নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত বা সংসদে পাশ হওয়া কোনও বিল বা আইনের দায় কি রাজ্যপালের উপর পড়ে? এই রাজ্যে শাসক দলের অনুগামী কোনও ছাত্রগোষ্ঠী তেমনই মনে করে। সিএএ, এনআরসি, এনপিআর সম্পূর্ণ ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এই আইনে আপত্তি তুলতেই পারে, প্রতিবাদ জানাতে পারে। প্রতিবাদ, বিরোধিতা গণতন্ত্রের অঙ্গ। কিন্তু তাই বলে একের দায় অন্যের উপর চাপিয়ে বিক্ষোভ!
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাজ্যপাল, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে সাম্মানিক ডি লিট তুলে দেবেন— এটা ছিল কর্মসূচি। কিন্তু চূড়ান্ত নির্লজ্জতায় গা-জোয়ারি করে কিছু ছাত্র সেটা হতে দিল না। যে বিষয়ের ছুতো করে তারা প্রতিবাদ জানাল, বিক্ষোভের নামে চূড়ান্ত অসভ্যতা করে রাজ্যপালকে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করল, সরাসরি সেই বিষয়ের সঙ্গে রাজ্যপালের কোনও সম্পর্ক নেই।
এমন অস্বাভাবিক উচ্ছৃঙ্খলতার সাক্ষী থাকলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। কিন্তু পূর্বনির্ধারিত সূচি ভেস্তে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি ডি লিট গ্রহণ করলেন। জুলুমবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মাননীয় অভিজিৎবাবু যদি ডি লিট গ্রহণে অসম্মত হতেন, সেটাই উপযুক্ত কাজ হত। যারা এই ছাত্রগোষ্ঠীকে উস্কানি দিচ্ছে, তাদের প্রতি একটা বার্তাও যেত।
প্রণব রাহা
দুর্গাপুর
নিজের জেলায়
সম্প্রতি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষকদের আশার বাণী শুনিয়েছেন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ বা ট্রান্সফার বিধির প্রয়োজনীয় সংশোধন করে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজ্যের কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিজ নিজ জেলায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা হবে। সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে রাজ্যের মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে। এর বাস্তব প্রেক্ষিতটা একটু আলোচনা করা যাক। ধরা যাক, বীরভূম জেলায় ৪০০টি মাধ্যমিক (উচ্চ মাধ্যমিক-সহ) স্কুল আছে। এর মধ্যে মেয়েদের জন্য ১০০টি স্কুল নির্দিষ্ট। উচ্চ মাধ্যমিক প্রায় ২০০টি। উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকে এখন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিযুক্ত হন, তবে মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট বিদ্যালয়গুলিতে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না। তাই বিষয় নির্বাচন করে ১০০ পয়েন্ট রোস্টার মেনে যদি শিক্ষক বা শিক্ষিকা স্থানান্তরিত করতে হয়, তা যথেষ্ট কঠিন কাজ হবে। তা ছাড়া জেলার স্কুলগুলির মোট শিক্ষক বা শিক্ষিকার যে সংখ্যা আছে, সেই অনুযায়ী বীরভূমে বাস করে অন্যত্র কর্মরত শিক্ষক বা শিক্ষিকাদের সংখ্যার মধ্যে সমতা আছে কি না, সে বিষয়টিও বিবেচনায় আসবে।
তাই এ সবের প্রেক্ষিতে প্রস্তাব: ১) প্রথমে শিক্ষিকাদের নিজ নিজ জেলায় আনার ব্যবস্থা করা হোক। ২) এ ক্ষেত্রে চাকরির অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। ৩) শারীরিক দিক থেকে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের অগ্রাধিকার থাকুক। ৪) স্বামী-স্ত্রী দু’জনে চাকরি করলে, যে কোনও এক জনের জেলায় আসার সুযোগ দেওয়া হোক। ৫) পুরুষ-শিক্ষকদের ক্ষেত্রে, যাঁরা ১০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন, তাঁদের অগ্রাধিকার দিয়ে নিজ বাসস্থানের কাছে স্থানান্তরের সুযোগ দেওয়া হোক। তার পর ধাপে ধাপে অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞদের সুযোগ সৃষ্টি করা হোক।
তবে এ সব করতে গিয়ে দেখা যাবে, একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলে (যেখানে নদী পেরিয়ে যেতে হয়, বা যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ততটা ভাল নয়) সেই জেলার প্রয়োজনীয় শিক্ষক বা শিক্ষিকা না-ও পাওয়া যেতে পারে। সেখানে বিশেষ ‘ইনসেনটিভ’ দিয়ে শিক্ষকদের আকৃষ্ট করতে হবে। সেই জেলায় না পেলে পার্শ্ববর্তী জেলার ইচ্ছুক শিক্ষকদের সম্মতি নিয়ে সেখানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। অবশ্য সবই নির্ভর করছে শিক্ষা বিভাগের জেলা ডিআই অফিস থেকে শুরু করে বিকাশ ভবন-সহ সর্ব স্তরের আধিকারিক ও কর্মীদের সদিচ্ছা ও কর্মতৎপরতার উপর।
নবকুমার কর্মকার
সাধারণ সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি (ডব্লিউবিটিএ)
ভিডিয়ো ফুটেজ
টেলিভিশনে মাঝে মাঝে কিছু ভিডিয়ো-ফুটেজ দেখানো হয়, যার কোনও কোনওটা উত্তেজক ভাষণ বা গন্ডগোলের ঘটনা। যেটা প্রচার হচ্ছে, তা মুহূর্তের মধ্যেই লক্ষ লক্ষ দর্শক-শ্রোতার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সেই ফুটেজটি কম-বেশি উত্তেজনা সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠছে, না উঠলেও আশঙ্কা তৈরি করছে। অথচ, ফুটেজটি দেখানোর সময় টিভির পর্দায় লিখে দেওয়া হচ্ছে, ‘‘এই ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করা হয়নি।’’ তার মানে, এটির প্রচারক চ্যানেলটি এর যাবতীয় ফলাফল বা দায় থেকে মুক্ত হয়ে গেল!
