লন্ডনে চলছে লকডাউন।
কিছু দিন হল ব্রাডফোর্ড নামক একটা ছোট শহর থেকে লন্ডনে এসে বাস করতে শুরু করেছি। ফেব্রুয়ারির শুরুতই শিফ্ট করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু মার্চের শুরুতেই সেটা সম্ভব হল। ভাগ্য ভাল, লকডাউনের আগেই লন্ডনে বসত শুরু করতে পেরেছিলাম। প্রথমে ব্রিটিশ সরকার ইতালি থেকে আসা ফ্লাইট বন্ধ করেনি।
অনেক দিন ধরে হার্ড ইমিউনিটির কথা বলে গিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ এ দেশে ব্যাপক হারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন ১১ মার্চ কোভিডকে ‘অতিমারি’ ঘোষণা করলো তখন এ দেশের টনক নড়ে। তবে তত দিনে ইউরোপের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক সংক্রমিত মানুষ এ দেশে প্রবেশ করে গিয়েছে।
আমি লন্ডন টিউবে যাতায়াত করি। টিউবে কোনও ভাবেই ডিস্ট্যান্সিং মেনে চলা সম্ভব না। তাও টিউব বন্ধ হয় না। তবে আমার অফিস ১২ মার্চের পর থেকেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু করে দেওয়ায় আমার অনেক সুবিধা হয়। এ দেশে এমনিতেই এনএইচএসের কর্মীসংখ্যার অভাব রয়েছে। তার মধ্যে এই বিরাট অতিমারি এসে যাওয়ায় এদের অবস্থা আরও করুণ। আমার এক বন্ধুর স্ত্রীর সব রকম উপসর্গ দেখা যায় কিছু দিন আগে। হঠাৎ ফোন পাই বন্ধুর কাছ থেকে। তিনি বলেন, জ্বরের সঙ্গে গলায় এত ব্যাথা যেন মনে হচ্ছে, কেউ বাইরে থেকে গলা টিপে ধরছে। গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। কাঁপুনি দিচ্ছে। এনএইচএসের ১১১ নম্বরে ফোন করার ৫-৬ ঘণ্টা পরে অ্যাম্বুলেন্স আসে। যেটা এ দেশে সচরাচর দেখা যায় না। অন্য সময় ১০ মিনিটের মধ্যে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হয়। এনএইচএস কর্মীরা এহেন রোগীকেও হাসপাতালে ভর্তি করতে পারল না। কারণ, নির্দেশ অনুসারে, আশঙ্কাজনক রাগী ছাড়া কাউকেই তখন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা যাচ্ছিল না।
আরও পড়ুন: দেড় বছরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বর্ধিত ডিএ বন্ধ রাখল কেন্দ্র
আরও পড়ুন: ‘স্বাভাবিক জীবনযাপন করাই কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছে’
বন্ধুটির বেলায় কোভিড-১৯ টেস্ট বাদে অনেক টেস্ট হল। কিন্তু মোবাইল অ্যাম্বুলেন্স করোনাভাইরাস টেস্টিংয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই। ওঁরা উপদেশ দিলেন, যদি পেশেন্ট আসঙ্কাজনক হয়, তা হলে ফের ফোন করতে। বন্ধুকে পরামর্শ দেওয়া হল আইসোলেশনে থাকার। একটা উন্নত দেশেও এই পরিস্থিতি না দেখলে বিশ্বাস হত না! এ ভাবে এই দেশে যে কত করোনা সংক্রামক রোগীর হাসপাতালটুকু জোটেনি, স্রেফ ঘরে আইসোলেশনে আছেন, তার কোনও হিসেবে নেই।
এখানেও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা পুরোপুরি মানছেন না। আমার ফ্লাটটা টাউন সেন্টারের উপর। রোজই দেখি কিছু লোক টাউন সেন্টারের মাঝে বসার জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন। জানি না এ ভাবে আর কত দিন বন্দি হয়ে থাকব!
কৌশিক দত্ত, লন্ডন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)