে নৌকার ছই কালো কাপড়ে ঢেকে রায়চৌধুরী পরিবার একবস্ত্রে কপোতাক্ষতে ভাসল। সঙ্গে ছিল কিছু নগদ টাকা আর মায়ের গয়নার বাক্স। ফেলে রেখে আসা হল পুকুর-বাগান, ধানজমি, পুরনো জমিদারি মহলা। সে বাড়ি এখন বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহণ করেছে আমার সেজো ঠাকুরদামশায়, বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের বাড়ি হিসেবে।
হাসনাবাদের পাড়ে উঠে ট্রেনে বারাসত আসব। আমাদের মতো আরও উদ্বাস্তু পরিবারের একসঙ্গে ট্রেনে ওঠার জন্যে ঠাসাঠাসি ভিড়! সেই আমাদের লড়াই শুরু। বারাসতে ট্রেন বদল করে বিরাটিতে এসে আত্মীয়ের বাড়ি উঠলাম। আমার বাবা ৩০০ টাকা কাঠা হিসেবে দেড় বিঘা জমি বিরাটিতে আগের বছর কিনে রেখেছিলেন। বর্ষায় সেখানে জল জমত, আর ছিল শরবন। মায়ের গয়নার কিছুটা বিক্রি করে পুকুর কেটে জমি উঁচু করে আমাদের একটা ছোট একতলা বাড়ি হল। দাদা, আমি স্কুলে ভর্তি হলাম। সেটা ছিল এপ্রিল মাস।
অগস্ট মাসে ঠিক হল, বসে খেলে রাজার ভান্ডারও ফুরিয়ে যায়। তাই লবণ হ্রদে ইন্দিরা সরকার যে চাল, ডাল দিচ্ছে, তা আনতে যেতে হবে। আসার সময় হাসনাবাদে যে বর্ডার স্লিপ দিয়েছিল, তা ওই বালির মাঠে জমা দিয়ে কার্ড নেওয়ার সময় তাঁরা অবাক, “আপনারা এই কয় মাস রেশন নেননি?” যাঁরা ক্যাম্পে থাকতেন না, তাঁদের জন্য সপ্তাহের চাল, ডাল, তেল, চিনি, গুঁড়ো দুধ ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে এক দিনে দেওয়া হত। এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, ইন্দিরা সরকার এক বৃহৎ সংখ্যক বাঙালিকে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। লেখক ঠিকই বলেছেন, দেওয়ালে লেখা হত, ‘এশিয়ার মুক্তিসূর্য ইন্দিরা গাঁধী’। তা ছাড়া আরও অনেক চমৎকার দেওয়াল লিখন হত। সুকান্তের কবিতার অংশ, যেমন— “প্রিয়াকে আমার কেড়েছিস তোরা ভেঙেছিস ঘরবাড়ি...” ইত্যাদি আমি প্রথমে দেওয়ালেই পড়ি।
বিরাটি থেকে ভিড় ট্রেনে উল্টোডাঙা গিয়ে ৩-৪ কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছতে হত সেই ধু-ধু বালির মাঠে। পথে দেখতাম কাঠপাতার ছোট ছোট ঘরে, বড় উঁচু লোহার পাইপের মধ্যে মানুষ বাস করছেন। লেখক সেই ক্যাম্পের বর্ণনা দেননি। তাঁবুর পর তাঁবু জুড়ে বিশাল এলাকা জুড়ে ছিল সেই ক্যাম্প। তার মধ্যে থাকতেন শরণার্থীরা। বহু শিক্ষিত সম্পন্ন ঘরের মানুষও ওই রেফিউজি ক্যাম্পে থাকতে বাধ্য হতেন। বাবার সঙ্গে চট্টগ্রামের এক অধ্যাপকের আলাপ হয়েছিল, যিনি ওখানে থাকতেন। অনেক বিদেশি সাহায্যও আসত।
মিশনারিরা এসে ওই এলাকা ফিনাইল দিয়ে ধুয়ে দিতেন, ওখানকার মানুষদের চিকিৎসা করতেন। চাল, ডাল, চিনি ইত্যাদির লম্বা লাইনে দাদা, আমি, মেজো ভাই আলাদা আলাদা ভাবে দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়াতাম। মনে মনে পড়াগুলো ঝালিয়ে নিতাম। আমাদের যে এ ভাবে লাইন দিতে হচ্ছে, তা মন থেকে মেনে নিতে পারতাম না। বালির মাঠ থেকে সব চাল, ডাল রিকশায় চাপিয়ে, আমি ওই রিকশার এক কোণে বসতাম। বাবা, দাদা রিকশার সঙ্গে হেঁটে আসতেন। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আমরা বালির মাঠের সাহায্য নিয়েছিলাম।
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাবা দেশে ফিরে কিছু জমি-জায়গা লিখে দিয়ে আমাদের টাকা পাঠাতেন। তাঁর স্কুলের শিক্ষক ও প্রিয় ছাত্রদের অনুরোধ না ঠেলতে পেরে আরও কয়েক বছর শিক্ষকতাও করেছিলেন। আমরা টিউশনি করে কলেজের মাইনে দিতাম। সে লড়াইয়ের কথা আলাদা।
শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
ম্যানগ্রোভ ধ্বংস
‘বাড়ছে ভেড়ি, সাফ হচ্ছে ম্যানগ্রোভ’ (৭-১২) প্রসঙ্গে বলতে চাই, ১৮৭৬ সালে এই রকম ম্যানগ্রোভ সাফ করে চাষের জমি বার করা হয়েছিল। তারও আগে বঙ্গোপসাগরীয় এলাকায় সুন্দরবন অঞ্চলে এই ম্যানগ্রোভ কেটে চাষের জমি বার করা হয়েছিল, এবং ব্রিটিশ সরকার ব্যর্থ হয়েছিল। কারণ, সে জমি চাষের উপযুক্ত ছিল না। দ্বিতীয় বার অন্য স্থানে ম্যানগ্রোভ কাটার ফলে চাষের উপযুক্ত জমি পাওয়া গেল বটে, কিন্তু এড়ানো গেল না প্রবল জলোচ্ছ্বাস, ১৮৭৬ সালে বর্তমান বাংলাদেশের ভোলা জেলায় আছড়ে পড়েছিল বিধ্বংসী জলোচ্ছ্বাস। প্রাণ হারিয়েছিলেন পাঁচ লক্ষ মানুষ, এই ধ্বংসলীলার পরবর্তী দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছিলেন আরও দু’লক্ষাধিক মানুষ। ব্রিটিশ সরকারের ধারণা ছিল, যত বেশি চাষের জমি, তত বেশি কৃষি পণ্য, তত বেশি লাভ। এখন কি ব্রিটিশ সরকারের জায়গা নিয়েছে সিন্ডিকেট রাজ?
আগামী দিনে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে প্রাণ হারানোর সংশয়ের থেকে কি বড় হয়ে উঠল চিংড়ি মাছের চাষ? এই সিন্ডিকেট রাজের চালকরা রাজনৈতিক মদতে পুষ্ট লোকই হোক আর সমাজবিরোধীই হোক, সরকার তো একটাই, যে সরকার এদের দমন করবে। না কি ভোটের আগে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে এই অপরাধ বৃত্তির দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে রাখবে?
দেবাশিস সেন, কলকাতা-১০৪
চিতার ঠ্যাং
চিরশ্রী মজুমদারের ‘ওরা বাধ্য, তাই বধ্য’ (৬-১২) নিবন্ধে সামান্য সংযোজন। চিতার ঠ্যাং অন্য প্রাণীদের চেয়ে লম্বা, যথেষ্ট মজবুত। এই ঠ্যাং দিয়েই চিতা ৮০-১২০ কিমি/ঘণ্টা দৌড়তে পারে। এই দৌড়ের সহায়ক তার লম্বা লেজ। এরা বাস করে ঝোপঝাড়-বিশিষ্ট সমতল ভূমিতে। ভূমিটা শুকনো হলে ভাল হয়। অনেকটা দৌড়ে এরা শিকার ধরতে পটু। বনভূমি ধ্বংসের কারণে চিতার সংখ্যা কমে আসছে। যাঁরা গবাদি পশুচারণ করেন, তাঁদের হাতে প্রায়ই চিতা নিহত হয়।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘জুতো’ গল্পে চিতার উপস্থিতি রোমহর্ষক এবং বেদনাদায়ক।
সঞ্জয় চৌধুরী, ইন্দা, খড়্গপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।