saraswati puja

সম্পাদক সমীপেষু: পুজো নয়, পিকনিক

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:০৯
Share:

‘সরস্বতী পুজো করতে চেয়ে মণীন্দ্র কলেজে বিক্ষোভ’ (১৪-২) পড়ে খারাপ লাগল। স্কুল-কলেজে কেন সরস্বতী পুজো করা হবে? আমরা জানি, স্কুল-কলেজে সব ধর্মের ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করতে আসে। সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কেবল হিন্দুদেবীর পুজো করা হলে তাতে কি সকল ধর্মের ছেলেমেয়েদের অংশগ্রহণ সমান হবে? আমার মনে পড়ে, আমাদের স্কুলে যে দিন সরস্বতী পুজো হত, আমার অনেক ইসলাম ধর্মাবলম্বী বন্ধু সে দিন স্কুলে আসত না। এমনকি সরস্বতী পুজোর খাওয়ার দিনেও তাদের অনুপস্থিতি চোখে পড়ত। তখন এর কারণ না বুঝলেও, এখন স্পষ্ট বুঝতে পারি। স্কুলস্তর থেকেই যদি ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই রকম ভাবে ধর্মের কারণে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়, ভবিষ্যতেও এই বৈষম্য জিইয়ে রাখবেন অনেকেই। এ ছাড়া কেনই বা আমরা স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞানমনস্ক না-করে তাদের পুজো-অর্চনা, অঞ্জলি দেওয়ার শিক্ষা দিচ্ছি?

Advertisement

স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাও কি এটাকে সমর্থন করেন না? আমরা কত জন শিক্ষককে দেখেছি এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে? আমরা কি সে দিন বিজ্ঞান, সাহিত্যের উপর যুক্তিমূলক তর্কের অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী করতে পারি না? সরস্বতী পুজোর খাওয়ার দিনকে পিকনিকের দিন হিসেবে উদ্‌যাপন করতে পারি না? তা হলে তো সেখানে বৈষম্য সৃষ্টি হয় না। দীর্ঘ কাল ধরে কেবল একটা শ্রেণির ভোটব্যাঙ্কের জন্য সরকার এই বিষয়টিকে এড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু উচিত ছিল এর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা করার। না হলে এই বৈষম্য আর অবৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেবে।

বিতান সানা

Advertisement

বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা

বহুরূপে সম্মুখে

জাপানের দেবদেবীদের অন্যতম বেনতেন বা বেনজাইতেন। বেনতেন হলেন আমাদের পরম পূজনীয় দেবী সরস্বতী। জাপানে নারা যুগে, অর্থাৎ ৬৪৫-৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম নারী দেবতার প্রচলন হয়। সেই যুগে যাঁর মূর্তি সর্বপ্রথম নির্মিত হয়েছিল, তিনি বেনতেন। এখনও পর্যন্ত তাঁর জনপ্রিয়তা লক্ষণীয়। এমনকি ১৯৩৪ সালে লেডি চিবেনের প্রতিষ্ঠিত ‘বেনতেন-শু’ বা বেনতেন সম্প্রদায় এখনও সক্রিয়। জাপানি ‘বেন’ শব্দটির অর্থ বাগ্মিতা ও ‘তেন’ শব্দটির অর্থ স্বর্গীয়। আর ‘বেনতেন’-এর অর্থ দাঁড়ায় ‘বাগ্মিতার ঈশ্বর’। সুতরাং, এটা বোঝা যাচ্ছে যে, বেনতেন জাপানে জ্ঞানের দেবীরূপেই পূজিত হতেন।

পরবর্তী কালে অবশ্য বেনতেন বিভিন্ন রূপে ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। বর্তমান জাপানে বেনতেন মূলত ভাগ্য ও প্রবাহের দেবীরূপে অভিহিতা। প্রবাহের দেবী কল্পনায় যে কোনও রকম প্রবাহ, যেমন, অর্থের প্রবাহ, সুখ-সমৃদ্ধির প্রবাহ, সন্তানের প্রবাহ ইত্যাদি ধারাস্রোতকে বহমান রাখতে পারেন বেনতেন। উর্বরতার দেবী এবং জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবেও বহু ভক্তের কাছে সমাদৃতা তিনি। ঈর্ষার দেবী, জলের দেবী, সমুদ্রের দেবী, সমরবিদ্যার দেবী ও আরোগ্যের দেবীর আসনেও অধিষ্ঠিতা বেনতেন। যে হেতু বেনতেন জলের দেবী, তাই তাঁকে উদ্দেশ করে নিবেদিত যে কোনও মন্দির বা দেউল নির্মিত হয় কোনও দ্বীপে বা জলবেষ্টিত ভূখণ্ডে। এই প্রসঙ্গে মনে হতেই পারে যে, ভারতের সরস্বতী নদীকে ব্যক্তি-রূপে মূর্ত করার ধারণাকে কেন্দ্র করেই জাপানে বেনতেনের মন্দির হয়তো জলবেষ্টিত বা জলের পার্শ্ববর্তী স্থানে নির্মিত হয়ে থাকে।

বেনতেন বা সরস্বতীকে ঘিরে জাপানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন লোকবিশ্বাস এবং কল্পনার জগৎ। একটি বিশ্বাস অনুযায়ী, বেনতেন অত্যন্ত ঈর্ষাময়ী। ফলে, স্বামী-স্ত্রী’র বা প্রেমিক-প্রেমিকার এক সঙ্গে বেনতেন মন্দিরে যাওয়া বারণ। যে হেতু বেনতেন সন্তানের প্রবাহের বরদান করতে পারেন, তাই নিঃসন্তান দম্পতি সন্তান লাভের আশায় তাঁর কাছে প্রার্থনা জানাতে যেতে পারেন। কিন্তু দু’জনে এক সঙ্গে নয়, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মনস্কামনা জানিয়ে আসেন।

নবম-দশম শতকে ললিতকলা-শিল্পীদের মধ্যে বেনতেন-এর জনপ্রিয়তা ছিল লক্ষণীয়। রাজসভার বিওয়া (বীণা) বাদক সম্প্রদায় দেবী বেনতেনের কৃপা থেকে যাতে বঞ্চিত হতে না হয়, সেই জন্য অবিবাহিত থাকতেন। কারণ, লোকবিশ্বাসে ঈর্ষার দেবী বেনতেন বিবাহিতদের ঈর্ষাবশত সুকুমার শিল্পে পারদর্শী হওয়া থেকে বঞ্চিত করেন। বেনতেন কথাশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, চিত্রশিল্পী, স্থপতি, গেইশা (জাপানের বাইজি সম্প্রদায়)— সকলের আরাধ্যা দেবী।

এই সব ধারণা ছাড়াও ‘সপ্ত-সৌভাগ্যের দেবতা’ বা শিচিফুকুজিনের অন্যতম দেবী তিনি। এই শিচিফুকুজিন বা ‘সাতটি সৌভাগ্য দেবতাবর্গ’-এ জাপানে প্রচলিত ও পরিচিত বিভিন্ন বৌদ্ধ, শিন্তো (জাপানের আদি দেশীয় ধর্ম) এবং চিনা দেবতাদের সমাবেশ ঘটেছে। এঁদের মধ্যে বেনতেনই একমাত্র দেবী, যিনি ভারতীয় ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির অঙ্গ এবং অন্যতম।

বেনতেন জাপানে যেমন বিভিন্ন ধারণায় পূজিতা, তেমনই তিনি ভিন্ন ভিন্ন রূপেও প্রকাশিতা। সমধিক জনপ্রিয় দ্বিভুজা রূপটি ছাড়াও ষড়ভুজা এবং অষ্টভুজা বেনতেনও পূজিত হন। দ্বিভুজা বেনতেন সরস্বতীর মতোই বিদ্যা বা জ্ঞানের দেবী। বীণাবাদনরত ভঙ্গিমায় উপবিষ্ট। আবার এই দ্বিভুজা বেনতেন প্রবাহের দেবীরূপেও কল্পিত। অষ্টভুজা বেনতেন সমর-শাস্ত্রের দেবী। তাঁর আট হাতে থাকে আটটি অস্ত্র। বাংলা, তথা ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে সুদূর জাপানেও সমান সম্মান পান জ্ঞানের দেবী।

পূরবী গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা-৩৪

ভাষার সম্মান

‘সরস্বতীর কাছে বাংলাকে ভাল ভাষায় রাখার আর্তি’ (১৫-২) শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়ে এই পত্রের সূচনা। ভাষা তো বহতা নদীর মতো। আজকাল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষায় অশ্লীল ও অশ্রাব্য গালিগালাজ শোনা যাচ্ছে। অনেক নেতার বাংলার উচ্চারণ শোনার মতো নয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যে কদর্য ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে বাংলা ভাষার মর্যাদাহানি হচ্ছে। তার প্রতিবাদ করার শুভ উদ্যোগ করেছে কোনও পুজো কমিটি। সরস্বতীর কাছে আবেদন, মাতৃভাষার প্রতি অসম্মান আমরা যেন সহ্য না করি।

কুহু দাস

কলকাতা-৭৬

পরমোৎসব

একটি স্মৃতিমেদুর সারস্বত-সন্ধ্যার কথা আজীবন মনে থাকবে। আমাদের ‘রবিতীর্থ’ প্রতিষ্ঠানের সরস্বতী পুজো। সুচিত্রা মিত্রের উপস্থিতিতে দিনভর সরগরম থাকত ৩৭ নম্বর পরাশর রোডের রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষায়তনের চবুতরা। পুজো এবং দুপুরে ভোগ খাওয়ার পর সন্ধ্যায় বসত গানের আসর। সন্ধ্যারতি শেষে জড়ো হতেন কত প্রাক্তনী, বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর দল! সুচিত্রাদি বসতেন হারমোনিয়ামে। একের পর গান হত, ‘মন্দিরে মম কে আসিলে হে’, ‘মধুর মধুর ধ্বনি বাজে’, ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে’ ইত্যাদি। সমস্ত ঘর সুরের মূর্ছনায় ভরপুর হয়ে উঠত। আমাদের মনে চিরকালের জন্য গাঁথা হয়ে আছে সেই ‘পরমোৎসব’ সায়ংকালের স্মৃতি।

ধ্রুবজ্যোতি বাগচি

কলকাতা-১২৫

চকিত চাহনি

সরস্বতী পুজো মানেই বাঙালির ভ্যালেন্টাইন’স ডে। শুভ্রবসনা মা সরস্বতীর সঙ্গে নতুন শাড়িতে সজ্জিত চেনা সহপাঠীদের নতুন রূপ। পুষ্পাঞ্জলি দিতে দিতে চকিত দৃষ্টিতে এ দিক-ও দিক চাওয়া। বাধাহীন বালিকা বিদ্যালয়ে উদ্ধত প্রবেশ। বয়স যত বেশিই হোক না কেন, এই দিনের কথা মনে পড়লেই আবেগে চোখ চিকচিক করে ওঠে অনেকের। এই বছর দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল বন্ধ। ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলোয় ধুলো পড়েছে। কৈশোরের প্রথম উন্মাদনার সেই দিনগুলো স্মৃতির ভান্ডারে রয়ে যাবে।

শঙ্খ অধিকারী

সাবড়াকোন, বাঁকুড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement