পৌষমেলা উপলক্ষে অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নিবন্ধ ‘ছিল অন্য এক উৎসব ভাবনা’ (৬-১)-র প্রেক্ষিতে এই পত্র। পৌষমেলা সকলেরই অত্যন্ত প্রিয়, কিন্তু এই মেলাকে কেন্দ্র করে কিছু অপ্রিয় তথ্য আমাকে তুলে ধরতে হয়েছে বলে অনেক নিন্দামন্দ শুনতে হচ্ছে। সত্যিটা তাই প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন।
২০১৫-র ২৮ ডিসেম্বর ভোরে মেলাপ্রাঙ্গণে পৌঁছে সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। সারি দিয়ে ধোঁয়ার উনুন জ্বলছে, প্লাস্টিক ও আবর্জনার পাহাড় হয়েছে, নিষিদ্ধ ব্ল্যাক-জেনারেটর গিজগিজ করছে, মেলাপ্রাঙ্গণের ধুলো খোলা খাবারের উপর একটা আস্তরণ ছড়িয়েছে, অনেক স্টলেই তারস্বরে বাজছে মাইক। মেলা শেষ হওয়ার পর পূর্বপল্লির মাঠে গিয়ে হতবাক হলাম। অন্তত ৫০টি জায়গায় জঞ্জাল পুড়িয়ে মাঠটাকে ছেঁকা দেওয়া হয়েছে, জ্বলন্ত জঞ্জালের স্তূপও চোখে পড়ল। সব ফ্রেম বন্দি করলাম।
কলকাতা বইমেলার নিরিখে ও পরিবেশ আইন মোতাবেকে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৭-এ রাজ্যের সব মেলার জন্য নির্দেশিকা জারি করে। পৌষমেলার পদস্খলন দেখে উপাচার্যকে চিঠি দিলাম। সুরাহা না হওয়ায় পরিবেশ আদালতে যেতে হল।
২০১৬-তে পরিবেশ আদালতে বিশ্বভারতী হলফনামা দিয়ে জানাল যে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ট্রাস্ট ডিড অনুসারে পৌষ উৎসব (বর্তমানে পৌষমেলা) তিন দিনের (৭/৮/৯ই পৌষ)। নির্দিষ্ট তিন দিনের পর যে মেলা চলে, তা অবৈধ এবং জল ও বিদ্যুৎ তখন কেটে দেওয়া হয়। আদালতে এও জানানো হয়েছিল যে ভাঙা মেলার জন্য বিশ্বভারতীর পঠনপাঠনের ক্ষতি ও প্রশাসনিক কাজেরও অসুবিধা হয়। আদালত নির্দেশ দেয় যে মেলা তিন দিনেরই হবে। শুরু হল গন্ডগোল। ২০১৬-তে তিন দিনের পরও চলল মেলা।
২০১৭-তে বিশ্বভারতী সিদ্ধান্ত নেয় যে মেলা হবে ছ’দিনের। কত দিন মেলা চলবে সেই সিদ্ধান্তটা এক তরফা ভাবে কখনওই কিন্তু পরিবেশ আদালত নেয়নি বা আদেশ দেয়নি। তারা শুধু বলেছিল যে পরিবেশ বিধি মেনে যেন তা সংঘটিত হয়। আমারও ছিল একই প্রার্থনা। আদালতে বিশ্ববিদ্যালয় হলফনামা পেশ করল যে পরিবেশ বিধি মেনে মেলা হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য জয়ন্ত মিত্র, ড. কল্যাণ রুদ্র ও আমাকে পরিদর্শক হিসেবে নিযুক্ত করা হোক। এই তিন জনকে আদালত অবশ্য আজীবন নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োজিত করে। ২০১৮-তে মেলার অনেক বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হল। আমি পুনরায় আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম।
২০১৯-এ হঠাৎ জানানো হল— ‘আদালতের আদেশ মেনে মেলা করা সম্ভব নয়, তাই এ বছর মেলা হবে না।’ পরে এই সিদ্ধান্ত পাল্টে ঘোষণা হল, মেলা হবে চার দিনের। জানা নেই এই সিদ্ধান্ত কার নেওয়া এবং চার দিনের নির্ঘণ্ট ঠিক হল কী ভাবে।
কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলেন এবং জনসমক্ষে প্রচার করলেন যে, চার দিনের মেলা হবে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে। কত দিনের মেলা হবে তা আদালতের কিন্তু বিচার্য কখনওই ছিল না, এখনও নয়।
গত ২৪ ডিসেম্বর রাজ্য-দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রধান, চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আমরা মেলায় দূষণ বিধির মান্যতা পর্যবেক্ষণ করলাম— আদালতের নির্দেশে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কেউই খোঁজ রাখল না, এতটুকু সৌজন্যও প্রকাশ পেল না। ভাবখানা এমন যেন, পর্যবেক্ষণকারীরা বিরোধী পক্ষ। জয়ন্ত মিত্র, কল্যাণ রুদ্র, সুব্রত ঘোষদের মতো সম্মাননীয়রা ছাত্রদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মেলার মাঠ পরিষ্কার করলেন— মেলা কর্তৃপক্ষের কেউই এগিয়ে এলেন না।
সবাই চায় মেলা হোক, কেউই কিন্তু চায় না যে মেলা পরিবেশের ক্ষতি করুক। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিষ্ঠানের আচার্য এবং যিনি স্বচ্ছ ভারতের ডাক দিয়েছেন, তিনি অবশ্যই চাইবেন না যে তাঁর প্রতিষ্ঠানটি অস্বচ্ছ হয়ে উঠুক।
