অভিরূপ সরকারের ‘কেন এখন এই সংস্কার?’ (২০-৫) লেখার সূত্র ধরে বলি, কোভিড-১৯’এর কারণে, উৎপাদনক্ষেত্রে মানুষের শ্রম ব্যবহারের ক্ষেত্রে উল্লেখ্য বদল দেখা দেবে বলেই মনে হয়। অনেক শিল্প উদ্যোগপতিই (বিশেষত মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে) মানুষের বদলে যন্ত্রের দিকে বেশি ঝুঁকবেন। কারণ মানুষের শ্রম ব্যবহার করতে হলে এখন থেকে তার স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার দিকে নজর রাখতে যথেষ্ট ব্যয় হবে। তা ছাড়া, কেউ এক বার এই সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে, উৎপাদন ব্যবস্থা সাময়িক ভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। এ সব কারণেই যন্ত্রের শ্রমকে কাজে লাগানো শিল্পপতিদের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে অনেক বেশি নিরাপদ। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা ছিলই, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স পৃথিবীতে ছেয়ে যাবে, তবে তাঁরা ভেবেছিলেন, তা হবে আরও এক-দুই দশক পর। করোনাভাইরাস এসে তাঁদের সেই ভবিষ্যদ্বাণী (বা অাশঙ্কা) সময়ের আগেই ফলিয়ে দিতে পারে।
আমাদের অর্থমন্ত্রী যে ঋণের ব্যবস্থা করেছেন, তাতে এমন কোনও মাথার দিব্যি ছিল না যে ঋণ নিতে হলে শ্রমিকদের নিয়োগ করতেই হবে। ফলে মাঝারি উদ্যোক্তারা নতুন স্ট্র্যাটেজির অনুসন্ধান করতেই পারেন। এ ছাড়া সরকারি সম্পত্তি বিক্রি হলে বৃহৎ উদ্যোগপতিদের হাতেও একই সুযোগ তুলে দেওয়া হয়। এমনটা সত্যিই ঘটলে মানুষের জীবিকার আশা খুবই কমে যাবে।
সংকেত ধর
বিরাটি
অন্য নাট্যকার
আমার রচনা “উপড়ানো শিকড়ের ছবি” (২৩-৫) প্রবন্ধে অনবধানবশত দুটি ভুল প্রথম বাক্যটিতেই তাদের জায়গা করে নিয়েছে। যে উক্তিটি দিয়ে রচনাটি শুরু করেছিলাম, তার রচয়িতা গিরিশ ঘোষ নন, পরবর্তী কালের নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। আদি উক্তিটিতে ‘ঘোর’ শব্দটিও নেই। এখানেও আমার স্মৃতির ভুল। শচীন্দ্রনাথের বিখ্যাত নাটক “সিরাজদ্দৌলা”, যা ১৯৩৮ সালে প্রথম মঞ্চস্থ হয়, সেই নাটকেই নবাব সিরাজের মুখে নাট্যকার বসান দেশাত্মবোধক এই উক্তি, যা আজও আমাদের মুখে মুখে ফেরে: “বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্য্যোগের ঘনঘটা, তার শ্যামল প্রান্তরে আজ রক্তের আল্পনা, জাতির সৌভাগ্য-সূর্য আজ অস্তাচলগামী; শুধু সুপ্ত সন্তান-শিয়রে রুদ্যমানা জননী নিশাবসানের অপেক্ষায় প্রহর গণনায় রত। কে তাকে আশা দেবে?...”
আমার এই স্মৃতিবিভ্রমের জন্য আমি যারপরনাই দুঃখিত ও পাঠকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
দীপেশ চক্রবর্তী
শিকাগো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ন্যূনতম?
ঝড়ের পরের দিন মাননীয় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টের মাধ্যমে রাজ্যবাসীর প্রতি সমবেদনা জানান। ভাল কথা। শেষ লাইনে লেখেন, ঝড়ের ফলে ক্ষতি হয়েছে ন্যূনতম। বহু মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, জমির পর জমি জলমগ্ন হয়ে আছে এখনও। মৃত্যু হয়েছে অনেকের। তার পরও যে এই ক্ষতির পরিমাণ তাঁর চোখে ‘ন্যূনতম’ হয়েই রয়ে গেল, তা বড় বেদনাদায়ক।
রুবেল মণ্ডল
ত্রিমোহনী, মুর্শিদাবাদ
অন্য মহামারি
করোনা অতিমারির প্রভাবে জনস্বাস্থ্য আজ একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। তার অনেকগুলো খারাপ ফলাফলের একটি প্রধান হল: শিশুদের টিকা এখন অমিল। ভেবে দেখতে হবে, তা ডেকে আনছে না তো আর এক মহামারি?
করোনা-সংক্রমণের ভয়ে মা-বাবারা শিশুদের বাড়ির বাইরে বার করতে চাইছেন না। আবার গাড়িঘোড়া না চলায় স্বাস্থ্যকর্মীরা পৌঁছতেই পারছেন না কর্মক্ষেত্রে। সরকারি হাসপাতাল থেকে গ্রামে গ্রামে বা শহুরে মহল্লাগুলোর ‘আউটরিচ’ ক্যাম্পগুলোতে টিকা পৌঁছে দিতে অসুবিধায় পড়ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
আবার অনেক শিশু চিকিৎসক প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রেখেছেন, তাই সেখান থেকেও টিকা দেওয়া হচ্ছে ন। অনেক ভ্যাকসিন আসে বিদেশ থেকে, দীর্ঘ সময় বিমান পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে জোগানেও টান পড়তে চলেছে খুব শীঘ্রই।
এই দীর্ঘ সময়ে টিকা না পাওয়ার ফলে বেড়ে যেতে পারে এমন কিছু রোগ, যা টিকা দিয়ে আটকানো যায়। আফ্রিকায় ২০১৪-২০১৫’র ইবোলা মহামারির সময়, অন্যান্য টিকা ঠিক করে না দিতে পারার ফলে, বিশেষত হাম রোগটির মহামারি দেখা যায়, ঠিক ইবোলা মহামারির পরে পরেই। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আফ্রিকার গিনি প্রদেশে ইবোলার আগে (২০১২-১৩’য়) হামের টিকা দেওয়া হয় শতকরা ৪৫ ভাগ মানুষকে। ইবোলার সময় সেটাই কমে দাঁড়ায় (২০১৪-১৫’য়) ৩৮ শতাংশে। ফলে হাম রোগ অনেক বেড়ে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্তা গত ৩০ এপ্রিল এক বিবৃতিতে জানালেন, “২০১৭ থেকেই ইউরোপে হামের প্রকোপ বাড়ছে। ২০১৮ সালে বিভিন্ন কারণে প্রায় ৫ লক্ষ শিশু হামের টিকার প্রথম ডোজ়টি নিতে পারেনি। ফলে ২০১৯-এ লক্ষাধিক শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।”
প্রশ্ন উঠতে পারে, হাম রোগ নিয়ে এত কেন মাথাব্যথা? আর পাঁচটা সংক্রামক রোগের কথা তো আমরা সে ভাবে বলছি না। কারণটা হল, হাম হলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভীষণ কমে যায়। বিশেষ করে এই সময়, যখন কোভিড-১৯’এর কোনও ঠিকঠাক ওষুধ বেরোয়নি, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাই তো একমাত্র ভরসা।
মানবশরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর হামের প্রভাব নিয়ে এক গবেষণা প্রকাশ পায় ‘সায়েন্স ইমিউনোলজি’ জার্নালের নভেম্বর ২০১৯ সংখ্যায়। সেখানে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই রোগ শরীরের শ্বেতকণিকাকে একদম কমিয়ে দেয়। আর শ্বেতকণিকাই আমাদের শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রধান ঢাল। হাম সেরে যাওয়ার পরেও প্রায় এক মাস লেগে যায় শ্বেতকণিকাদের স্বাভাবিক সংখ্যায় ফিরে আসতে।
এই গবেষণা আরও জানাচ্ছে, হাম-আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ কয়েক বছর কমই রয়ে যায়। এমনকি টিকা নেওয়ার ফলে অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছিল, তাও যায় নষ্ট হয়ে। এই ঘটনাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘ইমিউন অ্যামনেসিয়া’। এর ফলে শিশুটির অন্যান্য সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
জরুরি ভিত্তিতে শিশুদের টিকাকরণ কর্মসূচির পরিকল্পনা করা না হলে, এবং সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করা না হলে, আফ্রিকা বা ইউরোপের মতো, আমাদেরও খেসারত দিতে হতে পারে।
নিশান্তদেব ঘটক
শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্থ, কলকাতা
বাস্তবোচিত?
সম্প্রতি রাজ্যে বহু নার্স কাজ ছেড়ে নিজের রাজ্যে ফিরে যাওয়ার ফলে, চিিকৎসাক্ষেত্রে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তা পূরণে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কয়েক দিনের প্রশিক্ষণে নার্সিং সহায়ক নিয়োগের কথা বলেছেন। কিন্তু এটা কি খুব বাস্তবোচিত সিদ্ধান্ত? সহায়করা স্যালাইন, ওযুধ, অক্সিজেন দিতে পারবেন রোগীকে। দরকারে ভিডিয়ো দেখে নিশ্চয়ই আরও কিছু কাজে সাহায্য করতে পারবেন। কিন্তু এ ভাবে কি কোভিড-১৯’এর মতো মারণ রোগের পরিষেবা সম্ভব?
যেখানে কিনা এক জন নার্স তৈরি করতে প্রায় তিন বছর সময় লাগে, তার পরও তাঁদের বিশেষ রোগের আলাদা প্রশিক্ষণ দিতে হয়? নার্সিং সহায়ক দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা হতে পারে, করোনা মোকাবিলা সম্ভব নয়। সরকার বরং কর্মত্যাগী নার্সদের কাজ ছাড়ার কারণগুলি যত্ন সহকারে খতিয়ে দেখুক।
অভিজিৎ ঘোষ
কমলপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।