সম্পাদক সমীপেষু: ব্রাহ্মণত্ব, সাম্য

রামকৃষ্ণ মিশনে যাঁরা স্থায়ী ভাবে, নিজেদের বাড়ি ছেড়ে সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারী হওয়ার জন্য যোগদান করেন, তাঁদের কতকগুলি নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:০৩
Share:

স্বামী বিবেকানন্দ তখন শিকাগো ধর্ম মহাসম্মেলনের পরে ভারতে ফিরে এসেছেন। ১৮৯৮ সাল। বেলুড়ে, নীলাম্বরবাবুর ভাড়া-বাড়িতে, শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মদিনে, তিনি তাঁর শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীকে অনেকগুলি পৈতে নিয়ে আসতে বলেন। সেই মতো ৪০-৫০ জন মানুষকে— ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈশ্য— তিন বর্ণের মানুষকেই গায়ত্রী মন্ত্র ও পৈতে দেন শাস্ত্রে পারদর্শী শরচ্চন্দ্র। এই উদ্দেশ্যে স্বামীজি তাঁর শিষ্যকে সে দিন কায়স্থ ও বৈশ্যদের পক্ষে প্রযোজ্য গায়ত্রী মন্ত্রও বলে দেন। স্বামীজি সে দিন বলেছেন, ‘‘ক্রমে দেশের সকলকে ব্রাহ্মণ-পদবিতে উঠিয়ে নিতে হবে।’’

Advertisement

রামকৃষ্ণ মিশনে যাঁরা স্থায়ী ভাবে, নিজেদের বাড়ি ছেড়ে সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারী হওয়ার জন্য যোগদান করেন, তাঁদের কতকগুলি নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়। প্রথমে ন’বছর তাঁরা ব্রহ্মচারী (সাদা কাপড় পরা) অবস্থায় থাকেন, পরে দশম বছরে তাঁরা সন্ন্যাসী হন। এর পর তাঁরা গেরুয়া কাপড় পরেন এবং তাঁদের একটি নতুন নাম দেওয়া হয়। রামকৃষ্ণ মিশন যে হেতু ‘দশনামী’ সাধুদের ‘পুরী’ সম্প্রদায়ভুক্ত (শ্রীরামকৃষ্ণের গুরুর নাম ছিল তোতাপুরী), তাই এখানে ত্যাগীদের নামের শেষে একটি ‘আনন্দ’ শব্দ যুক্ত থাকে।

রামকৃষ্ণ মিশনে যাঁরা এই ত্যাগের জীবন বেছে নেন, তাঁরা বেশির ভাগই জন্মসূত্রে হিন্দু। কিন্তু এ ছাড়াও, জন্মসূত্রে যাঁরা খ্রিস্টান বা মুসলিম, তাঁরাও এই সংগঠনে সন্ন্যাসী হওয়ার সুযোগ পান। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান নির্বিশেষে— সকলে পাঁচ বছরের পরে নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচারী ব্রতে দীক্ষিত হন। তারও চার বছর পরে (অর্থাৎ দশম বছরে), তাঁরা ব্রহ্মচর্য থেকে উত্তীর্ণ হন সন্ন্যাসে।

Advertisement

স্বামী বিবেকানন্দ যে-সাম্যের কথা বলেছিলেন, সকল মানুষের মধ্যে যে-দেবত্বের জয়গান গেয়েছিলেন— মিশন তার স্থায়ী সদস্যদের এই ভাবে ধর্ম-জাতি-ভাষা নির্বিশেষে বরণ করার মধ্য দিয়ে, সেটিকে রূপায়ণ করে চলেছে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিভাজন যখন সমাজে প্রকট হয়, তখন স্বামীজি ও শ্রীরামকৃষ্ণের চিন্তা অনুসরণ করে ভারতের সমাজের বুকে এই নীরব বিপ্লব বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

