সম্পাদক সমীপেষু: ‘ই’, তো দূষণের কী?

মনে রাখা দরকার, বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারি চার্জিংয়ের জন্য যে বিদ্যুৎ প্রয়োজন, সেটা উৎপন্ন হয় খানিক দূরে বসানো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার ধোঁয়া উগরিয়ে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৩
Share:

ই-ট্রেন, ই-বাস, ই-অটো ইত্যাদি বিদ্যুৎ-চালিত যানবাহনের প্রবর্তন করে শহরের দূষণ বন্ধ করার চেষ্টা দেখে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। মাটির তৈরি কয়লা-উনুনটায় আগুন দিয়ে, সবাই ওটা বসিয়ে রেখে আসত রাস্তার উপরে। তার পর নিজের নিজের ঘরে ঢুকে, দরজা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে বসে থাকত। পাশের বাড়ির আর রাস্তার লোকেদের চোখ জ্বলত সে-উনুনের ধোঁয়ায়। এখন আমাদের চুল্লি কোলাঘাটে, আর আমরা কলকাতায়। মনে রাখা দরকার, বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারি চার্জিংয়ের জন্য যে বিদ্যুৎ প্রয়োজন, সেটা উৎপন্ন হয় খানিক দূরে বসানো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার ধোঁয়া উগরিয়ে। সীমান্ত প্রাচীর না থাকায় সে ধোঁয়া শহরের মানুষদের ফুসফুসেও কালো ঝুল আর শরীরে ক্যানসার ঢোকায়। বিদ্যুতের ব্যবহার পৃথিবী ও আমাদের ছেলেমেয়েদের বাঁচানোর উপায় নয়। অন্য উপায় বার করতে হবে।

Advertisement

অশোককুমার দাস

কলকাতা-৭৮

Advertisement

বাহির হয়ে

‘অধিকার বুঝে নেওয়া প্রখর দাবিতে’, সারা রাত জেগে থাকা বহু লড়াকু ছবিই সাম্প্রতিক সময় ও মিডিয়া আমাদের দেখিয়েছে। কখনও যাদবপুর বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর, কখনও আবার ধর্মতলা সেই লড়াইয়ের প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছে। ছাত্র বা শিক্ষকের সেই দাবি ও লড়াইগুলির যথার্থতা নিয়ে ভ্রুকুটি তোলা এ চিঠির উদ্দেশ্য নয়। তবে এটি লক্ষণীয়, এই আন্দোলনগুলোতে বৃহত্তর সমাজের পক্ষে ইতিবাচক কোনও চাহিদা ছিল না।

সুদূর এবং অদূর বিশ্ব-ইতিহাসে, এবং এই ভারতেও, স্বাধীনতা সংগ্রামের বহু বিপ্লবী, স্বাধীনতার পরে বাবা আমটে, সুন্দরলাল বহুগুণা, মেধা পটেকর, অরুন্ধতী রায়, কৈলাস সত্যার্থী প্রমুখ নানা কাজ করেছেন ও করছেন মূলত বহুজনহিতায়। কিন্তু এই শহরে, এই সময়ে, অধ্যক্ষ বহিষ্কার, ছাত্রাবাসের অধিকার বা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সরব হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ হয়তো আছে, তবে এই সমাজের, দেশের, বসুধার উন্নতির আকুতি লক্ষণীয় ভাবে অনুপস্থিত।

অথচ প্লাস্টিক, পলিথিন কারখানাগুলি বন্ধের দাবিতে, ভূগর্ভস্থ জলের যথেচ্ছ ব্যবহারের বিরুদ্ধে, গাছ কাটার বিরুদ্ধেও তো এই প্রজন্ম একটা আন্দোলন করতেই পারত! আপন হতে বাহির হয়ে।

