রূপালী গঙ্গোপাধ্যায় ‘অধিকার চাই একুশের’ (৩-১) মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার সপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। বাঙালি সমাজে ছেলেদের ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’র কথা ছোটবেলা থেকে বলা হয়। কিন্তু কেন সেই কথা মেয়েদেরও বলা হয় না? কেন একটা মেয়ে জন্ম থেকে এটা শুনেই বড় হয় যে, সে ‘ক্ষণিকের অতিথি’। বাড়ি থেকে যে কোনও বকাঝকার সময় একটাই কথা, ‘বিয়ে দিয়ে দেব’। এর পর মেয়ে একটু বড় হলে, কোনও ইচ্ছে আবদারের ক্ষেত্রে বলা হয় ‘বিয়ের পর করিস’।
তা হলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? বিয়ে জিনিসটাকে স্বপ্নসম দেখাও, যাতে পড়াশোনা তার কাছে গৌণ হয়ে যায়? একটা ছেলে যে ভাবে রোজগার করতে সক্ষম, একটা মেয়েকেও সেই ভাবে সক্ষম ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে কিসের অসুবিধে? যে মেয়ে ছোটবেলা থেকে ‘পিরিয়ড’ মানে ‘শরীর খারাপ’ জেনে এসেছে, তার পক্ষে বিয়ে ছাড়া আর কি কোনও স্বপ্ন দেখা সম্ভব? বিদেশের মতো ভারতেও কী ভাবে সন্তান মানুষ করতে হয়, তার পাঠ ও জ্ঞান প্রত্যেক অভিভাবকের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হওয়া জরুরি। সবার আগে দরকার মেয়েদের ‘নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে’— এই চেতনা জাগ্রত হওয়া। প্রথম ধাপ অবশ্যই অভিভাবকদের বোঝানো, যাতে তাঁরা ছোটবেলা থেকে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করেন। তবেই উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের নারী-পুরুষ কর্মী অনুপাত সমান হবে।
সুমন চক্রবর্তী
কলকাতা-৬৫
সমাজে ভিত্তি
‘অধিকার চাই একুশের’ প্রবন্ধ সূত্রে আরও কিছু কথা। একটা মেয়ের বিয়ে তো তার জীবনের একমাত্র পরিণতি হতে পারে না। নারীর স্বাধীন ভাবে বেড়ে ওঠা এবং তাঁকে উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া শুধুমাত্র অভিভাবকের কর্তব্য নয়, এটা আমাদের সমাজের দায়িত্বও বটে। এক জন মা যদি সঠিক শিক্ষা না পান, তবে তিনি তাঁর সন্তানকে কী শেখাবেন? এর প্রভাব পড়বে সমাজেও। ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকারে যেখানে নারী-পুরুষের সাম্যের কথা বলা হয়েছে, সেখানে একটি মেয়ের বিবাহের ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হওয়া আবশ্যকও বটে। নারী যদি আর একটু শিক্ষা পান, তাঁর মানসিক পরিণতি যদি আর একটু এগোয়, তা হলে সমাজের ভিত্তিটাও সুদৃঢ় হয়।
রিক্তা বসু
কলকাতা-১৪৪
চাই স্বনির্ভরতা
মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১ বছর করার প্রস্তাবকে সমর্থন করে রূপালী গঙ্গোপাধ্যায় কিছু যুক্তির অবতারণা করেছেন। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, বিয়ের বয়স বেঁধে দেওয়ার আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, সেই কথা ভাবার সময় এসেছে। মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর জেনেও এখনও অনেকে তাকে গুরুত্ব না দিয়ে কম বয়সে বিয়ে দিচ্ছেন। কারণ, পড়াশোনার সুযোগ বা কর্মসংস্থান, কিছুই না থাকলে বিয়ে করাকেই একমাত্র কাজ ধরে নিয়ে অনেকে ওই পথে এগিয়ে যায়।
আবার শিক্ষিত সচেতন পরিবারে উচ্চশিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের জন্য অধিকাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছরের অনেক পরে। বিশেষত রোজগেরে মেয়েদের ক্ষেত্রে। ফলে, আইন করে বিয়ের বয়স পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে, প্রত্যেক মেয়ের শিক্ষা এবং স্বনির্ভরতার উপর গুরুত্ব দিলে বিয়ের বয়স স্বাভাবিক নিয়মেই পিছিয়ে যাবে। আর ২১ বছরই বা কেন, স্বনির্ভরতার জন্য ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সকলের বিয়ের বয়স আরও পিছিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন আছে। তাতে বিয়ের প্রয়োজনীয়তা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারবে। তাই আইন করে বিয়ের বয়স পিছিয়ে দেওয়ার আগে মেয়েদের ন্যূনতম শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে, দক্ষতা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে স্বনির্ভরতার প্রসারে উদ্যোগী হওয়া দরকার।
