অম্বালার রানওয়ে ছুঁল ফরাসি ফাইটার জেট রাফাল। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের টুইট— ‘‘বার্ডস হ্যাভ ল্যান্ডেড।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আরও একটু এগিয়ে লিখলেন— ‘‘রাষ্ট্ররক্ষাসম পুণ্যং, রাষ্ট্ররক্ষাসম ব্রতম্, রাষ্ট্ররক্ষাসম যজ্ঞো, দৃষ্টো নৈব চ নৈব চ।’’ অর্থাৎ, দেশকে রক্ষা করার চেয়ে বড় কোনও পুণ্য নেই, ব্রতও নেই। দেশ জুড়ে অভিনন্দনের বন্যা, প্রশাসনের আদেখলাপনা, মিডিয়ার কিছু অংশের মধ্যে বিরাট খুশি খুশি ভাব। যেন আমরা বিশ্ব জয় করেছি!
প্রশ্ন জাগে, কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্ররক্ষা? সীমান্তরক্ষা, কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধান, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধার, জঙ্গি আক্রমণ থেকে মুক্তি, কোনটা? শিক্ষা, শিল্প, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি, বেকারত্ব ও দারিদ্র দূরীকরণ— কোনটা?
অতিমারি সমস্যায় সারা দেশ জর্জরিত, প্রতিটি রাজ্য চরম আর্থিক সঙ্কটে। এমন দুরবস্থা গত চার দশকে এ দেশে কখনও হয়নি। এরই মাঝে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রক থেকে রাজ্যগুলিকে আর্থিক সাহায্য না দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । এমনকি কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির ন্যায্য পাওনার (জিএসটি ও তার সারচার্জ) পরিমাণও কমিয়ে দেওয়ার কথা বলছে। এই সময় যুদ্ধবিমান কিনে প্রধানমন্ত্রী ‘রাষ্ট্ররক্ষা’, ‘রাষ্ট্রযজ্ঞ’, ‘রাষ্ট্রব্রত’ ও পুণ্য অর্জনের কথা বলছেন কী করে?
কুমার শেখর সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
প্রতিশোধ?
সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত শ্রীসোমেন্দ্রনাথ মিত্রের স্মরণে নিবন্ধটিতে (৩১-৭) বলা হয়েছে, সোমেনবাবুর রাজনৈতিক জীবন ‘‘যুগপৎ গৌরবের আলো ও কলঙ্কের কালিতে মাখা।’’ হ্যাঁ, সোমেনের সভাপতিত্বে মমতা কংগ্রেস ত্যাগ করেন। সেই আঘাত কংগ্রেসকে আজও বহন করতে হচ্ছে। কিন্তু, মমতার যুব কংগ্রেস গোটা নব্বইয়ের দশক জুড়ে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিস্পর্ধী হিসেবে কার্যকলাপ চালায়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে সোমেন এটাকে প্রশ্রয় দেননি। এই ভাঙনে বর্ষীয়ান কিছু কংগ্রেস নেতার মদত হয়তো ছিলই। কিন্তু আজন্ম কংগ্রেসি রাজনীতিতে পুষ্ট মমতা সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিজেপির হাত ধরে ফেলেন! মধুচন্দ্রিমা চলে অনেক দিন।
১৯৯৮ সালে রাজ্য কংগ্রেসে ভাঙনের পরই মমতা ‘দেশ’ পত্রিকায় দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তৎকালীন সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি সীতারাম কেশরী ও সোমেন মিত্রের উপর তাঁর ক্ষোভ উগরে দেন। বিশেষ করে সোমেনের প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত আক্রমণ সীমা অতিক্রম করে। সোমেন কিন্তু পাল্টা একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। এখানেই তাঁর স্বকীয়তা। সাংবাদিকদের যথাযোগ্য সম্মান করতেন, সম্মান দিতেন কর্মীদেরও। প্রতি বিষয় নিয়ে সংবেদনশীল, সুস্থ মন্তব্য করতেন। ‘বাহুবলী’ হিসেবে বদনাম থাকলেও ‘গুড়-বাতাসা’র মতো কথা তাঁর মুখে কখনও শোনা যায়নি। কোনও সভায় তাঁকে কর্মী বা নেতাদের ‘ধমকাতে-চমকাতে’-ও দেখা যায়নি।
বলা হয়েছে, তৃণমূলে আগত সোমেনকে অধীনে এনে মমতা ‘মধুর প্রতিশোধ’ নিয়েছেন। হয়তো তা-ই। তবে এই প্রসঙ্গে স্মর্তব্য, ১৯৯৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে কয়েক জন কংগ্রেস প্রার্থীকে টিকিট দেওয়া নিয়ে মমতা প্রবল প্রতিবাদ করেন। কারণ, এঁরা ‘অপরাধী’। এমনকি, আলিপুরে জেলাশাসক অফিসের সামনে গলায় শাল পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হন! কিন্তু, সোমেন অটল থাকেন। যে চার জন ‘সোমেনপন্থী’ প্রার্থীর বিরুদ্ধে মমতা প্রতিবাদ করেন, তাঁদের অধিকাংশই কিন্তু ওই প্রবল বাম জমানাতেও নির্বাচনে জিতে আসেন। পরবর্তী কালে একমাত্র অধীর চৌধুরী বাদে বাকি সকলেই (মৃণাল সিংহ রায়, সুলতান আহমেদ, শঙ্কর সিংহ) মমতার দলে আসেন, কেউ কেউ মমতা-মনোনীত হয়ে জনপ্রতিনিধিও হন! একে কি ‘নিয়তির মধুর প্রতিশোধ’ বলা যায় না?
তপন ভৌমিক
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
দলত্যাগ
সদ্যপ্রয়াত সোমেন মিত্রের প্রতি শেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপক নিবন্ধের বক্তব্য, মমতার নেতৃত্বে কংগ্রেসের ঐতিহাসিক ভাঙন সোমেন নাকি অনিবার্য করে তুলেছিলেন! কিন্তু হিমন্তবিশ্ব শর্মা, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সচিন পাইলটদের দল ছাড়ার সঙ্গে মমতার দলত্যাগের কি মিল খুঁজে পাওয়া যায় না? স্মরণীয়, প্রদেশ কংগ্রেসের ৮২ জন বিধায়কের মধ্যে সে দিন ৭৫ জন ছিলেন সোমেনবাবুর সঙ্গে। তরুণ গগৈ, কমল নাথ, অশোক গহলৌত দায়ী হলে অবশ্য সোমেনবাবুও দায়ী।
নকশাল দমনে বাহুবলী যুবশক্তির উত্থান শিয়ালদহ অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রদেশ সভাপতির নির্বাচনে কারা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ‘তরমুজ’ বলে তাণ্ডবে মেতে ওঠেন, মানুষ ভোলেননি।
কাজি উদয় ইসলাম
রানিগঞ্জ, পশ্চিম বর্ধমান
শেষ ফোন
কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আমার পরিচয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে। সোমেনদার সঙ্গে অনেক রাগারাগি, মান অভিমান হয়েছে। বেশ কিছু দিন হল আমি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছি। সোমেনদা নিজেই ফোন করে কুশল সংবাদ নিতেন। তাঁর শেষ ফোন এসেছিল, খাতড়ার এক তৃণমূল নেতার ফোন নম্বর জানার জন্য। খবর পেয়েছিলেন, ওই তৃণমূল নেতার স্ত্রী নাকি ক্যানসারে আক্রান্ত। এই হল সোমেন মিত্র।
প্রণব হাজরা
খাতড়া, বাঁকুড়া
নেহরুর প্রজ্ঞা
অচিন চক্রবর্তীর প্রবন্ধের (‘‘আমিই সব জানি’ সংস্কৃতি’’, ৩-৮) সঙ্গে কয়েকটি বিষয় সংযোজন করতে চাই। ক্ষমতাধররা অন্যকে উপেক্ষা করে নিজেকে জাহির করার জন্য। বিরুদ্ধ মতকে অস্বীকার করা, হেয় করার এক প্রবণতা দেখা যায়। আমি পণ্ডিত নেহরুর সব কাজের সমর্থন করি না। কিন্তু মানতেই হবে, ভারী শিল্প, কৃষিকাজে প্রযুক্তির ব্যবহার, বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রযুক্তি ও গবেষণামূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সূচনা ও প্রসার তাঁর দূরদৃষ্টির জন্যই সম্ভব হয়েছিল। ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া গ্রন্থ যিনি লিখতে পারেন, তাঁর প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা যায় না। বর্তমান শাসক দল নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে সব দোষ তাঁর উপর চাপানোর কৌশল নিয়েছে।
সুকোমল মাসচারক
কলকাতা-১৩৭
ভার্চুয়াল ভোট
অতিমারির আবহে দাপুটে রাজনৈতিক নেতানেত্রী ভার্চুয়াল ভাষণ দিচ্ছেন। তাতেই নাকি কেল্লা ফতে হতে চলেছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ, ভোটদান পর্বও হোক ভার্চুয়াল। বৈদ্যুতিন যুগে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের অনুষ্ঠানটি অনলাইন হোক প্রথম ভারতেই। এতে অনেক ঝড়ঝাপ্টা থেকে রেহাই পাবে ভারতীয় গণতন্ত্র। জনগণও ভোটের অন্য পিঠের কালো রূপ দেখা থেকে অব্যাহতি পাবেন।
বিবেকানন্দ চৌধুরী
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
‘‘প্রথমারও আগে যাঁর লড়াই’’ শীর্ষক নিবন্ধে (পৃ ৪, ৬-৮) লেখা হয়েছে চন্দ্রমুখীর পিতা ভুবনমোহন বসু ব্রহ্মদেব উপাধ্যায়ের প্রভাবে খ্রিস্টধর্মাবলম্বী হন। তিনি ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের প্রভাবে খ্রিস্টধর্মাবলম্বী হয়েছিলেন।
‘‘গণতন্ত্রের ধর্ম’’ শীর্ষক গ্রাফিকে (পৃ ১, ৬-৮) একটি ত্রুটি থেকে গিয়েছে। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শব্দগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২-তম সংশোধনের মাধ্যমে। এই তথ্য গ্রাফিকটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
অনিচ্ছাকৃত এই ভুলগুলির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।