• গত বুধবার বিকেল ৫:২০ নাগাদ রাসবিহারী অ্যাভিনিউ ও লেক মার্কেট ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। সিগনাল লাল দেখে যে মুহূর্তে রাস্তা পেরোতে যাচ্ছি, একটি সরকারি বাস সিগনাল ভেঙে বেপরোয়া ভাবে গড়িয়াহাট থেকে রাসবিহারীর দিকে চলে গেল। সিগনাল সংলগ্ন ঘড়িতে তখনও দশ সেকেন্ড বাকি সবুজ হতে। অল্পের জন্য সে দিন দুর্ঘটনার শিকার হইনি। খবরের কাগজের পাতায় প্রায়ই বেসরকারি বাসের রেষারেষি ও তজ্জনিত দুর্ঘটনার সংবাদ চোখে পড়ে। ইদানীং সরকারি বাসও একই অপরাধ নিত্য দিন করে চলেছে। আসলে বাসচালকদের একটি বৃহৎ অংশ বেপরোয়া, কটুভাষী ও আইনভঙ্গে অভ্যস্ত। সরকারি-বেসরকারি দু’ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থাতেই এদের দেখা মেলে। পুলিশকর্মীরা এদের বিরুদ্ধে অসহায়। গত এক মাসে সরকারি বাস একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। শাস্তি নামমাত্র। অবিলম্বে ট্রাফিক আইনে বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের সংস্থান না থাকলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। নিছক সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মশালার আয়োজন করে বৃহৎ অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছুই পাওয়া যাবে না।
কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৭৮
ভুল বার্তা
• ‘‘শিক্ষায় ‘অনিলায়ন’: সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে’’ (৬-৭) শীর্ষক সংবাদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার অত্যন্ত তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আপনাদের এই বক্তব্য, যে, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফলে সঠিক পথে চলছে না, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বর্তমান শিক্ষাচিত্রকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপিত করেছে, যা পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
রাজ্য সরকার রাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রয়োজনীয় আর্থিক এবং প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করে, কিন্তু তাদের কার্যকলাপ সংশ্লিষ্ট আইন এবং নিয়মের মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়। রাজ্য সরকার কোনও ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়গুলির স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করে না, যা তারা উক্ত আইন এবং নিয়মের মাধ্যমে
লাভ করেছে।
শংকর বিশ্বাস
উপসচিব, উচ্চশিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
প্রতিবেদকের উত্তর: সরকারের আধিকারিক যা বলেছেন তা অবশ্যই দার্শনিক অবস্থান। কিন্তু ফলিত স্তরে কী হয়, আলোচ্য সেটাই। কিন্তু স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী যখন বলেন, ‘‘আমরা টাকা দিই, আমাদের অধিকার আছে’’, অথবা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন কমিটিতে রাজনৈতিক ‘অনুপ্রবেশ’ বন্ধ করার বিল বিধানসভায় এক বার পাশ হওয়ার পরে আবার সংশোধন করে পুরনো ‘অনিলায়ন’ মার্কা ব্যবস্থাই ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তখন প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সংশয় জাগাই স্বাভাবিক নয় কি?
আংশিক
• ‘শিক্ষক ও পুলিশ’ (২৯-৬) শিরোনামের চিঠিতে যাকে ‘অধ্যাপক আন্দোলন’ বলা হয়েছে, তা ছিল প্রকৃত পক্ষে আংশিক সময়ের অধ্যাপকদের একটি আন্দোলন। অধ্যাপক বলতে পূর্ণ সময়ের অধ্যাপকদেরই বোঝায়। কিন্তু আলোচ্য আন্দোলনের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক ছিল না। আন্দোলনকারীদের সহমর্মী হতে গিয়ে পত্রলেখক তাঁদের প্রকৃত অবস্থান ও বঞ্চনার বিষয়টিকে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন করে ফেলেছেন।
সত্যরঞ্জন দাস
ময়না কলেজ, পূর্ব মেদিনীপুর
ঠগ বাছতে
• ‘শিক্ষক শুধু বই দেখে পড়ে যান’ (২৯-৬) প্রতিবেদনটি পড়লাম। তা হলে আপনারা ঠগ বাছছেন। এবং বাছতে গিয়ে গাঁ উজাড় হয়ে গিয়েছে। যা-ই হোক, আমিও ওই গাঁয়েই থাকি কিনা, তাই গাঁয়ের গপ্পোও খানিক করি। হ্যাঁ, প্রথমত যে কথাটি আছে প্রতিবেদনে, কোনও এক সমীক্ষায় নাকি উঠে এসেছে পাঠ্যক্রমের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের অনাগ্রহ, এবং অষ্টম শ্রেণিতেও ইংরেজি পড়তে না পারার কথা। আজ্ঞে হ্যাঁ, আমার ছাত্রছাত্রীরা কেউ কেউ অষ্টম বা নবম শ্রেণিতেও ইংরেজি তো দূর, বাংলাও পড়তে পারে না। যেটা আমি-আপনি ভাবতেই পারি না। আমরা তো ক্লাস ওয়ানেই সব শিখে গেছিলাম, আমাদের বাড়ির সন্তানেরাও কত্ত চটপট বাংলার আগে ইংরেজি বলে ফেলে। সবই ভারী সত্যি কথা।
কিন্তু, বলুন তো, আমাদের প্রথম অক্ষর পরিচয়, অক্ষরগুলি লেখার অভ্যাস কে করিয়েছিল? স্কুলে শেখালেই অমনি বাড়িতে এসে বই খুলে বসে পড়তাম? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশু পাঠবিমুখ হয়। তাকে দিয়ে ‘করিয়ে’ নিতে হয়। আর সেই কাজটি করেন অভিভাবক। যে অভিভাবকরা শিক্ষিত অথবা শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন। আর আপনারা কোন গাঁয়ে ঠগ বাছতে গিয়েছিলেন যদিও জানি না, অন্তত আমি যে গাঁয়ে থাকি সেখানে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী। তাদের অভিভাবকের অক্ষরজ্ঞান নেই, অথবা খুব সামান্যই আছে। কোনও ক্রমে সংসার চালাতে অধিকাংশ পরিবারেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাদের পক্ষে তাই সম্ভব হয় না সন্তানকে পড়া দেখিয়ে দেওয়া বা তদারক করা।
শিশুমনও সহজেই অন্যমনস্ক হয়, ভুলে যায় স্কুলের চল্লিশ মিনিটের শেখানো। পর দিন শিক্ষক-শিক্ষিকার বরাদ্দ আবার সেই চল্লিশ মিনিট। একটু বলুন, সেই সময়টায় পড়তে-লিখতে শেখাব, না কি যারা পড়তে-লিখতে জানে তাদের জন্য সিলেবাস শেষ করব? এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন কখনও? যেখানে ক্লাসরুমে কেউ মেধাবী, কেউ পড়তেই জানে না। কী ভাবে সমান ভাবে শিক্ষা দেওয়া সম্ভব?
বাড়তি সময় দিয়ে, বিশেষ যত্ন নিয়ে অক্ষর পরিচয় করাতে শুরু করেছিলাম সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের। তার পর দিন থেকে সে স্কুলে আসাই বন্ধ করে দেয় কয়েক দিনের জন্য। আর এল যখন, ভয়ে মুখোমুখি হত না। কী গাফিলতি শিক্ষকদের! বাড়ি গিয়ে পড়িয়ে আসা উচিত ছিল ওকে, তাই না? ওর মতোই এমন অনেক ছাত্রছাত্রীই আছে, যারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে না। আজ ক্লাসে যা শেখালাম, কাল গিয়ে দেখি তারা অনেকেই অনুপস্থিত। তখন কি শিক্ষকদের উচিত পাঠ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, না কি অনুপস্থিতদের জন্য অপেক্ষা করা? কী বলেন বিশেষজ্ঞরা? কখনও শিক্ষকশিক্ষিকাদের সমস্যা নিয়ে সমীক্ষা হয় কি?
পারমিতা চৌধুরী
ই-মেল মারফত
বাইক ও ছোটরা
• ‘লাইসেন্স দেখে বাইক বিক্রি’ (৫-৭) পড়ে কিছু কিছু কথা বলতে চাই। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, সব ধরনের দু’চাকার যান বিক্রির ক্ষেত্রে বিক্রেতারা ক্রেতার বয়স এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখেই তবে বাইক বিক্রি করতে পারবেন। কারণ, ইদানীং বহু অল্পবয়সি (নাবালক ও লাইসেন্সহীন) বাইক চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। কিন্তু ভয় হয়, পরিবহণ দফতরের এই সিদ্ধান্ত বোধ হয় খুব কাজ দেবে না।
কারণ, ইতিমধ্যে যে সব বাইক বিক্রি হয়েছে, সে সব বাইক কিন্তু ‘বড়রাই’ কিনেছিলেন এবং অনেকের ড্রাইভিং লাইসেন্সও আছে, বা কেনার পর করিয়ে নিয়েছেন। অপ্রাপ্তবয়স্করা বাইক ব্যবহার করছে তাদের বাবা-কাকা-দাদা বা অন্য কারও থেকে নিয়ে। ফলে বড়দের কাছে তথা লাইসেন্সধারীর কাছে বাইক বিক্রি করলেও, ব্যাপারটা শেষ অবধি আলাদা কিছু হবে না। এর একমাত্র ওষুধ সচেতনতা। অভিভাবকরা যদি সুদৃঢ় ভাবে সচেতন না হন (ছোটদের হাতে বাইক দেওয়া কঠোর ভাবে বন্ধ করতে হবে), তবে এমন দুর্ঘটনা রোখা যাবে না।
সাধন বিশ্বাস
অম্বরপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ই-মেলে পাঠানো হলেও।