‘তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি’ (১৭-২) শীর্ষক পত্রে লেখা হয়েছে, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকায় ‘শ্রী’ অক্ষর এবং পদ্ম-চিহ্ন সংযোজন করলেন শ্যামাপ্রসাদ।’’ শ্যামাপ্রসাদ নিজে এই চিহ্ন সংযোজন করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রতীক প্রণয়ন ও তা অনুমোদনের জন্য পূর্ববর্তী উপাচার্য, বাংলার প্রিমিয়ার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির বড়ভাই, অধ্যাপক হাসান সোহরাওয়ার্দির সময়ে একটি কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির সদস্যেরা হলেন বিখ্যাত প্রাচ্যতত্ত্ববিদ ড. স্টেলা ক্রামরিশ, ড. এ এইচ হার্লে, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁরা সেই সময়কার খ্যাতনামা শিল্পী ও অঙ্কনবিদদের মতামত নিয়ে প্রতীকটি অনুমোদন করেন। ওই শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন সরকারি আর্ট স্কুলের প্রধান রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শান্তিনিকেতনের কলাভবনের শিল্পীদ্বয় মুকুলচন্দ্র দে ও নন্দলাল বসু, অর্ধেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। শিল্পী ও সি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গেও পরামর্শ করা হয়। তাই শ্যামাপ্রসাদের একার সিদ্ধান্ত এটা ছিল না। ভারতীয় সংস্কৃতির দ্যোতনা ও বাংলায় ‘বিদ্যা বিবর্দ্ধন’ লেখা থাকলে তা মুসলমানদের কাছে ইসলাম বিরোধী বলে গণ্য হতে পারে, উপাচার্য সোহরাওয়ার্দিও তার ব্যতিক্রম নন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রতীক’ একটি ফুল ও চন্দ্রকলা। চন্দ্রকলা ইসলামের প্রতীক, কিন্তু হিন্দুরা তাতে আপত্তি করেননি। আর ১৯৩৭ সালে বার্ষিক সমাবর্তনে উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষায় সমাবর্তন ভাষণ দেন। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সভায় এইচএস সোহরাওয়ার্দির উস্কানিতে মুসলমান ছাত্রেরা দলবদ্ধ ভাবে অনুপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা বিতর্ক শুরু হয়েছিল উপাচার্য ড. ডব্লিউ এস আর্কুহাটের সময়ে, যা এস সোহরাওয়ার্দি হয়ে শ্যামাপ্রসাদের সময় অবধি গড়িয়ে যায়। সুতরাং পতাকা বিতর্ক শ্যামাপ্রসাদের সৃষ্টি— এ কথা অনৃতভাষণ।
বিনয়ভূষণ দাশ
গোপজান, মুর্শিদাবাদ
আপ-এর সাফল্য
আপ-এর সাফল্যের কিছু ভিত্তি আছে, যা লক্ষণীয় ও অনুসরণীয়। এই দলটির গঠনেও আছে ভিন্নতা, দলে আছেন সমাজের বিশিষ্ট কৃতী চিকিৎসক, প্রযুক্তিবিদ, শিক্ষাবিদ। যেখানে দেশের অধিকাংশ ‘বুদ্ধিজীবী’ শুধু প্রতিবাদপত্রে সই করে, কাগুজে বিবৃতি দিয়ে, টিভিতে তর্ক করে বা মিছিলে হেঁটে দায়িত্ব শেষ করেন, সেখানে এই দলে বুদ্ধিজীবীরা সক্রিয় ভাবে সমাজ বদলাবার চেষ্টা করেন।।
উদাহরণে আসতে পারেন এক অসামান্য শিক্ষাবিদ, আপ-এ সর্বসময়ের কর্মী: অতিশী মারলেনা। তিনি শিল্পী নন, টিভি তার্কিক, চিত্রতারকা বা সেরা সুন্দরী নন। সেন্ট স্টিফেন্স-এর কৃতী ছাত্রী, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্থানাধিকারী। অক্সফোর্ডে উচ্চ শিক্ষান্তে দেশে ফিরে মধ্যপ্রদেশের গ্রামে শিক্ষা ও জৈব চাষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। শেষে রাজনীতিতে। এবং শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব নিয়ে খোল-নলচে পাল্টে দিয়েছেন, যেমন:
১) দিল্লিতে গত পাঁচ বছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল বাজেটের ২৬%। যা এ দেশে (গড় ৪%) বেনজির।
২) প্রতিটি সরকারি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো করা হয়েছে আধুনিক। সম্ভব হলে, সঙ্গে মাঠ ও সুইমিং পুল তৈরি করা হয়েছে।
৩) প্রশিক্ষণের জন্য যোগ্য শিক্ষকরা গিয়েছেন বিদেশে।
৪) শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের দাবিকে মূল্য দেওয়া হয়েছে।
৫) শিক্ষা দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
ফলে: ১) দিল্লি সরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা টক্কর দিয়েছে সেরা বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে।
২) বেসরকারি স্কুল ছেড়ে সরকারি স্কুলে ভর্তির ঢল নেমেছে।
৩) চাপে পড়ে বেসরকারি স্কুল বাধ্য হচ্ছে, তাদের খরচ পুনর্বিবেচনা ও সীমিত করতে।
আরও বহু রকমের সংস্কার করেছে আপ, কিন্তু শুধু শিক্ষাক্ষেত্রের এই কথাটিই আমরা যদি মনে রাখি, তা হলে কাজে দেবে।
মানস দেব
কলকাতা-৩৬
সাবিত্রীবাই
ঈপ্সিতা হালদারের ‘দলিত নেত্রী নতুন প্রেরণা’ (১৫-২) শীর্ষক নিবন্ধ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বিদ্যাসাগর চর্চার পাশাপাশি আজ সাবিত্রীবাই ফুলের জীবন ও কর্ম স্মরণ আবশ্যক। উনিশ শতকীয় রেনেসাঁস-মানুষ বা প্রগতিশীলতার চর্চাকারী মাত্রই তিনি বাঙালি এবং অবশ্যই পুরুষ— এই মিথ থেকেও সাবিত্রীবাইয়ের জীবন আমাদের মুক্তি দেয়।
ঈপ্সিতা লিখেছেন, ‘‘এমনকি শিক্ষক দিবসেও সাবিত্রীবাই ফুলেকে কারও মনে পড়ে না।’’ জানাই, হাওড়ার আমতার এক নাটকের দল ‘আমতা পরিচয়’, বিদ্যাসাগরের জন্মদ্বিশত বছর পালনের জন্য বেছে নিয়েছে মরাঠি নাট্যকার সুষমা দেশপান্ডে লিখিত ‘সাবিত্রীবাই ফুলে’ নাটকটি। গত আট মাস যাবৎ বিভিন্ন বিদ্যালয়ে তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাবিত্রীর জীবন ও কর্ম অবলম্বনে রচিত নাটকটি পরিবেশন করছে। কোথাও বিনা পারিশ্রমিকে, কোথাও নামমাত্র পারিশ্রমিকে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০টির মতো স্কুলে ওই ছোট্ট নাটকের দলটি সাবিত্রীকে পৌঁছে দিয়েছে, তথাকথিত মঞ্চসাফল্যের লোভকে গুরুত্ব না দিয়ে।
বিদ্যাসাগরের সঙ্গে সাবিত্রীর পরিচয় ছিল না। থাকলে দু’জনেই খুশি হতেন। একার লড়াইয়ে পরস্পরের প্রেরণা হতে পারতেন। বলতে ইচ্ছা করছে, ‘আমতা পরিচয়’-এর সঙ্গে শহরের সংস্কৃতির পরিচয় জরুরি। সাবিত্রীবাই ফুলেই হতে পারেন সেই পরিচয়ের সংযোজক।
কৌশিক চিনা
মুন্সিরহাট, হাওড়া
অন্যেরাও
‘অক্ষয় ঐতিহ্য’ (২৯-১) পত্র প্রসঙ্গে বলি, বাংলায় বিজ্ঞান সংস্কৃতি গড়ে তুলতে অক্ষয়কুমার দত্তের মতোই ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স’ (আইএসিএস)-এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদানও সমান উল্লেখযোগ্য। কলকাতার এই প্রতিষ্ঠানটিতে বিজ্ঞানের গবেষণা করেই প্রথম এশীয় ও একমাত্র ভারতীয় বিজ্ঞানী হিসেবে সি ভি রামন বিজ্ঞানে (পদার্থবিদ্যায়) নোবেল পুরস্কার (১৯৩০) পেয়েছিলেন। পত্রলেখক লিখেছেন, ‘‘মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণার কেন্দ্র রূপে তাঁর (অক্ষয়কুমারের) অকৃত্রিম দানেই গড়ে উঠেছিল...’’ প্রকৃত ঘটনা কিন্তু ঠিক তেমন নয়। আইএসিএস গড়ে ওঠার সময় সবচেয়ে বেশি আর্থিক সাহায্য করেছিলেন কালীকৃষ্ণ ঠাকুর, রাজস্থানের ক্ষেত্রির মহারাজা ফতে সিংহ, অসমের বিজনির রাজা কুমুদনারায়ণ ভূপ এবং দারভাঙা, কোচবিহার ও ভিজিয়ানাগ্রামের মহারাজারা।
১৮৭৬ সালের ২৯ জুলাই ২১০ বৌবাজার স্ট্রিটের বাড়িতে ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার ও সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের রেক্টর ও বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার লাফোঁর নেতৃত্বে আইএসিএস-এর বিজ্ঞান সাধনার কাজ শুরু হয়। আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বারকানাথ মিত্র, কৃষ্টদাস পাল, নবাব আবদুল লতিফ, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, কেশবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। ক্যাম্পবেল ও ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন ডা. কানাইলাল দে রসায়নে ও পদার্থবিদ্যায় যথাক্রমে স্কলারশিপ ও পুরস্কারের বন্দোবস্ত করেন। ১৮৭৮-এ কালীকৃষ্ণ ঠাকুরের দানের ২৫০০০ টাকায় আইএসিএস-এর বিখ্যাত ল্যাবরেটরিটি তৈরি হয়।
পাঁচ বছর পর, অর্থাৎ ১৮৮১ সালে, অক্ষয়কুমার দত্ত এই প্রতিষ্ঠানটিকে কিছু টাকা দান করেন। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী, ১৮৮৬-তে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার আইএসিএস-কে বেশ বড় অঙ্কের টাকা বিজ্ঞান সাধনার স্বার্থে দান করেছিলেন। পরবর্তী কালে সি ভি রামন, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, কে এস কৃষ্ণন প্রমুখ শ্রেষ্ঠ ভারতীয় বিজ্ঞানী এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।
পীযূষ রায়
কলকাতা-৩৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
‘শান্তিতে ভোট যাদবপুরে’ (রাজ্য, পৃ ৫, ২০-২) শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে অলচিকি হরফের বদলে অলচিকি ভাষা লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।