শোভন সেন

সাঁতরাগাছি, হাওড়া

পার্থবাবু

‘বাংলা মোদের গর্ব’— বিবিধ মনীষী ও লোকনেত্রীর ছবি সংবলিত এই স্লোগান বঙ্গের সর্বত্র। শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু এই শৈল্পিক স্লোগানকে ষোলো কলায় পূর্ণ করলেন। অনশনক্লিষ্ট শিক্ষিকাদের ও আন্দোলন সমর্থনকারীদের সম্পর্কে তিনি নজরুল মঞ্চে যে অশালীন কুরুচিকর মন্তব্য করলেন, এক কথায় তা আঠারো আনা ইভটিজ়িং। অবিকল পাড়ার ক্লাবের ‘ছাত্রযৌবন’-এর ইভটিজ়িং। এ অবশ্য ‘কিশোর’কুমারের অব্যর্থ অমূল্য টোটকাও হতে পারে।

এই আশ্চর্য মন্তব্যে আমরা বিস্মিত, ব্যথিত। উপস্থিত মানুষজনের তিনি মুহূর্তেই হাসির খোরাক হয়ে উঠলেন। এই অনশন বিষয়ে কবি শঙ্খ ঘোষ ‘কোনও খবর রাখেন না’ বলেও তাঁকে আপন ঔদ্ধত্যে অসম্মান করলেন। আসলে পার্থবাবুর ‘দিদি’ই অনশনের কারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। মানবিক নেত্রী তাই কেন্দ্রীয় হারে বেতন পেতে অনশনরত শিক্ষকদের কেন্দ্রে যাওয়ার মানবিক সুপরামর্শ দিলেন।

তবে বিষণ্ণ হওয়ার কিছু নেই। এক বার ভাবুন তো, অনশনমঞ্চে পার্থবাবু শিক্ষকদের থেকে বৃহৎ, আর ৫ সেপ্টেম্বরে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। ৫ সেপ্টেম্বর দরজায় কড়া নাড়ছে। ভাবুন, শ্রদ্ধেয় পার্থবাবু সে দিন তাঁর প্রিয় শিক্ষকদের ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মানে বিভূষিত করছেন। বিচিত্র পুরস্কারে ভরিয়ে দিচ্ছেন। শিক্ষকদের কখনও আকাশে তুলছেন, কখনও হিমালয়ের চূড়ায়। কখনও বা চশমার ফাঁকে মিটিমিটি মৃদুহাস্যে সুললিত বাণীতে বলছেন, তুমি জাতির মেরুদণ্ড, প্রকাণ্ড। হাততালি হচ্ছে, ছবি উঠছে। সকলে ‘পার্থদা পার্থদা’ করছে।

এমনই ভাবে আমাদের বঙ্গীয় শিক্ষাও এক নম্বরে পৌঁছচ্ছে। ভূতের রাজার দুই বা তিন নম্বর বর আমাদের হাতে নেই। অজস্র ফাঁকি আর সহস্র মিথ্যাচারিতায় আমরা কেবল মসিলিপ্ত মহাশূন্যে এক নম্বরে।

মলয় দত্ত

কলকাতা-৬

মন্ত্রী বললেই

মন্ত্রী হলেই যে কথা বলার কিছু প্রোটোকল বর্তায়, সেটা মন্ত্রীরা কি মাঝে মাঝেই ভুলে যান? কথাটা উঠল মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে। মন্ত্রীদের নানা পাঠের সঙ্গে কথা বলাও শেখাতে হবে। যেমন ‘‘আপনি পুত্রশোকে মরবেন’’ শুনলে মনে হবে অভিশাপ। কিন্তু ‘‘সন্তানের চেয়েও দীর্ঘ জীবন আপনি লাভ করবেন’’ কথাটা কেমন বরদানের মতো শুনতে!

আমি নিজে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। সিসিএল বা চাইল্ড কেয়ার লিভ-এর কল্যাণে আস্ত একটা দোতলা বাড়ি তৈরি হতে দেখলাম। মালকিনকে একটাও মেডিক্যাল লিভ নষ্ট করতে হল না। দিদি আছেন ছুটিতে সিসিএল নিয়ে, ফেসবুকে দিদির ছবি বেরোচ্ছে কোভালাম সি বিচ-এ। বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষিকা দিদির ছুটি নিয়ে কী কী মন্তব্য করেন, না বলাই ভাল। কিন্তু তাই বলে মন্ত্রী বলবেন!

প্রভিশনাল ক্লাসে যেতে চান না, যান না কোনও সহকর্মী। মন্ত্রী বললেন সব শিয়ালের এক রা!

ধরুন, এক শিক্ষিকার আগে এক বার মিসক্যারেজ হয়েছে। ডাক্তার এ বার অনেক আগে থেকেই সতর্ক। দিদি দীর্ঘ দিনের ছুটিতে। শিক্ষিকা সহকর্মীরা, যাঁরা এখন শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব, তাঁরা তাঁর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করেননি, খাতা দেখেননি। বলেছেন, ‘‘মেটার্নিটি লিভ মানব, এটা তো অ্যাবনর্মাল ছুটি।’’ সেই শিক্ষিকা কাঁদতে কাঁদতে প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন, খাতা দেখেছেন বাড়িতে বসে।

আবার, এক সহকর্মী বহু বার মিথ্যা মিসক্যারেজের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিয়ে ছুটি নিয়েছেন। সহকর্মীরা সেই শিক্ষিকার আড়ালে যে সব মন্তব্য করেছেন, শুনলে শিক্ষামন্ত্রী কানে আঙুল দেবেন। ওই দিদিমণির ডাক্তার স্বামীর বন্ধু এক জন গাইনোকলজিস্ট। তিনিই এই সুদীর্ঘ ছুটির কারিগর।

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘‘শিক্ষকরা শুধুই পাওনার কথা বলেন।’’ প্রতিটি টিচার্স রুমের ক্ষেত্রে এই কথাই কি ২০০ পার্সেন্ট সত্য নয়? বহু শিক্ষক ২০/২৫ মিনিট পরে ক্লাসে যান। যদি কোনও সহকর্মী সাহস করে তা বলেন, জবাব আসে, ‘‘বকেয়া মহার্ঘ ভাতা আর ক্লাসের পাঠদানের সময় সমানুপাতিক।’’ কিন্তু মন্ত্রী কেন এই নিয়ে বলবেন? কী অন্যায়!

কথায় কথায় শিক্ষকেরা বলেন, ১০/১২ জন শিক্ষকের পদ শূন্য। কী ভাবে স্কুল চলবে? এক দিন লোকাল এমএলএ এলেন। বললেন, সব শিক্ষকদের তো তা হলে খুব ক্লাসের চাপ। ডেলি রুটিনটা বলুন, প্রভিশনালটা বলুন।

দেখা গেল, প্রতি দিন কারও ৪/৫-টার বেশি ক্লাস নেই। আর সেই ক্লাসের সময়সীমা তো বকেয়া মহার্ঘ ভাতার সমানুপাতিক।

এটা মন্ত্রিমশাই বললে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ হত। বলেছেন এমএলএ, আবার সঙ্গে ছিলেন লোকাল কাউন্সিলর। তাই শিক্ষকরা মিউমিউ করেছেন।

এক বার এমএলএ বললেন, ‘‘স্কুল কিন্তু খুব ভাল চলছে না। স্কুলটাইমে শিক্ষকশিক্ষিকা কেন ব্যাঙ্ক দোকান শপিং মলে যাবেন?’’ একটু মৃদু স্বরে প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘‘এই অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য নয়।’’

এমএলএ বললেন, ‘‘আলবাত সত্যি, তা না হলে আপনাদের ছেলেমেয়েদের এই স্কুলে পাঠান না কেন? কার কার ছেলেমেয়ে এখানে পড়ে বলুন।’’ শিক্ষকরা এর পর আর কিছু বলেননি।

তাই বলছিলাম, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দয়া করে কিছু বলবেন না। আপনি বললেই হইচই হবে। এগুলো আঞ্চলিক স্তরে মেটানোই ভাল।

মালবিকা মিত্র

হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement