প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের পাঠ, তথা প্রাকৃতিক সান্নিধ্যের উপলব্ধি শিশুকাল থেকে অনুভূত হওয়া দরকার। ফাইল ছবি।
পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধটি (‘দিব্যি কাজ করে শিশু গ্রামসভা’, ৩০-১২) পড়ে মন ভরে গেল। অসম রাজ্যের এক প্রত্যন্ত বন্যাপ্রবণ এলাকার এমন দৃষ্টান্ত গোটা ভারতের অনুসরণ করা উচিত বলে মনে করি। প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের পাঠ, তথা প্রাকৃতিক সান্নিধ্যের উপলব্ধি শিশুকাল থেকে অনুভূত হওয়া দরকার। তা না হলে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্যায়ন অধরাই থেকে যাবে। নদ-নদী, বিশাল বনরাজি, পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার প্রয়োজন দুর্বোধ্য থেকে যাবে, পরিবেশ ধ্বংসের ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে পরিবেশবিদদের সাবধান বাণীও বিফলে যাবে।
সর্বোপরি যে বার্তা প্রবন্ধকার দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তা অনুসরণ করা প্রয়োজন। প্রকৃতির গতিপ্রকৃতি, এবং বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির সঙ্গে শিশুদের বোধগম্য ভাষায় তাদের পরিচিত করা আবশ্যক, যাতে ভবিষ্যতে তারাই সুনাগরিক হয়ে তাদের কর্তব্য পালনে ব্রতী হতে পারে। অসমের গ্রামের দৃষ্টান্তমূলক, শিশুমনকে গঠনমূলক কাজে নিয়োজিত করার উদাহরণ খুব বেশি নেই। আমাদের দেশে তথা রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার নিয়ে আমরা আনন্দে মাতোয়ারা হই, কিন্তু শিশুদের মানসিক উন্নয়নে কি আমরা যথার্থ মনোযোগী হয়েছি? সত্তরের দশকের পরে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়িত হয়েছিল, কিন্তু সেই পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পচন বেশ কিছু দিন যাবৎ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার দায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কান্ডারিরা কোনও মতেই অস্বীকার করতে পারেন না। প্রাকৃতিক পরিবেশে পঠনপাঠনের ধারা শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শান্তিনিকেতনে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেই প্রতিষ্ঠানটিও আজ রাজনৈতিক বিতর্কে বিপর্যস্ত!
শেষে বলি, যে দেশে শিক্ষাব্যবস্থা কলুষিত হয়, সেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সার্বিক উন্নয়ন দুরূহ শুধু নয়, প্রায় অসম্ভব!
পড়ুয়ার অভাব
সংবাদে প্রকাশ, স্কুলে লটারি করার প্রয়োজনই হচ্ছে না (‘স্কুলে আসন খালি, লটারি ছাড়াই ভর্তি’, ৩০-১২)। শহর ও গঞ্জ এলাকায় সমস্ত সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলে ভর্তির জন্য আগে লটারি করা হত। বর্তমানে ওই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এতই কম, এত কম ছেলেমেয়ে ভর্তি হতে আসছে যে, লটারির প্রয়োজনই নেই। সরকারি স্কুলগুলিতে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা সত্ত্বেও অভিভাবকরা সরকারি স্কুলগুলিতে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাচ্ছেন না। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি স্কুলে পড়াশোনা হয় না। শিক্ষক-শিক্ষিকারা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। আবার কোনও স্কুলে যথেষ্ট শিক্ষক নেই। উৎসশ্রী পোর্টাল চালু হওয়ার পর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রবণতা গ্রামের স্কুল থেকে জেলা শহরের স্কুলে চলে আসার। ফলে গ্রামে শিক্ষা সেই অন্ধকারেই রয়ে গিয়েছে। সমস্ত সরকারি স্কুল নিয়মিত ও নিয়মমাফিক চলুক। না হলে সরকারি স্কুল যথেষ্ট পড়ুয়া ফিরে পাবে না।
সুষম আহার