স্বামী ত্যাগরূপানন্দ

রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, মালদহ

ন’টি গুণ

‘শুধু পুরুষেরা’ (৫-২) শীর্ষক চিঠি পড়ে কয়েকটি কথা। বেদের সংজ্ঞা অনুযায়ী ব্রাহ্মণ তিনিই, যাঁর ব্রহ্মজ্ঞান আছে। গীতা অনুসারে, যাঁর মধ্যে চিত্তনিবৃত্তি, ইন্দ্রিয়সংযম, তপস্যা, কায়িক-বাচিক-মানসিক শুচিতা, সরলতা, স্বাধ্যায়, ক্ষমা, আস্তিক্য ও তত্ত্বানুভব— এই গুণের সমাহার আছে, তিনিই ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণদের ধারণ করা পৈতের ন’টি সুতো ওই ন’টি গুণের প্রতীক। অর্থাৎ, এক জন ব্রাহ্মণকে ওই ন’টি গুণের ধারক হতেই হবে। পৈতে থাকলেও, ওই ন’টি গুণ না থাকলে সেই ব্যক্তি ব্রাহ্মণ হিসেবে স্বীকৃত হবেন না। তাই পৈতেধারী নির্গুণ, না পৈতেহীন গুণী— পূজার অধিকার কার, সেটা নিয়ে ঝগড়াও ব্রাহ্মণোচিত আচরণ নয়। কারণ ব্রাহ্মণকে ইন্দ্রিয়সংযমী, ক্ষমাশীল, সরল ও তত্ত্ব অনুভবকারীও হতে হবে। তাই পৈতেধারী ব্রাহ্মণ ছাড়া পূজার যাঁরা বিরোধিতা করেন, তাঁরা অব্রাহ্মণসুলভ আচরণ করেন।

অভিজিৎ ঘোষ

কমলপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

ধর্মীয় পরিচয়

‘ধর্মের প্রমাণ’ (৩০-১) শীর্ষক সম্পাদকীয়টিতে অত্যন্ত জরুরি চারটি প্রশ্ন উত্থাপনের জন্য অভিনন্দন। উত্তর দেওয়ার দায় তাঁদের, যাঁরা মানুষের ধর্মীয় পরিচয়কেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে চান এবং সেই কারণেই ধর্মীয় বিভাজনকামী সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে সমর্থন করছেন। আমি এখানে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নিরিখে উত্থাপিত প্রশ্নগুলির সমর্থনে কয়েকটি কথা বলতে চাই।

প্রথমত যথার্থই বলা হয়েছে, ‘‘হিন্দু নাম হইলেই হিন্দু ধর্মযুক্ত, ইহা একটি অতিসরলীকরণ, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্রান্তিজনক।’’ আমাদের এলাকার প্রয়াত আব্দুস সামাদ বিশ্বাস ছিলেন সংস্কৃতের স্নাতক এবং পেশায় শিক্ষক। এলাকার জনপ্রিয় এই শিক্ষক প্রকৃত অর্থেই ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ ছিলেন। কোনও রকম ধর্মাচরণের ধার ধারতেন না। নিজের পিতৃদত্ত নামটি পাল্টে ফেলেননি ঠিকই, কিন্তু ছেলেমেয়ের নাম রেখেছিলেন মুকুল, মঞ্জু ও ইন্টু। মুকুলের মেয়ের নাম মৌ এবং ইন্টুর মেয়ের নাম ইতি। এই পরিবারের কেউই প্রথাগত ধর্মাচরণে বিশ্বাসী নন। তা হলে নাগরিকত্বের প্রশ্নে এঁদের কোন ধর্মভুক্ত করা হবে ?

দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে, ‘‘হিন্দু পরিবারে জন্ম হইলেই কেহ নিজেকে হিন্দু না ভাবিতে/বলিতে পারেন।’’ এ রকম মানুষ অসংখ্য রয়েছেন। এই পত্রলেখক স্বয়ং এই গোত্রভুক্ত।

তৃতীয় যে শ্রেণিটির কথা বলা হয়েছে, তাঁরা ‘আচারে-বিশ্বাসে’ ধর্মপালনকারী নন, আবার ঘোরতর নাস্তিকও নন। এঁদের হিন্দু হিসেবে দাগিয়ে দিলে অস্বস্তিবোধ করেন।

চতুর্থ এবং ‘অতি গুরুতর’ প্রশ্নটি হল, হিন্দু-মুসলিম মিশ্র পরিবারের সন্তানের ধর্ম কী? দৃষ্টান্ত দিই।

মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মানো ছেলেটির পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল সিরাজউদ্দৌলা। স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সহপাঠীরা সে-নাম নিয়ে মজা-মশকরা শুরু করে। বিরক্ত-বিব্রত ছেলেটি নিজের নামটি সংক্ষিপ্ত করে লেখেন ‘সিরাজ’। সেই সময় নজরুল সমিতি করার সুবাদে, কাজী আব্দুল ওদুদ এবং মৈত্রেয়ী দেবীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন তিনি। কাজী আব্দুল ওদুদের ‘তরুণপত্র’র জন্য একটি লেখা জমা দেন ‘সিরাজ’ নামে। ‘‘শুধু সিরাজ কেমন ন্যাড়া ন্যাড়া লাগছে’’ বলে নামের আগে একটি ‘এম’ বসিয়ে নেন ওদুদ সাহেব। সেই থেকে তাঁর নাম হয়ে যায় ‘এম সিরাজ’। স্বভাবরসিক এবং আদ্যোপান্ত ধর্মনিরপেক্ষ মননের মানুষ সিরাজের মতে, ‘এম ফর মিনিংলেস!’ যদিও সিরাজের ‘ভুল’ শুধরে দেওয়ার জন্য কেউ কেউ ‘এম’-এর পাশে একটি ‘ডি’ বসিয়ে তাঁকে ‘এমডি’ অর্থাৎ ‘মহম্মদ’ করতে কসুর করেন না! যাই হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সিরাজের সঙ্গে পরিচয় হয় কলকাতার মেয়ে প্রতিমা দাসের। পরিচয় থেকে প্রেম, পরিণয়। তাঁদের ছেলে সৃজন ওরফে রঞ্জু। সৃজনের বিয়ে হয়েছে মণিপুরি হিন্দু নারী ববিতার সঙ্গে। সৃজন- ববিতার সদ্যোজাতের নাম সৃজিতা। সিরাজ সাহেবের পরিবার প্রথাগত কোনও ধর্মাচরণ করেন না। সুতরাং এই পরিবারের সদস্যদের ধর্মীয় পরিচয় স্থির হবে কিসের ভিত্তিতে ?

চন্দ্রপ্রকাশ সরকার

বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

বিশ্বকর্মা

ভাদ্র মাসের শেষে বিশ্বকর্মা পুজো হলেও পুরুলিয়ার ছুতোর পাড়ার চিত্রটা একটু আলাদা। কারণ ছুতোর পাড়ায় বিশ্বকর্মার পুজো হয় সরস্বতী পুজোর দিন। এই অসময়ে পুজোর প্রচলন হয় আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে। চার দিন ধরে পুজোয় মেতে ওঠেন সব বয়সের মানুষ। এই পাড়ায় বেশির ভাগ পরিবার কাঠের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বিশ্বকর্মা তাঁদের আরাধ্য দেবতা।

এখানকার প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, বিশ্বকর্মা পুজোর দিন কারিগরদের যন্ত্রাংশ মন্দিরে রাখা হয়। ভাদ্র মাসে দুর্গাপ্রতিমা গড়ার চাপ থাকে, তাই কাজ বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। এই সমস্যার সমাধানে, প্রায় ১৪৫ বছর আগে বিশ্বকর্মা পুজো পঞ্চমীতে করার সিদ্ধান্ত নেন তখনকার সমাজপতি। সেই রীতি মেনে আজও নিষ্ঠাভরে পুজো করা হয়।

তাপস কুমার দাস

আসানসোল

রেলিং ধরতে

আমি প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ নাগরিক, বিভিন্ন কারণে নিয়মিত হাওড়া স্টেশনের মাধ্যমে গন্তব্যে যেতে হয়। সাবওয়ে ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ওঠানামার সময় রেলিং ধরতে পারি না, সেখানে মুষ্টিমেয় হকার পসরা সাজিয়ে ব্যবসায় ব্যস্ত।

বাসুদেব রায় চৌধুরী

পূর্ব বর্ধমান

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement