দিনে অন্তত ৫০০-৬০০ গাড়ি স্টেশনে আসে। দৈনিক অন্তত ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা আদায় হচ্ছে, যার কোনও হিসাবই নেই। প্রতীকী ছবি।
শালিমার স্টেশনের অব্যবস্থার বিষয়ে নতুন কিছু বলার নেই। মাঝেমধ্যেই আমরা পাঠকের কলমে সেই দুরবস্থার কথা জানতে পারি। গত বছরের মতো এ বারও অশীতিপর মাকে চিকিৎসাসূত্রে মুম্বই নিয়ে যাওয়ার জন্য শালিমার স্টেশনে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হতে হল। দেখলাম, এখনও হুইলচেয়ার নিয়ে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে সরাসরি যাওয়ার কোনও সুবিধাই নেই। পুরো প্ল্যাটফর্ম অতিক্রম করে রেললাইনের উপর দিয়ে কার্যত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্য প্ল্যাটফর্মে যেতে হয়। এবং মালবাহকের শরণাপন্ন হতেই হয়।
গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি মুম্বই থেকে ফেরার পথে শালিমার স্টেশনেই আর এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম। বেলা দশটায় স্টেশন থেকে বেরিয়ে দেখলাম, গাড়ির সংখ্যা নগণ্য এবং তাদের দাবি আকাশছোঁয়া। প্রকৃতপক্ষে যাত্রীসাধারণের জন্য কোনও সরকারি পরিবহণের ব্যবস্থা নেই। নেই কোনও বাস স্ট্যান্ড বা প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ। অগত্যা মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাপ ক্যাব বুক করলাম। রওনা দেওয়ার পর দেখলাম স্টেশন থেকে সামান্য দূরত্বে রাস্তার উপর অস্থায়ী গুমটি বেঁধে এবং বাঁশ ঝুলিয়ে একটি চেকপোস্ট করা হয়েছে। সেখানে এক জন বহির্মুখী গাড়ি দাঁড় করিয়ে পার্কিং ফি আদায় করছিলেন। চালক জানালেন, ওখানে ৫০ টাকা পার্কিং দিতে হবে। টাকাটা দিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, পার্কিং-এ গাড়ি না রাখা সত্ত্বেও পার্কিং ফি কেন দিতে হবে? তাতে জানতে পারি, যাত্রী ড্রপ করার সময় কোনও টাকা দিতে না হলেও যাত্রী তুলে বার হওয়ার সময় দিতে হয়। পার্কিং কুপনটি ছিল ৪৮ টাকার। জানা গেল, দু’টাকা ফেরত চাইলে ৪৮ টাকা খুচরো দিতে বলা হয়। আরও ভাল করে কুপনটি দেখে জানলাম, পার্কিং ফি আসলে ৪০ টাকা। তার উপর জিএসটি ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ, সাত টাকা কুড়ি পয়সা। ফলে মোট পার্কিং ফি হয় ৪৭ টাকা কুড়ি পয়সা, যা অঙ্কের নিয়মে হওয়া উচিত ৪৭ টাকা। কিন্তু ছাপা রয়েছে ৪৮ টাকা এবং প্রত্যেক গাড়ি থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। অ্যাপ ক্যাব চালকের কাছ থেকে আরও খবর পেলাম যে, সারা দিনে অন্তত ৫০০-৬০০ গাড়ি স্টেশনে আসেই। অর্থাৎ, তিন টাকা বাড়তি ধরলে দৈনিক অন্তত ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা আদায় হচ্ছে, যার কোনও হিসাবই নেই।
কে নেয় এই টাকা? যে গাড়ি পার্কিং-এ দাঁড়ালই না, সেই গাড়ির কাছ থেকে কেনই বা দাদাগিরি করে পার্কিং আদায় করা হয়, আর এই হিসাব বহির্ভূত টাকাই বা কোথায় যায়? পুলিশ কিন্তু অদূরেই দাঁড়িয়ে থাকে। অতএব ধরে নেওয়া যায়, যা হচ্ছে, তা পুলিশের সামনেই হচ্ছে।
রেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ, অবিলম্বে শালিমার স্টেশনে এই সমস্ত অনৈতিক কাজকর্ম বন্ধ করা হোক। এবং একাধিক ট্রেন ক্রমান্বয়ে হাওড়া থেকে শালিমারে স্থানান্তরিত করার আগে ভাল করে যাত্রীদের অসুবিধার বিষয়টিতে নজর দেওয়া হোক।
বিশ্বদীপ কর রায়, কলকাতা-৫৪
প্রকল্পে অনিয়ম
আবাস প্লাস যোজনায় বাড়ি পাওয়ার জন্য উপভোক্তার প্রকৃত তথ্য যাচাইয়ের জন্য তদন্ত শুরু হতেই জেলায়-জেলায় বিক্ষোভ, হুমকি, অবরোধ ইত্যাদি শুরু হয়েছে। আসলে প্রকৃত উপভোক্তার তথ্য যাচাইয়ের নির্দেশিকা আগেও ছিল। কিন্তু তা সঠিক ভাবে কার্যকর করা হয়নি। ফলে, অনেক পরিবার নির্দেশিকার বাইরে গিয়ে ইতিমধ্যে বাড়ি পেয়েছেন। আরও অনেকে পাওয়ার আশায় আছেন। এ দিকে, পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য যাচাই হলে অপেক্ষমাণদের অনেকের নাম বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে, তালিকাভুক্তদের নাম বাদ যাতে না যায়, তার জন্য কিছু সচ্ছল পরিবার আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। অন্য দিকে, অর্থনৈতিক সমীক্ষা (যে তালিকা ধরে এত দিন উপভোক্তা নির্বাচন হয়েছে)-র বিড়ম্বনার কারণে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আস্থাভাজন না হওয়ায়, প্রকৃত প্রাপকদের অনেকের নাম উপভোক্তা তালিকাভুক্ত