অংশুমান দাসের প্রবন্ধ (‘বাড়া ভাতে লোহা চাই না’, ২৯-১২) পড়ে এই পত্র। আমাদের প্রায় প্রত্যেকের শরীরেই লোহার ঘাটতি আছে। আর তার জন্য আমরা কম-বেশি রক্তাল্পতায় ভুগি, একটু কাজ করার পর ক্লান্তি অনুভব করি। আমরা অনেকেই ঠিকঠাক সুষম খাবার, অর্থাৎ ভাত, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, আনাজপাতি, ফল জোগাড় করতে পারি না। কিন্তু লোহার এই ঘাটতি মেটাতে সরকার পক্ষ থেকে রেশনের মাধ্যমে যে ভাবে লোহাযুক্ত চাল বিতরণ করা হচ্ছে, সেই অভিনব পন্থায় কি লোহার লেশমাত্রও শরীরে প্রবেশ করছে? সবচেয়ে বড় কথা, এতে সার্বিক পুষ্টিতে কতটা উন্নতি হবে, যখন অতি প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি আমাদের খাদ্যে অনুপস্থিত? আমরা ক্রমশ বাজারে বেশি দামের মুখরোচক খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। তাতে লোহা, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ আছে কি না, কেউ ভাবছি না। আমরা চাইলেই কিন্তু পারি লোহাযুক্ত খাদ্যগুলি বেশি করে খেয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার পাতে সব রকমের সুলভ খাবার থাকুক, যা সামগ্রিক পুষ্টির উৎস হয়ে উঠতে পারে।
ব্যর্থ নন
‘বিপজ্জনক কুটির শিল্প’ (২৪-১২) সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার রাজ্যের মহিলা ভোটব্যাঙ্ক টানতে পাঁচ বছর আগে রাজ্যে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করলেও চোরাপথে তা রমরমিয়ে চলছে। যে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ব্যর্থ, তা এ রাজ্যে জারি করাটা অবিবেচকের মতো কাজ, বলা হয়েছে সম্পাদকীয়তে। বিহারের মতো গরিব রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করে লাভ কতটা হয়েছে, সে প্রশ্নও তোলা হয়েছে। রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক বছরে দশ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ লাভের চেয়ে ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে। কিন্তু সম্পাদকীয়তে টাকার অঙ্কটাই ধরা হয়েছে। ধরা হয়নি, কত পরিবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, কত জীবন অকালে ঝরে গিয়েছে, কত নারী অত্যাচারিত হয়ে আত্মহননের পথ বেছেছেন।
এ কথা ঠিক, নীতীশ কুমার গরিব, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের মধ্যে মাদকদ্রব্যের প্রতি ক্ষোভের কথা জানতেন। রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করলে তাঁদের সমর্থন যে তিনি পাবেন, তা-ও জানতেন। কোটিপতি মাদক উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা বিরূপ হলেও ভোটে জেতা আটকাবে না। রাজ্যে নিয়ম-বিধি ১০০ শতাংশ কার্যকর করার কাজটা কোনও সরকার আন্তরিক হলেও সম্ভব নয়। প্রশাসনিক দুর্নীতি, রাজনৈতিক দলের মদত, মানুষের সচেতনতায় ঘাটতি, এই সবই বাধা সৃষ্টি করে। সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, সাবালক নাগরিক সব দিক ভেবে স্বেচ্ছায় যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তাকে সম্মান জানানো উচিত। উদারনৈতিক গণতন্ত্রে সরকারের জ্যাঠামশাই হয়ে ওঠাও কাজের কথা নয়। এখানে প্রশ্ন, ৭৫ বছরের স্বাধীন ভারতে সত্যিকারের সাবালক কত জন হয়েছেন? তাই জ্যাঠামশাইয়েরও দরকার আছে। এই পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যই বলছে, বিহারে অপরাধ, নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ অনেকাংশে কমেছে। আর চোরাই পথে মদ বিক্রি যা হচ্ছে, তা সরকারের উদাসীনতায়, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের মদতে। যদি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার মহিলা ভোট পাওয়ার জন্যও মদ নিষিদ্ধ করে থাকেন, তবু তাঁকে অভিনন্দন জানাই এই সাহসী পদক্ষেপের জন্য।
দুষ্টচক্র
রূপালী গঙ্গোপাধ্যায় ‘রোজ চাই নতুন পোশাক’ (২৪-১২) প্রবন্ধে সঠিক ভাবেই লিখেছেন, যে ভাবে পোশাক পুরনো হয়ে গিয়েছে বলে তাকে ফেলে দেওয়া হয়, এবং তার জন্য যে ভাবে পরিবেশ দূষণ হয়, তা খুবই পীড়াদায়ক। আমার একটি ২০ বছরের পুরনো শার্ট এখনও ভাল আছে, ব্যবহারও করি, সেটা বর্তমান প্রজন্ম চিন্তাই করতে পারে না। অবশ্য এখন উৎপাদন প্রক্রিয়াটাই এমন যে, কোনও পণ্য যাতে বেশি দিন ব্যবহার করা না যায়, উৎপাদনকারী সেটা লক্ষ্য রাখে। এক মডেলের কলমের রিফিল অন্য কলমে যাতে ব্যবহার না করা যায়, সেই ভাবে তৈরি করা হয়। বোতলের পরিবর্তে ছোট প্লাস্টিকের পাউচে শ্যাম্পু বিক্রি করা হয়। ফলে পরিবেশের ক্ষতি বেড়েই চলেছে। পরিবেশ রক্ষা করতে গেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়, আবার উৎপাদন বাড়াতে গেলে পরিবেশ নষ্ট হয়। আমরা এক দুষ্টচক্রে পড়েছি।