প্রদ্যোৎ পালুই
বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
আঠারোই থাক
রূপালী গঙ্গোপাধ্যায় মেয়েদের বিয়ের বয়স নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কথা লিখেছেন। কিন্তু কী করে তা সম্ভব? এখন টিভি, রেডিয়ো, সংবাদপত্রের পাতায় বার বার বোঝানো হয় মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে না দিতে। শিক্ষকশিক্ষিকারাও প্রতিনিয়ত বুঝিয়ে চলেছেন তাড়াতাড়ি বিয়ের কুফল। কিন্তু অল্প বয়েসে মিষ্টি মিষ্টি ভালবাসার কথার মোহে বিয়ের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলে তারা। সদ্য বিয়ে করে চোখে সুখের ঝিলিক দিয়ে বলে যায়, ‘আমি পড়ব ম্যাম।’ তার পর ডেকে ডেকেও আর ফেরানো যায় না বইয়ের দিকে। হাতা, খুন্তি, ছেলেমেয়ে নিয়েই সময় কাটে। চার দিকে যথেষ্ট সাড়া ফেলে দেওয়া ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পও এই অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন করতে পারেনি। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়েই চলেছে। আর এই করোনার কারণে দীর্ঘ দিন বিদ্যালয়ছুট হওয়ায় এই পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন হয়ে উঠেছে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে। আইন করে বিয়ের বয়স ১৮ বছর থেকে ২১ বছর করলেও কি এই মানসিকতার পরিবর্তন হবে? মনে হয় না। আঠারোই নাহয় থাকুক।
কিন্তু এই আইন যেন কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হয়, সে দিকে কড়া নজর রাখা দরকার।
সুদেবিকা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৪২
লেখার দক্ষতা
ইন্দ্রজিৎ রায় লিখেছেন “যুক্তির বাঁধুনি না থাকলে শেষ পর্যন্ত লেখার উদ্দেশ্যটাই হারিয়ে যায়। যুক্তি দিয়ে সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখতে পারার এই ক্ষমতা চেষ্টা করলেই গড়ে তোলা সম্ভব।” তিনি সৃজনশীল ও মৌলিক লিখন কৌশল রপ্ত করার বিষয়ে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন, ‘যুক্তির জোরে ভর করে’ নিবন্ধে (প্রস্তুতি, ৫-১২)। কিন্তু এখন প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পরীক্ষায় সিংহভাগ নম্বরই বরাদ্দ থাকে ‘সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখ’ (মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চন) ধরনের প্রশ্নের জন্য। রচনাধর্মী প্রশ্ন প্রায় থাকেই না। ফলে বিদ্যালয়স্তর থেকেই ছাত্রছাত্রীরা বিশ্লেষণধর্মী বড় লেখায় সড়গড় হতে পারে না। অনভ্যাসের জন্য পরবর্তীতেও যুক্তির বাঁধুনি দিয়ে সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখতে পারার ক্ষমতা তাদের অনায়ত্ত থেকে যায়। শিক্ষকতার সুবাদে দেখেছি, এখন ছাত্রছাত্রীদের মূল পাঠ্য বই পড়ে প্রশ্নের উত্তর তৈরি করারও পরিশ্রম নেই। বাজারে হরেক রকমের প্রশ্ন-উত্তরের ‘সহায়িকা’ বই অতি সুলভ। অবসরেও ছাত্রছাত্রীরা সিলেবাসের বাইরে কিছু পড়তে অনাগ্রহী। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় তথা মূল্যায়ন পদ্ধতিতে প্রচুর নম্বর প্রাপ্তি ঘটছে। কিন্তু মননশীল ও বিশ্লেষণী চিন্তার পড়ুয়া তৈরি হচ্ছে যৎসামান্য।
কৌশিক চিনা
মুন্সিরহাট, হাওড়া
অপেক্ষা শেখা
‘অপেক্ষা’ শব্দটি আজ ‘সব পেয়েছি’-র জীবনে বিলুপ্তপ্রায়। বিশেষ করে আমাদের প্রজন্মের মানুষের জীবনে। এই হারিয়ে-যাওয়া শব্দটির গুরুত্ব আমার ১৭ বছরের জীবনে উপলব্ধি করতে পেরে আমি বেজায় খুশি হয়েছি। রবিবাসরীয় বিভাগে প্রকাশিত স্মরণজিৎ চক্রবর্তী মহাশয়ের ‘চুয়ান্ন’ উপন্যাসটি ধারাবাহিক পর্বের মাধ্যমে পড়তে গিয়ে শিখলাম অপেক্ষা করতে। একটি পর্ব পড়েই উৎসুক হয়ে পিডিএফ-এর খোঁজ করলাম। যখন পেলাম না, তখন ধৈর্য ধরা ছাড়া উপায় রইল না। প্রতি সপ্তাহে একটি করে পর্ব পড়ার পর ছটফট করতাম পরবর্তী পর্বটির জন্য। অপেক্ষা করাটা যেন অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। যখন ছ’মাস ধৈর্য ধরে অবশেষে শেষ পর্বটিতে এসে পৌঁছলাম, আহা! সে কী আনন্দ! যেমন সুন্দর উপন্যাস, তেমন সুন্দর অভিজ্ঞতা। প্রযুক্তি-নির্ভর জীবনে অপেক্ষা করতে শেখানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আদৃতা দাশ
চন্দননগর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।