এখানেই প্রশ্ন, প্রচারমাধ্যম কি সত্যতা যাচাই না করে ‘এক্সক্লুসিভ’ তকমা দিয়ে কোনও খবর বা দৃশ্য লাখ লাখ দর্শকের দরবারে নির্দ্বিধায় হাজির করতে পারে? সে অধিকার তার আছে? তা হলে, কোনও ব্যক্তি যদি তার হোয়াটসঅ্যাপে পেয়ে যাওয়া সংবাদ বা দৃশ্য পরিচিত জনদের ফরওয়ার্ড করে ওই একই ঘোষণা করে? প্রশাসন তাকে ছাড় দেবে তো? সত্যতা যাচাই না করে এই ধরনের প্রচার নিষিদ্ধ করা দরকার।
দীপক ঘোষ
সাদপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
ওলকপি, শালগম
‘শীতের নতুন স্বাদ’ (পত্রিকা, ১৮-১) শীর্ষক লেখায় প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে ‘‘শালগম দিয়ে মাটন কষা থেকে মুলো রান্না...’’, সঙ্গের ছবিতে দেখানো হয়েছে ওলকপির ছবি। বাজারহাটে দেখেছি, বেশির ভাগ মানুষই সবুজ ওলকপিকে শালগম বলে উল্লেখ করেন। ওলকপি ও শালগম আকৃতিগত ভাবে প্রায় একই রকম দেখতে হলেও, বর্ণ ও স্বাদে সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’টি সবজি। ওলকপি হালকা সবুজ রঙের হয়, আর শালগমের ওপরটা হালকা বেগুনি ও নীচের দিকটা সাদা রঙের হয়ে থাকে। দু’টি সবজিই গাছের দু’টি ভিন্ন অংশ। ওলকপি মাটির উপরে হয়, এবং সেটা স্ফীত কাণ্ড। শালগম মাটির নীচে জন্মায়, এবং তা স্ফীত মূল। দুটোর স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওলকপির স্বাদ ফুলকপি বা ব্রকোলির ডগার মতো। শালগমের স্বাদ কিছুটা মুলোর মতো এবং তা ঝাঁজালো। সেলেব্রিটি শেফ অজয় চোপড়া ঠিক কোন জিনিসটি দিয়ে মাটন কষা রাঁধতে বলেছেন, ঠিক বোঝা গেল না।
সাধন বিশ্বাস
নোনা চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর
আপনার মুখ
‘আই পি এস মনোজকে প্রকাশ্যে ধমক ধনখড়ের’ (৩১-১) শীর্ষক খবরে পড়লাম, এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলেছেন অভিজ্ঞেরা। প্রবীণ পুলিশকর্তারা মনে করেছেন, প্রকাশ্যে আইপিএস অফিসারকে তিরস্কার অশোভন ও পদমর্যাদায় আঘাত করে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এটা রাজ্যপাল পদের অবমাননা। ওঁদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কয়েক বছর আগে কলকাতা বইমেলায় মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এক পুলিশ অফিসারের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে প্রকাশ্যে চড় মারার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, জগদ্ধাত্রী পুজোয় গন্ডগোলের জেরে পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করলে তিনি নিজে থানায় গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে এনেছিলেন, তাঁর আত্মীয় প্রকাশ্য রাস্তায় পুলিশকে নিগ্রহ করেছিল, সোনালী গুহ নোদাখালি থানায় ঢুকে কদর্য ভাষায় ওসিকে হুমকি দিয়েছিলেন, অনুব্রত মণ্ডল প্রকাশ্য সভায় পুলিশকে বোমা মারার হুমকি দিয়েছিলেন, শাসক দলের ক্যাডারদের হামলায় পুলিশ টেবিলের তলায় ঢুকেছিল। এই ঘটনাগুলি কি পুলিশের পদমর্যাদায় আঘাত করেনি? তাদের মনোবল কমিয়ে দেয়নি? মুখ্যমন্ত্রী পদের অবমাননা হয়নি? সেই তুলনায় রাজ্যপাল অনেক শালীন ভাবে কথা বলেছেন।
অভিজিৎ ঘোষ
কমলপুর, উত্তর ২৪ পরগনা