প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘এক ভুলে যাওয়া শপথ’ (৯-৬) শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়লাম। সম্প্রতি বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার কুরুচিকর মন্তব্যকে ঘিরে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই মন্তব্যটি একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে সহবক্তাকে উদ্দেশ করে বলা। সন্ধে হলেই সর্বভারতীয় নিউজ় চ্যানেলগুলি জুড়ে হিন্দু-মুসলিম বিতর্ক এখন নিত্য ঘটনা। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে অগণিত মানুষের মৃত্যু থেকে অর্থনৈতিক ভরাডুবি, সরকারের ব্যর্থতার দিকগুলি থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতেই কি প্রতি দিন হিন্দু-মুসলমান, মন্দির-মসজিদ তরজা সৃষ্টি করা? ষোড়শ শতকে কোন মোগল সম্রাট মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, না কি পঞ্চাশ বছরে রেকর্ড বেকারত্ব? প্রয়োজনীয় জিনিস অগ্নিমূল্য, পেট্রোপণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, বা রেলের পরীক্ষায় পাশ করেও জয়েনিং লেটার না পাওয়া বিভ্রান্ত তরুণের অসহায় অবস্থা, এগুলোর কি গুরুত্ব নেই? অল্পবয়সি যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার বদলে তাঁদের এই ঘৃণার যজ্ঞে অংশীদার করে সরকার রাজনৈতিক ফয়দা তুলছে। এ দিকে বেকারত্ব এবং অসাম্য থেকে সৃষ্টি হওয়া তাঁদের সমস্ত পুঞ্জীভূত ক্ষোভ চালিত করা হচ্ছে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি। আসলে মিডিয়ার একটি অংশ মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তাঁদের ধর্মীয় ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে বিজেপির পথকে আরও প্রশস্ত করছে। সাম্প্রতিক কালে ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এ প্রকাশিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৩৩ থেকে নেমে ১৫০-এ ঠেকেছে।
আজ যখন বহু কষ্টে অর্জিত গণতন্ত্রকে তিলে তিলে হত্যা করা হচ্ছে, প্রশ্ন করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, নাগরিকের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং ভারত একটু একটু করে স্বৈরতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন এক শ্রেণির গণমাধ্যমের এই ভূমিকাকে ইতিহাস ক্ষমা করবে তো?
সৌরনীল ঘোষ
দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান
শিক্ষকের স্বস্তি
‘অফলাইনে মূল্যায়ন’ (সম্পাদক সমীপেষু, ৪-৬) শীর্ষক চিঠির সমর্থনে এই পত্র। চন্দ্রানী দে এ কথা যথার্থ ভাবেই বলেছেন যে, অফলাইন পরীক্ষা যার উপর মানুষ ও শিক্ষকদের ভরসা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীর প্রকৃত মূল্যায়নে অপারগ। অন্যের তৈরি করা উত্তর বা গাইড বইয়ের গতানুগতিক উত্তর কে কতখানি মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে আসতে পারে, তাই দিয়ে কি যোগ্যতার সঠিক বিচার করা যায়? এ এক প্রকার প্রহসনমূলক বমন অভ্যাস, যা চলে আসছে বহু বছর যাবৎ।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অনলাইন পরীক্ষায় প্রশ্নের অভিমুখের বা প্রশ্নের ধরনের কিছু পরিবর্তন করে বরং আমাদের দেখে নেওয়ার সুযোগ ছিল যে, ছাত্রছাত্রীরা সত্যিই কতখানি বিষয়কে অনুধাবন করতে পেরেছে। গতানুগতিক উত্তরের বাইরে তাদের মন নতুন ভাবনা-চিন্তায় পারদর্শী কি না, তা বুঝে নেওয়া যেত অনলাইন মাধ্যমেই। তার জন্য দরকার ছিল শুধু প্রশ্ননির্মাতাদের সদিচ্ছা।
এ কথাও ঠিক, বিশেষত সাহিত্যে যে প্রশ্নের যে ধরনের উত্তর আর পাঁচ জন লেখে, বা বলা ভাল নোটবই থেকে মুখস্থ করে উগরে দেয় খাতায়, শিক্ষকদের অনেকেই সেটুকুই সাদরে গ্রহণ করেন। অন্য ধারার সঠিক উত্তর গ্রহণে তাঁরা কিছুটা যেন সঙ্কুচিত হয়ে থাকেন।
আসলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনলাইন মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মূল্যায়ন করতে গেলে শিক্ষকদেরও বেরিয়ে আসতে হত গতানুগতিক প্রশ্ননির্মাণের অচলায়তন থেকে। কিন্তু তা না করে, অনলাইন মাধ্যমে অযথা নম্বরের বন্যা বইয়ে দিয়ে, অনলাইন মাধ্যমকে অসার প্রমাণ করে, তড়িঘড়ি অফলাইন পদ্ধতির পক্ষে হাজার যুক্তি দিলেন তাঁরা। এবং অনলাইন পরীক্ষার দাবি-তোলা শিক্ষার্থীদের সমাজের চোখে অকর্মণ্য প্রমাণ করে নিজেদের চেনা মাঠেই যেন ফিরতে চাইলেন। এতেই হয়তো শিক্ষকরা বেশ স্বস্তি বোধ করছেন।
অনির্বিত মণ্ডল
ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
সরকার ও শিক্ষা
কিছু দিন আগে শিক্ষার বেসরকারিকরণ নিয়ে রাজ্য জুড়ে ‘গেল গেল’ রব উঠেছিল। বিষয়টিকে কেন এত নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন একটি অংশ? বেসরকারি সংস্থার হাতে শিক্ষাকে তুলে দেওয়া হলে কি সব কিছু শেষ হয়ে যাবে? আমি ব্যক্তিগত ভাবে একটি সমীক্ষা করে সরকারি স্কুলগুলির পরিস্থিতি যা বুঝেছি, তা তুলে ধরছি। আটচল্লিশটি হাই স্কুল এবং পঁচিশটি প্রাইমারি স্কুলের উপর আমার এই সমীক্ষা। যে সমস্ত হাই স্কুলে ২০১৭ সালে ১০০০ কিংবা তার বেশি ছাত্র পড়াশোনা করত, সেই সব স্কুলে এখন ৭০০-র নীচে ছাত্রসংখ্যা নেমে গিয়েছে। যে সব স্কুলে ৪০০-৫০০ ছাত্র ছিল, সে সব স্কুলে এখন ছাত্র ৩০০-র ধারেকাছে। প্রাইমারি স্কুলের অবস্থা তো অতীব শোচনীয়। ২০১৭ সালে যেগুলিতে ২০০-র কাছাকাছি ছাত্র ছিল, এখন ৭০-৭৫ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এমনও প্রাইমারি স্কুল আছে, যেখানে এখন মাত্র ৪-৫ জন ছাত্র পড়াশোনা করে। ১০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার উপর সমীক্ষা করে জেনেছি যে, তাঁদের মধ্যে ৮৯ জনের ছেলেমেয়ে নিজেদের স্কুল কিংবা অন্য সরকারি স্কুলে না পড়ে বেসরকারি স্কুলে পড়তে যায়। এই যদি সরকারি স্কুলের পরিস্থিতি হয়, তা হলে সরকার শিক্ষক নিয়োগ করবে কেন?
মাসে মাসে বেতন দিয়ে, পরিকাঠামোর উন্নতি করেও পড়াশোনার মানে উন্নতি না হলে কেন এই ব্যয় করবে সরকার, এই নিয়ে বহু স্তরে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। ও দিকে বেসরকারি স্কুলগুলোতে ছাত্র ধরছে না, প্রতি বছর নতুন নতুন বেসরকারি স্কুল তৈরি হচ্ছে। আমার পরিচিত এক শিক্ষক বললেন, তাঁর ছেলেকে পাশের শহরের একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন, হস্টেলে ছাত্র ধরছে না বলে কিছু ক্লাসরুমে ছাত্রছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থায় স্কুলগুলোতে এই সময়ে কোনও সরকারি নজরদারি নেই, নেই কোনও পরিচালন সমিতি। ছাত্রদের তৈরি করার মানসিকতা সরকারের যেমন নেই, তেমনই শিক্ষকরাও নিজেদের উজাড় করার চেষ্টা করছেন না।
আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, বেসরকারি সংস্থার হাতে শিক্ষা গেলে ফি দিতে না পারলে বহু মানুষ আর্থিক কারণে শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হবেন। এই ক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব, সরকার যেন কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি চালু করে বেসরকারিকরণের পথে হাঁটে। যেমন, অবৈতনিক শিক্ষা চালু রাখা। বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সরকার নিজেকেও যেন আইন করে যুক্ত রাখে। শিক্ষক নিয়োগ পুরোটাই বেসরকারি সংস্থার হাতে ছেড়ে দিতে হবে, কেবল তাঁদের কাজে নজরদারি বাধ্যতামূলক করতে হবে। পরিকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া দরকার।
এ ভাবে সার্বিক স্বার্থ রক্ষা করে রাজ্যের ভেঙে-পড়া শিক্ষা কাঠামোর মেরামত সম্ভব হতে পারে।
অলকেশ মাইতি
পটাশপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
বিজ্ঞানের গেরোয়
2 ‘৩৫% পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান! সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন’ (৬-৬) শীর্ষক সংবাদটি পড়লাম। আমি এক জন স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মাধ্যমিক পাশের পর ৭০-৭৫% ছাত্রছাত্রীর উন্মাদনা থাকে বিজ্ঞানের কোনও বিষয় বেছে নেওয়ার। এর ফলে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীও কিছু দিন বিজ্ঞান পড়ার পরই রীতিমতো হিমশিম খেতে শুরু করে।
অথচ, এই বছর উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নেওয়ার জন্য মাত্র ৩৫ শতাংশ নম্বর ধার্য করা হয়েছে। ফলে আরও বেশি সংখ্যক পড়ুয়ার মধ্যে বিজ্ঞান নেওয়ার প্রবণতা দেখা যেতে পারে। কিন্তু এর ফলে স্কুলছুট হতে হবে না তো? এতে আখেরে তাদের ক্ষতি হতে পারে। অন্তত ৫০% নম্বর আবশ্যক করা হোক।
সঙ্গীতা কর্মকার
শ্রীরামপুর, হুগলি