পৌষমেলা ছাড়াও আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দূষণের বিষয় আদালতে গিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বভারতী ছাত্রছাত্রী ৬৫০০, শিক্ষক ৫১৫, ছাত্র-নিবাস ১৪, ছাত্রী-নিবাস ১০, অতিথিশালা ৬টি এবং প্রায় ৫ বর্গ কিমি জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায় প্রচুর মানুষ বসবাস করেন। কিন্তু তাদের তরল ও কঠিন বর্জ্য পরিষ্কারের যথাযথ ব্যবস্থাই নেই। ২০১৬-তে এই বিষয়ে ভারতে কঠোর আইন প্রণয়ন হয়েছে। ২০১৭-র ১ নভেম্বর পরিবেশ আদালত এই মর্মে আদেশ দিল যে বিশ্বভারতীর এলাকায় দৈনন্দিন বর্জ্য পরিষ্কারের ব্যবস্থা ঠিকমতো করতে হবে। গত ডিসেম্বরে কর্তৃপক্ষ আদালতে হলফনামা দিয়ে জানাল যে আর্থিক কারণে তাঁরা বর্জ্য শোধন ব্যবস্থা করতে অপারগ। অদ্ভুত যুক্তি। কেন্দ্রীয় সরকারের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অক্ষমতার বক্তব্য আদালত খারিজ করে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে প্রধান বানিয়ে বিষয়টি দেখার জন্য একটি কমিটি গড়ে দিল।
দেশের আইন সকলের জন্যই সমান। কবিগুরুর প্রতিষ্ঠান বলে এবং প্রধানমন্ত্রী এই সংস্থার আচার্য হওয়ার সুবাদে তারা আইন মানবে না, এটা তো হতে পারে না। এ বছর পৌষমেলায় দূষণ বিধির মান্যতা না হওয়ায় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করেছে। শ্রীমুখোপাধ্যায় তাঁর নিবন্ধে লিখেছেন, ‘‘বিশ্বভারতী পরিবেশ সচেতন প্রতিষ্ঠান।’’ মনে হচ্ছে সবটা তাঁর গোচরে নেই। তা ছাড়া এটাও জানা দরকার যে, ‘শান্তিনিকেতনের কোনও রকম অবমাননা’ কেউই চায় না। পরিবেশ আদালতের মুখ্য বিচারপতি রায়প্রদান করার সময় যখন উল্লেখ করলেন যে পৌষমেলা রাজ্যের একটি ঐতিহ্যশালী অনুষ্ঠান, আমি সংশোধনী দিয়ে সওয়াল করলাম—শুধুই রাজ্যের নয়, এটা সারা দেশের মধ্যে অন্যতম একটি ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান। পরিবেশ বিধি পালিত না হওয়ার কারণে জরিমানা ধার্য হওয়া এই সংস্থার কাছে যদি অবমাননার হয়, তা হলে তা শুধরে নেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু বিশ্বভারতীকেই নিতে হবে। আমি এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কিন্তু কখনওই চাই না যে গর্বের এই প্রতিষ্ঠানটির কোনও রকম অবমাননা হোক। পরিবেশ বিধির মান্যতাই শুধুমাত্র কাম্য।
সুভাষ দত্ত
পরিবেশবিদ
সেলেব প্রতিবাদ
সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের কিছু সেলেব ‘কাগজ দেখাব না’ আবৃত্তি করেছেন। এক বিজেপি নেতা কড়া আক্রমণ করেছেন ওই সেলেবদের। তিনি যে কোনও বিরোধী স্বরকে খারাপ কথা বলার জন্য বিখ্যাত। তবে এ বার ‘ননসেন্স’ , ‘নেমকহারাম’ ইত্যাদি যে কুশব্দগুলি তিনি ব্যবহার করেছেন, যে-ভাবে অপমান করেছেন, তা দেখেশুনে বাংলার শিক্ষিত ছাত্র-যুবারা চটেও যেতে পারেন। মনে রাখতে হবে, ওই সেলেবরা এমন মানুষ, যাঁদের দেখে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনুপ্রাণিত হন অভিনয় করতে বা গান গাইতে বা নাটক করতে। যদি নেতাটি যুবসমাজকে চটিয়ে দেন, তবে ভোটে জেতা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে না তো? আরও লক্ষণীয়, যে বিখ্যাত ব্যক্তিরাই সরকার-বিরোধী গান গাইছেন বা কথা বলছেন, তাঁদের যে ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে এবং তাঁদের পেশার রাস্তায় সরাসরি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা থেকে এই দেশে আরও অনেক প্রতিবাদী মন দমে যাবে।
প্রণয় ঘোষ
কালনা, পূর্ব বর্ধমান
পিকে-র নামেও
চুনী গোস্বামীর নামে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হল। এ বার পিকে-র সম্মানে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করা হোক। তিনি অসামান্য খেলোয়াড় ও খ্যাতনামা কোচ।
সঞ্জয় চৌধুরী
ইন্দা, খড়্গপুর