হয়নি কিংবা পিছিয়ে গিয়েছে। তাঁরাও বাড়ি পাওয়ার জন্য বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। গ্রামীণ এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অনেক সচ্ছল পরিবার নিজের ভাল বাড়ি থাকা সত্ত্বেও বাবা-মা’কে আলাদা পরিবার হিসাবে দেখিয়ে বা নিজে আলাদা পরিবার বলে সরকারি বাড়ি পেয়ে গিয়েছেন। বাড়ি থাকলেও জরাজীর্ণ কেউ কেউ গোয়ালঘর, বা রান্নাঘর দেখিয়ে বাড়ি পেয়েছেন। অনেকে আবার বাড়ি সম্পূর্ণ না করে সেই অর্থ অন্য খাতে ব্যয়ও করেছেন। এ সব ঘটনা যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গোচরে নেই, এমন কথা বলা যাবে না। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় দল তদন্ত করে একগুচ্ছ অভিযোগ করায় এবং অর্থ বরাদ্দের জন্য গাইডলাইনের উপর কড়াকড়ি করায় প্রশাসনিক স্তরে এখন অতি সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। এই কড়াকড়ি এবং সক্রিয়তা যদি বজায় থাকে তবে প্রকৃত প্রাপকদের উপকার হবে।
প্রদ্যোৎ পালুই, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
অকেজো সমিতি
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের সমবায় সমিতিগুলি নিয়মমাফিক নির্বাচিত পরিচালক সমিতির অভাবে নানা সমস্যায় জর্জরিত। নির্বাচিত পরিচালকমণ্ডলীর অভাবে প্রকৃতপক্ষে সমবায়গুলি তার গণতান্ত্রিক চরিত্র হারিয়ে, আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার শিকার। রাজ্যে বহু বছর ধরে বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীদের জন্য সমবায় দফতর অনুমোদিত ঋণদান সমবায় সমিতি আছে। সমিতিগুলি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শিক্ষকদের নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে আসছে। সমবায় নিয়ম অনুযায়ী, এখানেও নির্বাচিত পরিচালকমণ্ডলী গঠিত হয়। এই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলাদলি থাকে না বা আইনশৃঙ্খলা অবনতির মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয় না।
অথচ, কোনও অজানা কারণে এই ঋণদান সমবায়গুলির ক্ষেত্রেও নির্বাচিত বোর্ড গঠন করা সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে সমবায় পরিদর্শকের প্রশাসক হিসাবে বসানোর ব্যবস্থা হয়েছে। এক-একটি ব্লকে প্রচুর সংখ্যক এই ধরনের সমিতি আছে। এক জন সমবায় পরিদর্শকের হাজার কাজের নির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও অকারণে বাড়তি প্রশাসকের দায়িত্ব চাপানো হয়েছে। ফলে সামগ্ৰিক ভাবে সমস্ত সমবায়ই যথাসময়ে সদস্যদের স্বার্থে পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ, কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি এত দিন যা ছিল, এখন প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়া তা আর বিন্দুমাত্র নেওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে সমবায়গুলি প্রতিবন্ধী হিসাবে টিকে আছে। এমনকি আইন মেনে প্রতি বছরে সদস্যদের ডিভিডেন্ড দেওয়া ও উৎসাহিত করার জন্য তাঁদের উপহার প্রদান করার ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। দায়-বিপদে অপরের কাছে হাত না পেতে, স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে গঠিত কর্মচারী ঋণদান সমবায়গুলিকেও কেন এ ভাবে দুর্বল করা হচ্ছে?
প্রশাসন এই বিষয়টি দেখে যদি স্বাভাবিক নিয়ম ও স্বাভাবিক গতিতে আমাদের ঋণদান সমিতিগুলিকে গণতান্ত্রিক ভাবে চলতে সাহায্য করে, তা হলে সমগ্ৰ বাংলার কর্মচারী ঋণদান সমিতিগুলি প্রাণশক্তি ফিরে পেয়ে বাঁচতে পারে।
সন্দীপ সিংহ, হরিপাল, হুগলি
দুর্ভোগ যাত্রা
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের দুর্ভোগ ক্রমাগত বাড়ছে। সকালের দিকে অফিস টাইমে লোকাল ট্রেনগুলি কিছুটা সময়ে চললেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘লেট’ হওয়ার বিষয়টি ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এই সমস্যা নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ যেমন উদাসীন, তেমনই যাত্রীরাও নির্বিকার। এর সঙ্গে যুক্ত আছে হাওড়া স্টেশনে ট্রেন লেট হওয়ার ব্যাপারটিও। টিকিয়াপাড়া, রামরাজাতলা বা মৌড়িগ্রাম ছাড়ার পরে ট্রেন দাঁড়াতে দাঁড়াতে যায়। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ে। রেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদাসীন কেন?
তাপস বেরা, আন্দুল, হাওড়া